সাহাবাগণের জীবনকথা-১১ || ইসলামের চতূর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ)│ প্রথম পর্ব │



হযরত আলী (রাঃ)

(প্রথম পর্ব)


হযরত আলী (রাঃএর বাল্য কাল  ইসলাম গ্রহণ

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে তার জন্ম। আবু তালিব ছিলেন ছাপোষা মানুষ। চাচাকে একটু সাহায্য করার উদ্দেশ্যে রাসূল (সাঃ) নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন আলীকে। এভাবে নবী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তিনি বেড়ে ওঠেন। রাসূল (সাঃ) যখন নবুওয়াত লাভ করেন, আলীর বয়স তখন নয় থেকে এগারো বছরের মধ্যে। একদিন ঘরের মধ্যে দেখলেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) ও উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা (রাঃ) সিজদাবনত। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ কি কাজ ?

উত্তর পেলেন এক আল্লাহর ইবাদাত করছি। তোমাকেও এর দাওয়াত দিচ্ছি। আলী তার মুরব্বির দাওয়াত বিনা দ্বিধায় কবূল করেন এবং মুসলমান হয়ে যান। কুফর শিরক জাহিলিয়্যাতের কোন অপকর্ম তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি।

হযরত আলী (রা.) এর বয়স ছিল তখন প্রায় ২২ বছর । আল্লাহ্‌ তা’আলার নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইয়াছরিবে হিজরত করার শেষ রাতে শত্রুদের চোখের সামনে দিয়ে নিরাপদে গৃহ ত্যাগ করলেন। যাওয়ার সময় হযরত আলী (রা.) কে আমানতের গচ্ছিত সম্পদ প্রদানের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। প্রত্যুষে শত্রুপক্ষ দেখল, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বিছানায় হযরত আলী (রা.) নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছেন

হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে হযরত (সা.) এর প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রা.) এর সাথে আলী (রা.) এর বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় হযরত ফাতেমা (রা.) এর বয়স ছিল ১৪ বছর এবং হযরত আলী (রা.) এর বয়স ছিল ২২ বছর। (তাবাকাতে ইবনে সা’দ, এসাবা, খোলাফায়ে রাশেদিন)। তিনি বদর, উহুদ ও খন্দক(পরিখা)-এর যুদ্ধে যোগদান এবং তাবূক ছাড়া অন্য সমস্ত অভিযানে নবীজী (সা.)-এর সঙ্গে গমন করেন। তাবূক অভিযানের সময় নবীজী (সা.) এর অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবার-বর্গের তত্ত্বাবধান এবং মদিনার শাসনভার তাঁর উপর ন্যস্ত ছিল। উহুদের যুদ্ধে তিনি ষোলটি আঘাতপ্রাপ্ত হন; তাঁহার প্রচণ্ড আক্রমণে খায়বারের দুর্জয় কা’মূস দূর্গের পতন ঘটে ।

নবীজী (সা.) এর উপর নবম সূরা (আল বারা’আঃ বা আত-তাওবা) অবতীর্ন হওয়ার অল্প পরে উহার প্রথম তেরটি আয়াত হাজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করার জন্য নবীজী (সা.) তাকে প্রেরণ করেন । দশম হিজরি, মুতাবিক ৬৩১-৩২ সনে আলী (রা.) ইয়ামানে এ প্রচার সফরে গমন করেন । ইহারই ফলে হামাদানীরা ইসলাম গ্রহণ করে।

কিশোর-তরূণদের মধ্যে আলী (রাঃ) ছিলেন প্রথম মুসলমান

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে সর্ব প্রথম হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ) নামায আদায় করেন। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই। অবশ্য আবু বকর, আলী ও যায়িদ বিন হারিসা- এ তিন জনের কে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। (তাবাকাতঃ ৩/২১)

ইবন আব্বাস ও সালমান ফারেসীর (রাঃ) বর্ণনা মতে,উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজার (রাঃ) পর আলী (রাঃ) সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে এ সম্পর্কে সবাই একমত যে, মহিলাদের মধ্যে হযরত খাদীজা, বয়স্ক আযাদ পুরুষদের মধ্যে আবু বকর, দাসদের মধ্যে যায়িদ বিন হারিসা ও কিশোরদের মধ্যে আলী (রাঃ) প্রথম মুসলমান।

নবুওয়াতের তৃতীয় বছরে রাসূলে কারীম (সাঃ) হুকুম দিলেন আলীকে, কিছু লোকের আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর। আবদুল মুত্তালিব খান্দানের সব মানুষ উপস্থিত হল। আহার পর্ব শেষ হলে রাসূল (সাঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি এমন এক জিনিস নিয়ে এসেছি, যা দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর। আপনাদের মধ্যে কে আমার সঙ্গী হবে? সকলেই নিরব। হঠাৎ আলী (রাঃ) বলে উঠলেন, ‘যদিও আমি অল্পবয়স্ক চোখের রোগে আক্রান্ত, দুর্বল দেহ,আমি সাহায্য করবো আপনাকে।

রাসূল (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের সময় হযরত আলী (রাঃ) এর ভূমিকা

মদীনায় হিজরাতের সময় হল,তখন অধিকাংশ মুসলমান মক্কা ছেড়ে মদীনা চলে গেছেন। রাসূলে কারীম (সাঃ) আল্লাহর হুকুমের প্রতীক্ষায় আছেন। দিকে মক্কার ইসলাম বিরোধী শক্তি সিদ্ধান্ত নিয়েছে,রাসূলে কারীমকে (সাঃ) দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (সাঃ) খবর জানিয়ে দেন। তিনি মদীনায় হিজরাতের অনুমতি লাভ করেন। কাফিরদের সন্দেহ না হয় জন্য আলীকে রাসূল (সাঃ) নিজের বিছানায় ঘুমাবার নির্দেশ দেন এবং সিদ্দীকে আকবরকে সঙ্গে করে রাতের অন্ধকারে মদীনা রওয়ানা হন। আলী (রাঃ) রাসূলে কারীমের (সাঃ) চাদর মুড়ি দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে অত্যন্ত আনন্দ সহকারে ঘুমালেন। তিনি জানতেন অবস্থায় তার জীবন চলে যেতে পারে। কিন্তু তার প্রত্যয় ছিল, এভাবে জীবন গেলে তার চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কিছু হবে না। সুবহে সাদিকের সময় মক্কার পাষণ্ডরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেল রাসূলে কারীমের (সাঃ) স্থানে তারই এক ভক্ত জীবন কুরবানীর জন্য প্রস্তুত হয়ে শুয়ে আছে। তারা ব্যর্থ হয় এবং আল্লাহ তাআলা আলীকে (রাঃ) হিফাজত করেন।
হিজরাত প্রসঙ্গে হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা রওয়ানার পূর্বে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি মক্কায় থেকে যাব এবং লোকদের যেসব আমানত তাঁর কাছে আছে তা ফেরত দেব। জন্যই তো তাকেআল-আমীন বলা হতো। আমি তিনদিন মক্কায় থাকলাম। তারপর রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পথ ধরে মদীনার দিকে বেরিয়ে পড়লাম। অবশেষে বনীআমর ইবন আওফ- যেখানে রাসূল (সাঃ) অবস্থান করছিলেন আমি সেখানে উপস্থিত হলাম। কুলসুম ইবন হিদ্মের বাড়ীতে আমার আশ্রয় হল।

অন্য একটি বর্ণনায়, আলী (রাঃ) রবিউল আউয়াল মাসের মাঝামাঝি কুবায় উপস্থিত হন। রাসূল (সাঃ) তখনো কুবায় ছিলেন। (তাবাকাতঃ /২২)

মাদানী জীবনের সূচনাতে রাসূল (সাঃ) যখন মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যেমুয়াখাত’ বা দ্বীনী-ভ্রাতৃ সম্পর্ক কায়েম করছিলেন, তিনি নিজের একটি হাত আলীর (রাঃ) কাঁধে রেখে বলেছিলেন, আলী তুমি আমার ভাই। তুমি হবে আমার এবং আমি হব তোমার উত্তরাধিকারী। (তাবাকাতঃ /২২)
পরে রাসূল (সাঃ) আলী সাহল বিন হুনাইফের মধ্যে ভ্রাতৃসম্পর্ক কায়েম করে দিয়েছিলেন। (তাবাকাতঃ /২৩)

হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে নবী কন্যা ফাতেমা (রাঃ) এর বিবাহ

হিজরী দ্বিতীয় সনে হযরত আলী (রাঃ) রাসূলে কারীমের (সাঃ) জামাই হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) প্রিয়তম কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমার (রাঃ) সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

ইমাম বায়হাকী তাঁরদালাইল গ্রন্থে আবু আবদুল্লাহ হাফিয-এর মাধ্যমে. মুজাহিদ সূত্রে আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আলী (রা) বলেন, : রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ফাতিমা বিবাহের প্রস্তাব আসে। তখন আমার এক দাসী আমাকে বলল, আপনি কি জানেন রাসূলুল্লাহর কাছে ফাতিমার বিবাহের প্রস্তাব এসেছে? আমি বললাম, তা তো জানি না। দাসী বলল, হ্যা তার সম্পর্কে প্রস্তাব এসেছে। আপনি কেনো রাসূলুল্লাহর নিকট যাচ্ছেন না? আপনি গেলে তিনি আপনার সাথেই ফাতিমাকে বিবাহ দিবেন। আমি বললাম, আমার কাছে তো তেমন কিছুই নেই, যা দিয়ে বিবাহ করতে পারি। দাসী বললো, আপনি গেলে রাসূলুল্লাহ্ (সা) আপনার সাথে তাঁকে বিবাহ দিবেন। হযরত আলী বলেন, দাসীর বারবার অনুরোধে অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গেলাম। কিন্তু যখন তাঁর সম্মুখে গিয়ে বসলাম, তখন আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। আল্লাহর কসম! তাঁর প্রভাব ভয়ে আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এসেছ, তোমার কোন প্রয়োজন আছে কি? আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। এরপর তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি ফাতিমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার জন্যে এসেছ! আমি বললাম, জী হা্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তোমার কাছে কোন মাল আছেযা মহরানা হিসেবে প্ৰদান করে তাকে হালাল করে নেবে? আমি বললাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ। আল্লাহর কসম!! আমার কাছে সে রকম কিছুই সেই। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যুদ্ধান্ত্র হিসেবে তোমাকে আমি যে বর্মটি দিয়েছিলাম, তা কী করেছ? কসম আল্লাহর! সেই খিতামী বর্মটির মূল্য হবে চার দিরহাম। আমি বললাম, সে বর্মটি আমার নিকট আছে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) ফাতিমাকে আমার সাথে বিবাহ দিলেন এবং বললেন, বর্মটি তার নিকট পাঠিয়ে দাও। এতে সে তোমার জন্যে হালাল হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কন্যা ফাতিমার বিবাহের এটাই ছিল দেনমহর। এই বিয়ে সম্পর্কে আরও পড়ুন। 

হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন এলেমের দরজা

নবীজী (সা.)-এর কোলে যিনি লালিত-পালিত হয়েছিলেন, নবীজী (সা.)-এর মুখে যিনি কোরআন পাক শ্রবণ করেছেন, নবীজী (সা.) এর কাছেই যিনি কুরআন শিক্ষা লাভ করেছেন এবং বুঝেছেন, তাঁহার এলম সম্পর্কে আর কাহার এলেমের তুলনা করা যেতে পারে? নবীজী (সা.) ফরমাইয়াছেন, “আমি এলেমের শহর এবং আলী উহার দরজা।’ এই কারণেই সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলী (রা.) অনন্য সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন  

হযরত আলী (রাঃ) এর জিহাদে অংশগ্রহন

ইসলামের জন্য হযরত আলী (রাঃ) অবদান অবিস্মরণীয়। রাসূলে কারীমের (সাঃ) যুগের সকল যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় তিনি দেন। এ কারণে হুজুর (সাঃ) তাকে ‘হায়দার’ উপাধিসহ ‘যুল-ফিকার’ নামক একখানি তরবারি দান করেন।

একমাত্র তাবুক অভিযান ছাড়া সকল যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। বদরে তার সাদা পশমী রুমালের জন্য তিনি ছিলেন চিহ্নিত, কাতাদা থেকে বর্ণিত। বদরসহ প্রতিটি যুদ্ধে আলী ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পতাকাবাহী। (তাবাকাতঃ ৩/২৩)

উহুদে যখন অন্যসব মুজাহিদ পরাজিত হয়ে পলায়নরত ছিলেন, তখন যে ক’জন মুষ্টিমেয় সৈনিক রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) কেন্দ্র করে ব্যুহ রচনা করেছিলেন, আলী (রাঃ) তাদের একজন। অবশ্য পলায়নকারীদের প্রতি আল্লাহর ক্ষমা ঘোষিত হয়েছে।
ইবন ইসহাক থেকে বর্ণিত..
খন্দকের দিনে আমর ইবন আবদে বর্ম পরে বের হল। সে হুংকার ছেড়ে বললো কে আমর সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হবে? আলী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন : হে আল্লাহর নবী, আমি প্রস্তুত।
রাসূল (সাঃ) বললেন : ‘এ হচ্ছে ’আমর, তুমি বস।’
আমর আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিল : আমার সাথে লড়বার মত কেউ নেই? তোমাদের সেই জান্নাত এখন কোথায়, যাতে তোমাদের নিহতরা প্রবেশ করবে বলে তোমাদের ধারণা? তোমাদের কেউই এখন আমার সাথে লড়তে সাহসী নয়? আলী (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন। বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি প্রস্তুত।
রাসূল (সাঃ) বললেন : বস।
তৃতীয় বারের মত আহ্বান জানিয়ে ’আমর তার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতে  লাগলো।আলী (রাঃ) আবারো উঠে দাঁড়িয়ে আরজ করলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি প্রস্তুত।
রাসূল (সাঃ) বললেন : সে তো আমর। আলী (রাঃ) বললেন : তা হোক।
এবার আলী (রাঃ) অনুমতি পেলেন। আলী (রাঃ) তাঁর একটি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
আমর জিজ্ঞেস করলো : তুমি কে? বললেন : আলী।
সে বললো : আবদে মান্নাফের ছেলে?
আলী বললেন : আমি আবু তালিবের ছেলে আলী।
সে বললো : ভাতিজা, তোমার রক্ত ঝরানো আমি পছন্দ করিনে।
আলী বললেন : আল্লাহর কসম, আমি কিন্তু তোমার রক্ত ঝরানো অপছন্দ করিনে।
এ কথা শুনে ’আমর ক্ষেপে গেল। নিচে নেমে এসে তরবারি টেনে বের করে ফেললো। সে তরবারি যেন আগুনের শিখা। সে এগিয়ে আলীর ঢালে আঘাত করে ফেঁড়ে ফেললো। আলী পাল্টা এক আঘাতে তাকে ধরাশায়ী করে ফেললেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠেন। তারপর আলী নিজের একটি কবিতা আবৃত্তি করতে করতে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) কাছে ফিরে আসেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবন কাসীর ৪/১০৬)
সপ্তম হিজরীতে খাইবার অভিযান চালানো হয়। সেখানে ইয়াহুদীদের কয়েকটি সুদৃঢ় কিল্লা ছিল। প্রথমে সিদ্দীকে আকবর, পরে ফারুকে আজমকে কিল্লাগুলি পদানত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কেউই সফলকাম হতে পারলেন না।

নবী (সাঃ) ঘোষণা করলেনঃ ‘কাল আমি এমন এক বীরের হাতে ঝাণ্ডা তুলে দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রিয়পাত্র। তারই হাতে কিল্লাগুলির পতন হবে। পরদিন সকালে সাহাবীদের সকলেই আশা করছিলেন এই গৌরবটি অর্জন করার, হঠাৎ আলীর ডাক পড়লো। তারই হাতে খাইবারের সেই দুর্জয় কিল্লাগুলির পতন হয়।

তাবুক অভিযানে রওয়ানা হওয়ার সময় রাসূল (সাঃ) আলীকে (রাঃ) মদীনায় স্থলাভিষিক্ত করে যান। আলী (রাঃ) আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি যাচ্ছেন আর আমাকে নারী ও শিশুদের কাছে ছেড়ে যাচ্ছেন? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ হারুন যেমন ছিলেন মূসার, তেমনি তুমি হচ্ছো আমার প্রতিনিধি। তবে আমার পরে কোন নবী নেই। (তাবাকাতঃ ৩/২৪)

নবম হিজরীতে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে প্রথম ইসলামী হজ্জ্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) ছিলেন ’আমীরুল হজ্জ্ব। তবে কাফিরদের সাথে সম্পাদিত সকল চুক্তি বাতিল ঘোষণার জন্য রাসূল (সাঃ) আলীকে (রাঃ) বিশেষ দূত হিসেবে পাঠান।

দশম হিজরীতে ইয়ামনে ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত খালিদ সাইফুল্লাহকে পাঠানো হয়। ছ’মাস চেষ্টার পরও তিনি সফলকাম হতে পারলেন না, ফিরে এলেন। রাসূলে করীম (সাঃ) আলীকে (রাঃ) পাঠানোর কথা ঘোষণা করলেন। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) কাছে উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আপনি আমাকে এমন লোকদের কাছে পাঠাচ্ছেন যেখানে নতুন নতুন ঘটনা ঘটবে অথচ বিচার ক্ষেত্রে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই। উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে সঠিক রায় এবং তোমার অন্তরে শক্তিদান করবেন। তিনি আলীর (রাঃ) মুখে হাত রাখলেন।
আলী বলেনঃ ‘অতঃপর আমি কক্ষনো কোন বিচারে দ্বিধাগ্রস্ত হইনি।

যাওয়ার আগে রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে আলীর (রাঃ) মাথায় পাগড়ী পরিয়ে দু’আ করেন। আলী ইয়ামনে পৌঁছে তাবলীগ শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সকল ইয়ামনবাসী ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং হামাদান গোত্রের সকলেই মুসলমান হয়ে যায়।

রাসূল (সাঃ) আলীকে (রাঃ) দেখার জন্য উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। তিনি দু’আ করেনঃ আল্লাহ আলীকে না দেখে যেন আমার মৃত্যু না হয়। হযরত আলী বিদায় হজ্জের সময় ইয়ামন থেকে হাজির হয়ে যান। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ওফাতের পর তার নিকট-আত্মীয়রাই কাফন-দাফনের দায়িত্ব পালন করেন। হযরত আলী (রাঃ) গোসল দেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। মুহাজির ও আনসাররা তখন দরজার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।

হযরত আবু বকর, হযরত উমার ও হযরত উসমানের (রাঃ) খিলাফত মেনে নিয়ে তাদের হাতে বাইয়াত করেন এবং তাদের যুগের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে শরীক থাকেন। অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতেও হযরত উসমানকে পরামর্শ দিয়েছেন। যেভাবে আবু বকরকে ‘সিদ্দীক’, উমারকে ‘ফারুক’ এবং উসমানকে ‘গণী’ বলা হয়, তেমনিভাবে তাকেও ‘আলী মুরতাজা’ বলা হয়।

হযরত আবু বকর ও উমারের যুগে তিনি মন্ত্রী ও উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেন। হযরত ‘উসমানও সব সময় তার সাথে পরামর্শ করতেন। (মরুজুজ জাহাবঃ ২/২)

বিদ্রোহীদের দ্বারা হযরত উসমান ঘেরাও হলে তার নিরাপত্তার ব্যাপারে আলীই (রাঃ) সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করেন। সেই ঘেরাও অবস্থায় হযরত উসমানের (রাঃ) বাড়ীর নিরাপত্তার জন্য তিনি তার দুই পুত্র হাসান ও হুসাইনকে (রাঃ) নিয়োগ করেন। (আল-ফিত্‌নাতুল কুবরাঃ ড. ত্বাহা হুসাইন)

----------------------প্রথম পর্ব সমাপ্ত--------------------------


★★সমাপ্ত★★

সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url