হযরত ইলিয়াস (আঃ) এর জীবনী
হযরত ইলিয়াস (আঃ)
ইলিয়াসের জন্মস্থান :
হযরত ইলিয়াস (আঃ) ফিলিস্তীনের পার্শ্ববর্তী জর্ডানের আল‘আদ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ পাক তাঁকে নবী হিসাবে মনোনীত করেন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের নির্দেশ দান করেন।
ফিলিস্তীনের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা :
ইলিয়াসের দাওয়াত :
শিরকে আচ্ছন্ন ফিলিস্তীনবাসীকে হযরত ইলিয়াস (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং শিরক পরিত্যাগ করার আহবান জানান। কেননা শিরক ও তাওহীদের একত্র সহাবস্থান কখনোই সম্ভব নয়। ইলিয়াস ও তাঁর দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺇِﻥَّ ﺇِﻟْﻴَﺎﺱَ ﻟَﻤِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺮْﺳَﻠِﻴْﻦَ – ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻘَﻮْﻣِﻪِ ﺃَﻻَ ﺗَﺘَّﻘُﻮْﻥَ – ﺃَﺗَﺪْﻋُﻮْﻥَ ﺑَﻌْﻼً ﻭَﺗَﺬَﺭُﻭْﻥَ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﻘِﻴْﻦَ – ﺍﻟﻠﻪَ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺏَّ ﺁﺑَﺎﺋِﻜُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻟِﻴْﻦَ – ﻓَﻜَﺬَّﺑُﻮْﻩُ ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﻤُﺤْﻀَﺮُﻭْﻥَ – ﺇِﻻَّ ﻋِﺒَﺎﺩَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟْﻤُﺨْﻠَﺼِﻴْﻦَ – ﻭَﺗَﺮَﻛْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِﻳْﻦَ – ﺳَﻼَﻡٌ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﻝْ ﻳَﺎﺳِﻴْﻦَ – ﺇِﻧَّﺎ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻧَﺠْﺰِﻱ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴْﻦَ – ﺇِﻧَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻧَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦ
দাওয়াতের ফলশ্রুতি :
বিগত নবীগণের যে দুরবস্থা হয়েছিল, ইলিয়াস (আঃ)-এর ভাগ্যে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি ইস্রাঈলের শাসক আখিয়াব ও তার প্রজাবৃন্দকে বা‘ল দেবমূর্তির পূজা করতে নিষেধ করলেন এবং এক আল্লাহর প্রতি ইবাদতের আহবান জানালেন। কিন্তু দু’একজন হকপন্থী ব্যক্তি ছাড়া কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না। তারা ইলিয়াস (আঃ)-এর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হ’ল। তাকে যত্রতত্র অপমান-অপদস্থ করা শুরু করল। এমনকি দৈহিক নির্যাতনও শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ইলিয়াস (আঃ) তাঁর দাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে রাজা ও রাণী তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তিনি রাজধানী ছেড়ে অনেক দূরে এক পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করলেন এবং দুর্ভিক্ষ নাযিলের জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করলেন। ফলে সারা দেশে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। ইলিয়াস (আঃ) মনে করলেন দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য তিনি যদি তাদেরকে মো‘জেযা প্রদর্শন করেন, তাহ’লে হয়ত তারা শিরক বর্জন করে তাওহীদ কবুল করবে এবং এক আল্লাহর ইবাদতে ফিরে আসবে।
বাদশাহর দরবারে ইলিয়াসের উপস্থিতি :
আল্লাহর হুকুমে হযরত ইলিয়াস (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে সরাসরি ইস্রাঈলের বাদশাহ আখিয়াবের দরবারে হাযির হ’লেন। তিনি বললেন, দেশব্যাপী এই দুর্ভিক্ষের কারণ হ’ল আল্লাহর নাফরমানী। তোমরা নাফরমানী থেকে বিরত হ’লে এ আযাব দূর হ’তে পারে। তোমরা বলে থাক যে, তোমাদের বা‘ল দেবতার নাকি সাড়ে চারশ’ নবী (!) আছে। তাই যদি হয়, তাহ’লে তুমি তাদের সবাইকে একত্রিত কর। তারা এই দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য বা‘ল দেবতার নামে কুরবানী করুক। আর আমি একই উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে কুরবানী পেশ করি। যার কুরবানী আসমান থেকে আগুন এসে ভস্ম করে দেবে, তার ধর্মই সত্য বলে গণ্য হবে। ইলিয়াস (আঃ)-এর এ প্রস্তাব সবাই সানন্দে মেনে নিল।
আল্লাহ ও বা‘ল দেবতার নামে কুরবানীর ঘটনা :
ইলিয়াস (আঃ)-কে পুনরায় হত্যার ষড়যন্ত্র :
হযরত ইলিয়াস (আঃ) জীবিত আছেন কি?
সুয়ূত্বী, ইবনে আসাকির, হাকেম প্রমুখের বিভিন্ন বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, চারজন নবী জীবিত আছেন। তন্মধ্যে খিযির ও ইলিয়াস দুনিয়াতে এবং ইদরীস ও ঈসা আসমানে রয়েছেন। কিন্তু হাকেম ও ইবনু কাছীর এসব বর্ণনাকে বিশুদ্ধ বলেননি। সারকথা, হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর জীবিত থাকার বিষয়টি কোন ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এসব বর্ণনার প্রতি কর্ণপাত করার কোন প্রয়োজন নেই। ইলিয়াস (আঃ) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলেই আমরা বিশ্বাস করব।
বা‘ল দেবতার পরিচয় :
সূরা ছাফফাত ১২৫ আয়াতে যে বা‘ল (ﺑﻌﻞ) দেবতার কথা বলা হয়েছে, আরবী ভাষায় এর অর্থ স্বামী বা মালিক। কিন্তু সম্ভবতঃ এটি হিব্রু শব্দ। কেননা তখনকার সময় ফিলিস্তীন অঞ্চলের ভাষা ইবরানী বা হিব্রু ছিল। এটি ইস্রাঈলীদের পূজিত দেবমূর্তির নাম। হযরত মূসা (আঃ)-এর সময়ে শাম অঞ্চলে এর পূজা হ’ত এবং এটাই ছিল তাদের সর্বাধিক জনপ্রিয় দেবতা। বা‘ল বাক্কা (ﺑﻌﻠﺒﻚ) শব্দটি ﻣﺮﻛﺐ ﺑﻨﺎﺋﻰ বা অপরিবর্তনীয় যৌগিক শব্দের উদাহরণ হিসাবে আরবী ব্যাকরণের একটি অতি পরিচিত শব্দ। এটি লেবাননের একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম, যা উক্ত বা‘ল দেবতার নামেই নামকরণ করা হয়েছে। কারু কারু মতে জাহেলী আরবদের প্রসিদ্ধ দেবমূর্তি ‘হোবল’ (ﻫﺒﻞ) এই বা‘লেরই অপর নাম। মক্কার খুযা‘আহ গোত্রের নেতা আমর বিন লুহাই সর্বপ্রথম সিরিয়া থেকে বহু মূল্যের বিনিময়ে এই মূর্তি নিয়ে এসে কা‘বা গৃহে স্থাপন করেন এবং জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, সিরিয়রা এই মূর্তির অসীলায় পানি প্রার্থনা করে। আমরাও এর অসীলায় পানি প্রার্থনা করব। তাতে সিরিয়ার ন্যায় মক্কা অঞ্চলেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং এলাকা শস্য-শ্যামল হয়ে উঠবে। এটাই ছিল কা‘বা গৃহে স্থাপিত প্রথম দেবমূর্তি। পরে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে আরও মূর্তি এনে স্থাপন করে। এভাবে রাসূলের আবির্ভাবকালে তার সংখ্যা ৩৬০-য়ে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে তারা এর দ্বারা তাদের দাবী মতে ইবরাহীমী ধর্মের তাওহীদ বিশ্বাসে কোন ত্রুটি হচ্ছে বলে মনে করত না। তারা এটাকে শিরক ভাবত না; বরং আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের অসীলা মনে করত (যুমার ৩৯/৩)।[1]
শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :
সূত্র :
[1]. পুরা আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য: দ্র: তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন পৃঃ ১১৫৩-৫৫; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৩১৪। তবে বর্ণিত আলোচনার সবটাকেই অকাট্য সত্য বলা যাবে না। কেননা এগুলি ঐতিহাসিক বর্ণনা। যাতে ভুল তথ্য থাকতে পারে। কেবল কুরআনী বর্ণনাটুকুই আমাদের নিকট নিশ্চিতভাবে গ্রহণীয়। -লেখক।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url