কেয়ামত || কেয়ামতের ভয়াবহ দিন || সেই ভয়াবহ দিনে কোন পরিচয় কাজে আসবে না || কোন সম্পদ কাজে আসবে না ||






কেয়ামতের দিন হবে খুবই ভয়াবহ দিন


আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) কে রসুল সাঃ বলতেছিলেন, কিয়ামতের দিন সবাই খালি পায়ে থাকবে, উলঙ্গ থাকবে (আয়েশা রাঃ) চিৎকার দিয়ে বলতেছেন,ইয়া রসুলুল্লাহ,এটা কি বললেন? সবাই উলঙ্গ!!! নারী-পুরুষ!!!” রসুল (সাঃ) এর চোখে পানি চলে আসছে রসুল (সাঃ) বুঝতে পারছেন আয়েশা (রাঃ) কেন চিৎকার দিলেন, রসুল (সাঃ) বললেন,আয়েশা, তুমি কি ভাবছো একজন আর একজনের দিকে তাকাবে? বড় কঠিন দিন, সেদিন বড়ই কঠিন দিন। রসুল (সাঃ)  চিত্র বলতেছেন আয়েশা (রাঃ) কে আমি দেখতেছি মুসা (:) এর মতন নবী আরশের খুঁটি ধরে কাঁপতেছেন আর চিৎকার করে বলতেছেন, ,اسالك نفسي لا اسالك امي ولا اسالك اختي اسالك نفسي "আসআলুকা নাফসি, লা আসয়ালুকা উম্মি, ওয়ালা আসআলুকা উখতি, আসআলুকা নাফসি" অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে বাঁচান, আজ আমি আমার মায়ের কথা বলবনা, আমি আমার বোনের জন্য মাফ চাইবনা, আমারে বাচান আমারে বাচান আমি দেখতেছি সমস্ত নবীরা ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতেছে অর্থাৎ আমাকে বাঁচান আল্লাহ আমাকে বাঁচান। (বোখারি মুসলিম)

 

আমার এত কিছু বলার উদ্দেশ্যে এই যে, দুনিয়ার কিসের পরিচয় দিবেন আপনি? কোন ডিগ্রির পরিচয় দিবেন? কোন ফ্যামিলির পরিচয় দিবেন? যেখানে সমস্ত নবী গুলি ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতেছে!

 

আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে আল্লাহর রসুল (সাঃ) এত পরিমানে ভালবাসতেন যার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ,আয়েশার ভালবাসার ব্যাপারে কিয়ামতের মাঠে আমারে প্রশ্ন কইরেন না। আমি তো আমার সকল বিবিগনের হক্ক সমান ভাবে আদায় করি কিন্তু ভালবাসি বেশি আয়েশা কে। এত ভালবাসার মানুস আয়েশা (রা:) কে সামনে বসাইয়া বলতেছেন, “আয়েশা, সেদিন আমার পরিচয় চলবেনা! চলবেনা!! চলবেনা!!!” আয়েশা (রাঃ) যেখান থেকে পানি পান করতেন, তিনিও সেখান থেকে পানি পান করতেন, আয়েশা (রাঃ) যেখান থেকে খেতেন, তিনিও সেখান থেকে খেতেন। সেই মুহাব্বতের মানুষটি কে রসুল (সা:) বলতেছেন আমার পরিচয় কিয়ামতে চলবেনা (বোখারি)

 

ফাতেমা রাঃ এর সাথে আল্লাহর রসুল (সাঃ) এর এত ভালবাসা ছিল, ফাতেমা (রাঃ) এর চোখে পানি আসলে রসুলের চোখে লাজিম পানি আসত, একটা দিন ফাতেমাকে না দেখে থাকতে পারতেন না একদিন খবর আসল ফাতেমা অসুস্থ, মেয়ে অসুস্থের খবর শুনে দৌড়ে চলে গেলেন, ঘরের দরজায় নক করলেন, ফাতেমা (রা:) ভিতর থেকে আওয়াজ দিলেন, আব্বা একা? হুজুর (সাঃ) বললেন, না, আমার সাথে ইমরান বিন হোসাইন আছে। তো ফাতেমা (রাঃ) বলতেছেন আব্বা চলে যান, আমার কাছে এতটুকু কাপড় নাই যে আপনার সামনে আসব! জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনি, দু-জাহানের সর্দারের মেয়ে, যার কিনা এতটুকু কাপড় নাই যে বাপের সামনে আসবে। রসুল সাঃ দেয়ালের উপর দিয়ে নিজের গায়ের চাদর ছুঁড়ে দিলেন, সেটা পরিধান করে ফাতেমা সামনে আসলেন। ফাতেমা ডান দিকে বসে রসুলের কাধে মাথা রেখে চোখের পানি ছেঁড়ে দিলেন। রসুল (সাঃ) এর চোখে অটোমেটিক পানি চলে আসল ফাতেমা (রাঃ) বলতেছিলেন, “আব্বা এইভাবে আর কয়দিন চলবে, ঘরে একটা খেজুরের বিচিও নাই যে চাবাইয়া পানি খাব! একটা টাকা নাই যে ঔষধ আনব, জ্বরে কাতর হয়ে গেছি...” যাইহোক লম্বা ঘটনা বলা উদ্দেশ্যে না এইযে এত আদরের মেয়েকে বসাইয়াও আল্লাহর রসুল (সাঃ) বলতেছেন, “ফাতেমা কিয়ামতের দিন আমার পরিচয় চলবেনা! চলবেনা!! চলবেনা!! হে ফাতিমা! জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর। কেননা, আমি উপকার-অপকারের মালিক নই। (সহীহ মুসলিম /১১৪)

 

সালমান ফারসি (রাঃ), যখন ফাতেমা (রাঃ) এর লাশকে কবরে রাইখা কবরকে পরিচয় দিতেছিল, কবর! তুমি জানো? কার মেয়ে, কাদের মা, কার বিবিকে রাখা হচ্ছে? কবরের জবাবঃআমি কে নবীজির মেয়ে চিনিনা, কে আলির বউ চিনিনা, কে হাসান-হোসাইন এর মা চিনিনা, কে বেহেস্তের মহিলাদের সর্দারনি চিনিনা, আমি চিনি ঈমান আমল। যে ঈমান নেক আমল নিয়ে আসবে আমি তার সাথে উত্তম ব্যবহার করব যে আসবে না আমি দেখাব আমার শাস্তি কি জিনিস!” (বর্ণনাটির ব্যাপারে যদিও অনেক আলেম একমত নন)

 

নবী,সাহাবিদের কাহিনি বলা উদ্দেশ্য না, উদ্দেশ্য এই যে, নবীরা মাসুম কোন গোনাহ নেই, সাহাবিদের আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। দুনিয়াতে থেকেই সাহাবিরা জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়ে গেছেন। তবুও সেই নবী রসুল গন, সাহাবিগন এত আমল থাকার পরও কত চিন্তা ফিকির তাদের ছিল, আর আমরা লক্ষ কোটি গোনাহ নিয়ে দিব্বি চলছি, একটুও ফিকির নেই। সম্পদের পিছনে দৌড়াচ্ছি, সাপ হইয়া গলায় পেচানো থাকবে হারাম সম্পদ, ফ্যামিলি ফ্যামিলি করছি, মা বলবে আমার তো বিয়েই হয়নি আবার সন্তান কোত্থেকে আসল, একটু মোরাকাবা বা ধ্যান করে দেখিনা কে কার!!! কেউ কারো না হাশরের মাঠে টাকার পিছনে দৌড়াচ্ছি কাফনের তো পকেট নাই। দুনিয়ার এইসব কামাই রোজগার, সম্পদ, টাকা কিভাবে সাথে নিবেন! কিসের জন্য এসব করছেন! একবার ভাবুন মুসলিম সকল, ভাবুন সেই কঠিন দিনের কথা! সেদিন কিছুই কাজে আসবে না। কোন পরিচয়ই কাজে আসবে না। কাজে আসবে শুধু ঈমান আর নেক আমল

সময় শেষ হয়ে যায়নি, তওবার দরজার এখনো বন্ধ হয়নি, তাই আসুন না একটু মোরাকাবা করি নিজেকে নিয়ে, তওবা করে, হাত দুটো প্রসারিত করে আল্লাহর জন্য চোখের পানি ছেঁড়ে দেই। নিজের ফিকিরে নিজেই লাগি, কিভাবে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যাব, কিভাবের আমি গোনাহগুলি ছাড়তে পারব, আজ থেকেই খাস দিলে তওবা করে গোনাহের সব জায়গা ত্যাগ করি। আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা আপনি আল্লাহর জন্য যা ছাড়বেন আল্লাহ তার থেকে উত্তম টা দিবেন

 اِنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ , উচ্চারণঃ ইন্না ওয়াদাল্লা-হি হাক্ক, অর্থাৎ আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য

(সূরা ইউনুস (يونس), আয়াত: ৫৫)

#কেয়ামত

#কেয়ামতের ভয়াবহ দিন

#সেই ভয়াবহ দিনে কোন পরিচয় কাজে আসবে না

#কোন সম্পদ কাজে আসবে না

#কেয়ামতের দিন হবে খুবই ভয়াবহ দিন

#সকল নবীগণও সেদিন ভয়ে কাঁপতে থাকবেন

#সমস্ত মানুষ উলঙ্গ হয়ে ছুটতে থাকবে

#সেদিন কেউ কাউকে চিনবে না


|| ★★সমাপ্ত★★ ||



সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url