সূরা আল ইনশিরাহ তেলাওয়াত, উচ্চারণ ও তাফসীর || ক্বারী শেখ আব্দুল বাসেত || সূরা ইনশিরাহ বাংলা উচ্চারণ || সূরা ইনশিরাহ তাফসীর ||

সূরা ইনশিরাহ তেলাওয়াত

সূরা আল ইনশিরাহ তেলাওয়াত, উচ্চারণ ও তাফসীর

সূরা ইনশিরাহ আরবী উচ্চারণ

১.   اَلَمۡ نَشۡرَحۡ لَکَ صَدۡرَکَ
২.  وَ وَضَعۡنَا عَنۡکَ وِزۡرَکَ
৩.   الَّذِیۡۤ اَنۡقَضَ ظَهۡرَکَ
৪.  وَ رَفَعۡنَا لَکَ ذِکۡرَکَ ؕ
৫.   فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ۙ
৬.   اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ؕ
৭.   فَاِذَا فَرَغۡتَ فَانۡصَبۡ
৮.   وَ اِلٰی رَبِّکَ فَارۡغَبۡ

সূরা ইনশিরাহ বাংলা উচ্চারণ

১.   আলাম নাশরাহলাকা সাদরাক।
২.   ওয়া ওয়াদা‘না-‘আনকা বিঝরাক
৩.   আল্লাযীআনকাদা জাহরাক।
৪.   ওয়া রাফা‘না-লাকা যিকরাক।
৫.   ফাইন্না মা‘আল ‘উছরি ইউছরা-।
৬.   ইন্না মা‘আল ‘উছরি ইউছরা-।
৭.   ফাইযা-ফারাগতা ফানসাব।
৮.   ওয়া ইলা- রাব্বিকা ফারগাব।

সূরা ইনশিরাহ বাংলা অনুবাদ

১.  আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রশস্ত করিনি? 
২.  আর আমি নামিয়ে দিয়েছি তোমার থেকে তোমার বোঝা,
৩.  যা তোমার পিঠ ভেঙ্গে দিচ্ছিল। 
৪.  আর আমি তোমার (মর্যাদার) জন্য তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। 
৫.  সুতরাং কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ। 
৬.  নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ।
৭.  অতএব যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হও। 
৮.  আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও।

সূরা ইনশিরাহ তাফসীর

১. আমরা কি আপনার বক্ষ আপনার কল্যাণে প্রশস্ত করে দেইনি?(১)

(১) شرح শব্দের অর্থ উন্মুক্ত করা। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্ষদেশ উন্মুক্ত করে দেবার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে, “কাজেই যে ব্যক্তিকে আল্লাহ হেদায়াত দান করার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।” [সূরা আল-আন’আম: ১২৫] আবার কোথাও বলা হয়েছে, “আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং যে তার রবের দেয়া আলোতে রয়েছে, সে কি তার সমান যে এরূপ নয়? দুর্ভোগ সে কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য যারা আল্লাহর স্মরণে পরাঙ্মুখ! তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তি তে আছে।” [সূরা আয-যুমার: ২২] এই উভয় স্থানে বক্ষদেশ উন্মুক্ত করার অর্থই হচ্ছে, সব রকমের মানসিক অশান্তি ও সংশয়মুক্ত হওয়া, জ্ঞান ও সত্য উপলব্ধি করার উপযুক্ত করা এবং বক্ষকে প্রজ্ঞার আধার করার জন্য প্রস্তুত করা। জ্ঞান, তত্ত্বকথা ও উত্তম চরিত্রের জন্যে তার বক্ষকে প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছে। কোন কোন তাফসীরবিদ এস্থলে বক্ষ উন্মুক্ত করার অর্থ সে বক্ষ বিদারণই নিয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, ফেরেশতাগণ আল্লাহর আদেশে বাহ্যত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্ষ বিদারণ করে তাকে যাবতীয় পঙ্কিলতা থেকে পরিষ্কার করে তাতে জ্ঞান ও তত্ত্বকথা দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছিলেন। [মুসলিম: ১৬৪, তিরমিযী: ৩৩৪৬] উপরোক্ত সব কয়টি অর্থই এ আয়াতে হওয়া সম্ভব, আর একটি অপরটির পরিপূরক। [আদ্‌ওয়াউল বায়ান]

২. আর আমরা অপসারণ করেছি আপনার ভার,


৩. যা আপনার পিঠ ভেঙ্গে দিচ্ছিল।(১)

(১) وزر এর শাব্দিক অর্থ বোঝা, আর نقض ظهر এর শাব্দিক অর্থ কোমর বা পিঠ ভারী করে দেয়া। অর্থাৎ কোমরকে নুইয়ে দেয়া। কোন বড় বোঝা কারও মাথায় তুলে দিলে যেমন তার কোমর নুয়ে পড়ে, তেমনি আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে বোঝা আপনার কোমরকে নুইয়ে দিয়েছিল, আমরা তাকে আপনার উপর থেকে অপসারিত করে দিয়েছি। সে বোঝা কি ছিল, তার ব্যাখ্যায় কোন কোন তাফসীরবিদ বলেছেন যে, নবুওয়তের গুরুভার তার অন্তর থেকে সরিয়ে দেয়া ও তা সহজ করে দেয়ার সুসংবাদ এ আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। [আদ্‌ওয়াউল বায়ান]

৪. আর আমরা আপনার (মর্যাদা বৃদ্ধির) জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি(১)

(১) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক সম্মানিত করা হয়েছে; কোন সৃষ্টিকে তার মত প্রশংসনীয় করা হয় নি। এমনকি আযান, ইকামত, খুতবা, ইত্যাদির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নামের সাথেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম স্মরণ করা হয়। এভাবে তার মর্যাদা ও স্মরণ সমুন্নত করা হয়েছে। এ-ছাড়াও তার উম্মত ও অনুসারীদের নিকট তার সম-মর্যাদার আর কেউ নেই। [সা’দী]

৫. সুতরাং কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে


৬. নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।(১)

(১) আরবী ভাষার একটি নীতি এই যে, আলিফ ও লামযুক্ত শব্দকে যদি পুনরায় আলিফ ও লাম সহকারে উল্লেখ করা হয়, তবে উভয় জায়গায় একই বস্তুসত্তা অর্থ হয়ে থাকে এবং আলিফ ও লাম ব্যতিরেকে পুনরায় উল্লেখ করা হলে উভয় জায়গায় পৃথক পৃথক বস্তুসত্তা বোঝানো হয়ে থাকে। আলোচ্য আয়াতে العسر শব্দটি যখন পুনরায় العسر উল্লেখিত হয়েছে, তখন বোঝা গেল যে, উভয় জায়গায় একই عسر অর্থাৎ কষ্ট বোঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে يسر শব্দটি উভয় জায়গায় আলিফ ও লাম ব্যতিরেকে উল্লেখিত হয়েছে। এতে নিয়মানুযায়ী বোঝা যায় যে, দ্বিতীয় يسر তথা স্বস্তি প্রথম يسر তথা স্বস্তি থেকে ভিন্ন। অতএব আয়াতে (إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا) এর পুনরুল্লেখ থেকে জানা গেল যে, একই কষ্টের জন্যে দুটি স্বস্তির ওয়াদা করা হয়েছে। দু’এর উদ্দেশ্যও এখানে বিশেষ দু’এর সংখ্যা নয়; বরং উদ্দেশ্য অনেক। অতএব সারকথা এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি কষ্টের সাথে তাকে অনেক স্বস্তি দান করা হবে। হাদীসে এসেছে, “নিশ্চয় বিপদের সাথে মুক্তি আছে, আর নিশ্চয় কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি”। [মুসনাদ আহমাদ: ১/৩০৭] হাসান বসরী ও কাতাদাহ বলেন, ‘এক কষ্ট দুই স্বস্তির উপর প্রবল হতে পারে না’। [ফাতহুল কাদীর, তাবারী]

৭. অতএব আপনি যখনই অবসর পান তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হোন।


৮. আর আপনার রবের প্রতি গভীর মনোযোগী হোন।(১)

(১) النصب অর্থ কঠোর প্রচেষ্টার পর ক্লান্ত হওয়া। এ প্রচেষ্টাটি দুনিয়ার কাজেও হতে পারে, আবার আখেরাতের কাজেও হতে পারে। এখানে কী উদ্দেশ্য তা নিয়ে কয়েকটি মত পাওয়া যায়। সবগুলো মতই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ সালাতের পর দু'আয় রত হওয়া। কেউ কেউ বলেন, ফরযের পর নফল ইবাদতে রত হওয়া। মূলত এখানে উদ্দেশ্য দুনিয়ার কাজ থেকে খালি হওয়ার পর আখিরাতের কাজে রত হওয়াই উদ্দেশ্য। শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহরই নিকট মনোযোগী হয়ে সকল ইবাদত যেন তিনি কবুল করে নেন, এ আশা করো। এ আয়াতে মুমিনদের জীবনে বেকারত্বের কোন স্থান দেওয়া হয় নি। হয় সে দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকবে, নয় আখেরাতের কাজে। [আদওয়াউল বায়ান, সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া



******************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url