লোভ আর বিশ্বাস এক নয় || আপনার লোভের কারণেই সমাজে আজ বিশ্বাস বিনষ্ট ||

আপনার লোভের কারণেই সমাজে আজ বিশ্বাস বিনষ্ট

তিন লাখ টাকার বাইক কিনবেন এক লাখ টাকায়, খুশি আর আনন্দে আটখানা হয়ে এক সাথে দশটা বাইকের অর্ডার করে দিলেন। একটা নিজে চালাবেন, আর বাকিগুলো বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করবেন ! একটা বারও ভাবলেন না মোটর বাইক কি ওদের বাবার কোম্পানি থেকে দিবে নাকি চুরি করে দিবে? আপনি দশটি বাইকের মূল্য বাবত দশ লাখ টাকা পাঠিয়ে দিলেন, একেবারে বিনা ডকুমেন্টে।

লাখে আড়াই হাজার টাকা মাসিক সুদের লোভে আপনার চোখ যেন চকচক করে উঠেছিল। আহা, ৫০ লাখ টাকা এদের কাছে রাখতে পারলে মাসে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতে আসবে! ভাবা যায়, পায়ের উপর পা তুলে পুরো পরিবার খাওয়া যাবে। অথৈ সুখের লালসায় দিশেহারা আপনি  লাখ লাখ টাকা লগ্নী করেছেন আশার আলো, তামান্না, মনজিল, আল আকাবা, যুবক ইত্যাদি এরকম নানা প্রতিষ্ঠানে। 

খুব অল্প দিনের মধ্যেই আপনি একেবারে সর্বশান্ত হয়ে, এখন মাথায় টুপি পড়েছেন এবং মসজিদের খাদেম মুয়াজ্জিনের চেয়েও বেশি মসজিদ মুখি হয়ে পরেছেন। আপনি এখন কথায় কথায় জ্ঞানগর্ব বাণী ছাড়েন, “এই পৃথিবীর কেউ কাউকে বিশ্বাস করো না, বিশ্বাস করলেই আমার মত হাতে হারিকেন...... বাঁশ”। আর সুযোগ পেলেই আল্লাহর কাছে কপাল চাপড়িয়ে তাদেরকে অভিশম্পাৎ করেন যাদের কারণে আজ আপনার এই অবস্থা। আচ্ছা, আপনি কি আসলেই কাউকে বিশ্বাস করেছিলেন! লোভ আর বিশ্বাস এক সাথে থাকতে পারে না। লোভ আর বিশ্বাস এক নয়।


থামুন! আপনার এই দাড়ি, টুপি আর এই মসজিদ প্রীতি কোন কাজেই আসবে না, যতক্ষণ না আপনি তওবাহ করছেন। কারণ, সুদ যিনি দেন, যিনি গ্রহণ করেন এবং যিনি হিসাব রাখেন তাদের প্রত্যেকের জন্যই একই রকম এবং ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে। সুদের ৭০ প্রকার গুনাহের মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ হচ্ছে মায়ের সাথে জিনাহ করার মত নিকৃষ্ট গুনাহ। আপনি লোভে পড়ে  এত বড় একটি গুনাহের কাজ করে আজ আপনি কপাল চাপড়িয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চাইছেন, অভিসম্পাৎ করছেন এসব লানৎ আপনার উপরও বর্ষিত হচ্ছে। কারণ, আপনি জেনে শুনেই সুদের পথে পা দিয়েছেন, সুদ খেয়েছেন। সুতরাং সুদ গ্রহণকারী হিসাবে আপনার উপরও লানৎ ! আপনি যে কথায় কথায় অভিসম্পাৎ করছেন তার ভাগিদার আপনার অজান্তে আপনিও হচ্ছেন। নাউজুবিল্লাহ, আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।

অনৈতিক লাভ ও লোভের কারণে ধরা খেয়ে, আপনি আজ মহা পন্ডিত !! ছেলে মেয়ে, আপনজন, পাড়া প্রতিবেশির কাছে, এমনকি সোস্যাল মিডিয়ায়ও অহোরাত্র আপনি জ্ঞানগর্ব বাণী ছাড়ছেন। সবক্ষেত্রেই বাণীগুলো সারমর্ম হচ্ছে, “পৃথিবীতে টাকা পয়সা নিয়ে কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। কারও উপকার করা যাবে না, উপকার করলেই বাঁশ...।” কিন্তু ভুলেও একবারও বলেন না, লোভের কথা! বলেন না যে, লোভ করা যাবে না। সব সময় উল্টোটা বলেন, ‘কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না।’ আপনাকে আবারও বলছি-লোভ আর বিশ্বাস এক নয়। যেখানে লোভ থাকে সেখানে বিশ্বাস থাকতে পারে না। আপনি এখন এমন পন্ডিতই হয়েছেন, এমন কি ভাল কোন কোম্পানি দেখলেও নির্লজ্জের মত বলেন, ‘এটা আবার আশার আলোর মত, তামান্নার মত, যুবকের মত হবে না তো?’ অথচ ওরা ছিল সুদের ব্যবসায়ী, আর যার সম্পর্কে বলছেন সে হয়তো ডেভলোপার বা কন্টাক্টর কিংবা প্রকৃতই একজন ব্যবসায়ী। অর্থাৎ কাউকেই আপনার এখন আর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। সুদের যেসব অপকারিতার কথা বলা হয়েছে, এটা হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ, অর্থাৎ মানুষের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে। আর এই কাজটি আপনার দ্বারাই হচ্ছে। একে তো পাপ করেছেন সুদের লোভে পড়ে আর এখন পাপ করছেন আপনি প্রতারিত হয়েছেন সেকথা ফলাও করে প্রচার করে। আপনার এই প্রচারের কারণে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বাস, ভালবাসা ও সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। আসুন এ বিষয়ে আরেকটু কথা বলা যাক-


“কাউকে বিশ্বাস করো না” এই যে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে অবিশ্বাসের বিষ বাস্প আপনি রোপন করে চলছেন, এই সমাজকে দূষিত কলুষিত করছেন এর দায় আল্লাহ আপনার ঘাড়েই চাপিয়ে দিবেন। একটা পাপ থেকে আপনি শতটা পাপ করে চলছেন। আপনি সুদের পিছনে ছুটে সর্বশান্ত হয়ে সবাইকে শুধু বলে বেড়াচ্ছেন বিশ্বাসের মূল্য দিচ্ছেন। বিশ্বাস কি, আপনি সেটা জানেন? বিশ্বাস মানেই ঈমান। বিশ্বাস না থাকলে পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভালবাসা, মানবিকতা, ভাতৃত্ববোধ ইত্যাদি থাকে না। বিশ্বাস না থাকলে সমাজ টিকে না। বিশ্বাস না থাকলে পরিবার টিকে না, সম্পর্ক টিকে না। বিশ্বাস না থাকলে ঈমান টিকে না। আপনি সেই ব্যাক্তি যে মানুষের ঈমান নিয়ে খেলছেন। অনুভব করুন, একবার অনুভব করুন, এটা কত ঘৃণ্য কাজ করছেন। আসলে আপনার বলা উচিৎ ছিল কেউ লোভ করো না, কেউ সুদ খেয়ো না, তাহলে আমার মত সর্বহারা হতে হবে। আস্তাগফিরুল্লাহ, আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।


এবার আপনাকে বলছি। আপনি কারও কাছে কখনও ঠকেছেন? সত্যিকারের উপকার করতে গিয়ে ঠকেছেন? না কি নিজে লোভে পরে ঠকেছেন? যদি সত্যিকারের উপকার করতে গিয়ে বা নির্দোষ বিশ্বাস করে ঠকে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকুন, ইন শা আল্লাহ, আপনি আজ অথবা কাল দুনিয়াতেই এর উত্তম প্রতিদান পাবেন এবং ধৈর্য্য ধারণের বিনিময়ে পরকালেও আপনার জন্য রয়েছে অতি উত্তম প্রতিদান। আর যদি দুনিয়ার কোন লোভে যেমন অনৈতিক লাভ, সুদ বা অন্য কোন সুবিধাদি পাওয়ার আশায় কারও দ্বারা প্রতারিত হয়ে ঠকে থাকেন, তবে তওবাহ করুন। একেবারেই নিশর্ত তওবাহ করুন। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থাহীনতার জন্য আপনিই দায়ী। আপনার তওবাহ করা উচিৎ, বেশি বেশি তওবাহ করা উচিৎ। সেই সাথে মানুষকে কখনোই নির্লজ্জের মত বলবেন না যে, মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছেন, বরং বলবেন, “আমি লোভ করে ঠকেছি, কেউ লোভ করো না। কেউ কখনও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না।”  আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।
আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url