সূরা আল-আলাক তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর || কারী শেখ আব্দুল বাসিত ||

সূরা আল-আলাক তেলাওয়াত

কারী শেখ আব্দুল বাসিত


সূরা আল-আলাক আরবী উচ্চারণ

১.   اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ
২.  خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ ۚ
৩.   اِقۡرَاۡ وَ رَبُّکَ الۡاَکۡرَمُ ۙ
৪.   الَّذِیۡ عَلَّمَ بِالۡقَلَمِ
৫.   عَلَّمَ الۡاِنۡسَانَ مَا لَمۡ یَعۡلَمۡ
৬.   کَلَّاۤ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَیَطۡغٰۤی
৭.   اَنۡ رَّاٰهُ اسۡتَغۡنٰی
৮.   اِنَّ اِلٰی رَبِّکَ الرُّجۡعٰی
৯.   اَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ یَنۡهٰی
১০.   عَبۡدًا اِذَا صَلّٰی
১১.    اَرَءَیۡتَ اِنۡ کَانَ عَلَی الۡهُدٰۤی
১২.   اَوۡ اَمَرَ بِالتَّقۡوٰی 
১৩.   اَرَءَیۡتَ اِنۡ کَذَّبَ وَ تَوَلّٰی
১৪.   اَلَمۡ یَعۡلَمۡ بِاَنَّ اللّٰهَ یَرٰی 
১৫.   کَلَّا لَئِنۡ لَّمۡ یَنۡتَهِ ۬ۙ لَنَسۡفَعًۢا بِالنَّاصِیَۃِ 
১৬.   نَاصِیَۃٍ کَاذِبَۃٍ خَاطِئَۃٍ
১৭.   فَلۡیَدۡعُ نَادِیَهٗ 
১৮.   سَنَدۡعُ الزَّبَانِیَۃَ 
১৯.  کَلَّا ؕ لَا تُطِعۡهُ وَ اسۡجُدۡ وَ اقۡتَرِبۡ

সূরা আল-আলাক বাংলা উচ্চারণ

১. ইকরা বিছমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক।
২. খালাকাল ইনছা-না মিন ‘আলাক।
৩. ইকরা’ ওয়া রাব্বুকাল আকরাম
৪. অল্লাযী ‘আল্লামা বিলকালাম।
৫. ‘আল্লামাল ইনছা-না-মা-লাম ইয়া‘লাম।
৬. কাল্লাইন্নাল ইনছা-না লাইয়াতগা।
৭. আররাআ-হুছ তাগনা-।
৮. ইন্না ইলা-রাব্বিকার রুজ‘আ-।
৯. আরাআইতাল্লাযী ইয়ানহা-
১০. ‘আবদান ইযা-সাল্লা-।
১১. আরাআইতা ইন কা-না ‘আলাল হুদা।
১২. আও আমারা বিত্তাকাওয়া-।
১৩. আরাআইতা ইন কাযযাবা ওয়া তাওয়াল্লা-।
১৪. আলাম ইয়া‘লাম বিআন্নাল্লা-হা ইয়ারা-।
১৫. কাল্লা-লাইল্লাম ইয়ানতাহি লানাছফা‘আম বিন্না-সিয়াহ।
১৬. না-সিয়াতিন কা-যিবাতিন খা-তিআহ।
১৭. ফালইয়াদ‘উ নাদিয়াহ,
১৮. ছানাদ‘উঝঝাবা-নিয়াহ।
১৯. কাল্লা- লা-তুতি‘হু ওয়াছজু দ ওয়াকতারিব (ছিজদাহ-১৪)।

সূরা আল-আলাক অনুবাদ

১.  পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
২.  তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে 'আলাক' থেকে।
৩.  পড়, আর তোমার রব মহামহিম। 
৪.  যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।
৫.  তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।
৬.  কখনো নয়, নিশ্চয় মানুষ সীমালঙ্ঘন করে থাকে। 
৭.  কেননা সে নিজকে মনে করে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
৮.  নিশ্চয় তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্তন। 
৯.  তুমি কি তাকে দেখেছ যে নিষেধ করে।
১০.  এক বান্দাকে, যখন সে সালাত আদায় করে? 
১১.  তুমি কি দেখেছ, যদি সে হিদায়াতের উপর থাকে, 
১২.  অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়? 
১৩.  যদি সে মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়?
১৪.  সে কি জানেনা যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখেন? 
১৫.  কখনো নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি তাকে কপালের সম্মুখভাগের চুল ধরে টেনে- হিঁচড়ে নিয়ে যাব।
১৬.  মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ কপাল। 
১৭.  অতএব, সে তার সভাসদদের আহবান করুক। 
১৮.  অচিরেই আমি ডেকে নেব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।
১৯.  কখনো নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না। আর সিজদা কর এবং নৈকট্য লাভ কর।[সাজদাহ]

সূরা আল-আলাক এর তাফসীর

১. পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন(১)

(১) শুধু বলা হয়েছে, “সৃষ্টি করেছেন” কাকে সৃষ্টি করেছেন তা বলা হয়নি। এ থেকে আপনা-আপনিই এ অর্থ বের হয়ে আসে, সেই রবের নাম নিয়ে পড় যিনি স্রষ্টা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের, সমগ্র সৃষ্টিজগতের। [আদওয়াউল বায়ান]

২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে।(১)

(১) পূর্বের আয়াতে সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টির বর্ণনা ছিল। এ আয়াতে সৃষ্টিজগতের মধ্য থেকে বিশেষ করে মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, মানুষকে ‘আলাক’ থেকে সৃষ্টি করেছেন। ‘আলাক’ হচ্ছে ‘আলাকাহ’ শব্দের বহুবচন। এর মানে জমাট বাঁধা রক্ত। সাধারণভাবে বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টির কথা বলার পর বিশেষ করে মানুষের কথা বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কেমন হীন অবস্থা থেকে তার সৃষ্টিপর্ব শুরু করে তাকে পূর্ণাংগ মানুষে রূপান্তরিত করেছেন। [কুরতুবী]

৩. পড়ুন, আর আপনার রব মহিমান্বিত(১)

(১) এখানে পড়ার আদেশের পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, প্রথম আদেশটি নিজে পাঠ করার আদেশ, আর দ্বিতীয়টি অন্যকে পাঠ করানো বা অন্যের নিকট প্রচারের নির্দেশ। [ফাতহুল কাদীর] অতঃপর মহান রব আল্লাহর সাথে أَكْرَم বিশেষণ যোগ করার মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টি করা এবং তাদের শিক্ষাদান করার নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার নিজের কোন স্বার্থ ও লাভ নেই; বরং এগুলো তাঁরই অনুগ্রহ, তাঁরই দান। তিনি সর্বমহান দানশীল ও মহামহিমান্বিত। [আদওয়াউল বায়ান, মুয়াস্‌সার]


৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন(১)

(১) মানব সৃষ্টির কথা বর্ণনার পর এখানে মানুষের শিক্ষার প্রসঙ্গটি উল্লেখিত হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি মানুষকে কলমের মাধ্যমে তথা লেখার শিক্ষা দান করেছেন। তা না হলে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের উন্নতি, বংশানুক্রমিক ক্ৰমবিকাশ সম্ভব হত না। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পূর্ববর্তদের জীবন-কাহিনী, আসমানী-কিতাব সব কিছুই সংরক্ষিত হয়েছে লেখনির মাধ্যমে। কলম না থাকলে, দ্বীন এবং দুনিয়ার কোন কিছুই পূর্ণরূপে গড়ে উঠত না। [ফাতহুল কাদীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা'আলা যখন প্রথম সবকিছু সৃষ্টি করেন, তখন আরশে তার কাছে রক্ষিত কিতাবে একথা লিপিবদ্ধ করেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল থাকবে।” [বুখারী: ৩১৯৪, ৭৫৫৩, মুসলিম: ২৭৫১] হাদীসে আরও বলা হয়েছে, “আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার নির্দেশ দেন। সেমতে কলম কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখে ফেলে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩১৭]

৫. শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।(১)

(১) পূর্বের আয়াতে ছিল কলমের সাহায্যে শিক্ষা দানের বর্ণনা। এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রকৃত শিক্ষাদাতা আল্লাহ তা'আলা। মানুষ আসলে ছিল সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন। আল্লাহর কাছ থেকেই সে যা কিছু জ্ঞান লাভ করেছে। [সা’দী] কলমের সাহায্যে যা শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তিনি এমন সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা মানুষ জানত না। কেউ কেউ বলেন, এখানে মানুষ বলে আদম আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাকে বিভিন্ন বস্তুর নাম ও গুণাগুণ শিক্ষা দিয়েছেন। যেমনটি সূরা আল-বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

৬. বাস্তবেই(১), মানুষ সীমালঙ্ঘনই করে থাকে,

(১) كلا বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে, حقا বা বাস্তবেই, অবশ্যই হয় এমন। [মুয়াস্‌সার, তাফসীরুল কুরআন লিল উসাইমীন: ১/২৬১]


৭. কারণ সে নিজকে অমুখাপেক্ষী মনে করে।(১)

(১) অর্থাৎ দুনিয়ায় ধন-দৌলত, সম্মান-প্রতিপত্তি যা কিছু সে চাইতো তার সবই সে লাভ করেছে। এ দৃশ্য দেখে সে কৃতজ্ঞ হবার পরিবর্তে বরং বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করেছে এবং সীমালজম্বন করতে শুরু করেছে। [সা'দী] বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, একবার আবু জাহল বলল, যদি মুহাম্মদকে কিবলার দিকে ফিরে সালাত আদায় করতে দেখি তবে আমি অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত আদায় করতে আসলে আবু জাহল তাকে বলল, তোমাকে কি আমি সালাত আদায় করতে নিষেধ করিনি? তোমাকে কি আমি এটা থেকে নিষেধ করিনি? রাসূল তার কাছ থেকে ফিরে আসলেন, আবু জাহলের সাথে তার বিতণ্ডা হলো, তখন আবু জাহল বলল, আমার চেয়ে বড় সভাসদের অধিকারী কি কেউ আছে? তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন যে, “সে যেন তার সভাসদদের ডাকে, আমরাও অচিরেই যাবানিয়াদের ডাকব”। ইবনে আব্বাস বলেন, আল্লাহর শপথ, যদি সে তার সভাসদদের ডাকত। তবে অবশ্যই তাকে আল্লাহর যাবানিয়া পাকড়াও করত। [বুখারী: ৪৯৫৮, তিরমিযী: ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/২৫৬, ৩২৯, ৩৬৮]

কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, আবু জাহল বলেছিল, মুহাম্মাদ কি তোমাদের সামনে মাটিতে মুখ ঘসে? তাকে বলা হল যে, হ্যাঁ, তখন সে বলল, লাত ও উযযার শপথ! যদি আমি তাকে তা করতে দেখি তবে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পা দিয়ে দাবিয়ে দিব, অথবা তার মুখ মাটিতে মিশিয়ে দেব। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসল, তিনি তখন সালাত আদায় করছিলেন। সে তার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তার ধারণা অনুসারে সে তার মাথা গুড়িয়ে দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু কাছে যাওয়ার পর সে পিছনের দিকে ফিরে আসতে বাধ্য হলো এবং হাত দিয়ে বাধা দিচ্ছিল। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, আমার ও তার মাঝে আগুনের একটি খন্দক দেখতে পেলাম এবং ভীতিপ্রদ ও ডানবিশিষ্টদের দেখতে পেয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি সে নিকটবর্তী হতো। তবে ফেরেশতাগণ তাকে টুকরা টুকরা করে ছিড়ে ফেলত। তখন আল্লাহ নাযিল করেন, “কখনও নয়, মানুষ তো সীমালঙ্ঘন করে থাকে, যখন সে নিজেকে অমুখাপেক্ষী দেখতে পায়...” [মুসলিম: ২৭৯৭]

আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী আবু জাহলকে লক্ষ্য করে বক্তব্য রাখা হলেও ব্যাপক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের একটি নৈতিক দুর্বলতা বিধৃত হয়েছে। মানুষ যতদিন নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অমুখাপেক্ষী মনে না করে, ততদিন সে সীমালঙ্ঘন করে না। কিন্তু যখন সে মনে করতে থাকে যে, সে কারও মুখাপেক্ষী নয়, তখন তার মধ্যে অবাধ্যতা এবং সীমালঙ্ঘন প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। অথচ, আল্লাহ তা'আলাই তাকে সৃষ্টি করেছেন রক্তপিণ্ড থেকে, তাকে তার মায়ের গর্ভে যত্নে রেখেছেন, বেড়ে ওঠার যাবতীয় উপায়-পদ্ধতির ব্যবস্থা করে দেন; তারপরেও যখনই সে নিজেকে ধন-সম্পদ বা ক্ষমতার অধিকারী মনে করা শুরু করে, তখনই সে এমনকি তার রবের সাথেও সীমালজম্বন করে। [আদওয়াউল বায়ান]


৮. নিশ্চয় আপনার রবের কাছেই ফিরে যাওয়া।(১)

(১) অর্থাৎ দুনিয়ায় সে যাই কিছু অর্জন করে থাকুক না কেন এবং তার ভিত্তিতে অহংকার ও বিদ্রোহ করতে থাকুক না কেন, অবশেষে তাকে আপনার রবের কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেখানে সে অবাধ্যতার কুপরিণাম তখন স্বচক্ষে দেখে নেবে। [মুয়াস্‌সার, সা’দী]

৯. আমাকে জানাও (এবং আশ্চর্য হও) তার সম্পর্কে, যে বাধা দেয়,

১০. এক বান্দাকে(১)—যখন তিনি সালাত আদায় করেন।

(১) বান্দা বলতে এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] এ পদ্ধতিতে কুরআনের কয়েক জায়গায় তার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন “পবিত্র সেই সত্তা যিনি তার বান্দাকে নিয়ে গিয়েছেন এক রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসার দিকে।” [সূরা আল-ইসরা: ১]। আরও এসেছে, “সমস্ত প্রশংসা সেই সত্তার যিনি তাঁর বান্দার ওপর নাযিল করেছেন কিতাব।” [সূরা আল-কাহফ: ১] আরও বলা হয়েছে, “আর আল্লাহর বান্দা যখন তাকে ডাকার জন্য দাঁড়ালো তখন লোকেরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হলো।” [সূরা আল-জিন্ন: ১৯]

১১. আমাকে বল! যদি তিনি হিদায়াতের উপর থাকেন,

১২. অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেন; (তারপরও সে কিভাবে বাধা দেয়?!)

১৩. আমাকে বল! যদি সে (নিষেধকারী) মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়,

১৪. সে কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ দেখেন?!(১)


(১) এখানে আশ্চর্যবোধক এবং তিরস্কারসূচক প্রশ্ন করা হয়েছে যে, সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখছেন; তার এ কাজ-কর্মের প্রতিদান দেবেন? তবুও সে অবাধ্যতা করছে ও সৎকাজে বাধা প্রদান করছে কেন? [কুরতুবী]

১৫. কখনো নয়, সে যদি বিরত না হয় তবে আমরা তাকে অবশ্যই হেঁচড়ে নিয়ে যাব, মাথার সামনের চুলের গুচ্ছ ধরে(১)—

(১) سفع এর অর্থ কোন কিছু ধরে কঠোরভাবে হেঁচড়ানো। আর ناصية শব্দের অর্থ কপালের উপরিভাগের কেশগুচ্ছ। আরবদের মধ্যে রীতি ছিল যে, কারও অতি অসম্মান করার জন্য এই কেশগুচ্ছ মুঠোর ভেতরে নেয়া হত। [কুরতুবী]        

১৬. মিথ্যাচারী, পাপিষ্ঠ সম্মুখ-চুলের-গুচ্ছ।

১৭. অতএব সে তার পারিষদকে ডেকে আনুক!

১৮. শীঘ্রই আমরা ডেকে আনব যাবানিয়াদেরকে।(১)

(১) এখানে যাবানিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাহান্নামের প্রহরী কঠোর ফেরেশতাগণ। কাতাদাহ বলেন, আরবী ভাষায় الزبانية ‘যাবানিয়াহ’ শব্দের অর্থই হলো প্রহরী পুলিশ। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি আরবী ভাষায় বিশেষ বাহিনীর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর যাবান’ শব্দের আসল মানে হচ্ছে, ধাক্কা দেয়া। সে হিসেবে ‘যাবানিয়াহ’ এর অন্য অর্থ, প্ৰচণ্ডভাবে পাকড়াওকারী, প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়ে নিক্ষেপকারী। [ফাতহুল কাদীর]


১৯. কখনো নয়! আপনি তার অনুসরণ করবেন না। আর আপনি সিজদা করুন এবং নিকটবর্তী হোন।(১)

(১) এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে যে, আবু জাহলের কথায় কর্ণপাত করবেন না এবং সেজদা ও সালাতে মশগুল থাকুন। সিজদা করা মানে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ হে নবী! আপনি নিৰ্ভয়ে আগের মতো সালাত আদায় করতে থাকুন। এর মাধ্যমে নিজের রবের নৈকট্য লাভ করুন। কারণ, এটাই আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের উপায়। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বান্দা যখন সেজদায় থাকে, তখন তার পালনকর্তার অধিক নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সেজদায় বেশী পরিমাণে দোআ কর।” [মুসলিম: ৪৮২, আবু দাউদ: ৮৭৫, নাসায়ী: ২/২২৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৭০] অন্য এক হাদীসে আরও বলা হয়েছে, “সাজ্‌দার অবস্থায় কৃত দো'আ কবুল হওয়ার যোগ্য”। [মুসলিম: ৪৭৯. আবু দাউদ: ৮৭৬, নাসায়ী: ২/১৮৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/২১৯]

তাফসীরে জাকারিয়া                             



*************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url