রমজানের আদব || রোজা কবুল হওয়ার শর্ত || রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় ||

রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় এবং রমজানের আদবসমূহ


যে কোন কাজের আদব হল সেই কাজের সৌন্দর্য। ইবাদত-বন্দেগির আদবসমূহ ইবাদতকে উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ করে দেয়। যে ইবাদতে সকল আদব মেনে পালন করা হয় সেই ইবাদত আল্লাহ পাকের কাছে তত গ্রহণযোগ্য হয়। তাই প্রত্যেকটি ইবাদতের আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার মেনে তা পালন করতে হয়।

কিছু আদব হল অবশ্য পালনীয় যা বাস্তবায়ন না করলে ইবাদতটি গ্রহণযোগ্য হবে না, আর কিছু হল মোস্তাহাব অর্থাৎ যা পালন করলে ইবাদতটি পরিপূর্ণতার সহায়ক হয় এবং ইবাদতের মাঝে কোন ক্ষতি হয়ে গেলে তা কাটিয়ে উঠা যায় ও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আমরা এখানে রোজার কতিপয় আদব আলোচনা করব। আমরা যদি এ আদবসমূহ মান্য করে সিয়াম আদায় করতে পারি অর্থাৎ রোজা রাখতে পারি তবে আল্লাহর ফজলে আমরা সিয়ামের বা রোজার পূর্ণ সওয়াব বা প্রতিদান লাভ করতে সক্ষম হব।

জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে অনুসরণ করতে হবে

সিয়াম/ রোজা পালনকারী তো বটেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হল আল্লাহ যা কিছু আদেশ করেছেন তা পালন করা। আর যা কিছু করতে তিনি নিষেধ করেছেন তার প্রত্যেকটি বর্জন করা। এর নামই হল ইসলাম বা স্রষ্টার কাছে মানুষের পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
একজন মুসলিম যেমন কখনো নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে পারে না তেমনি অন্য মানুষের খেয়াল-খুশি বা তাদের রচিত বিধানের অনুগত হতে পারে না। যদি হয় তবে তা স্রষ্টার কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা হল না। সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন বা মুসলমাল নয়। যদি এমনভাবে জীবনকে পরিচালিত করা যায় তবে তাকেই বলা হবে পরিপূর্ণ ইসলাম। আর পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে আল্লাহর রাব্বুল আলামিন মানুষকে আদেশ করেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 
‘হে মোমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। [সূরাহ বাকারাহ, আয়াত : ২০৮]
ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করার নামই হল তাকওয়া। যে তাকওয়া অবলম্বন করতে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। এ তাকওয়ার দাবি হল আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে, অবাধ্য হওয়া যাবে না, তাকে স্মরণ করতে হবে ভুলে যাওয়া চলবে না, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে, অকৃতজ্ঞ (কাফির) হওয়া যাবে না।

ঈমানদারের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হল, শিরক ও রিয়া মুক্ত থেকে খালেস আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদতসমূহ সম্পাদন করা। এর মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। সালাত বাদ দিয়ে সিয়ামের/ রোজার কি মূল্য আছে? দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করতে হবে জামাতের সাথে। জামাতের সাথে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুনাফেকি থেকে মুক্তির সনদ নিতে হবে। এরপর যথা সময় জাকাত আদায় করতে হবে। সত্যিকার হকদারকে জাকাত প্রদান করতে হবে।

এমনিভাবে যে সামর্থ্য রাখে তার হজ ও ওমরাহ আদায় করতে হবে। সাথে সাথে উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে সকলের সাথে আচরণ করতে হবে। মাতা-পিতার সাথে ভাল আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক সু-দৃঢ় রাখা, প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ, সাধ্য-মত সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এমনিভাবে জাদু-টোনা, সুদি কারবার, মিথ্যা কথা, ধোঁকাবাজি, ঘুসসহ সকল প্রকার দুর্নীতি, মাদক সেবন, ব্যভিচার, সৃষ্ট জীবকে কষ্ট না দেয়া এবং গান-বাদ্য পরিহার করতে হবে। মানুষের অধিকারগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।

সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত থাকতে হবে

রমজানে রোজা/ সিয়াম রেখে সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত না থাকলে সিয়াম/ রোজা কবুলের বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। অনেককে দেখা যায় সিয়াম/ রোজা পালন করে অযথা কথা-বার্তা, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সে খবর রাখে না যে এ সকল অন্যায় কাজ-কর্ম সিয়াম/ রোজার প্রতিদান লাভে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

তাদের ব্যাপারেই হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 
“কত সিয়াম/ রোজা পালনকারী আছেন যারা উপোস থাকা ছাড়া আর কিছুই পায় না। আর কত রাতজাগা সালাত আদায়কারী আছে যারা রাত্রি-জাগরণ ব্যতীত আর কিছু লাভ করে না।” [দারেমী]
অতএব যারা সিয়াম/ রোজা পালন করছে তাদের উচিত মুখ, কর্ণ, চক্ষু, হাত ও পা সবকিছুই সিয়াম/রোজা পালন করবে। সকল অন্যায়-অবৈধ কাজ হতে এ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পবিত্র থাকবে। যেমন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“সিয়াম/রোজা হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম/ রোজা পালনকারী।” [মুসলিম]

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন: 
“শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম/ রোজা নয়। মূলত সিয়াম/ রোজা হল, অনর্থক-অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। যদি তোমার সাথে কেউ ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায়, অথবা মূর্খতা সুলভ আচরণ করে তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম/ রোজা পালনকারী।” [ইবনে খুযাইমা ও হাকেম]
যদি সিয়াম/ রোজা পালনকারী নিষিদ্ধ কথা ও কাজ-কর্ম পরিত্যাগ না করেন তবে তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে দুঃসংবাদ: যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে (রোজা পালনে) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। [বোখারী]

এখলাস অবলম্বন করা অর্থাৎ নিয়তে শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে

কোন কাজে এখলাস অবলম্বন করার অর্থ হল কাজটা করার উদ্দেশ্য হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না। শুধু সিয়াম/ রোজা নয়, এ এখলাস ব্যতীত কোন আমল কবুল হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:
“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বীন।” [সূরাহ আল-বাইয়েনা, আয়াত : ৫]
আর সিয়াম/ রোজা পালনে এখালাসের বিষয়টাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম/ রোজা পালন করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [বোখারি ও মুসলিম]
এ হাদিসে ইহতিসাব শব্দ এসেছে। এর অর্থ এখালাসের সাথে সিয়াম/ রোজা পালন করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার কাছ থেকে প্রতিদানের আশা করার নাম হল ইহতিসাব।

নবীর সুন্নত অনুসরণ করতে হবে

কোন আমল-তা যতই এখালাসের সাথে সম্পাদন করা হোক না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা না হয় তবে তা কবুল করা হবে না। বরং তা আল্লাহর দরবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হবে।

যেমন বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে এমন আমল করবে যার প্রতি আমাদের দ্বীনের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত’। [মুসলিম]

যার প্রতি আমাদের দ্বীনের নির্দেশ নেই-কথাটির অর্থ হল যা আমাদের সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এমন সকল আমল যতই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করা হোক তা রাসূলুল্লাহ স.-এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত না হওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব কোন ধর্মীয় আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দুটো শর্ত। তা হল,

● কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করতে হবে।
● কাজটি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে সম্পাদন করতে হবে। কাজটি যদি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে সম্পাদন করা না হয় বা এ কাজে তার অনুমোদনের প্রমাণ না থাকে তাহলে কাজটি করে কোন সওয়াব অর্জিত হবে না। বরং গুনাহ হবে।


সিয়াম/রোজা ভঙ্গের সহায়ক কারণগুলো পরিহার করতে হবে

সিয়াম/রোজা পালনকারীর এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যে, যে সকল আচার-আচরণ সিয়াম ভঙ্গ করার কারণ হয় অথবা সিয়াম নষ্ট করার সহায়ক হয় এমন সকল বিষয় থেকে দুরত্ব বজায় রাখা।

বিশেষত: স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন, চুম্বন বা একই কাঁথা বা কম্বলের নীচে শয়ন করা ইত্যাদি পরিহার করা উচিত। এ সকল কাজ যদিও সিয়াম/রোজা অবস্থায় করার অনুমতি আছে কিন্তু দেখা গেছে এ সকল কাজ করতে যেয়ে অনেকে সমস্যায় পড়ে গেছে ফলে সিয়াম/রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে। প্রত্যেক বিষয়ের একটি সীমানা আছে, এ সীমা যাতে অতিক্রম না হয়ে যায় এ লক্ষ্যে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য হাদিসে নির্দেশ এসেছে। যদিও সীমানা পর্যন্ত যাওয়া বৈধ কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন বিধেয়।

মনে রাখতে হবে রমজানে দিনের বেলা সিয়াম/ রোজা ভেঙে ফেলা একটি কবিরা গুনাহ। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি বা এমনটি হবে বুঝতে পারিনি বলে কবিরা গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ ধরনের কথা কখনো অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

ভয় ও আশা পোষণ করতে হবে

প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হল সকল ইবাদত ও সিয়াম/ রোজা-সালাত সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা। কিন্তু সে জানে না তার এ সালাত ও সিয়াম/রোজা আল্লাহ কবুল করেছেন না প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতএব তার সর্বদা এ ভয় থাকা উচিত যে, হয়তো আমি আমার ইবাদত-বন্দেগি এমনভাবে আদায় করতে পারিনি যেভাবে আদায় করলে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। ফলে আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান হয়তো পাব না। আবার এ আশাও পোষণ করা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে আমার ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে আমার ইবাদত-বন্দেগি কবুল করে আমাকে প্রতিদান দেবেন। এ অবস্থার নাম হল আল-খাওফ ওয়ার রজা অর্থাৎ ভয় ও আশা।

এটা ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ আকীদাগত পরিভাষা। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা সকলের নেক আমল কবুল করেন না। যেমন তিনি বলেন,
‘অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কাজ কবুল করেন’। [সূরাহ আল-মায়েদাহ, আয়াত : ২৭]
হাদিসে এসেছে আয়েশা (রা.) এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন: যারা তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে-আল্লাহ এ কথা কাদের জন্য বলেছেন, যারা মদ্য পান করে, চুরি করে তাদের জন্য? তিনি উত্তরে বললেন, না! হে সত্যবাদীর কন্যা! তারা হল, যারা সিয়াম/ রোজা পালন করে, সালাত আদায় করে, দান-সদকা করে সাথে সাথে এ ভয় রাখে যে হয়তো আমার এ আমলগুলো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। [তিরমিজি]

বর্ণিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হল যে, আল্লাহ ঐ সকল মুনিমদের প্রশংসা করেছেন যারা নেক আমল করে কবুল হবে কি হবে না এরকম একটা ভয় পোষণ করে। এবং কাজ আরো সুন্দর করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ ভয় যেন আবার মানুষকে নৈরাশ্যবাদী না করে। কোন অবস্থাতেই কোন মুসলিম আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। আল্লাহর সম্পর্কে নৈরাশ্যবাদী হওয়া একটা কুফরি। নেক আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে প্রবল আশাবাদী হতে হবে কিন্তু এ আশাবাদী মনোভাব যেন অহংকার ও আত্ম-তৃপ্তিতে ফেলে না দেয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

অহংকার ও আত্ম-তৃপ্তি নেক আমলকে বাতিল করে দেয়। অনেক সময় অলসতা নিয়ে আসে। অপরদিকে ভয় মানুষকে তৎপর ও কর্মঠ হতে সাহায্য করে। তাই সকলের উচিত সকল প্রকার নেক আমল করতে হবে ভয় ও আশা নিয়ে। শুধুই ভয় অথবা শুধুই পাওয়ার আশায় নয়।


সেহরি খাওয়া 

সিয়াম পালনের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে’। [বোখারি ও মুসলিম]
সেহরি না খেয়ে সিয়াম/ রোজা পালন করলে যখন সিয়াম/ রোজা আদায় হবে। তবে সেহরির মধ্যে রয়েছে বরকত। আসুন সেহেরির ফজিলতগুলো জেনে নেই।

● সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
● ক্ষুধা-পিপাসা মোকাবিলা করার জন্য।
● সেহরি খেলে সিয়াম পালনে কষ্ট কম হয় ও সিয়াম পালন সহজ হয়।
● ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধাচরণ করা। কারণ তারা সিয়াম পালন করতে সেহরি খায় না। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের সিয়ামের মাঝে পার্থক্য হল সেহরি খাওয়া’। [মুসলিম]
● সেহরির মাধ্যমে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
● ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করা নিশ্চিত হয়। তাই সেহরি খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে সেহরির খাবার হালকা হওয়া ভাল। এমন বেশি খাওয়া উচিত নয় যাতে দিনের বেলা কাজ-কর্মে অলসতা দেখা দেয়। যে কোন হালাল খাবার সেহরিতে গ্রহণ করা যায়। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‘মুমিনের উত্তম সেহরি হল খেজুর’। [আবু দাউদ] তিনি আরো বলেন, ‘সেহরি হল একটি বরকতময় খাদ্য, তাই তা তোমরা ছেড়ে দিয়ো না। এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সেহরি করে নাও। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ফেরেশ্‌তাগণ সেহরিতে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন’। [আহমদ ]

দেরি করে সেহরি খাওয়া সুন্নত

সেহরির অর্থ হল যা কিছু রাতের শেষ ভাগে খাওয়া হয়। সুন্নত হল দেরি করে সেহরি খাওয়া। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা শেষ সময়ে সেহরি খেতেন। ফজরের ওয়াক্ত আসার পূর্বক্ষণে সেহরি খেলে সিয়াম/ রোজা পালন অধিকতর সহজ হয়, ফজরের সালাত আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কষ্ট করতে হয় না। সতর্কতা অবলম্বন করে ফজরের অনেক আগে সেহরি শেষ করা সুন্নত নয়। সেহরি সময় শেষ হলো কি-না তা জানবেন নিজের চোখে পূর্বাকাশের শুভ্রতা দেখে, অথবা ক্যালেন্ডার ও ঘড়ির মাধ্যমে সূক্ষ্ম হিসাব করে কিংবা নির্ভরযোগ্য মুয়াজ্জিনের ফজরের আজান শুনে।

সেহরির সময়কে সুযোগ মনে করে কাজে লাগানো 

সেহরির সময় অত্যন্ত মর্যাদা-পূর্ণ একটি সময়। এ সময় জাগ্রত হওয়ার কারণে আল্লাহ যা পছন্দ করেন এমন অনেক ভাল কাজ করা যায়। যেমন তিনি মোমিনদের প্রশংসায় বলেছেন,
‘তারা শেষ রাতে (সেহরির সময়) ক্ষমা প্রার্থনা করে’। [সূরাহ জারিয়াত, আয়াত : ১৮]
তিনি এ আয়াতে ঐ সকল জান্নাতবাসী মানুষদের প্রশংসা করেছেন যারা শেষ রাতে দোয়া-প্রার্থনা করে ও ক্ষমা চায় আল্লাহর কাছে। এর মাধ্যমে তারা যে জান্নাত লাভ করবে এর সুসংবাদও দেয়া হয়েছে। সেহরির সময়টা এমন একটি সময় যখন আল্লাহর রাব্বুল আলামিন দুনিয়ার নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন। যে সকল মানুষ তখন তার প্রতি আগ্রহী হয়ে সালাত ও দোয়া-প্রার্থনা করে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‘আমাদের মহান প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তখন মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যে আমার কাছে দোয়া করবে আমি তাতে সাড়া দেব, যে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব ও যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব’। [বোখারি ও মুসলিম ]

অতএব সেহরির সময় হল আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি দান-প্রতিদানের সময়। এ সময় সে ব্যক্তিই তার সামনে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন যিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব ভালভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের নিয়তকে বিশুদ্ধ করেছেন। অনেক মানুষ এমন আছেন যারা এ সময় জাগ্রত হয়ে খাওয়া-দাওয়াসহ অনেক কাজ সমাধা করেন কিন্তু দোয়া- প্রার্থনা, ইস্তিগফার, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার সুযোগ করে নিতে পারেন না। শেষ রাতের সালাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘হে মানবসকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর। অন্যকে খাবার দাও। আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা সালাত আদায় কর তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে যেতে পারবে’। [তিরমিজি]


সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতারি করা সুন্নত

সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে ও ইফতার করার সময় হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
‘অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পালন করবে। সূরা বাকারা : ১৮৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
‘যখন এখান থেকে রাত্রির আগমন ঘটে ও ওখান থেকে দিন চলে যায় এবং সূর্য অস্ত যায় তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে। বুখারী : ১৮৫৩
তাই ইফতারের আদব হল সূর্যাস্ত মাত্রই দেরি না করে ইফতার করা। সময় হওয়া মাত্র ইফতার করার ব্যাপারে অনেক হাদীসে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
‘মানুষ যতদিন পর্যন্ত সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে। বুখারী : ১৮৫২, মুসলিম : ১০৯৮
তিনি আরো বলেছেন :
‘যতদিন মানুষ সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে ততদিন দ্বীন বিজয়ী থাকবে। কেননা ইহুদী ও খ্রিস্টানরা ইফতারিতে দেরি করে।আবু দাউদ : ২৩৫৫

হাদীসে আরো এসেছে,
আবু দারদা রা. বলেন : ‘তিনটি বিষয় নবী চরিত্রের অংশ : সময় হওয়া মাত্র ইফতার করে ফেলা, দেরি করে সাহরী খাওয়া ও সালাতে দাঁড়িয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭৬১৮

আমর ইবনে মায়মূন আওদী বলেন:
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাহাবীরা সকলের চেয়ে তাড়াতাড়ি (সময় হওয়া মাত্র) ইফতার করতেন ও সকলের চেয়ে দেরিতে সাহরী খেতেন। মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক : ৭৫৯১

কোন ব্যক্তি দেখে-শুনে ধারণা করে নিল যে, সূর্য ডুবে গেছে ও সে ইফতার করে নিল অথচ সূর্য তখনও অস্ত যায়নি। এমতাবস্থায় তার সওমের কোন ক্ষতি হবে না। তবে ইফতার শুরু করার পর সে যদি বুঝতে পারে সূর্য এখনও অস্ত যায়নি তা হলে সাথে সাথে পানাহার থেকে বিরত হয়ে যাবে। তার বিষয়টা যে ভুলে পানাহার করেছে তার মতই।


কেন বিলম্ব না করে ইফতার ও দেরি করে সাহরী খাবেন?

প্রথমত: ইসলামী জীবনাদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধর্মীয়, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ও লেবাস-পোশাকে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের অনুকরণ প্রত্যাখ্যান করা। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
‘যাদের জ্ঞান নেই তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবে না। সূরা জাসিয়া, আয়াত ১৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। আবু দাঊদ : ১৪৩৩
এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে, যে কাফেরদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি সে কাফের না-ও হয় তবে কাজটি যে হারাম বা নিষিদ্ধ এতে কোন সন্দেহ নেই।

দ্বিতীয়ত : আল্লাহর রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের প্রতি পরম দয়ালু। তিনি মানুষদের কষ্ট দিতে চান না কখনো। মানুষের জন্য সব কিছু তিনি সহজ করতে চান। তাই সিয়াম পালনকারীর যাতে অযথা কষ্ট না হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে দেরি করে সাহরী ও সময় হওয়া মাত্র ইফতারের নির্দেশ এসেছে। সিয়াম পালন করা যেমন ইসলামের নির্দেশ, তেমনি সিয়ামের সময় শেষে পানাহার করাও ইসলামের নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে দেরি করা বা গড়িমসি করা কখনো ঠিক নয়।

তৃতীয়ত : রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাহাবীগণ তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে কত যত্নবান ছিলেন সেটা লক্ষণীয়। প্রতি পদে পদে রাসূলের অনুসরণ করার জন্য আমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে।
আল্লাহ বলেন :
‘বল ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। সূরা আলে ইমরান : ৩১

তিনি আরো বলেন :
‘রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা ধারণ কর। আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। সূরা হাশর, আয়াত: ৭
কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে কিছু শিথিলতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন : অনেকে নিশ্চিত হয়েছেন যে সূর্যাস্ত হয়েছে, তারপরও ইফতার শুরু করার জন্য আজানের অপেক্ষা করেন। আবার অনেকে মনে করেন সূর্য ডুবে গেছে ঠিকই কিন্তু মাগরিবের আযান না শুনে ইফতার করব কীভাবে? আবার অনেকে আযান শোনার পর ইচ্ছে করেই সতর্কতা অবলম্বন করতে যেয়ে কিছুক্ষণ বিলম্ব করেন। অনেক সময় আযান হয়ে যাওয়ার পর দোয়া-প্রার্থনায় রত থাকতে দেখা যায়। এগুলো পরিহার করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সুন্নত অনুযায়ী সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার শুরু করে দেয়া কর্তব্য।


যে সকল খাদ্য দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব

আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না পাওয়া যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। আহমদ : ১৩০১২

এ হাদীস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারের আদব হল: মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা। তাজা খেজুর বা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করা। খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হল, খেজুর সহজপাচ্য। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে খাওয়ার পর যে সমস্যা হওয়ার কথা খেজুর খেলে তা হয় না। উপরন্তু খেজুর হালকা খাবারের একটি। পানি, খেজুর এগুলো দ্বারা ইফতার করলে অলসতা সৃষ্টি হয় না। দ্বিতীয়ত পেট পুরে পানাহার ইসলাম সমর্থন করে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
‘মানুষ সে সকল পাত্র পূর্ণ করে তার মাঝে মানুষের পেট অপেক্ষা আর কোন খারাপ পাত্র নেই। মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমা-ই যথেষ্ট। এর থেকেও বেশি যদি প্রয়োজন হয়, তবে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের জন্য রেখে দেয়া উচিত। হাকেম : ৭১৩৯


ইফতারের সময় দোয়া করা

সিয়াম পালনকারীর দোয়া কবুল হয়। বিশেষ করে ইফতারের সময়। কারণ ইফতারের সময়টা হল বিনয় ও আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণের চরম মুহূর্ত। এ সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি দানের মুহূর্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
‘ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এটা রমজানের প্রতি রাতে। সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়। বাইহাকী : ৩৬০৫
ইফতারের সময়টা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার একটা সুযোগ। এ সময়টা যেন বৃথা না যায় এ দিকে খেয়াল রেখে সময়টাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। ইফতারের সময় অন্তর দিয়ে দোয়া-প্রার্থনা করা এবং যা কিছু দোয়া কবুলের অন্তরায় তা থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। যেমন হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত খাদ্য গ্রহণ। দোয়া কবুলের কত চমৎকার সময় যে, আল্লাহ নিজে যখন দোয়া কবুলের ওয়াদা করেছেন !
‘আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই। সুতরাং তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে। সূরা আল-বাকারা : ১৮৬
ইফতারের সময় ও আজানের পরের সময়টাও দোয়া কবুলের সময়। হাদীসে এসেছে প্রতি আযান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া কবুল হয়।

বেশি করে ভাল ও কল্যাণ মূলক কাজ করা এবং কুরআন পাঠ করা

রমজান হল কুরআন নাযিলের মাস। কুরআন নাযিলের কারণে রমজান মাসের এত মর্যাদা। এ মাসে অবশ্যই অন্য সকল সময়ের চেয়ে বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। হাদীসে এসেছে,

আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘সিয়াম ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। আহমদ : ৬৬২৬


ইবাদত-বন্দেগীতে তাওফীক দানের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুধাবন করা


একটু চিন্তা করে দেখা যেতে পারে যে, কত মানুষ রয়েছে যাদেরকে আল্লাহর তার ইবাদত-বন্দেগী করতে সামর্থ্য দেননি কিন্তু আমাকে দিয়েছেন। এটা আমার প্রতি তাঁর এক মহা-অনুগ্রহ। এরপর তিনি যদি আমার এ ভাল কাজগুলো কবুল করে আমাকে প্রতিদান দেন তাহলে এটা হবে তাঁর পক্ষ থেকে আরেকটি অনুগ্রহ। কত মানুষ ভাল কাজ করে কিন্তু সকলের ভাল কাজ-তো কবুল করা হয় না।

‘আল্লাহ মুত্তাকীদের কাজই কবুল করেন। সূরা মায়িদা : ২৭

এ ধরনের অনুভূতি থাকলে নেক-আমল করে আত্ম-তৃপ্তি ও অহংকার নামক ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। কেননা অহংকার ও আত্ম-তৃপ্তি ভাল কাজের প্রতিদান নষ্ট করে দেয়। তখন ভাল কাজগুলো মরীচিকার মত হয়ে যায়।

দরিদ্র ও সহায় -সম্বলহীনদের প্রতি মমতা ও তাদের সেবা করা

সিয়াম পালনের মাধ্যমে অসহায় সম্বলহীন, অভুক্ত মানুষের প্রতি দয়া ও মমতা সৃষ্টি হয়। তাদের অসহায়ত্ব অনুভব করা যায়। তাই এ দান-প্রতিদানের পবিত্র মাসে তাদের জন্য বেশি করে কল্যাণকর কাজ করা উচিত। ইফতার করানো, সদকাতুল ফিতর, যাকাত আদায় করার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে দান-সদকা করা যেতে পারে। হাদীসে এসেছে,
‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। মুসলিম : ৩২০৮


সুন্দর চরিত্র, ধৈর্য ও উত্তম আচরণ দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করুন

রমজান হল ধৈর্যের মাস আর সিয়াম হল একটি বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থাকাকালীন অবশ্যই সদাচরণ, ধৈর্য, সুন্দর চরিত্রের অনুশীলন করতে হবে। রোজাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে যেন মূর্খতাপূর্ণ আচরণকারীর জবাব না দেয়, তার সঙ্গে যে ভ্রান্ত আচরণ করে তাকে বলে দেয়,’ আমি রোজাদার‘। সর্বোপরি তাকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকুন

অপচয় তা যে কোন বিষয়েই হোক ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ। পবিত্র মাসে যখন আমাদের বেশি করে সৎকাজ করা উচিত তখন আমরা খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন ধরনের অপচয় করে যেন পাপ অর্জন না করি। রমজান মাসে দেখা যায় অনেকে খেতে পারব মনে করে অনেক কিছু আয়োজন করে। অবশেষে খেতে না পেরে তা নষ্ট করে ফেলে। এটা সত্যিই অন্যায়।

রুটিন করে সময়টাকে কাজে লাগান

রমজানের সময়টা অন্য সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সংক্ষিপ্ত মনে হয়। তাই আপনি রুটিন করে সময়টাকে কি কি কাজে ব্যয় করবেন তা যদি ঠিক করে না নেন তাহলে দেখবেন অনেক কাজই অসমাপ্ত রয়ে গেছে। অনর্থক কথা-বার্তা, আড্ডা বাজি, গল্পগুজব, নিষ্ফল বিতর্ক ইত্যাদি পরিহার করুন। কোন কথা বা কাজ করার আগে ভেবে দেখুন কথা বা কাজটা আপনার জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনবে। ‘আমার পাশে বসে অন্য লোক একটি বিষয় আলোচনা করছে তাই আমাকে অংশ নিতেই হয়্ততাই একটু বললাম‘ এমন যেন না হয়। অযথা কথা ও কাজ পরিহার করা সিয়ামের একটি শিক্ষা ও দাবি।

দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে দিন

রমজান মাসে নিজের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য দুনিয়াদারির ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করুন। অনেকেই রমজান মাসকে অর্থ উপার্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মুনাফা লাভের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। এ দিকেই বেশি সময় ব্যয় করেন। দুনিয়াদারি যতটুকু না করলেই নয় ততটুকুতো অবশ্যই করবেন। আর বাকি সময়টা আখেরাতের মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যয় করুন।

খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য বজায় রাখুন

আমাদের মাঝে অনেকে রমজান মাসে যেমন খাওয়া দাওয়া বেশি করে তেমনি আবার বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটায়। তারাবীহ ও সাহরীর কারণে যদি রাতে দু ঘণ্টা নিদ্রা কম হয় তবে দিনে তার কাফফারা আদায় করে চার ঘণ্টা ঘুমিয়ে। খাবার ব্যাপারে অনেকে একই নীতি অনুসরণ করে। যদি এরকমই আমাদের অবস্থা হয় তবে আমরা রমজানের জন্য কি কুরবানী করলাম? বিষয়টা গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url