হজ্জ সফরের সহজ গাইড (পর্ব-৩)




হজের সামানে কি কি নিবেন, কি করবেন, কি করবেন না


হজের শর্তাবলী ও যার ওপর হজ ওয়াজিব

হজ একটি অবশ্য পালনীয় ইবাদত, তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে।
নিম্নোক্ত ৭/৮টি মৌলিক শর্ত পূরণ সাপেক্ষে হজ প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরয, যা জীবনে অন্তত একবার পালন করতে হবে।
শর্তগুলো হলো:

  • মুসলিম হওয়া।
  • প্রাপ্তবয়স্ক/বালিগ হওয়া (১৫ বছর)।
  • স্বাধীন বা মুক্ত হওয়া (কৃতদাস না হওয়া)।
  • শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিক ভারসাম্য থাকা।
  • হজে গমনের ও সম্পূর্ণ খরচ বহনের সামর্থ্য থাকা।
  • হজ পালনের জন্য যাত্রাপথের নিরাপত্তা থাকা।
  • মহিলার সঙ্গে মাহরাম থাকা।
* হজে থাকাকালীন সময়কাল পরিবারের ভরণপোষণের নিশ্চয়তা করা।

একজন মহিলার মাহরাম হলেন তার স্বামী অথবা তার পরিবার ও আত্মীয়ের মধ্যে এমন একজন পুরুষ যার সাথে ইসলামী শরী‘আহ্ মোতাবেক বিবাহ বৈধ নয়। (যথা -পিতা, ভাই, ছেলে, চাচা, মামা, ভাইয়ের/বোনের ছেলে)

যদি কেউ আপনাকে হজ করার জন্য খরচ বা অর্থ (হালাল অর্থ) প্রদান করেন তবে তা বৈধ। আপনি যদি এ টাকায় হজ পালন করেন তাহলে পরবর্তীতে আপনার ওপর হজ আর বাধ্যতামূলক হবে না; এমনকি পরবর্তীতে আপনি যদি আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হনও।
আপনি যদি আপনার সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই হজে নিয়ে যান তাহলে সেই হজ সেবামূলক হজ হিসেবে গণ্য হবে ও এ হজের সাওয়াব আপনি লাভ করবেন এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি সে আর্থিক সামর্থ্যবান হয়, তবে আপনার সন্তানের ওপর পুনরায় হজ ফরয হবে।

যে নারীর হজ সফর সম্পন্ন করার অর্থমূল্যের নিজস্ব অলঙ্কার রয়েছে তার ওপর হজ ফরয। সে এ অলঙ্কার বিক্রি করেই হজে যেতে পারবে তবে অবশ্যই মাহরাম সঙ্গে নিতে হবে। কোনো মহিলার যদি মাহরাম না থাকে তবে হজ তার জন্য প্রযোজ্য নয়। সে কাউকে দিয়ে তার বদলি হজ করিয়ে নিবে। যদি কোনো মহিলা মাহরাম ছাড়াই হজে যায় তাহলে বড় ধরনের গোনাহে লিপ্ত হলো বলে আলেমগণ মত প্রকাশ করেছেন।

একজন ব্যক্তি টাকা ধার/কর্জ করেও হজ পালন করতে পারবেন, যদি তিনি এ টাকা ভবিষ্যতে পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখেন, তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ধার করে হজ করা জরুরি নয়।

যদি কোনো ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও হজ পালন না করেই মারা যায়, তাহলে অন্য কেউ তার পক্ষে বদলী হজ করতে পারবেন। তবে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, তা হচ্ছে, বদলী হজকারীকে সর্বপ্রথম তার নিজের হজ পালন করেছেন এমন হতে হবে।

অনেক লোক ভুল করে প্রচার করে থাকেন যে, যিনি উমরাহ করেছেন তার ওপর হজ ফরয হয়ে যায়। হজ তার ওপর ফরয নয় যার এটা পালন করার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য নেই, এমনকি সে যদি হজের মাসেও উমরাহ পালন করে।

একটি ধারণা প্রচলিত আছে, যার ঘরে অবিবাহিত কন্যা রয়েছে সেই কন্যার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তার ওপর হজ ফরয নয়। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত কথা।
 
প্রথমেই ঈমানকে নবায়ন ও আকীদাকে শুদ্ধ করুন। যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ ও বলিষ্ঠ থাকা অবস্থায় হজ পালন করুন, হজ পালনে বিলম্ব করা উচিৎ নয়।

অন্তরের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন, কারণ ‘‘নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল’’। সকল প্রকার শির্ক ও বিদ‘আত সম্পর্কে জানুন ও তা থেকে মুক্ত হয়ে চলুন।

হজের যাত্রা জীবনে একবারই মনে করুন। সুতরাং এ যাত্রাকে নিজের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

সুখ্যাতি, ব্যবসা, ভ্রমণ বা শুধু মাহরাম হওয়ার উদ্দেশ্যে হজ করবেন না।

আন্তরিকভাবে অতীতের সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করুন ও ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে পাপ কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প নিন।

দেনমাহরসহ আপনার অন্যান্য সকল পাওনা ও ক্ষতিপুরণ পরিশোধ করুন।

আপনার হজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করুন এবং নিশ্চিত করুন তা হালাল পথে উপার্জিত হয়েছে। অবৈধ বা সুদ মিশ্রিত টাকা হজ কবুল হওয়ার অন্তরায়।

ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করুন।

বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে মিথ্যা বলা, খারাপ আচরণ, হক নষ্ট করা ও তাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন।

এটিই আপনার জীবনের সর্বশেষ যাত্রা হতে পারে, সুতরাং আপনার পরিবারের জন্য একটি উইল বা অসীয়তনামা করে রেখে যান।

হজ ও উমরাহ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সহীহ বই থেকে জানুন এবং হজের কিছু দো‘আ মুখস্থ করুন।

আগে হজ করেছেন এমন ব্যক্তির কাছ থেকে হজ সম্পর্কে জানুন।

নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখুন। (পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করুন, বেশি বেশি হাটাহাটি করুন, ব্যায়াম করুন ও নিয়মিত চিকিৎসা নিন)

মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। (ধৈর্যশীল হতে শিখুন, নিজেকে মানিয়ে নিতে, রাগকে দমন করতে ও ত্যাগ শিকার করতে শিখুন)

আপনার মাঝে পরিবর্তন আনুন -আপনার মুখ, চোখ, হাত, পা ও কান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। নিজকে সংযত করুন।

ধার্মিক, সহায়ক ও বিশ্বস্ত এরকম ২/১ জনকে সঙ্গী হিসেবে হজ যাত্রার জন্য খুঁজে নিন এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন।

সম্ভব হলে দরকারী কিছু ইংরেজী, আরবী ও হিন্দি শব্দের অর্থ শিখে নিন।

আপনার হজের যাত্রার পরিকল্পনা করুন, প্রথমে মক্কা না মদীনা গেলে উত্তম হয় -তা ভেবে দেখুন।

দাঁড়ি রেখে দেওয়ার ব্যাপারে ভাবুন; কারণ তা রাখা ওয়াজিব, কাটা হরাম, দাঁড়ি না রাখলে কবিরা গুনাহ হয় এবং ধুমপান, জর্দা ও গুল-এর মতো হারাম অভ্যাসগুলো পরিহার করুন।
সদা আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে আন্তরকে আন্দোলিত রাখার অভ্যাস করুন।

হজ সফরে আবেগ তাড়িত হয়ে কোনো কিছু না করার বিষয়ে সজাগ থাকুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজে যাওয়ার পূর্বে আপনার মনে তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহভীতি ও ধর্মনিষ্ঠা আনতে হবে। আপনার তাকওয়াকে জাগ্রত করুন।

হজের পূর্ব প্রস্তুতি

হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া মাত্রই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করে নিন। হজ সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন সার্কুলার ও নির্দেশনার খোঁজ খবর রাখুন এ ওয়েব সাইট থেকে www.hajj.gov.bd

বিগত হাজীদের কাছ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনা ও বেসরকারি হজ এজেন্সির সেবা সম্পর্কে মতামত নিন (ঢাকায় হজ মেলায় যেতে পারেন)।

বেসরকারি বিভিন্ন হজ এজেন্সির খোঁজ নিন এবং প্যাকেজ সম্পর্কে জানুন। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার থেকে যারা হজে যাবেন তারা কম দামি হজ প্যাকেজে প্রলুব্ধ হবেন না, কারণ সস্তার তিন অবস্থা।

আর ধনীরাও ৫/৪ তারকা হোটেলের হজ প্যাকেজে প্রলুব্ধ হবেন না। কারণ, এটা হলিডে ট্যুর নয়।

অননুমোদিত হজ এজেন্সি থেকে সতর্ক থাকুন। কারণ, এতে আপনি প্রতারিত হতে পারেন।
সরকারি ব্যবস্থাপনা অথবা সরকার অনুমোদিত কোনো একটি বেসরকারি হজ এজেন্সি যারা গোড়ামি ও ভ্রান্ত আকীদা মুক্ত বিজ্ঞ হকপন্থী আলেম দ্বারা পরিচালিত তাদের হজ প্যাকেজ বেছে নিন। আপনার হজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের হজ সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ও সেবার লিখিত বিবরণ রাখুন এবং তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ১৫ কপি পাসপোর্ট সাইজ ও ১০ কপি স্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবি করুন।

হজ ফরম পূরণ করুন এবং হজ চুক্তি স্বাক্ষর করে এর মূল কপি ও একটি করে ফটোকপি রেখে দিন। সরকারি অথবা বেসরকারি হজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিয়ে এজেন্সির অফিস থেকে পাকা জমা রশিদ সংগ্রহ করুন।

সবচেয়ে ভালো হয় আগেভাগেই কম দামে কিছু সৌদি রিয়াল কিনে নেওয়া। জানাযা সালাত কিভাবে পড়তে হয় ও জানাযার সালাত-এর দো‘আ শিখে নিন।

হজে যাওয়ার আগে মহিলাদের মসজিদে সালাত আদায়ের নিয়ম-কানুন শিখে নেওয়া ভালো। আপনি যদি চাকুরিজীবি হন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করুন।

লিফট ও এস্কেলেটরে চড়ার অভ্যাস করুন। হজে যাওয়ার জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

মনিংজাইটিস টিকা নিতে হবে, ঢাকার হজ ক্যাম্প থেকেও নেওয়া যাবে। বয়স ৪০/৪৫ এর নিচে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে থাকে সাধারণত।

কিছু হজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিন এবং হজ প্রশিক্ষণ ভিডিও দেখুন। ভালো হজ এজেন্সি পছন্দ করার জন্য টিপস: নন-হিলটপ বাড়ি (পাহাড়ের উপর বাড়ি না), মসজিদের নিকটবর্তী বাড়ী, তিন বেলা খাবার ব্যবস্থা, আরাফা ও মিনায় খাবারের ব্যবস্থা, হাদীর ব্যবস্থা, ভালো বাস সার্ভিস, দর্শনীয় স্থানসমূহ যিয়ারত সুবিধা ইত্যাদি।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো হজের সময় হাজীদের কেমন সেবা দেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা কম করবেন। তাদেরকে সত্য বলার পরামর্শ দেবেন। তারা ন্যূনতম কী কী সেবা দিতে পারবে আর কী কী পারবেন না, তা যেন তারা পরিষ্কার লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন। কোনো লুকোচুরি যেন না থাকে। তারা যেন এমন কোনো বিষয় গোপন না করেন যা হজের সময় আপনার কষ্ট বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় আপনার হজ এজেন্সি প্রত্যাশিত কিছু সেবা নাও দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে এজেন্সির লোকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। এক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিন।

কিছু তথ্য জেনে রাখুন

  • ভ্রমণের রুট: ভারত, আরব সাগর, মাস্কট/দুবাই হয়ে সৌদি আরব।
  • আবহাওয়া: মক্কা (২২-৪০ ডিগ্রি), মদীনা (২০-৪২ ডিগ্রি)।
  • আদ্রতা: মক্কা (৬০-৭২%), মদীনা (২০-৪৩%)।
  • সময়ের ব্যবধান: তিন ঘণ্টা (ঢাকায় সকাল ৯টা, মক্কায় তখন সকাল ৬টা)
  • সৌদি রিয়াল রেট: ১ সৌদি রিয়াল=২১-২২টাকা। (বাজার দর সাপেক্ষে)
  • বিদ্যুৎ: ১১০/২২০ ভোল্ট
  • সৌদি ফোন কোড: +৯৬৬ XXXXXXXXX
কিছু যোগাযোগের ঠিকানা জেনে রাখুন
ঢাকা বাংলাদেশ হজ অফিস
ঠিকানা: হজ অফিস, আশকোনা, এয়ারপোর্ট, ঢাকা।
ফোন: ডিরেক্টর (৮৯৫৮৪৬২), সহকারী হজ অফিসার (৭৯১২৩৯১), স্বাস্থ্য (৭৯১২১৩২)
আইটি হেল্প: ৭৯১২১২৫, ০১৯২৯৯৯৪৫৫৫

জেদ্দায় বাংলাদেশি দূতাবাস
যোগাযোগের ঠিকানা: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কনস্যুলেট জেনারেল
পিও বক্স-৩১০৮৫, জেদ্দাহ ২১৪৯৭, সৌদি আরব।

অবস্থান: ৩ কিলোমিটার, পুরাতন মক্কা রোডের কাছে (মিতশুবিশি কার অফিসের পেছনে) নাজলাহ, পশ্চিম জেদ্দা, সৌদি আরব।
ফোন: ৬৮৭ ৮৪৬৫ (পিএবিএক্স)

জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ মিশন
লোকেশন: জেদ্দা ইর্ন্টারনেশনাল এয়ারপোর্ট (বাংলাদেশ প্লাজার নিকটবর্তী)।
ফোন: +৯৬৬-২-৬৮৭৬৯০৮। ফ্যাক্স:০০-৯৬৬-২-৬৮৮১৭৮০।
আইটি হেল্প: +৯৬৬৫৬২৬৬৩৪৬৭।
ই-মেইল: jeddah@hajj.gov.bd

মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশন
লোকেশন: ইবরাহীম খলীল রোড, মিসফালাহ মার্কেট ও গ্রিনল্যান্ড পার্কের সামনে।
ফোন: +৯৬৬-২-৫৪১৩৯৮০,৫৪১৩৯৮১। ফ্যাক্স:০০-৯৬৬-২-৫৪১৩৯৮২
আইটি হেল্প: +৯৬৬৫৬২৬৫৪৬৬৪।
ই-মেইল: makkah@hajj.gov.bd

মদীনায় বাংলাদেশ হজ মিশন:
লোকেশন: কিং ফাহাদ রোড জংশন ও এয়ারপোর্ট।
ফোন: +৯৬৬-০৪-৮৬৬৭২২০।
আইটি হেল্প: +৯৬৬৫৬২৬৫৪৩৭৬।
ই-মেইল: madinah@hajj.gov.bd

মিনায় বাংলাদেশ হজ মিশন:
লোকেশন: ২৫/০৬২ সু-কুল আরব রোড ৬২, ৫৬, জাওয়হারাত রোডের সামান্তরালে।

বহুল ব্যবহৃত কিছু আরবি শিখে নিন

হজের প্রকারভেদ

ইফরাদ হজ
কিরান হজ
তামাত্তু হজ

হজ উমরাহ উমরাহ
x উমরাহ উমরাহ
হাদী (পশু জবেহ) - ওয়াজিব নয় হাদী (পশু জবেহ) - ওয়াজিব হাদী (পশু জবেহ) - ওয়াজিব।
বইয়ে তামাত্তু হজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং শেষে ক্বিরান ও ইফরাদ নিয়ে আলোচনা করবো।

বদলি হজ

কোনো ব্যক্তি যদি ফরয হজ আদায় করতে অক্ষম হয় তবে কোনো ব্যক্তিকে তার পক্ষ হতে হজ (বদলি হজ) পালন করার জন্য মনোনিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে মনোনিত ব্যক্তি ইতোপূর্বে নিজের হজ পালন করেছেন এমন হতে হবে।[১]
আবু রাযিন আল আকিলি থেকে বর্ণিত, তিনি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করে বললেন, আমার পিতা খুব বৃদ্ধ, তিনি হজ ও উমরাহ পালন করতে পারেন না। সাওয়ারির উপর উঠে চলতেও পারেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ ও উমরাহ করো।[২]
তিন প্রকার হজের মধ্যে বদলি হজ কোন প্রকার হবে তা, যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ করা হচ্ছে তিনি নির্ধারণ করে দেবেন। বদলি হজ -ইফরাদ হজ হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই; বরং উল্লিখিত হাদীসে হজ ও উমরাহ উভয়ের কথাই আছে।
[১] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮১১; মিশকাত, হাদীস নং ২৫২৯
[২] তিরমিযী, হাদীস নং ৮৫২

হজের সময় যেসব জিনিসপত্র সঙ্গে নিবেন

প্রথমে ঠিক করে নিন আপনি কোন প্রকারের হজ করবেন এবং জেনে নিন আপনার প্রথম গন্তব্যস্থল কোথায়। (প্রথমে মক্কা না মদীনায় যাবেন)
আপনার গন্তব্যানুসারে যাত্রার প্রস্তুতি নিন। (ধরে নিচ্ছি আপনি প্রথমে মক্কায় যাবেন)
বেশি মালামাল নিয়ে আপনার বোঝা ভারী করবেন না, আবার কম নিয়ে অপ্রস্তুতও হবেন না।
পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেজন্য আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি নোটারি করে নিন এবং বিমানের টিকেট ও মেডিকেল সার্টিফিকেটের ফটোকপি করে নিন। বাসায়ও এর কপি রেখে যান।

অতিরিক্ত ১০ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ১০ কপি স্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবি সঙ্গে নিন।
মজবুত চাকাওয়ালা মাঝারি বা বড় আকারের ১টি ব্যাগ/লাগেজ সঙ্গে নিবেন।

মুল্যবান জিনিসপত্র (টাকা, টিকেট, পাসপোর্ট ইত্যাদি) রাখার জন্য ১টি কোমর/কাঁধ/সৈনিক ব্যাগ নিন। সালাতের মুসাল্লা বা কাপড়, কাপড় শুকানো দড়ি ও ব্যাগ বাঁধার জন্য কিছু ছোট দড়ি সঙ্গে রাখুন। পড়ার জন্য ছোট আকারের কুরআন মাজীদ ও বইপত্র এবং লোকেশন ম্যাপ সঙ্গে রাখুন। যোগাযোগ এর জন্য সাধারণ মোবাইল অথবা এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন সঙ্গে থাকলে ভালো হয়।

দুই জোড়া করে চশমা ও কোমল স্লিপার সেন্ডেল এবং এগুলো রাখার জন্য ছোট পাতলা কাপড়ের একটি ব্যাগ। রোদ থেকে বাঁচার জন্য ছোট সাদা বা বিশেষ রঙের ছাতা অথবা ক্যাপ। পশু যবেহ (হাদী) বা ফিদিয়ার জন্য ৫০০-৬০০ সৌদি রিয়াল আলাদা করে রাখতে ভুলবেন না।

ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র: ব্রাশ, পেস্ট, টয়লেট পেপার, আয়না, চিরুনি, তেল, সাবান, তোয়ালে, শ্যাম্পু, নোটবুক, পারফিউম, ভ্যাসলিন, লোশন ও ডিটারজেন্ট ইত্যাদি সাথে নিন। তবে ইহরাম অবস্থায় ব্যবহার করার জন্য সেসব প্রসাধনী সুগন্ধহীন হতে হবে।

দুইটি ছোট বেডশিট ও একটি ফোলানো বালিশ, হালকা চাদর, পেষ্ট, গ্লাস, চামচ, টর্চ লাইট, বাথরুম সুগন্ধি, মুখোশ, রুমাল ও কাপড় হ্যাঙার প্রয়োজন মনে করলে সাথে নিন। একটি দেশের পতাকা, এলার্ম ঘড়ি/হাত ঘড়ি, রোদ চশমা, মার্কার পেন।

পর্যাপ্ত ওষুধপত্র, কিছু দরকারি এন্টিবায়োটিক, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ভ্রমণের জন্য দরকারি কিছু ওষুধ। ব্যাগের নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে ছোট আকারের তালা-চাবি নিন এবং কিছু পলিথিন ব্যাগও নিন। দরকারি জিনিসপত্র (টাকা, টিকেট, পাসপোর্ট, হজের পরিচয়পত্র, ক্রেডিট কার্ড) সবসময় হাতের কাছে অথবা নিরাপদ স্থানে রাখবেন। সঙ্গে কিছু বাংলাদেশী টাকাও রাখবেন।

একটি সাধারণ পরামর্শ হলো: আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, হজ পরিচয়পত্র নম্বর, যোগাযোগের মোবাইল অথবা ফোন নম্বর, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ও নং, হোটেলের নাম ও ঠিকানা, যে কোনো নিকট আত্মীয়ের নাম ও ঠিকানা ও মুয়াল্লিম নং আপনার সকল ব্যাগে ইংরেজিতে লিখে রাখবেন।

কিছু শুকনো খাবার যেমন-চিড়া, গুড়, বিস্কুট, বাদাম, ড্রাই কেক, ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। হজে যাওয়ার সময় আপনার মালামালের একটি তালিকা করুন ও তালিকা চেক করুন। হজে যাওয়ার সময় আপনার বড় লাগেজের আদর্শ ওজন হবে ৮ থেকে ১০ কেজি।

শেষ কথা হলো; হজে যাওয়ার সময় অবশ্যই সূরা-আল বাকারা-এর ১৯৭ নং আয়াতকে সাথে ব্যাগে নিয়ে নয় বরং অন্তরে করে নিয়ে যাবেন!

[পুরুষদের জন্য]
ইহরামের জন্য দুই সেট সাদা কাপড়।
ইহরামের কাপড় বাধার জন্য কোমর বেল্ট।
মাথা মুড়ানোর জন্য ১/২টি রেজার অথবা ব্লেড। তবে তা কোনোক্রমেই হাতের ব্যাগে রাখবেন না।
উপযুক্ত ও আরামদায়ক: প্যান্ট, শার্ট, ট্রাউজার, লুঙ্গি, টি-শার্ট, আন্ডারওয়্যার, পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল, মোজা, জুতা, টুপি ইত্যাদি।

[মহিলাদের জন্য]
পরিষ্কার ও আরামদায়ক সালওয়ার-কামিজ, স্কার্ফ, হিজাব।
পুরো যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত কাপড়। লেডিস ন্যাপকিন, সেফটি পিন, কেঁচি, টিস্যু, স্যান্ডেল, মোজা ও জুতা ইত্যাদি।

হজের সময় যেসব পরিহার করবেন

টিনের ট্রাঙ্ক, ভারী স্যুটকেস, ভারী কম্বল ও পানির বালতি ইত্যাদি সাথে নেওয়া ঠিক হবে না।
ক্যাসেট অথবা সিডি সঙ্গে নিবেন না। কারণ, এর জন্য ইমিগ্রেশন চেক করতে পারে।
পচনশীল অথবা গলে যেতে পারে এমন খাবার নিবেন না। যেমন- ফল, চকলেট, দুধ ইত্যাদি।

পুরুষরা সিগারেট, স্বর্ণের আংটি, স্বর্ণের চেইন (সবই হারাম) সঙ্গে নিবেন না। মহিলারা ভারী অলঙ্কার সঙ্গে নিবেন না।

শরীরে তাবিজ, কবজ ও ফিতা ইত্যাদি বাঁধা থাকলে তা খুলে ফেলে শির্ক মুক্ত হয়ে যান। কারণ শির্ক ইবাদত কবুল হওয়ার অন্তরায়!

সঙ্গে ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা সাথে না নেওয়া ভালো। কারণ, এতে আপনার ইবাদতের মনসংযোগ নষ্ট হবে।

নখ কাটার মেশিন, সুই-সুতা, কেঁচি, চাকু ইত্যাদি সব সময় মেইন বড় লাগেজে রাখবেন।

কৃতজ্ঞতা: মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান এর লেখা
হজ সফরে সহজ গাইড’ নাম পুস্তক থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে।


*****************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url