প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৪৮] || মহানবীর জীবনী ||





হোনায়েন যুদ্ধের গুরুত্ব, শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ এবং হোনায়েন যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত বিধানসমূহ

[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]

সুরাক্বার ইসলাম গ্রহণ

এ সময় বনু কিনানাহর নেতা সুরাক্বা বিন মালেক বিন জু‘শুম আল-মুদলেজী এসে মুসলমান হন। হিজরতকালে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পশ্চাদ্ধাবন করেন। অতঃপর ব্যর্থ হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে একটি ‘নিরাপত্তানামা’(كِتَابَ أَمْنٍ) লিখে নেন। হোনায়েন এসে তিনি সেটি দেখান। ফলে রাসূল (ছাঃ) তাকে নিকটে আসার অনুমতি দেন। অতঃপর তিনি ইসলাম কবুল করেন’।[1]

[1]. বুখারী হা/৩৯০৬; ইবনু হিশাম ১/৪৯০।

জি‘ইর্রানা হতে গণীমত বণ্টন

হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন না করেই জি‘ইর্রানাহতে জমা রেখে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ত্বায়েফ গিয়েছিলেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে গণীমত বণ্টন করেন। ইচ্ছাকৃত এই বিলম্বের কারণ ছিল হাওয়াযেন গোত্রের নেতারা ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে আসলে তাদের বন্দীদের ও তাদের মালামাল ফেরত দেওয়া। কিন্তু দীর্ঘ সুযোগ পেয়েও হতভাগাদের কেউ আসলো না। অতঃপর ৫ই যুলক্বা‘দাহ ফিরে এসে তিনি যুদ্ধজয়ের রীতি অনুযায়ী গণীমত বণ্টন শুরু করলেন (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১১)।

গণীমত বণ্টন নীতি

নিয়মানুযায়ী গণীমতের এক পঞ্চমাংশ রেখে বাকী সব বণ্টন করে দেওয়া হয়। বণ্টনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘মুওয়াল্লাফাতুল কুলূব’(مؤلفة القلوب) অর্থাৎ মক্কার নওমুসলিম কুরায়েশ নেতৃবৃন্দের এবং অন্যান্য গোত্রনেতাদের মুখ বন্ধ করার নীতি অবলম্বন করেন। যাতে তাদের অন্তরে ইসলামের প্রভাব শক্তভাবে বসে যায়। সেমতে তাদেরকেই বড় বড় অংশ দেওয়া হয়। যেমন নেতাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে ৪০ উক্বিয়া রৌপ্য এবং ১০০ উট দেওয়া হয়। পরে তার দাবী মতে তার দুই পুত্র ইয়াযীদ ও মু‘আবিয়াকে ১০০টি করে উট দেওয়া হয়। হাকীম বিন হেযামকে প্রথমে ১০০টি পরে তার দাবী অনুযায়ী আরো ১০০টি উট দেওয়া হয়। ছাফওয়ান বিন উমাইয়াকে প্রথমে ১০০, পরে ১০০ পরে আরও ১০০ মোট ৩০০ উট দেওয়া হয়। তখন ছাফওয়ান বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি আমার নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে দিতে থাকেন। অবশেষে এখন তিনি আমার নিকটে সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তি’ (মুসলিম হা/২৩১৩)।[1] ছাফওয়ান তখনও মুশরিক ছিলেন এবং রাসূল (ছাঃ) তাকে মক্কা বিজয়ের দিন থেকে চারমাস সময় দিয়েছিলেন। অতঃপর হারেছ বিন কালদাহকে ১০০ উট এবং অন্যান্য কুরায়েশ নেতাকেও একশ একশ করে উট দেওয়া হয়। অন্যদেরকে মর্যাদা অনুযায়ী পঞ্চাশ, চল্লিশ ইত্যাদি সংখ্যায় উট দিতে থাকেন। এমনকি এমন কথা রটে যায় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) এত বেশী দান করছেন যে, কারু আর অভাব থাকবে না। এর ফলে বেদুঈনরা এসে এমন ভিড় জমালো যে, এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি গাছের নিকটে কোনঠাসা হয়ে পড়লেন। যাতে তাঁর গায়ের চাদরটা জড়িয়ে গেল। তখন তিনি বলে উঠলেন أيها الناس، رُدُّوْا عَلَيَّ رِدَائِي ‘হে লোকেরা! চাদরটা আমাকে ফিরিয়ে দাও’। যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তার কসম করে বলছি, যদি আমার নিকটে তেহামার বৃক্ষরাজি গণীমত হিসাবে থাকত, তাও আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। তখন তোমরা আমাকে কৃপণ, কাপুরুষ বা মিথ্যাবাদী হিসাবে পেতে না’। তারপর স্বীয় উটের দেহ থেকে একটি লোম উঠিয়ে হাতে উঁচু করে ধরে বললেন,أيُّهَا النَّاسُ، وَاللهِ مَا لِى مِنَ الْفَىْءِ شَىْءٌ وَلاَ هَذِهِ إِلاَّ خُمُسٌ وَالْخُمُسُ مَرْدُودٌ فِيكُمْ ‘হে জনগণ! আল্লাহর কসম! ফাই বা গণীমতের কিছুই আমার কাছে আর অবশিষ্ট নেই। এমনকি এই লোমটিও নেই, এক পঞ্চমাংশ ব্যতীত। যা অবশেষে তোমাদের কাছেই ফিরে যাবে’।[2]

এইভাবে নওমুসলিম মুওয়াল্লাফাতুল কুলূবদের দেওয়ার পর বাকী গণীমত ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বণ্টন করা হয়। যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)-কে হিসাব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায় যে, প্রতিজন পদাতিকের মাত্র ৪টি উট ও ৪০টি বকরী এবং অশ্বারোহীর ১২টি উট ও ১২০টি করে বকরী ভাগে পড়েছে। এই যৎসামান্য গণীমত নিয়েই তাদেরকে খুশী থাকতে হয় (যাদুল মা‘আদ ৩/৪১৫)।

এ সময় রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَوَاللهِ إِنِّى لأُعْطِى الرَّجُلَ، وَأَدَعُ الرَّجُلَ ، وَالَّذِى أَدَعُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنَ الَّذِى أُعْطِى ‘আল্লাহর কসম! আমি কাউকে দেই, কাউকে ছাড়ি। যাকে আমি ছাড়ি, সে আমার নিকটে অধিকতর প্রিয় তার চাইতে, যাকে আমি দেই’ (বুখারী হা/৯২৩)। উভয়ে মুমিন হওয়া সত্ত্বেও একজনকে দিচ্ছেন অন্যজনকে দিচ্ছেন না, সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنِّى أُعْطِى رِجَالاً وَأَدَعُ مَنْ هُوَ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْهُمْ لاَ أُعْطِيهِ شَيْئًا مَخَافَةَ أَنْ يُكَبُّوا فِى النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ‘আমি কাউকে দিচ্ছি এবং তাদের মধ্যে যারা আমার নিকট অধিক প্রিয় তাদেরকে ছাড়ছি এজন্য, যাতে তারা উপুড়মুখী হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত না হয়’ (আবুদাঊদ হা/৪৬৮৩)। তিনি বলেন,فَإِنِّي أُعْطِي رِجَالاً حَدِيثِي عَهْدٍ بِكُفْرٍ أَتَأَلَّفُهُمْ ‘আমি কুফরী থেকে নতুন আগত লোকদের দিচ্ছি তাদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য’ (বুখারী হা/৪৩৩১)।

ইবনু ইসহাকের হিসাব মতে এদিন ১২ জন নেতাকে একশ একশ করে উট দেওয়া হয়। পাঁচ জনকে একশর কিছু কমসংখ্যক দেওয়া হয়। এভাবে ২৯ জনকে দেওয়া হয়। অন্যেরা আরও ২৩ জনের কথা বলেছেন। সর্বমোট ৫২ জন মুওয়াল্লাফাতুল কুলূবকে এই দিন বেশী বেশী দান করা হয়। এদের সকলেরই ইসলাম সুন্দর ছিল, ওয়ায়না বিন হিছন আল-ফাযারীসহ দু’একজন ব্যতীত (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১২)।

তৃণভোজী পশুর সম্মুখে এক গোছা ঘাসের অাঁটি ধরলে যেমন সে ছুটে আসে, মানুষের মধ্যে অনুরূপ একদল মানুষ আছে, যাদেরকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়েই কাছে টানতে হয়। সদ্য দলে আগত লোকদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) উক্ত নীতি অবলম্বন করেন। কিন্তু ছাহাবায়ে কেরাম তো পরীক্ষিত মানুষ। দুনিয়া তাদের কাছে তুচ্ছ। আখেরাত তাদের নিকটে মুখ্য। তাই তাদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন উদ্বেগ ছিল না।

[1]. প্রসিদ্ধ আছে যে, ছাফওয়ান হোনায়েন যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে গণীমতের মালসমূহের দিকে দেখতে থাকেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, এগুলি সবই তোমার। তখন ছাফওয়ান বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এগুলি দিয়ে কোন নবী ব্যতীত কেউ কাউকে খুশী করতে পারে না এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল’। ওয়াক্বেদী বর্ণিত অত্র বর্ণনাটি পরিত্যক্ত (মা শা-‘আ ২০০ পৃঃ)।
[2]. আহমাদ হা/৬৭২৯, নাসাঈ হা/৩৬৮৮, আবুদাঊদ হা/২৬৯৪; মিশকাত হা/৪০২৫।

প্রসিদ্ধ আছে যে, আববাস বিন মিরদাসকে অনেকগুলি উট দেওয়া হয়। কিন্তু সে তাতে সন্তুষ্ট হ’তে পারেনি। ফলে রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে কুৎসা গেয়ে সাত লাইনের কবিতা পাঠ করে। এ কথা জানতে পেরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা যাও এবং আমার পক্ষ থেকে ওর জিহবা কেটে নাও। অতঃপর তাকে আরও উট দিতে থাক। যতক্ষণ না সে খুশী হয়। ফলে তার জিহবা কেটে নেওয়া হয়’ (ইবনু হিশাম ২/৪৯৩-৯৪)। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ বা যঈফ (মা শা-‘আ ১৯৯ পৃঃ)।

আনছারগণের বিমর্ষতা ও রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষণ

মক্কার নওমুসলিমদের মধ্যে গণীমতের বৃহদাংশ বণ্টন করে দেওয়ায় আনছারদের মধ্যে কিছুটা বিমর্ষভাব দেখা দেয়। কেউ কেউ বলে ফেলেন,لَقِيَوَاللهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمَهُ ‘আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কওমের সাথে মিশে গেছেন’। কেউ বলেন,إِذَا كَانَتْ شَدِيْدَةٌ فَنَحْنُ نُدْعَى وَيُعْطَى الْغَنِيْمَةَ غَيْرُنَا ‘যখন কঠিন সময় আসে, তখন আমাদের ডাকা হয়। আর গণীমত দেওয়া হয় অন্যদের’ (বুখারী হা/৪৩৩৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,يُعْطِى قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا، وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ ‘তিনি কুরায়েশদের দিচ্ছেন ও আমাদেরকে পরিত্যাগ করছেন। অথচ আমাদের তরবারী থেকে তাদের রক্ত টপকাচ্ছে’ (বুখারী হা/৪৩৩১)।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, খাযরাজ নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে গমন করেন এবং সমবেত আনছারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে হামদ ও ছানার পরে বলেন,يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ مَقَالَةٌ بَلَغَتْنِيْ عَنْكُمْ وَجِدَةٌ وَجَدْتُمُوْهَا عَلَيَّ فِيْ أَنْفُسِكُمْ ‘হে আনছারগণ! তোমাদের কিছু কথা আমার নিকট পৌঁছেছে। তোমাদের অন্তরে আমার বিরুদ্ধে কিছু অসন্তুষ্টি দানা বেঁধেছে’ (আহমাদ হা/১১৭৪৮)।يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلاَّلاً فَهَدَاكُمُ اللهُ بِى، وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِينَ فَأَلَّفَكُمُ اللهُ بِى، وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمُ اللهُ بِى؟ ‘হে আনছারগণ! আমি কি তোমাদের নিকটে এমন অবস্থায় আসিনি যখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন। তোমরা ছিলে বিভক্ত, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। তোমরা ছিলে অভাবগ্রস্ত, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সচ্ছলতা দান করেন’ (বুখারী হা/৪৩৩০)।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর বর্ণনায় আরও এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন’? তারা বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! তোমরা কি জবাব দিবে না? তারা বললেন, আমরা আর কি জবাব দেব হে আল্লাহর রাসূল! এসবই তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগ্রহ। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, দেখ তোমরা ইচ্ছা করলে একথাও বলতে পার এবং সেটা বললে তোমরা অবশ্য সত্য কথাই বলবে- সেটা এই যে,أَتَيْتَنَا مُكَذَّباً فَصَدَّقْنَاكَ وَمَخْذُولاً فَنَصَرْنَاكَ وَطَرِيداً فَآوَيْنَاكَ وَعَائِلاً فَآسَيْنَاكَ ‘আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন এমন সময় যখন আপনাকে মিথ্যাবাদী বলা হচ্ছিল। অতঃপর আমরা আপনাকে সত্য বলে জেনেছি। যখন আপনি ছিলেন অপদস্থ, তখন আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। যখন আপনি ছিলেন বিতাড়িত, তখন আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। যখন আপনি ছিলেন অভাবগ্রস্ত, তখন আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছি’।

অতঃপর তিনি বলেন,أَوَجَدْتُمْ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ فِيْ أَنْفُسِكُمْ فِيْ لُعَاعَةٍ مِنَ الدُّنْيَا تَأَلَّفْتُ بِهَا قَوْمًا لِيُسْلِمُوْا، وَوَكَلْتُكُمْ إلَى إسْلاَمِكُمْ ‘হে আনছারগণ! দুনিয়ার এক গোছা ঘাসের জন্য তোমরা মনে কষ্ট নিয়েছ, যার মাধ্যমে আমি লোকদের হৃদয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে চেয়েছি, যাতে তারা অনুগত হয়। আর তোমাদেরকে সোপর্দ করেছি তোমাদের ইসলামের নিকট (অর্থাৎ তোমাদের জন্য ইসলামই যথেষ্ট)।أَلاَ تَرْضَوْنَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالشّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَرْجِعُوْا بِرَسُوْلِ اللهِ إلَى رِحَالِكُمْ؟ ‘হে আনছারগণ! তোমরা কি এতে রাযী নও যে, লোকেরা বকরী ও উট নিয়ে চলে যাক, আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে তোমাদের কাফেলায় ফিরে যাও?أَلاَ تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالدُّنْيَا، وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَحُوْزُوْنَهُ إِلَى بُيُوْتِكُمْ؟ ‘তোমরা কি এতে খুশী নও যে, লোকেরা দুনিয়া নিয়ে চলে যাক। আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে চলে যাও ও তাঁকে তোমাদের বাড়ীতে আশ্রয় দাও?’ ‘অতএব সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের জীবন, যদি হিজরত না থাকত, তাহ’লে আমি হ’তাম আনছারদের একজন। যদি লোকেরা বিভিন্ন গোত্র বেছে নেয়, তবে আমি আনছারদের গোত্রে প্রবেশ করব’।اللَّهُمَّ ارْحَمِ الْأَنْصَارَ، وَأَبْنَاءَ الْأَنْصَارِ، وَأَبْنَاءَ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আনছারদের উপরে রহম কর। আনছারদের সন্তানদের উপর রহম কর এবং তাদের সন্তানদের সন্তানগণের উপর রহম কর’।

রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত হৃদয়স্পর্শী ভাষণ শুনে কাঁদতে কাঁদতে সকলের দাড়ি ভিজে গেল এবং তারা সবাই বলে উঠল,رَضِيْنَا بِرَسُوْلِ اللهِ قَسْمًا وَحَظًّا ‘আমরা সবাই আল্লাহর রাসূলের ভাগ-বণ্টনে সন্তুষ্ট’ (আহমাদ হা/১১৭৪৮ সনদ হাসান)।

গণীমত বণ্টনে অসন্তুষ্ট ব্যক্তিগণ

(১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এ সময় বনু তামীম গোত্রের নওমুসলিম বেদুঈন হুরকূছ বিন যুহায়ের যুল-খুইয়াইছিরাহ(حُرقُوصُ بنُ زُهَيْر ذُو الْخُوَيْصِرَةِ) নামক জনৈক ন্যাড়ামুন্ড ঘন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি বলে উঠে, يَا مُحَمَّدُ اعْدِلْ. قَالَ: وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ، لَقَدْ خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ ‘হে মুহাম্মাদ! ন্যায় বিচার করুন! জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার ধ্বংস হৌক! যদি আমি ন্যায় বিচার না করি, তবে কে ন্যায় বিচার করবে? যদি আমি ন্যায় বিচার না করি, তাহ’লে তুমি নিরাশ হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে’। তখন ওমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন,دَعْنِى يَا رَسُولَ اللهِ فَأَقْتُلَ هَذَا الْمُنَافِقَ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ছেড়ে দিন, এই মুনাফিকটার গর্দান উড়িয়ে দিই। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,مَعَاذَ اللهِ أَنْ يَتَحَدَّثَ النَّاسُ أَنِّى أَقْتُلُ أَصْحَابِى إِنَّ هَذَا وَأَصْحَابَهُ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنْهُ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ ‘আল্লাহর নিকট পানাহ চাই! লোকেরা বলবে, আমি আমার সাথীদের হত্যা করছি। নিশ্চয় এই ব্যক্তি ও তার সাথীরা কুরআন তেলাওয়াত করে। যা তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করে না। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়’ (মুসলিম হা/১০৬৩ (১৪২)।

ইবনু হাজার বলেন, ঐ ব্যক্তি দু’বার এরূপ কথা বলে। একবার হোনায়েনের গণীমত বণ্টনের সময়। দ্বিতীয়বার হোনায়েনের পর ইয়ামন থেকে আলী (রাঃ) প্রেরিত স্বর্ণ বণ্টনের সময়’।[1]

(২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ইয়ামন থেকে আলী (রাঃ) প্রেরিত অপরিশোধিত স্বর্ণ টুকরাটি রাসূল (ছাঃ) নাজদের চার নেতার মধ্যে ভাগ করে দেন। তারা হ’লেন, আক্বরা‘ বিন হাবেস আল-হানযালী, উয়ায়না বিন হিছন আল-ফাযারী, আলক্বামা বিন উলাছাহ আল-‘আমেরী এবং যায়েদ আল-খায়ের আত-ত্বাঈ। এতে কুরায়েশরা ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, আপনি নাজদের নেতাদের দিচ্ছেন, আর আমাদের বঞ্চিত করছেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,إِنِّى إِنَّمَا فَعَلْتُ ذَلِكَ لِأَتَأَلَّفَهُمْ ‘আমি এটা করছি তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য’। এসময় একজন ন্যাড়ামুন্ডু ঘন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি এসে বলল,اِتَّقِ اللهَ يَا مُحَمَّدُ ‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর’।... রাসূল (ছাঃ) বললেন,إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَقْتُلُونَ أَهْلَ الإِسْلاَمِ وَيَدَعُونَ أَهْلَ الأَوْثَانِ يَمْرُقُونَ مِنَ الإِسْلاَمِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ ‘এ ব্যক্তির ঔরস থেকে একদল লোক বের হবে, যারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। যা তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করবে না। তারা মুসলমানদের হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজারীদের ছেড়ে দিবে। তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে এমনভাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। যদি আমি তাদের পাই, তাহ’লে আমি অবশ্যই তাদের হত্যা করব, ‘আদ কওমকে হত্যা করার ন্যায়’ (মুসলিম হা/১০৬৪)। একই রাবী থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে,يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ رَطْبًا،... لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ثَمُودَ ‘যারা সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত করবে।... যদি আমি তাদের পাই, তাহ’লে আমি অবশ্যই তাদের হত্যা করব, ছামূদ কওমকে হত্যা করার ন্যায়’ (বুখারী হা/৪৩৫১)।

ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, আক্বরা বিন হাবেস ও অন্যান্য নেতাদের বেশী বেশী উট দেওয়ায় আনছারের জনৈক (মুনাফিক) ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে ইঙ্গিত করে বলে,مَا أَرَادَ بِهَا وَجْهَ اللهِ ‘এর দ্বারা তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেননি’। একথা জানতে পেরে রাসূল (ছাঃ) অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। যাতে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন,رَحِمَ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِىَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ ‘আল্লাহ মূসার প্রতি রহম করুন! এর চাইতে তাঁকে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও তিনি ছবর করেছিলেন’ (বুখারী হা/৩১৫০, ৪৩৩৫)।

(৩) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আরও বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে,يَخْرُجُ فِى هَذِهِ الأُمَّةِ- وَلَمْ يَقُلْ مِنْهَا- قَوْمٌ تَحْقِرُونَ صَلاَتَكُمْ مَعَ صَلاَتِهِمْ، و فى رواية : يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِمْ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الْإِسْلاَمِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ ‘এই উম্মতের মধ্যে (তিনি বলেননি, মধ্য হ’তে। অর্থাৎ তারা মুসলিম নামেই থাকবে) এমন এক দল লোক বের হবে, তাদের ছালাতের সাথে তোমরা নিজেদের ছালাতকে হীন মনে করবে। ‘তোমাদের কেউ নিজেদের ছালাতকে তাদের ছালাতের সঙ্গে এবং তোমাদের ছিয়ামকে তাদের ছিয়ামের সঙ্গে তুলনা করলে তোমাদের নিজেদের ছিয়াম ও ছালাতকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন ধনুক হ’তে তীর বের হয়ে যায়’ (মুসলিম হা/১০৬৪ (১৪৭-৪৮)।

(৪) আলী (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,سَيَخْرُجُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ أَحْدَاثُ الْأَسْنَانِ سُفَهَاءُ الْأَحْلاَمِ يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ فَإِنَّ فِى قَتْلِهِمْ أَجْرًا لِمَنْ قَتَلَهُمْ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘আখেরী যামানায় একদল তরুণ বয়সী বোকা লোক বের হবে, যারা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর কথা বলবে। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক হ’তে তীর বের হয়ে যায়। যখন তোমরা তাদের পাবে, তখন তাদের হত্যা করবে। কেননা এদের হত্যাকারীর জন্য আল্লাহর নিকটে ক্বিয়ামতের দিন বিশেষ পুরস্কার রয়েছে’ (মুসলিম হা/১০৬৬ (১৫৪)। এই হত্যা সরকারী আদালতের মাধ্যমে হ’তে হবে (ঐ, শরহ নববী, মর্মার্থ)।

যুল-খুইয়াইছিরাকে পরবর্তীতে আলী (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (৩৫-৪১ হিঃ) সৃষ্ট চরমপন্থী দল ‘খারেজীদের মূল’(أَصْلُ الْخَوَارِجِ) বলা হয় (কুরতুবী, সূরা তওবা ৫৮ আয়াতের ব্যাখ্যা)।

এসব মুনাফিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়,وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُوا مِنْهَا رَضُوا وَإِنْ لَمْ يُعْطَوْا مِنْهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ- وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آتَاهُمُ اللهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللهُ سَيُؤْتِينَا اللهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللهِ رَاغِبُونَ ‘আর তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা ছাদাক্বা বণ্টনের ব্যাপারে তোমার প্রতি দোষারোপ করে। যদি তাদেরকে ছাদাক্বা থেকে কিছু দেওয়া হয়, তাহলে খুশী হয়। আর যদি না দেওয়া হয়, তাহ’লে তারা ক্রুদ্ধ হয়’। ‘কতই না ভাল হ’ত যদি তারা সন্তুষ্ট হ’ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তার উপরে এবং বলত, আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। সত্বর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে দান করবেন। আর আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি নিরত হলাম’।[2] যুগে যুগে ইসলামের নামে সরকার বিরোধী যত সশস্ত্র চরমপন্থী দলের উদ্ভব ঘটেছে, সবগুলিই হ’ল সেদিনকার রাসূল বিরোধী ও পরে আলী বিরোধী চরমপন্থীদের উত্তরসূরী।

[1]. ফাৎহুল বারী হা/৪৩৫১-এর আলোচনা; সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১৪-টীকা।
[2]. তওবা ৯/৫৮-৫৯; কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর উক্ত আয়াত।

হাওয়াযেন প্রতিনিধি দলের আগমন ও বন্দীদের ফেরৎ দান

গণীমত বণ্টন সম্পন্ন হবার পর যোহায়ের বিন ছুরাদ(زُهَيْرُ بْنُ صُرَدٍ) এর নেতৃত্বে হাওয়াযেন গোত্রের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মুসলমান অবস্থায় আগমন করে। এই দলে রাসূল (ছাঃ)-এর দুধ চাচা আবু বুরক্বান(أبو بُرْقَان) ছিলেন। তাঁরা অনুরোধ করলেন যে, অনুগ্রহ পূর্বক তাদের বন্দীদের ও মাল-সম্পদাদি ফেরৎ দেওয়া হৌক’। তাদের কথা-বার্তায় এতই কাকুতি-মিনতি ছিল যে, হৃদয় গলে যায়। তাদের বক্তব্য মতে বন্দীনীদের মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর দুগ্ধ সম্পর্কিত খালা-ফুফুরাও ছিলেন। যাদের বন্দী রাখা ছিল নিতান্ত অবমাননাকর বিষয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার ও অন্যান্য গোত্রের নও মুসলিমদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন,إِنَّ مَعِى مَنْ تَرَوْنَ،... فَأَبْنَاؤُكُمْ وَنِسَاؤُكُمْ أَحَبُّ إِلَيْكُمْ أَمْ أَمْوَالُكُمْ؟ ‘আমার সঙ্গে যারা আছে, তোমরা তো তাদের দেখতেই পাচ্ছ’ (অর্থাৎ মাল-সম্পদ তারা ফেরৎ দিবে না)।... এক্ষণে তোমাদের সন্তানাদি ও নারীগণ তোমাদের নিকটে অধিক প্রিয়, না তোমাদের ধন-সম্পদ’? জবাবে তারা বললেন,مَا كُنّا نَعْدِلُ بِالْأَحْسَابِ شَيْئًا ‘আমরা কোন কিছুকেই আমাদের বংশ মর্যাদার তুলনীয় মনে করি না’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের বললেন, যোহরের জামা‘আত শেষে তোমরা দাঁড়িয়ে বলবে, ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-কে মুমিনদের নিকটে এবং মুমিনদেরকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে সুফারিশকারী বানাচ্ছি আমাদের বন্দীদের আমাদের নিকটে ফিরিয়ে দেবার জন্য’।

রাসূল (ছাঃ)-এর কথামত তারা যোহরের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে উক্ত অনুরোধ পেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার ও বনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের অংশে যা আছে, সবই তোমাদের। এক্ষণে আমি তোমাদের জন্য লোকদের নিকটে সওয়াল করছি(سَأَسْأَلُ لَكُمُ النَّاسَ)। তখন মুহাজির ও আনছারগণ বললেন, আমাদের অংশের সবকিছু আমরা রাসূলকে দিয়ে দিলাম’। এবার আক্বরা বিন হাবিস বললেন, আমার ও বনু তামীমের অংশ দিলাম না’। একইভাবে উয়ায়না বিন হিছ্ন বললেন, আমার ও বনু ফাযারাহর অংশও নয়’। আববাস বিন মিরদাস বললেন, আমার ও বনু সুলায়েম-এর অংশও নয়’। কিন্তু তার গোত্র বনু সোলায়েম বলে উঠল, না আমাদের অংশের সবটুকু আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দিয়ে দিলাম’। মিরদাস তখন তার গোত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন,وَهَنْتُمُوْنِيْ ‘তোমরা আমাকে অপদস্থ করলে’?

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘দেখ এই লোকগুলি মুসলমান হয়ে এখানে এসেছে। উক্ত উদ্দেশ্যেই আমি তাদের বন্দী বণ্টনে দেরী করেছিলাম। আমি তাদেরকে এখতিয়ার দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোন কিছুকেই তাদের বন্দীদের সমতুল্য মনে করেনি। অতএব যার নিকটে বন্দীদের কেউ রয়েছে সন্তুষ্টচিত্তে তাকে ফেরত দিলে সেটাই উত্তম পন্থা হবে। আর যদি কেউ আটকে রাখে, তবে সেটা তার এখতিয়ার। তবে যদি সে ফেরৎ দেয়, তবে আগামীতে অর্জিত প্রথম গণীমতে তাকে একটির বিনিময়ে ছয়টি অংশ দেওয়া হবে’ (আবুদাঊদ হা/২৬৯৪)। একথা শুনে লোকেরা সমস্বরে বলে উঠলো,قَدْ طَيِّبْنَا ذَلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য সবকিছুই হৃষ্টচিত্তে ফেরত দিতে প্রস্ত্তত আছি’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কে কে রাযী ও কে কে রাযী নও, সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। অতএব তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের দলনেতাদের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দাও’।[1] তখন সবাই তাদের বন্দী নারী-শিশুদের ফেরত দিল। কেবল বনু ফাযারাহ নেতা উয়ায়না বিন হিছ্ন বাকী রইল। তার অংশে একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। পরে তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন। এইভাবে ৬,০০০ যুদ্ধবন্দীর সবাই মুক্তি পেয়ে যায়। মুক্তি দানের সময় প্রত্যেক বন্দীকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একটি করে মূল্যবান ক্বিবতী চাদর উপহার দেন।[2] রাসূল (ছাঃ)-এর এই উদারনীতি ছিল তৎকালীন সময়ে একটি অনন্য সাধারণ ঘটনা এবং সে সময়ের যুদ্ধনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা।

[1]. বুখারী হা/২৩০৭; আবুদাঊদ হা/২৬৯৩।
[2] . যাদুল মা‘আদ ৩/৪১৮; আর-রাহীক্ব ৪২২ পৃঃ।

ওমরাহ পালন ও মদীনায় প্রত্যাবর্তন

জি‘ইর্রানাহতে গণীমত বণ্টন সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ওমরাহ পালনের জন্য ইহরাম বাঁধেন (যা মক্কা থেকে ২০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত)। অতঃপর মক্কা গমন করে ওমরাহ পালন করেন। অতঃপর আত্তাব বিন আসীদকে মক্কার প্রশাসক হিসাবে বহাল রেখে তিনি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ সময় ছাক্বীফ নেতা ওরওয়া বিন মাসঊদ পথিমধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলাম কবুল করেন’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১৭)।

এভাবে ৮ম হিজরীর ১০ই রামাযান মদীনা থেকে মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে মক্কা, হোনায়েন ও ত্বায়েফ বিজয় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দীর্ঘ ২ মাস ১৪ দিন পর ২৪শে যুলক্বা‘দাহ মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

হোনায়েন যুদ্ধের গুরুত্ব

১. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে আরব বেদুঈনদের বড় ধরনের কোন বিদ্রোহের সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়।

২. নও মুসলিমদের মনে ইসলামের অপরাজেয় শক্তি সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। তাদের মধ্যকার দুষ্টুরা কখনো আর ইসলামের বিরোধিতা করার চিন্তা করেনি।

৩. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলিম শক্তি আরব উপদ্বীপে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়। তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমকগণ ব্যতীত তখন মুসলিম শক্তির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না।

গাযওয়া হোনায়েন ও ত্বায়েফ থেকে প্রাপ্ত বিধানসমূহ

(১) মুশরিকদের নিকট থেকে যুদ্ধাস্ত্র ধার নেওয়া সিদ্ধ। যেমন রাসূল (ছাঃ) ছাফওয়ান বিন উমাইয়ার কাছ থেকে ১০০ বর্ম ধার নিয়েছিলেন।

(২) আওত্বাস যুদ্ধের দিন বিবাহিতা বন্দীনীদের বিধান সম্পর্কে সূরা নিসা ২৪ আয়াত নাযিল হয়। যাতে বলা হয় যে, তাদের ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস নিষিদ্ধ। আর ইদ্দত শেষ হয় গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করলে এবং অন্য নারীদের ঋতু এলে।

(৩) গায়ের মাহরাম হিজড়া নারীদের গৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। যা ইতিপূর্বে সিদ্ধ ছিল। কিন্তু ত্বায়েফ দুর্গ অবরোধের প্রাক্কালে রাসূল (ছাঃ) জনৈক হিজড়া পুরুষ কর্তৃক বাদিয়াহ বিনতে গায়লান ছাক্বাফীর সৌন্দর্য বর্ণনা শুনেন। ফলে তিনি তাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

(৪) নারী-শিশু-বৃদ্ধ এবং শ্রমিকদের মধ্যে যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, তাদেরকে হত্যা করতে নিষেধাজ্ঞা জারী হয়।

(৫) দারুল হারবে দন্ডবিধি কার্যকর করা সিদ্ধ। যা হোনায়েনের দিন জনৈক মদ্যপায়ীর বিরুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) করেছিলেন (আবুদাঊদ হা/৪৪৮৭)।

(৬) ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কিংবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনিষ্টকারিতা প্রতিরোধের জন্য অথবা মুসলমানদের আশু কল্যাণ লাভের স্বার্থে নওমুসলিম বা অন্যদের প্রতি গণীমত বা যাকাতের মাল প্রদান করা সিদ্ধ।

(৭) জি‘ইর্রানাহ থেকে ওমরাহ করার বিধান চালু হয়’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫২০-২১)।

হোনায়েন যুদ্ধে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

১. সংখ্যাশক্তি নয়, বরং ঈমানী শক্তিই হ’ল ইসলামী বিজয়ের মূল চালিকাশক্তি। হোনায়েন যুদ্ধে বিজয় ছিল তার অন্যতম প্রমাণ।

২. শিরকের প্রতি আকর্ষণ যে মানুষের সহজাত, তার প্রমাণ পাওয়া যায় হোনায়েন যাওয়ার পথে মুশরিকদের পূজিত বৃক্ষ ‘যাতু আনওয়াত্ব’(ذَاتُ أَنْوَاطٍ) দেখে অনুরূপ একটি পূজার বৃক্ষ নিজেদের জন্য নির্ধারণকল্পে কিছু নও মুসলিমের আবদারের মধ্যে।

৩. কেবল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দিয়ে নয় বরং যুদ্ধের জন্য প্রবীণদের দূরদর্শিতার মূল্যায়ন অধিক যরূরী। শত্রুপক্ষের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছিম্মাহর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তরুণ সেনাপতি মালেক বিন ‘আওফের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই হোনায়েন যুদ্ধে তাদের মর্মান্তিক পরাজয় ঘটে।

৪. অহংকার পতনের মূল- একথারও প্রমাণ মিলেছে হোনায়েনের যুদ্ধে। সংখ্যাধিক্যের অহংকারে যখন কিছু মুসলিম সৈন্যের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, ‘আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। তখন যুদ্ধের শুরুতেই তাদের পলায়ন দশার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের বিপর্যয় এই অহংকার চূর্ণ করে দেন।

৫. নেতার প্রতি কেবল আনুগত্য নয়, তার প্রতি হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা ও আকর্ষণ থাকা প্রয়োজন। নইলে বড় কোন বিজয় লাভ করা সম্ভব নয়। যেমন হোনায়েন বিপর্যয়কালে রাসূল (ছাঃ)-এর ও তাঁর চাচা আববাসের আহবান শুনে ছাহাবীগণ গাভীর ডাকে বাছুরের ছুটে আসার ন্যায় লাববায়েক লাববায়েক বলতে বলতে চৌম্বিক গতিতে ছুটে আসে এবং যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয়ে যায়।

৬. চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরেই কেবল আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে। যেমন ছাহাবীগণ যুদ্ধে ফিরে আসার পরেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) শত্রুপক্ষের দিকে বালু নিক্ষেপ করেন এবং তখনই তাদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয়।

৭. সর্বাবস্থায় মানবতাকে উচ্চে স্থান দিতে হবে। তাই দেখা যায় যুগের নিয়ম অনুযায়ী বিজিত পক্ষের নারী-শিশু ও বন্দীদের বণ্টন করে দেবার পরেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ফেরৎ দিলেন। এমনকি ছয়গুণ বিনিময় মূল্য দিয়ে অন্যের নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে তাদেরকে স্ব স্ব গোত্রে ফেরৎ পাঠালেন। এ ছিল সেযুগের জন্য এক অচিন্তনীয় ঘটনা। বলা চলে যে, এই উদারতার ফলশ্রুতিতেই বনু হাওয়াযেন ও বনু ছাক্বীফ দ্রুত ইসলাম কবুল করে মদীনায় চলে আসে।

৮. ইসলামে যুদ্ধ বিজয়ের চাইতে হেদায়াত প্রাপ্তিই মুখ্য। সেকারণ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ গোত্রের জন্য বদদো‘আ না করে হেদায়াতের দো‘আ করেন এবং আল্লাহর রহমতে তারা সবাই পরে মুসলমান হয়ে যায়।

৯. দুনিয়াপূজারীদের অনুগত করার জন্য তাদেরকে অধিকহারে দুনিয়াবী সুযোগ দেওয়া ক্ষেত্র বিশেষে সিদ্ধ- তার প্রমাণ পাওয়া যায় মক্কার নওমুসলিমদের চাহিদামত বিপুল গণীমত দেওয়ার মধ্যে। অথচ আখেরাতপিয়াসী আনছার ও মুহাজিরগণকে নাম মাত্র গণীমত প্রদান করা হয়।

১০. আমীর ও মামূর উভয়কে উভয়ের প্রতি নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখতে হয়। সে বিশ্বাসে সামান্য ফাটল দেখা দিলেই উভয়কে অগ্রণী হয়ে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হয়। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর গণীমত বণ্টনে আনছারদের অসন্তুষ্টির খবর জানতে পেরেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে যান এবং তাদের সন্দেহের নিরসন ঘটান। ফলে অসন্তুষ্টির আগুন মহববতের অশ্রুতে ভিজে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  





******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url