নামায সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর - ৩




নামায সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর

নামায রেখে মারা গেলে

কোন ব্যক্তি নামায রেখে মারা গেলে তার তরফ থেকে তা আদায় করে দেওয়া যায় কি না?

না। কারণ নামাযে নায়েবি চলে না। কেউ আদায় করে দিলেও তা উপকারী হবে না। ১৭২ আর সে ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ না করে থাকে, তাহলে কোন ক্ষতি হবে না।
১৭২ (লাজনাহ দায়েমাহ)

সামনে আগুন রেখে নামাজ

সামনে আগুন অথবা জ্বলন্ত বাতি বা ধূপ থাকলে নামায পড়া বৈধ কি?

সামনে আগুন রেখে নামায পড়তে উলামাগন নিষেধ করেন। কারণ তাতে অগ্নিপূজকদের সাদৃশ্য সাধন হয়। পক্ষান্তরে জলন্ত কেরোসিন বা মোমবাতি, ইলেকট্রিক বাল্ব বা হিটার অথবা ধূপ ইত্যাদি সামনে থাকলে নামায পড়া অবৈধ নয়। কারণ অগ্নিপূজকরা এভাবে অগ্নিপুজা করে না এবং সে সব জ্বলন্ত জিনিস তা’যীমের জন্যও সামনে রাখা হয় না। ১৭৩
১৭৩ (ইবনে উষাইমীন)

শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে না জানা ব্যক্তির ইমামতি

যে ইমাম শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে জানে না, তাঁর পিছনে নামায কি শুদ্ধ?

যে ইমাম শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারে না এবং এমনভাবে কুরআন পড়ে, যাতে তাঁর মানেই বদলে যায়, সে ইমামের পিছনে নামায শুদ্ধ নয়। বিশেষ করে সেই জামা'আতে যদি শুদ্ধ করে কুরআন পড়ার মতো কোন লোক থাকে। ১৭৪
১৭৪ (ইবনে উষাইমীন)

ইমামের সালাম ফিরার পর

ইমামের সালাম ফিরার পর তিনি কি মসবূকের সুতরাহ থাকেন?

না। সুতরাং তাঁর সামনে দিয়ে পার হওয়া বৈধ নয় এবং কেউ পার হতে চাইলে তাঁর বাধা দেওয়া জরুরী। ১৭৫
১৭৫ (ইবনে উষাইমীন)

কার পিছনে নামায শুদ্ধ

যে নামাযী দাড়ি চাঁছে অথবা গাঁটের নিচে কাপড় ঝোলায়, তার পিছনে নামায পড়া কি শুদ্ধ ?

এ ব্যাপারে একটি সাধারণ নীতি হলঃ যার নিজের নামায শুদ্ধ, তার পিছনে নামায শুদ্ধ। কাফের বা মুশারিকের নামায শুদ্ধ নয়, তার পিছনে নামায শুদ্ধ নয়। ফাসেকের নামায শুদ্ধ, তার পিছনে নামায শুদ্ধ। তবে তাকে ইমাম বানানো উচিৎ নয়। ১৭৬ সুতরাং যে ইমাম দাড়ি চাঁছে বা ছোট করে ছাঁটে, গাঁটের নিচে কাপড় ঝোলায়, বিড়ি-সিগারেট খায়, ব্যাংকের সুদ খায়, বউ-বেটিকে শরয়ী পর্দা করে না, কোন অবৈধ মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে, মিথ্যা বলে, গীবত করে, অথবা আরো কোন কাবীরা গোনাহর কাজ করে, তার পিছনে নামায হয়ে যাবে। তবে এমন লোককে ইমাম বানানো উচিৎ নয় জামাআতের। কিন্তু জামাআতের মধ্যে সেই যদি সবার চাইতে ভাল লোক হয়, তাহলে ‘যেমন হাঁড়ি তেমনি শরা, যেমন নদী তেমনি চরা।’
১৭৬ (ইবনে উষাইমীন)

নামায পড়তে দাঁড়ানোর পর

নামায পড়তে দাঁড়ানোর পর যদি বাসার কলিং বেল বারবার বেজে ওঠে এবং বাসায় ঐ নামাযী ছাড়া অন্য কেউ না থাকে, তাহলে সে কী করতে পারে?

নফল নামায হলে তো সহজ। কিন্তু ফরয নামায হলে পুরুষ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে এবং মহিলা হাতের চেটো দ্বারা শব্দ করে জানিয়ে দেবে যে, সে নামায পড়ছে। তাতেও যদি বেল বেজেই যায় এবং বুঝতে পারে আগন্তক বা ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে এসে পুনরায় নামায শুরু করবে। ১৭৭
১৭৭ (ইবনে বায)

যোহরের নামায তিন রাকাত হলে

যোহরের নামায পড়ার কিছু পরে আমার স্মরণ হল, আমি তিন রাকআত নামায পড়েছি। এখন আমি কি করব? আর এক রাকাআত পরে নিয়ে নিয়মিত সহু সিজদা করব, নাকি পুনরায় নতুন করে চার রাকাআত পড়ব?

অল্প সময় (যেমন পাঁচ মিনিটের) ভিতরে মনে পড়লে এবং তখনও মসজিদে অথবা নিজ মুসাল্লায় থাকলে আরও এক রাকাআত পরে নিয়মিত সহু সিজদা করে নেবেন। পক্ষান্তরে সময় লম্বা হয়ে গেলে এবং মসজিদ অথবা মুসাল্লা ছেড়ে চলে গেলে পুনরায় নতুন করে চার রাকাআত পড়বেন। যেহেতু তখন রাকাআতগুলির ধারাবাহিকতা বিছিন্ন হয়ে যায়। ১৭৮
১৭৮ (ইবনে জিবরীন)

ছবিযুক্ত পোশাক পরে নামায

ছবিযুক্ত পোশাক পরে নামায বৈধ কি?

প্রাণী, মূর্তি, ত্রিশূল, ক্রুশ ইত্যাদির ছবিযুক্ত অথবা বিভিন্ন লেখাযুক্ত পোশাক পরে নামায বৈধ নয়। এমন ছবিযুক্ত পোশাক পরে নামায বৈধ নয়, যাতে নিজের অথবা অপরের দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট হয়। ১৭৯
১৭৯ (ইবনে জিবরীন)

একা নামাযে ইকামত

কারণবশতঃ একা নামায পড়তে হলে ইকামত দেওয়ার মানে কি?

একা নামাযীর জন্য ইকামত দেওয়া জরুরী নয়। যেমন জেহরী নামায সশব্দে কিরাআত পড়াও জরুরী নয়। এ শুধু জামাআতের নামাযের ক্ষেত্রে জরুরী। ১৮০
১৮০ (ইবনে জিবরীন)

একা নামায পড়া অবস্থায় কেউ যোগ দিলে

অনেক সময় একা দাঁড়িয়ে নামায পড়ি, তখন কেউ এসে আমার ডান পাশে দাঁড়িয়ে গেলে আমার কী করা উচিত?

ইমামতির নিয়ত করে সশব্দে তকবীর বলা এবং জেহরী নামায হলে সশব্দে কিরাআত করা উচিৎ। কেউ বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলে তাকে ডান দিকে করে নেওয়া উচিৎ। এমনটি করেছিল রাসুল (সঃ) ইবনে আব্বাসের সাথে। ১৮১

এ ক্ষেত্রে আপনি সুন্নত আর সে ফরয পড়লে অথবা এর বিপরীত হলেও কোন ক্ষতি হবে না। মুআয বিন জাবাল (রঃ) মহানবী (সঃ) এর সাথে তাঁর মসজিদে (নবাবীতে) নামায পড়তেন। অতঃপর নিজ গোত্রে ফিরে এসে ঐ নামাযেরই ইমামতি করতেন।১৮২ পরবর্তী ইমামতির নামাযটি তাঁর নফল হত। অনুরূপ পূর্বে নামায পড়ে পুনরায় মসজিদে এলে এবং সেখানে জামাআত চলতে থাকলে সে নামাযও নফল স্বরূপ পড়তে বলা হয়েছে। ১৮৩

মহানবী (সঃ) একদা এক ব্যক্তিকে একাকী নামায পড়তে দেখলেন তিনি অন্যান্য সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এমন কেউ কি নেই, যে এর সাথে নামায পড়ে একে (জামাআতের সওয়াব) ডান করে?” এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তাঁর সাথে নামায পড়ল। ১৮৪ অথচ সে মহানবী (সঃ) এর সাথে ঐ নামায পূর্বে পড়েছিল।

১৮১ (বুখারী ১১৭, মুসলিম ৭৬৩ নং), ১৮২ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৫০ নং), ১৮৩ (আবূ দাঊদ ৫৭৫, তিরমিযী ২১৯, নাসাঈ, মিশকাত ১১৫২, সঃ জামে ৬৬৭ নং), ১৮৪ (আবূ দাঊদ ৫৭৪, তিরমিযী, মিশকাত ১১৪৬ নং)



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url