আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-০১) || আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন || ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা নয় ||






আল্লাহর উপর ভরসা করতে শিখুন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন


আল্লাহ সর্ব শক্তিমান সুমহান

يَسْأَلُهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ

“আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। প্রতি মুহুর্তে তিনি কাজে রত।” (৫৫-সূরা আর রাহমান: আয়াত-২৯)

(যেমন কাউকে সম্মান দান করা, কাউকে অপমানিত করা, নবসৃষ্টির মাধ্যমে কাউকে জীবন দান করা, কাউকেবা মৃত্যু দান করা ইত্যাদি কাজে রত)।

যখন বিক্ষুব্ধ ঝঞা বায়ুতে সমুদ্র উত্তাল-তরঙ্গায়িত থাকে, তখন নৌকার আরোহীগণ আর্তনাদ করে বলে, “হে আল্লাহ!”

যখন মরুভূমিতে উট চালক ও কাফেলা পথ হারিয়ে ফেলে তখন তারা আর্তচিৎকার করে বলে, “হে আল্লাহ!"

যখন বিপর্যয় ও দুর্যোগ দেখা দেয় তখন দুর্দশাগ্রস্তরা বলে উঠে, “হে আল্লাহ!"

দরজা দিয়ে যখন কেউ প্রবেশ করতে চায় আর তার সামনেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং অভাবীদের সামনে যখন বাধার প্রাচীর নির্মাণ করা হয় তখন তারা চিৎকার দিয়ে বলে, “হে আল্লাহ!"

যখন সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, সকল আশা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং পথ সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন ডাক পড়ে, “হে আল্লাহ!"

বিশাল, বিস্তীর্ণ ও প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী যখন আপনার কাছে সংকীর্ণ মনে হয়, নিজেকে সংকুচিত ভাবতে পরিস্থিতি বাধ্য করে তখন আপনি ডাক দিয়ে বলুন, “হে আল্লাহ!"

সকল ভালো কথা, একান্ত অনুনয়-বিনয়, নিরপরাধীর আঁখিজল এবং বিপদগ্রস্তের সাহায্য প্রার্থনা-সবই আল্লাহর দরবারে পৌছে। অভাব-অনটন এবং বিপদাপদের সময় দু’হাত ও দু’চোখ তার দিকেই প্রসারিত হয়। জিহ্বা তার নাম সুমধুর কণ্ঠে জপে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কতই না উত্তম ও উৎকৃষ্ট! কতই না মহান যখন আমরা তাকে স্মরণ করি তখন হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে, আত্মা স্থিরতা লাভ করে, স্নায়ু বিশ্রাম নেয় আর বোধশক্তি জেগে উঠে।

“আল্লাহ নাম হলো সুন্দরতম নাম, বিশুদ্ধতম বর্ণ-সংযোজন এবং সর্বাধিক মূল্যবান শব্দ।

هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا

“তুমি কি এমন কিছু জান বা চেন যা তার অনুরূপ।” (সূরা-১৯ মারইয়াম: আয়াত-৬৫)

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

তার মতো কিছু নেই, আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।" (৪২-সূরা-শুরা: আয়াত-১১)

যখন পরম সমৃদ্ধি, শক্তি সত্তা, মর্যাদা ও প্রজ্ঞার কথা মনে আসে তখন ‘আল্লাহ' নাম মনে হয়।

لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

আজ রাজত্ব কার? (আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিবেন)। আল্লাহর-যিনি একক, মহাপরাক্রমশালী!” (৪০-সূরা আল মু’মিন: আয়াত-১৬)

যখন দয়া, যত্ন, সাহায্য, স্নেহ-মমতা ও অনুকম্পার কথা মনে আসে তখন ‘আল্লাহ' নাম মনে পড়ে।

وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ

“আর তোমাদের নিকট যত নিয়ামত রয়েছে সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে।” - (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-৫৩)

আল্লাহ হলেন মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শক্তিমত্তায় অধিকারী। হে আল্লাহ! আরাম-আয়েশকে দুঃখ-কষ্টের স্থান দখল করতে দিন ।

হে আল্লাহ্ ঈমানের শীতলতা দ্বারা হৃদয়ের জ্বালা নিবারণ করুন।

হে আমাদের প্রভু! বিনিদ্র রজনী যাপনকারীকে সুখনিদ্রা দান করুন এবং অসুখী আত্মাকে শান্তি প্রদান করুন।

হে আমাদের প্রতিপালক বিভ্রান্তদেরকে আপনার আলোর এবং পথভ্রষ্টদেরকে আপনার হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন।

হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরসমূহ হতে কুমন্ত্রণা দূর করে দিন এবং আমাদের অন্তরসমূহকে আলো দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন, মিথ্যাকে সত্য দ্বারা ধ্বংস করে দিন এবং শয়তানের কুচক্রকে আপনার ফেরেশতা বাহিনী দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে দিন। হে আল্লাহ আমাদের থেকে দারিদ্র্যতা, ক্লেশ ও উদ্বেগ চিরতরে দূর করে দিন। আপনাকে ব্যতীত অন্যকে ভয় করা, আপনাকে ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করা, আপনাকে বাদ দিয়ে অন্যের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা স্থাপন করা এবং আপনি ছাড়া অন্যের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আপনি হলেন সর্বোৎকৃষ্ট পৃষ্ঠপোষক ও পরমোৎকৃষ্ট পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা।

আল্লাহর করুণার কথা স্মরণ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

আপনার প্রতি আল্লাহ্ তা'য়ালার অসংখ্য করুণার কথা স্মরণ করুন, কীভাবে সে করুণাসমূহ আপনাকে আপাদমস্তক বেষ্টন করে রেখেছে-আসলে সর্বদিক দিয়েই ঐ করুণাসমূহ আপনাকে ঘিরে রেখেছে।

وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا

“যদি তুমি আল্লাহর নিয়ামতরাজিকে গণনা করতে চাও তবে তা তুমি কখনও গণনা করে শেষ করতে পারবে না।" (১৪-সূরা ইবরাহীম: আয়াত-৩৪)

সুস্থতা, নিরাপত্তা, খাদ্য, বস্ত্র, বায়ু ও পানি ইত্যাদি সবকিছুই দুনিয়াটাকে আপনার বলে ঘোষণা দিচ্ছে-তবুও আপনি বুঝতে পারছেন না। জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য প্রয়োজনীয় যা কিছু থাকতে হয় তার সবকিছুই আপনার আছে- তবুও আপনি অজ্ঞই থেকে গেলেন।

وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً

“তিনি তোমাদের উপর তার প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ পূর্ণ করে রেখেছেন।" (৩১-সূরা লুকমান: আয়াত-২০) (প্রকাশ্য নিয়ামত হল ইসলামী একত্ববাদ বা তাওহীদ এবং সুস্থতা, সৌন্দর্য ইত্যাদিসহ এ জগতের বৈধ যৌন আমোদপ্রমোদ। আর অপ্রকাশ্য বা গোপন নিয়ামত হল আল্লাহর প্রতি কারো ঈমান, আমলে সালেহ বা সৎকাজের জন্য পথনির্দেশক, কুরআনের উপর ঈমান এবং আখেরাতে বেহেশতের আনন্দ-ফুর্তি ইত্যাদির প্রতি ঈমান।)

নিজের আয়ত্তে আপনার দুটি আঁখি, একটি জিহ্বা, দুটি ঠোট, দুটি হাত আর দুটি পা আছে। (একটু ভেবে দেখুন ও কৃতজ্ঞ হোন -অনুবাদক)

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

“সুতরাং (হে জ্বীন ও ইনসান জাতি!) তোমরা উভয় জাতি তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (৫৫-সূরা আর রাহমান: আয়াত-১৩)

পা ছাড়া হাটার কথা কল্পনা করতে পারেন কি? আপনি কি এ বিষয়টি হাল্কা করে দেখবেন যে, আপনি সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন, অথচ দুঃখ-যাতনা, দুর্দশা ও দুরাবস্থা বহুলোকের নিদ্রার অন্তরায় হয়ে আছে। আপনি একথা কি ভুলে যাবেন যে, আপনি সুস্বাদু খাদ্য ও শীতল পানি উভয়টা দ্বারা নিজের উদর পূর্তি করছেন অথচ রোগ-বালাইয়ের কারণে কিছু লোকের পক্ষে সুখাদ্য ও সুপেয় পানীয়ের মজা উপভোগ করা অসম্ভব হয়ে আছে। আপনার শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তির কথা ভেবে দেখুন! আপনার সুস্থ ত্বকের দিকে তাকান এবং আপনি যে চর্মরোগ থেকে মুক্ত আছেন এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করুন। আপনার বিবেচনা শক্তির কথা গভীরভাবে ভেবে দেখুন ও যারা মানসিক রোগে ভুগছে তাদের কষ্টের কথা একটুখানি মনে করে দেখুন।

উহুদ পাহাড়সমস্বর্ণের বিনিময়ে আপনি কি আপনার শ্রম ও দর্শন ক্ষমতা বিক্রি করে দিবেন নাকি আপনার কথা বলার ক্ষমতা বিশাল বিশাল অট্টালিকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিবেন? আপনাকে প্রচুর অনুগ্রহ দান করা হয়েছে, তবুও আপনি না জানার ভান করছেন! টাটকা খাবার, শীতল পানি, সুখপ্রদ নিদ্রা এবং সুস্বাস্থ্য সত্ত্বেও আপনি হতাশ ও বিষগ্ন থাকছেন। আপনার যা নেই তা নিয়ে ভাবছেন এবং যা আপনাকে দান করা হয়েছে তার নিমিত্তে কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে বরং অকৃতজ্ঞ হচ্ছেন! সম্পদের ক্ষতি নিয়ে আপনি বিব্রত, তথাপি অনেক কল্যাণের চাবিকাঠি আপনার হাতে ন্যস্ত। একটু ভেবে দেখুন এবং কৃতজ্ঞ হন।

وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ

“এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও (আমার নিদর্শন আছে), তাহলে তোমরা কি (তা) দেখতে পাও না?” (৫১-সূরা যারিয়াত: আয়াত-২১)

আপনার নিজের কথা, আপনার পরিবারের কথা, আপনার বন্ধু-বান্ধবের এবং আপনার চারপাশের গোটা দুনিয়ার কথা গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করুন।

يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ

তারা আল্লাহর নিয়ামতকে অনুধাবন করতে পারে, তবুও তা তারা অস্বীকার করে তাদের অধিকাংশই কাফের। (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-৮৩)

অতীত নিয়ে ভাবনা নয়

কোনো ব্যক্তি অতীতের দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বসে বসে চিন্তা-ভাবনা করে শুধু এক ধরনের পাগলামিই দেখাতে পারে- যে পাগলামি বর্তমান জীবন-যাপন করার বা উপস্থিত মুহুর্তে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো এক ধরনের রোগ। যাদের দৃঢ় সংকল্প আছে তারা অতীতের ঘটনাবলিকে ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়ে ভুলে গিয়েছে। এ ঘটনাগুলো আর কখনও সত্যের পথে বাধা হয়ে দাড়াবে না।

কেননা, সেগুলো বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। অতীতের উপাখ্যান শেষ হয়ে গেছে; দুঃখ ওগুলোর ক্ষতিপূরণ করতে পারে না, বিষন্নতা সেগুলোকে সংশোধন করতে পারে না, আর হতাশা কখনও অতীতকে পুনরুজ্জীবন দান করতে পারবে না। কেননা, অতীত চিরকাল অতীত— তা অস্তিত্বহীন। অতীতের দুঃস্বপ্ন দেখবেন না বা যা আপনি হারিয়েছেন তার মিছে আশা করবেন না। অতীতের ভূতের আবির্ভাব হতে নিজেকে রক্ষা করুন। আপনি কি মনে করেন যে, আপনি সূর্যকে তার উদয়স্থলে, শিশুকে তার মায়ের জঠরে, দুধকে পশুর ওলানে অথবা অশ্রুকে আঁখিতে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? অতীত ও অতীতের ঘটনাবলি নিয়ে অনবরত চিন্তা-ভাবনা করে আপনি নিজেকে এক অতি ভয়ংকর ও শোচনীয় মানসিক অবস্থায় উপনীত করবেন।

অতীত নিয়ে অতিরিক্ত গবেষণা বর্তমানের অপচয় মাত্র। পূর্ববতী জাতিদের কার্যকলাপ উল্লেখপূর্বক মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ

এটা ছিল এমনই এক জাতি যা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৩৪)

অতীতের দিনগুলো চলে গেছে ও শেষ হয়ে গেছে, আর ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে বা পিছন দিকে ঘুরিয়ে তাদের ময়না তদন্ত করে আপনার কোনো লাভ হবে না।

যে লোক অতীতের চিন্তায় বিভোর থাকে, সে তো ঐ লোকের মতো যে লোক কাঠের গুড়াকে করাত দিয়ে চেরাই করতে চায়। যে ব্যক্তি অতীত নিয়ে কান্না-কাটি, হা-হুতাশ ও দুঃখ করত এমন ব্যক্তিকে প্রাচীনকালে বলা হতো- "মৃতদেরকে তাদের কবর থেকে তুলিও না।"

আমাদের দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, আমরা বর্তমানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি না; আমাদের সুন্দর সুন্দর প্রাসাদকে অবহেলা করে আমরা ধ্বংস দালানকোঠার জন্য হাউ মাউ করে কান্না-কাটি করি। সকল জ্বীন ও ইনসান একত্রে অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও তারা অতি নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। পৃথিবীর সবকিছুই সন্মুখপানে এগিয়ে চলছে, একটি নতুন ঋতুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে-আপনাকেও তাই করতে হবে। (অর্থাৎ আপনাকেও একটি নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে ও সামনে এগিয়ে চলতে হবে। -অনুবাদক)

হতে পারে আজকেই জীবনের শেষ দিন

আপনি যখন প্রত্যুষে জেগে উঠবেন তখন সন্ধ্যাকে প্রত্যক্ষ করার আশা করবেন না বরং এমনভাবে জীবনযাপন করুন যেন আজই আপনার শেষ সকাল। গতকাল ভালোয় আর মন্দে কেটে গেছে, আর আগামীকালতো এখনও আসেনি। আপনার জীবনকাল মাত্র একদিন, আপনি যেন আজই জন্মগ্রহন করেছেন আর দিনের শেষ মারা যাবেন। এ মনোভাব থাকলে আপনি অতীতের সকল দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যতের সকল অনিশ্চিত আশার নেশায় ব্যস্ত হয়ে থাকবেন না। কেবল আজকের দিনটির জন্যই যেন বেঁচে থাকবেন; সারাটা দিন আপনার উচিত জাগ্রত হৃদয়ে প্রার্থনা করা, বুঝে-শুনে কুরআন তিলাওয়াত করা, মহান আল্লাহ্‌কে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা। প্রতিটি দিনেই আপনার কাজকর্মে ভারসাম্যতা বজায় রাখা, তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং আপনার স্বাস্থ্য ও বাহ্যাকৃতি তথা সাজসজ্জা, রূপচর্চা, বেশভূষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক পরিচ্ছদ সম্বন্ধে সতর্ক থাকা উচিত।

নোটঃ যারা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় পান না তাদের জন্য একটি পরামর্শ হচ্ছে- পুরুষগণ প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত জামাতের কিছু সময় আগে মসজিদে চলে যান ও জামাতের পূর্বেকার অতিরিক্ত সময়টুকু কুরআন তিলাওয়াতে অতিবাহিত করুন আর মহিলারা প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর কিছু সময় সালাতের জায়গায় বসে কুরআন তিলাওয়াত করুন – মোঃ রফিকুল ইসলাম।

দিনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে পরিচালিত করুন বা যথাযথভাবে কাজে লাগান, যাতে করে আপনি কয়েক মিনিটে কয়েক বছরের ফায়দা এবং কয়েক সেকেন্ডে কয়েক মাসের ফায়দা হাসিল করতে পারেন। আপনার প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন, তাঁর জিকির করুন, এ ধরাধাম (দুনিয়া) থেকে শেষ বিদায়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং অবশিষ্ট সময়টুকুতে সুখ-শান্তিতে বেঁচে থাকুন। আপনার রিযিক, আপনার স্ত্রী, আপনার সন্তানাদি, আপনার কাজ, আপনার গৃহ এবং আপনার জীবনযাপনের উপর সন্তুষ্ট থাকুন।

فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ

আমি আপনাকে যা দান করেছি তা গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হোন। (৭-সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৪৪)

আজকের দিনটি দুঃখ-বেদনা, বিরক্তি, ক্রোধ ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত অবস্থায় কাটান। আপনার হৃদয়ের মণিকোঠায় একটি কথা সোনার হরফে খোদাই করে লিখে রাখুন, আর সেটা হচ্ছে- “আজই আমার একমাত্র দিন।"

আজ যদি আপনি টাটকা খাবার খেয়ে থাকেন তবে গতকালের বাসী খাবার ও আগামীকালের প্রত্যাশিত খাবারে তেমন কী আসে যায়?

আপনার নিজের উপর যদি আপনার আস্থা থেকে থাকে এবং আপনার যদি একটা দৃঢ়, বলিষ্ঠ, অনড় ও স্থির সংকল্প থেকে থাকে তবে আপনি নিজেই সন্দেহাতীতভাবে পরবর্তী কথাটির উপর দৃঢ় প্রত্যয় উৎপাদন করতে পারবেন: (কথাটি হল) “আজই আমার জীবনের শেষ দিন।”

যখন আপনি এই মনোভাব অর্জন করতে পারবেন তখন আপনি আপনার ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে, আপনার ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে এবং আপনার কাজকর্মকে পরিশুদ্ধ করে আপনার দিনের প্রতিটি মুহুর্ত হতেই মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। তারপর আপনি মনে মনে বলুন আজ আমি আমার কথাবার্তাকে পরিশুদ্ধ করব এবং কোনোরূপ মন্দ ও অশ্লীল কথা উচ্চারণ থেকে বিরত থাকব। আমি কারো গীবতও করব না। আজ আমি ঘর ও অফিস গুছাবো। সেগুলো অগোছালো ও এলোমেলো থাকবে না, বরং গোছালো ও ফিটফাট থাকবে।

আজ আমি আমার শরীরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বাইরের ঠাঁট সম্বন্ধে বিশেষ যত্নবান হব। আমি আমার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা সম্বন্ধে অতিশয় সতর্ক হব এবং আমার চলাফেরা, কথাবার্তা ও কাজকর্মে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখব।

আজ আমি আমার প্রতিপালকের প্রতি অনুগত থাকতে, সম্ভাব্য সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে, অধিক নফল ইবাদত করতে, কুরআন তিলাওয়াত করতে এবং উপকারী বই-পুস্তক ও ভালো কিতাবাদি পড়তে আপ্রাণ চেষ্টা করব। আজ আমি আমার অন্তরে ভালো কাজের বীজ বপন করব এবং অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, ভণ্ডামি, কপটতা ও মোনাফেকির মতো মন্দ কাজের মূলোৎপাটন করব।

আজ আমি অন্যদেরকে সাহায্য করার (তথা রোগী দেখতে যাবার, জানাযার সালাতে উপস্থিত হবার, পথহারাকে পথ দেখানোর এবং ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানোর) চেষ্টা করব। আজ আমি মজলুমের পাশে দাঁড়াব। আমি বিজ্ঞ জনকে (জ্ঞানীকে বা আলেমকে) সম্মান প্রদর্শন করব, দয়াৰ্দ্ৰ হব আর বৃদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব।

হে অতীত! তুমিতো বিদায় হয়ে চলে গিয়েছ, আমি তোমাকে নিয়ে কাঁদব না। তোমাকে স্মরণ করলে বা তোমার কথা মনে করলে তুমিতো আমাকে আর দেখতে আসবে না, এমননি এক মুহুর্তের জন্যও না, কেননা, তুমিতো আমাকে ছেড়ে চিরদিনের মতো বিদায় হয়ে চলে গিয়েছ।

হে ভবিষ্যৎ তুমিতো অজ্ঞাত, অজানা ও অদৃশ্য জগতে আছ, সুতরাং আমি তোমার কল্পনায় বিভোর হব না। আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে আগেভাগেই মাথা ঘামাব না। কেননা, ভবিষ্যৎ কিছুই না এবং এমনকি তা এখনও সৃষ্টিই হয়নি।

যারা পরিপূর্ণ জাকজমক ও চমৎকারভাবে জীবনযাপন করতে চায় তাদের জন্য সুখের অভিধানে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কথা হল “আজই আমার শেষ দিন।"

ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়


أَتَىٰ أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ

“আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং তোমরা এর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড় না।” (সূরা-১৬ আন নাহল: আয়াত-১) (আল্লাহর আদেশ বলতে কিয়ামত অথবা কাফের ও মুশরিকদের শাস্তি অথবা ইসলামী আইন বুঝায়।)

যা এখনো ঘটেনি তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবেন না, আপনি কি ফল পাকার আগেই তা ছিড়ে ফেলাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেন? আজ আগামী দিনের কোনো বাস্তবতা নেই, তাই তা অস্তিত্বহীন। অতএব, আপনি তা নিয়ে ব্যস্ত হবেন কেন? ভবিষ্যৎ বিপর্যয় সম্বন্ধে কেন আপনার আশঙ্কা থাকতেই হবে? ভবিষ্যৎ দুর্বিপাকের দুর্ভাবনা নিয়ে আপনাকে কেন বিভোর থাকতেই হবে? বিশেষ করে যখন আপনি জানেন না যে, আপনি আগামী দিনের সুখটাই শুধু দেখতে পারবেন কিনা?

যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানতে হবে তা এই যে, আগামী দিন অদৃশ্য জগতের এমন এক সেতু যা আমাদের সামনে না আসা পর্যন্ত আমরা তা অতিক্রম করতে পারি না। কে জানে, হয়তোবা আমরা কখনো সে সেতুর কাছে না-ও পৌছতে পারি, অথবা আমরা সেটার কাছে পৌঁছার পূর্বেই ওটা ধ্বসে যেতে পারে, অথবা আমরা হয়তো সে সেতুতে পৌছে তা নিরাপদে পার হব?

ভবিষ্যতের আশঙ্কায় বিভোর হওয়া আমাদের পক্ষে ধর্মকে অবজ্ঞা করার মতো; কেননা, ঐ আশঙ্কা এ জগতের সাথে আমাদের এক দীর্ঘকালীন সম্পর্ক থাকার কথা মনে করিয়ে দেয়, যে সম্পর্ককে একজন প্রকৃত মু’মিন পরিহার করে। এ পৃথিবীর বহু লোকই ভবিষ্যৎ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, পীড়া ও দুর্যোগের ভয়ে অযৌক্তিকভাবে ভীত। এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শয়তানের ধোকা মাত্র।

الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا

শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় ও অশ্লীল কাজ করার আদেশ করে, অথচ আল্লাহ তার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে ক্ষমা ও দানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।" (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২৬৮)

অনেকেই এমন আছে যে, তারা নিজেদেরকে আগামী দিনের বুভুক্ষু (ক্ষুধার্ত) ভেবে, একমাস পরের রোগী ভেবে অথবা একশত বছর পর পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে এই কল্পিত ভয়ে কান্না করে। যে ব্যক্তি জানেনা কখন সে মরবে (অথচ আমাদের সবাইকে মরতে হবে), যে ব্যক্তির কাছে তার মৃত্যুর সময়ের কোনো ইঙ্গিত নেই- সে ব্যক্তির উচিৎ নয় নিজেকে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনায় নিমগ্ন রাখা। যেহেতু আপনি আজকের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত আছেন তাই ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা পরিহার করুন। এ পৃথিবীর ভাবী কল্পিতদৃশ্য নিয়ে অযৌক্তিকভাবে ব্যাপৃত (নিয়োজিত) হওয়া থেকে সাবধান হন।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 





****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url