আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-১১) || সুফলের জন্য ধৈর্যসহ অপেক্ষা করুন || আল্লাহ্‌র রহমত হতে নিরাশ হবেন না ||





বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হবে।


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

সুফলের জন্য ধৈর্যসহ অপেক্ষা করুন

পাতালকুঠুরিতে আপনার যে সম্পদ জমা করে রাখা আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। আল্লাহর প্রতি আপনার যদি বিশ্বাস না থাকে তবে উচ্চ প্রাসাদ ও সবুজ বাগানসমূহ আপনাকে শুধু দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা ও হতাশাই বয়ে এনে দিবে।

বিষন্ন হবেন না

এমনকি আপনার চিকিৎসকের রোগ নির্ণয় ও তার ঔষুধও আপনাকে সুখী করতে পারবে না যদি আপনি বিষন্নতাকে আপনার অন্তরে বাস করতে দিয়ে আপনার আবেগ ও অস্তিত্বে প্রবাহিত হতে দেন বা আপনি যদি বিষগ্নতা আপনার আবেগ ও অস্তিত্বে প্রবাহিত হতে দিয়ে আপনার অন্তরে বাস করতে দেন।

দুঃখ করবেন না

কারণ, আল্লাহর নিকট আকুল আবেদন করার ক্ষমতা এবং রাজাধিরাজের দরবারে একান্ত বিনীত হওয়ার ক্ষমতা তো আপনার আছে। আল্লাহর নিকট সনির্বন্ধ আবেদন করার জন্য এবং তার উদ্দেশ্যে সিজদায় গিয়ে জমিনে আপনার মাথা ঠেকানোর জন্য বরকতময় শেষ রাত্রি তো আছেই।

দুঃখিত হবেন না। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবী ও এতে যা কিছু আছে তা সবই আপনার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি সুন্দর সুন্দর বাগান সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো (সে বাগানগুলো) নানান গাছে ও ফুলে ভরা, আর ওগুলো (সে গাছ ও ফুলগুলো) নারী-পুরুষ এই উভয় যুগলে সৃষ্ট। আর তিনি লম্বালম্বা তালগাছ, ঝলমলে তারকা, বন-বনানী, নদ-নদী ও বহু ঝর্ণা ধারা সৃষ্টি করেছেন—তবুও আপনি বেজার!

দুঃখিত হবেন না

কারণ আপনি বিশুদ্ধ পানি পান করছেন, বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করছেন, সুস্থ শরীরে আপনার দু'পায়ে ভর করে হাঁটছেন এবং আপনি রাত্রিতে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন।

আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করুন

দুশ্চিন্তা করবেন না : আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কেননা, আপনার প্রভু অতি ক্ষমাশীল
“নূহ (আঃ) তার জাতিকে বললেন, “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা ও নদী-নালা সৃষ্টি করবেন।” (৭১-সূরা আন নূহ: আয়াত-১০-১২)

সুতরাং, আল্লাহর নিকট অতি ঘনঘন ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং তাহলেই আপনি এ কাজের ফল পাবেন- আর তা হলো, মনের শান্তি, হালাল রিযিক, ধাৰ্মিক সন্তান-সন্ততি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত।

“আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ইসতিগফার ও তওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উত্তম সম্পদ ভোগ করতে দিবেন এবং প্রত্যেক গুণী ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিবেন।” (১১-সূরা হুদ: আয়াত-৩)

এখানে ‘গুণী ব্যক্তি’ বলতে তাকে বুঝানো হয়েছে, যে নাকি সশরীরে, শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে, তার সম্পদ দিয়ে এবং এমনকি দুটি ভালো কথা বলেও অভাবী (পীড়িত ইত্যাদি) লোকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা ও তাদের সেবা-শুশ্রুষা করে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রায়ই ইসতিগফার করে আল্লাহ তার প্রতিটি দুশ্চিন্তাকে স্বস্তিজনক করে দেন এবং প্রতিটি সমস্যা থেকে তাকে উদ্ধার করেন।”

বুখারী শরীফে একটি হাদীস আছে, যা ‘সায়্যেদুল ইসতিগফার’ নামে প্রসিদ্ধ।

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي ، لا إِلَه إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَني وأَنَا عَبْدُكَ ، وأَنَا على عهْدِكَ ووعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ ما صنَعْتُ ، أَبوءُ لَكَ بِنِعْمتِكَ علَيَ ، وأَبُوءُ بذَنْبي فَاغْفِرْ لي ، فَإِنَّهُ لا يغْفِرُ الذُّنُوبِ إِلاَّ أَنْتَ

“(আর তা হলো) হে আল্লাহ। আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আপনার বান্দা, আমি যথাসম্ভব আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর আছি। আমি যে মন্দ কাজ করেছি তার জন্য আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ দান করেছেন তা আমি আপনার নিকট স্বীকার করছি এবং আমার পাপের কথাও স্বীকার করছি; সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন; কেননা, আপনি ছাড়া অন্য কেউ পাপ মার্জনা করতে পারে না।”

জিকির করুন কেননা আল্লাহর স্মরণ আপনাকে সতেজ রাখবে

জিকির সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন-

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

“নিশ্চয়, আল্লাহর জিকিরেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-২৮)

“সুতরাং (প্রার্থনা, প্রশংসা ইত্যাদির মাধ্যমে) তোমরা আমাকে স্মরণ কর, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৫২)

“এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা ও মহাপুরস্কার রেখেছেন।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-৩৫)

“হে মু’মিনগণ! তোমরা বেশি করে আল্লাহর জিকির কর এবং সকাল-বিকাল (ফজরের সময় ও আসরের সময়) তার তসবীহ বা প্রশংসা পাঠ কর।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-৪১-৪২)

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির হতে অমনোযোগী করে না দেয়।” (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূন: আয়াত-৯)

“এবং যখন তুমি ভুলে যাও তখন তুমি তোমার প্রভুকে স্বরণ করবে।” (১৮-সূরা আল কাহাফ: আয়াত-২৪)

“এবং যখন তুমি ঘুম থেকে উঠ তখন তুমি তোমার প্রভুর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে এবং তারকা অস্তগমনের পরেও তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (৫২-সূরা আত তুর: আয়াত-৪৮-৪৯)

“হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা কোন শক্র বাহিনীর মোকাবেলা কর তখন বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (৮-সূরা আনফাল: আয়াত-৪৫)

একখানি সহীহ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –

“যে তার প্রভুর জিকির করে আর যে তার প্রভুর জিকির করে না এদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃতের মতো।”

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আরো বলেছেন-

سَبَقَ الْمُفَرِّدُونَ قَالُوا: وَمَا الْمُفَرِّدُونَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: الذَّاكِرُونَ اللهَ كَثِيرًا، وَالذَّاكِرَاتُ

অনন্য ব্যক্তিবর্গ অন্যদেরকে ছাড়িয়ে গেছে।" সাহাবীগণ বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! কারা অনন্য ব্যক্তিবর্গ?” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণকরে এমন নারী এবং পুরুষগণ ।”

আরেকটি বিশুদ্ধ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِخَيْرِ، أَعْمَالِكُمْ وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ إِعْطَاءِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ قَالُوا بَلَى ‏.‏ قَالَ ذِكْرُ اللَّهِ تَعَالَى

“তোমাদের প্রভুর নিকট তোমাদের যে কাজ সর্বোত্তম ও পবিত্রতম, যা (সৎ কাজে) তোমাদের সোনারূপা ব্যয় করার চেয়েও ভালো এবং যা (জেহাদের সময়) তোমাদের শক্রদের মোকাবেলা করে তাদের গর্দান উড়িয়ে দেয়া ও তারা তোমাদের গর্দান উড়িয়ে দেয়ার চেয়েও উত্তম তার সংবাদ আমি কি তোমাদেরকে দেব না?” সাহাবীগণ বললেন, “অবশ্যই! হে আল্লাহর রাসূল!” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহর জিকির।”

একখানি সহীহ হাদীসে আছে-
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একজন লোক এসে বলল: “হে আল্লাহর রাসূল! আমার পক্ষে ইসলামের বিধানসমূহ অনেক বেশি হয়ে গেছে, অথচ আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, তাই আমাকে এমন (একটি সহজ) আমলের কথা জানিয়ে দিন- যা আমি সর্বদা করতে পারব।” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহর জিকিরে সর্বদা (মশগুল থাকার ফলে) সিক্ত থাকে (তথা তাজা থাকে বা ব্যস্ত থাকে)।”

আল্লাহ্‌র রহমত হতে নিরাশ হবেন না

বিষাদগ্রস্থ হবেন না- কখনও আল্লাহ্‌র রহমত হতে নিরাশ হবেন না
إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ

কাফির সম্প্রদায় ব্যতীত আল্লাহ রহমত হতে অন্য কেউ নিরাশ হয় না। (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-৮৭)

“অবশেষে রাসূলগণ যখন নিরাশ হয়ে গেল এবং ভাবল যে লোকেরা তাদেরকে মিথ্যুক ভাবছে বা লোকেরা ভাবল যে তাদেরকে মিথ্যা বলা হয়েছে তখন তাদের নিকট আমার সাহায্য আসল।” (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-১১০)

“এবং আমি তাকে দুশ্চিন্তা হতে নাজাত বা মুক্তি দিলাম; এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করি।” (২১-সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-৮৮)

“এবং তোমরা আল্লাহর সম্বন্ধে মনে মনে অনেক সন্দেহ পোষণ করছিলে। সেখানে মু'মিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং ভীষণ কম্পনে প্রকম্পিত করা হয়েছিল।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-১০-১১)

অন্যেরা আপনাকে যে (মানসিক) আঘাত দিয়েছে তা নিয়ে দুঃখ করবেন না বরং যারা আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন।

হিংসা-বিদ্বেষের মূল্য বিরাট, অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষের বিনিময়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ ব্যক্তিকে এ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সে তার মন ও রক্ত মাংসের বিনিময়ে এ মূল্য পরিশোধ করে। প্রতিশোধ গ্রহণের মজা পেতে চাওয়া এবং অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণে সে তার শান্তি, তার আরাম-আয়েশ ও তার সুখকে বিসর্জন দেয়।

হিংসা-বিদ্বেষও এমন এক রোগ যার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা চিকিৎসা ও ঔষধ দিয়েছেন-

“এবং (তারাই মুক্তাকী) যারা ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৩৪)

“ক্ষমা প্রদর্শন করুন, সৎকাজের আদেশ দিন এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলুন।" (৭-সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৯৯)

“(মন্দকে) ভালো দ্বারা দূর করুন। তাহলেই আপনার ও যার মাঝে শক্রতা আছে (সে এমন হয়ে যাবে) যেন সে অন্তরঙ্গ বন্ধু।” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহ: আয়াত-৩৪)

এ আয়াতের মাধ্যমে বুঝানো হচ্ছে যে, আল্লাহ মু’মিনদেরকে ক্রোধের সময় ধৈর্য ধারণ করতে এবং তাদের সাথে যারা দুর্বব্যবহার করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে আদেশ করেছেন।

আপনার জীবনে যা অতীত হয়ে গেছে তা নিয়ে দুঃখ করবেন না; কেননা, প্রকৃতপক্ষে আপনি অনেক অনুগ্রহ-ধন্য।

যে বহু অনুগ্রহ ও দানে আল্লাহ তা'আলা আপনাকে ভূষিত করেছেন সেগুলোর কথা গভীরভাবে ভেবে দেখুন এবং সেগুলোর জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। মহান আল্লাহর অসংখ্য করুণার কথা স্মরণ করুন; কেননা,

সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন-

وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

“এবং যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতকে গণনা করতে চাও, তবে কখনও তোমরা তা গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (১৬-সূরা নাহল: আয়াত-১৮)

“আর তিনি তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (৩১-সূরা লোকমান: আয়াত-২০)

প্রকাশ্য নেয়ামত বলতে বুঝায় ইসলামী একত্ববাদ বা তাওহীদ এবং বৈধ আনন্দ যেমন ভালো স্বাস্থ্য, ভালো বই এবং বৈধ যৌন জীবন পরিচালনা ইত্যাদি, আর অপ্রকাশ্য নেয়ামত বলতে বুঝায় আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস বা তাওহীদের প্রতি ঈমান, ইলম বা জ্ঞান, প্রজ্ঞা বা হিকমত, নেক আমল করার জন্য হেদায়াত এবং আখেরাতে বেহেশতের আনন্দ ও পরমোল্লাস ইত্যাদি।

“এবং তোমাদের নিকট যে নেয়ামত আছে তা (সবই) আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। অতঃপর তোমাদের যখন কোন ক্ষতি হয় তখন তোমরা তার নিকট সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাক।” (৩১-সূরা লোকমান: আয়াত-২০)

আল্লাহ্‌ তার বান্দার প্রতি তার নেয়ামত প্রতিষ্ঠিত করার পর বলেছেন-

أَلَمْ نَجْعَل لَّهُ عَيْنَيْنِ - وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ - وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ

“আমি কি তার জন্য দুখানি আঁখি, একটি জিহ্বা এবং দুখানি ঠোট বানিয়ে দেইনি? আর আমি কি তাকে (ভালো ও মন্দ এ) দুটি পথ দেখাইনি? (৯০-সূরা আল বালাদ: আয়াত-৮-১০)

জীবন, স্বাস্থ্য, শ্রবণ ও দর্শন শক্তি, দু’হাত, দু’পা, পানি, বায়ু, খাদ্য- এগুলো হলো এ পৃথিবীর দর্শনসাধ্য ও দৃশ্যমান নেয়ামত। কিন্তু, সর্বোত্তম নেয়ামত হল ইসলাম ও হিদায়াত। যে ব্যক্তি আপনার আঁখিদ্বয়, কর্ণদ্বয়, পদদ্বয়, হস্তদ্বয় ও আপনার হৃদয়ের বদলে (আপনাকে) প্রচুর টাকা দিতে চায় তাকে আপনি কি বলবেন? বাস্তবে আপনার সম্পদের কতটা মাহাত্ম্য আছে কৃতজ্ঞ না হয়ে আপনি আল্লাহর অসংখ্য অনুগ্রহ, দান, করুণা ও নেয়ামতের প্রতি ন্যায়বিচার প্রদর্শন করছেন না।

তুচ্ছ জিনিস নিয়ে দুঃখ করবেন না

তুচ্ছ বিষয়ে নিরুদ্বিগ্ন থেকে আপনি এমন এক গুণ প্রদর্শন করবেন যা আপনাকে সুখ বয়ে এনে দিবে; কেননা, যার উদ্দেশ্য মহৎ তিনি শুধু পরকাল নিয়েই বিভোর হয়ে থাকেন।

আমাদের একজন ধাৰ্মিক পূর্বসূরী তার এক ভাইকে নিচের কথাগুলো দ্বারা উপদেশ দিয়েছিলেন-

“শুধুমাত্র একটি বিষয়ে উদ্বিগ্ন হও– (আর তা হলো) আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে। তার সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়ে এবং পরকালের বিষয়ে।"

“সেদিন তোমাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করা হবে এবং সেদিন তোমাদের কোন গোপন বিষয় গোপন থাকবে না।" (৬৯. আল-হাক্কাহ: আয়াত-১৮)

পরকালের উদ্বিগ্নতার সাথে তুলনা করলে সব উদ্বিগ্নতাই দূর হয়ে যায়। এ জীবনের দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা ও উদ্ধিগ্নতাসমূহ কী? সেগুলো হলো মান-মর্যাদা, নাম-ডাক-যশ- খ্যাতি, আয়-রোজগার, ধন-সম্পদ, দালান-কোঠা ও সন্তান-সন্ততি। আল্লাহ তা'আলার সামনে জবাবদিহিতার সাথে তুলনা করা হলে এগুলো কিছুই না।

মহান আল্লাহ তার শক্র মুনাফিকদের বিবরণ এভাবে দিয়েছেন-

“আরেক দল (অন্যদেরকে ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাঁচানোর চিন্তা না করে নিজেদের কিভাবে বাঁচানো যায় সে বিষয়ে) নিজেদের চিন্তায় মগ্ন ছিল এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভুল ধারণা করেছিল এবং আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা ধারণা পোষণ করে নিজেরাই নিজেদেরকে উদ্বিগ্ন করেছিল।” (৩-সূরা আলে ইমরান: ১৫৪)

তাদের চিন্তা শুধু নিজেদের জন্যই– তাদের পেটপূজা নিয়ে এবং তাদের কাম চরিতার্থ নিয়ে; তারা উচ্চতর কোন অভিপ্রায়ের কথা জানে না।

সাহাবীগণ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গাছের নিচে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিল তখন একজন মুনাফিক তার লাল উটের জন্য তাড়াতাড়ি ছুটে গেল যেটা হারিয়ে গিয়েছিল। সে বলেছিল:

“তোমাদের বাইয়াতের অনুষ্ঠানের চেয়ে আমার উট খুঁজে বের করা আমার কাছে বেশি প্রিয়।”

একজন মুনাফিক যে নিজেকে নিয়েই উদ্বিগ্ন সে সঙ্গীদেরকে তাবুক অভিযান সম্বন্ধে বলেছিল, গরমে অভিযানে বের হয়ো না। মহান আল্লাহ বলেন-

قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا

“বলুন (এই তাপের চেয়ে) জাহান্নামের আগুনের তাপে অধিকতর প্রচণ্ড।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৮১)

আরেকজন মুনাফিক বলেছিল-

وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ

এবং তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে, “আমাকে (যুদ্ধ করা থেকে) অব্যাহতি দিন এবং আমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন না। সাবধান! তারাই ফিতনাতে পড়ে আছে। জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে বেষ্টন করেই আছে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৯)

এবং আল্লাহ তা'আলা বলেন-

“নিশ্চয়ই তারা অগ্নি পরীক্ষায় পড়েছে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৯)

যখন অন্যরাও সমস্যায় পড়েছিল এবং শুধু নিজেদের ধন-সম্পদ ও পরিবার নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিল (তখন আল্লাহ তাদের কথা এভাবে বলেন)-

“আমাদের ধন-সম্পদ এবং আমাদের পরিবার-পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে সুতরাং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।”

যারা নিজেরাই তুচ্ছ ও নগণ্য তারা ছাড়া অন্য কারোই এসব তুচ্ছ ও নগণ্য বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। কেননা মহান সাহাবীগণ আল্লাহর রহমত কামনা করতেন এবং তার সন্তুষ্টির আকাঙ্ক্ষা করতেন।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url