আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-২২) || পাপ কর্মের মারাত্মক কুফল || নির্ঘুম রাতের আমল || দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির আমল ||
পাপ কর্ম থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর সাহায্য কামনার মাধ্যমে সফলতা আসে
এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
নির্দিষ্ট সময়ের আগে কেউ মৃত্যুবরণ করবে না
“যখন তাদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে তারা এটাকে এক মুহূর্তও আগ পিছু করতে পারবে না।” (৭-সূরা আল আরাফ: আয়াত-৩৪)
যে কাপুরুষেরা তাদের প্রকৃত মৃত্যুর পূর্বে বহুবার মারা যায় তাদের জন্য এ আয়াতে একটি সান্ত্বনা রয়েছে। এ আয়াত আমাদেরকে বলে যে প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় আছে; একে আগ-পিছু করা যায় না, এমনকি সকল সৃষ্টি মিলে চেষ্টা করলেও পারবে না।
“এবং মৃত্যু-যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে।” (৫০-সূরা কাফ: আয়াত-১৯)
আর জেনে রাখুন যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশা করাই দুঃখ-দুর্দশার কারণ।
“ফলে আল্লাহর বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার মতো তার এমন কোন দল ছিল না এবং যারা নিজেদেরকে সাহায্য করত সে তাদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না (অর্থাৎ সে নিজেকেও সাহায্য করার মতো ছিল না)।” (২৮-সূরা আল কাছাছ: আয়াত-৮১)
ইমাম যাহাবীর রচিত “সিয়ারু আলামিন নুবালা” পুস্তক - ২০ খণ্ড। এ পুস্তকে আলেম-উলামা-জ্ঞানী-গুণী, রাজা-বাদশা, মন্ত্রী-মিনিস্টার, শাসকবর্গ ও কবিদের জীবনী আছে। তাদের কতিপয় লোকের জীবনী পড়ার
এ সময় আমার দুটি কথা বা বিষয় মনে পড়ে
১. যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুতে আশা বা বিশ্বাস করে তবে আল্লাহ তাকে পরিত্যাগ করেন এবং
২. সে জিনিসকে তার ধ্বংসের কারণ বানিয়ে দেন।
“এবং নিশ্চয় শয়তানরাই মানুষদেরকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষেরা মনে করে যে, তারা সৎপথে পরিচালিত।” (৪৩-সূরা আয যুখরুফ: আয়াত-৩৭)
ফেরাউনের ধ্বংসের কারণ ছিল তার পদমর্যাদা, কারুনের ধ্বংসের কারণ ছিল তার সম্পদ ও ব্যবসা আর উমাইয়ার এবং ওয়ালিদের ধ্বংসের কারণ ছিল তাদের সন্তান।
“আমি তাকে সৃষ্টি করেছি তার সাথে আমাকে একাই বুঝাপড়া করতে দাও।” (৭৪-সূরা আল মুদ্দাছছির: আয়াত-১১)
আবু জেহেলের ধ্বংসের কারণ ছিল পদমর্যাদা, বংশ গৌরব আবু লাহাবের ধ্বংসের কারণ ছিল; সিংহাসন, আবু মুসলিমের ধ্বংসের কারণ ছিল; যশখ্যাতি, মুতানাব্বির ধ্বংসের কারণ ছিল, আর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল হাজ্জাজের ধ্বংসের কারণ।
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সম্মান চায় এবং আমলে সালেহ করে আল্লাহ তাকে সম্মান দান করবেন এবং তাকে পদমর্যাদা দান করবেন, যদিও তার কোন সম্পদ, পদমর্যাদা বা অভিজাত বংশধারা নেই।
বিলালের সম্মানের কারণ ছিল আযান, আখেতার ছিল সাল্মানের সম্মানের কারণ; সুহাইবের সম্মানের কারণ ছিল তার কোরবানী বা ত্যাগ এবং আতা’র সম্মানের কারণ ছিল তার ইলেম (রাদি'আল্লাহু আনহুম)।
“এবং তিনি (আল্লাহ) কাফেরদের কথাকে হীনতম করেন; পক্ষান্তরে আল্লাহর কথাই উচ্চতম; আর আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী, মহা প্রজ্ঞাময়।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪০)
রাজাধিরাজ-মহামহিম ও মর্যাদাবান আল্লাহর সাহায্য
একটি সহীহ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিম্নোক্ত কালিমাকে বারবার পাঠ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। আর তা হল-
يا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ
“হে রাজাধিরাজ-মহামহিম ও মর্যাদাবান আল্লাহ!”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আরো এ কথাও বলতে উপদেশ দিয়েছেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
“হে চিরঞ্জীব! হে সব কিছুর সদা রক্ষক!”
অতএব, প্রত্যেকের নিজের কল্যাণের জন্যই এসব কালিমা (বা বাক্য বা কথা) দ্বারা আল্লাহকে ডাকা এবং তার সাহায্য চাওয়া উচিত; আর তাহলেই নিশ্চিত উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে।
“স্মরণ কর, যখন তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছিলে তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন।” (৮-সূরা আনফাল: আয়াত-৯)
মুসলিমের জীবনে প্রকৃতপক্ষে তিনটি আনন্দময় দিন
১. যে দিন সে শপথপূর্বক পাপ কাজসমূহ পরিত্যাগ করে (অর্থাৎ পাপ থেকে তওবা করে) এবং জামায়াতের সাথে ফরজ সালাতসমূহ আদায় করে।
“তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তিনি তোমদেরকে আহবান জানান”। (৮-সূরা আনফাল : আয়াত-২৪)
২. যে দিন সে পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়, পাপ কাজ পরিত্যাগ করে এবং তার প্রভুর দরবারে ফিরে আসে।
“অতপর তিনি তাদের তওবা কবুল করলেন যাতে তারা (তাদের প্রভুর নিকট) ফিরে আসে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১১৮)
৩. যে দিন সে এমন এক কাজ করে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের জন্য মৃত্যুবরণ করে যা ভালো ও পবিত্র উভয়ই।
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসেন।”
সাহাবী (রাঃ)-এদের জীবনে পাঁচটি চরিত্র রয়েছে
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী (রাঃ)-এদের জীবনী পাঠ করে আমি তাদের মাঝে এমন পাঁচটি চরিত্র পেয়েছি যা অন্যদের থেকে পৃথক।
১. তারা এমন সরল জীবন-যাপন করতেন যা জাকজমকহীন, বড়াইহীন এবং অপব্যয়হীন ও বাহুল্যহীন ছিল।
“এবং (হে মুহাম্মদ!) আমি আপনার জন্য সহজপথকে (অর্থাৎ নেক আমলের পথকে) সহজ করে দিব।” (৮৭-সূরা আল আ'লা: আয়াত-৮)
২. তাদের ধর্মীয় জ্ঞান বা ইলম যেমন গভীর তেমনি কল্যাণকরও ছিল। আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, তারা সে ইলম ব্যবহারিক কাজে খাটাতেন।
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধুমাত্র আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে।” (৩৫-সূরা ফাতির : আয়াত-২৮)
৩. লোক দেখানো আমলের চেয়ে তারা কলবের বা অন্তরের আমলকেই প্রাধান্য দিতেন। একারণেই তাদের একনিষ্ঠতা ছিল; তারা আল্লাহর উপর নির্ভর করতেন; তারা তাকে ভালোবাসতেন; তারা শুধুমাত্র তার কাছ থেকে (কোন কিছু) আশা করতেন এবং তারা তাকে ছাড়া আর কাউকেও ভয় করতেন না। অধিকন্তু তারা অবিরাম সাধনার মাধ্যমে বা কঠোর পরিশ্রম সহকারে নফল ইবাদত (যেমন নফল সালাত ও রোযা) করতেন।
“তিনি (আল্লাহ) জেনে নিয়েছেন তাদের অন্তরে কী আছে।” (৪৮-সূরা আল ফাতহ: আয়াত-১৮)
৪. তারা পৃথিবী ও পার্থিব আনন্দ অনুসন্ধান করতেন না। তারা পার্থিব অধিকারিত্বকে ঘৃণায় পিঠ ফিরিয়ে দিতেন এবং তারা এই মহান মনোভাবের ফল তুলতেন (আর তা হলো) : সুখ, মনের শান্তি ও একনিষ্ঠতা।
“আর যারা মু’মিন হয়ে পরকাল (এর কল্যাণ) কামনা করে এবং এর জন্য (নেক আমলের মাধ্যমে) যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কৃত হবে।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত-১৯)
৫. অন্যান্য নেক আমলের উপর তারা জিহাদকে প্রাধান্য দিতেন- এমনকি তাদের পরিচয়ের জন্য জিহাদ ব্যানারস্বরূপ হয়ে গিয়েছিল। আর জিহাদের মাধ্যমেই তারা তাদের উদ্বিগ্নতা ও সমস্যা দূর করেছিলেন। কেননা, নিম্নোক্ত সব কিছুই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (আর তা হলো) – জিকির, জিহাদ, প্রচেষ্টা ও আমল।
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
“আর যারা আমার পথে প্রচেষ্টা বা জিহাদ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথ দেখাব। আর অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৬৯)
কুরআনে ইহজীবন সম্বন্ধে কতিপয় শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় সত্য ও বাস্তবতার কথা উল্লেখ আছে। এ পুস্তকের বিষয়ের সাথে সম্বন্ধপূর্ণ বিষয় (তা থেকে) এখানে বর্ণনা করা হলো।
যে আল্লাহর জন্য আমল করবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন।
“যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর এবং তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদক্ষেপ (অবস্থান) দৃঢ় করবেন।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতাল : আয়াত-৭)
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“আর তোমাদের প্রভু বলেছেন- আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (৪০-সূরা আল মু'মিন: আয়াত-৬০)
কেউ আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
“সে বলল: “হে আমার প্রভু! আমি অবশ্যই আমার উপর অত্যাচার করেছি, অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন।” তাই তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (২৮-সূরা আল কাছাছ: আয়াত-১৬)
“আর তিনিই তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন।” (৪২-সূরা আশ শুরা: আয়াত-২৫)
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আর যে আল্লাহর উপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন।” (৬৫-সূরা আত তালাক: আয়াত-৩)
তিন ধরনের লোক নিশ্চিত শাস্তি পাবে- ১. যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, ২. যারা ওয়াদা ভঙ্গ করে এবং ৩. যারা কুচক্রান্ত করে।
“তোমাদের বিদ্রোহ শুধুমাত্র তোমাদের বিরুদ্ধেই।” (১০-সূরা ইউনুস: আয়াত-২৩) “তাই যে ওয়াদা ভঙ্গ করে সে শুধুমাত্র তার ক্ষতি করার জন্যই ওয়াদা ভঙ্গ করে।” (৪৮-সূরা আল ফাতাহ: আয়াত-১০)
“কুচক্রান্ত শুধুমাত্র কুচক্রান্তকারীকেই পাকড়াও করে।” (৩৫-সূরা ফাতির: আয়াত ৪৩)
অত্যাচারীরা আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না।
“এই তো তাদের ঘর-বাড়ি, তারা যে জুলুম করেছে এ কারণে (এগুলো) বিরান পড়ে আছে”। (২৭-সূরা আন নামল: আয়াত-৫২)
আমলে সালেহের ফল স্বল্প মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করা যাবে।
“অতএব আল্লাহ তাদের পার্থিব পুরস্কার ও পারলৌকিক উত্তম পুরস্কার দান করবেন।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪৮) যে আল্লাহর আনুগত্য করবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন এবং তার রিজিক যোগাবেন।
“নিশ্চয় আল্লাহই তো রিযিক দাতা।” (৫১-সূরা আয যারিয়াত: আয়াত-৫৮)
আল্লাহ তার অনুগত বান্দাদের শক্রদের শাস্তি দিবেন।
إِنَّا مُنتَقِمُونَ
নিশ্চয় আমি (জোর করে) প্রতিশোধ নিবই।” (৪৪-সূরা আদ দোখান: আয়াত-১৬)
শেখ আবদুর রহমান ইবনে সা’দী- الوسائل المفيدة في الحياة السعيدة বা “Practical Means to a Happy Life" বা “সুখী জীবনের বাস্তব উপায়” নামক এক মহামূল্যবান কিতাব লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, “আল্লাহর নেয়ামতের কথা খেয়াল করলে বান্দা বুঝতে পারবে যে সে বহুলোকের চেয়ে ভালো আছে এবং একথাও বুঝতে পারবে যে তার উপর আল্লাহর করুণার কারণে আল্লাহর প্রতি তার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।”
এমনকি ধর্মীয় ব্যাপারেও মানুষ বুঝতে পারে যে, অবহেলার কারণে আমরা সবাই অপরাধী, তা সত্ত্বেও আমাদের কেউ কেউ ফরজ সালাত নিয়মিত জামায়াতে আদায় করার ব্যাপারে, কুরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে, জিকিরের বিষয়ে এবং ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে একে অপরের চেয়ে (এগিয়ে আছে তথা) ভালো। এসব কিছুই এমন নেয়ামত যার জন্য আমাদের সবার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً
“আল্লাহ তোমাদের উপর তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব নেয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন।” (৩১-সূরা লোকমান: আয়াত-২০)
প্রকাশ্য নেয়ামত বলতে বুঝায় ইসলামী তাওহীদ এবং স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, বৈধ যৌন জীবন পরিচালনা ইত্যাদিসহ সকল বৈধ ও পার্থিব আমোদ-প্রমোদ এবং গোপন নেয়ামত বলতে বুঝায় আল্লাহর প্রতি ঈমান (তথা ইসলামী তাওহীদ), জ্ঞান বা ইলম, প্রজ্ঞা বা হেকমত, আমলে সালেহ করার জন্য হেদায়াত এবং পরকালে জান্নাতে আনন্দ-উল্লাস ইত্যাদি।
ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন যে, মহাবিজ্ঞ হাদীস শাস্ত্রবিদ ইবনে আব্দুল বাকী বাগদাদের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মুসল্লিরা বের হয়ে যাবার সময় তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করতেন। তিনি এমন একজন লোকের সন্ধান করতে ছিলেন
যাকে সর্ববিষয় বিবেচনা করে তার জীবদ্দশাতেই তার স্থলাভিষিক্ত করা যায়। তিনি (সম্ভবত ইমাম যাহাবী) বর্ণনা করেন যে, তবুও তিনি এমন একজনও পেলেন না।
“আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপরেই তাদেরকে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত-৭০)
দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির আমল
আসমা বিনতে উমাইসা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন- “মুসিবতে পড়লে যে কালিমা তোমার বলা উচিত আমি কি তোমাকে তা শিখিয়ে দিব না? আর তা হল-
اللَّهُ اللَّهُ رَبِّى لاَ أُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً
“আল্লাহ, আল্লাহ্ই আমার প্রভু, আমি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করি না।”
অন্য হাদীসে আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগ-শোক, অভাব-অনটন-সংকট, দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মুসিবতে পড়ে যদি কেউ নিম্নোক্ত কালিমা পাঠ করে তবে সে তা থেকে মুক্তি পাবে।
الله ربي لا شريك له
“আল্লাহ আমার প্রভু, তার কোন শরীক নেই।”
মাঝে মাঝে কেউ কেউ কঠিন পরীক্ষার মোকাবেলায় পড়েন। সে যদি তখন তার প্রভুর দিকে অভিমুখী হয় এবং তার সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত না করে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করে তাহলে তার সংকট দূর হয়ে যাবে।
১২৪. হিংসুকের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
কুরআনের শেষ দু'টি সূরা ‘সূরা ফালাক ও সূরা নাস’ তেলাওয়াত করুন, আল্লাহর জিকির করুন ও তার নিকট আকুল আবেদন করুন-
وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
“এবং হিংসুক যখন হিংসা করে তখন তার হিংসার ক্ষতি থেকে (আপনার নিকট আশ্রয় চাই)”। (১১৩-সূরা আল ফালাক: আয়াত-৫)
হিংসুক লোকদের থেকে আপনার বিষয়াদি গোপন রাখুন-
“হে আমার পুত্ৰগণ! (ডাকাত দল বলে মানুষের সন্দেহ হতে পারে এজন্য) তোমরা এক দরজা দিয়ে (শহরে) প্রবেশ করবে না বরং বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।” (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-৬৭)
যে লোক আপনার ক্ষতি করার উদ্যোগ নেয় তার প্রতি উদার হোন, তাহলে সম্ভবত সে (আপনার ক্ষতি করা থেকে) বিরত হবে।
ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ
“উত্তম কিছু দ্বারা মন্দকে দূর করুন।” (২৩-সূরা আল মু'মিনূন: আয়াত-৯৬)
সদাচার সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যায়
সদাচার সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যায়, পক্ষান্তরে, কদাচার দুঃখ-দুর্দশার পথে নিয়ে যায়। একটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “সদাচরণের মাধ্যমে ঐ লোকের মর্যাদা লাভ করা যায় যে নাকি দিনভর নফল রোযা রাখে ও রাতভর নফল সালাত পড়ে।” তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন- “আমি কি তোমাদেরকে সে লোকের কথা বলব না যে নাকি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে? তারা হলো, তোমাদের মাঝে যাদের আচরণ সর্বোত্তম।”
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ
এবং নিশ্চয়ই আপনি (হে মুহাম্মদ!) মহান চরিত্রের অধিকারী।” (৬৮-সূরা আল কালাম: আয়াত ৪(
“তখন আপনি (হে মুহাম্মদ!) আল্লাহর রহমতে তাদের প্রতি কোমল হয়েছিলেন; আর যদি আপনি কর্কশ-কঠোরাত্মা হতেন তবে তারা আপনার পাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে যেত।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৫৯)
“আর তোমরা মানুষের সাথে ভালো কথা বল।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৮৩)
আয়েশা (রাঃ) নবী করীমর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র সম্বন্ধে বলেছেন- “তার চরিত্র ছিল কুরআনেরই জীবন্ত বা বাস্তব রূপ।”
নির্ঘুম রাতের আমল
রাতে যদি আপনার ঘুম না আসে আর আপনি (বিছানায় শুয়ে শুয়ে) এ পাশ ওপাশ করেন বা গড়াগড়ি দিতে থাকেন তবে নিম্নোক্ত আমলগুলো করুন :
১. আল্লাহকে স্মরণ করুন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাতলানো দোয়ার মাধ্যমে অথবা কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করুন-
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
জেনে রাখ! আল্লাহর জিকিরের মাঝেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।" (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত ২৮)
২. নিরুপায় না হলে দিনে ঘুমাবেন না : আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আর আমি দিনকে জীবিকার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (৭৮-সূরা আন নাবা : আয়াত-১১)
৩. ঘুম না আসা পর্যন্ত লেখা-পড়া করুন :
“এবং বল, হে আমার প্রভু! আমার ইলেম বৃদ্ধি করুন।” (২০-সূরা ত্বাহা: আয়াত-১১৪)
৪. দিনে কঠোর পরিশ্রম করুন : “এবং তিনি দিনকে সমুত্থানের (জাগ্রত) জন্য সৃষ্টি করেছেন।” (২৫-সূরা আল ফুরকান: আয়াত-৪৭)
৫. কফি বা চায়ের মতো কোন (হালাল) উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ করুন। [বি.দ্র. একান্ত প্রয়োজন না হলে উত্তেজক দ্রব্য (খাদ্য বা ঔষধ বা প্রসাধনী ইত্যাদি) ব্যবহার করা (গ্রহণ করা) উচিৎ নয়- তা হালাল হলেও না। কেননা, উত্তেজক দ্রব্য বিপরীত ক্রিয়ায় (রিঅ্যাকশনে) অবসাদ সৃষ্টি করে। -অনুবাদক]
পাপ কর্মের মারাত্মক কুফল
নিম্নে পাপের কিছু কুফলের তালিকা দেয়া হলো-
১. আল্লাহ ও পাপীর মাঝে বাধার সৃষ্টি হয় –
كَلَّا إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ
কখনই নয়! নিশ্চয় তারা সেদিন তাদের প্রভুর (দর্শন) হতে আড়ালে থাকবে।” (৮৩-সূরা আল মুতাফফিফীনঃ আয়াত-১৫)
২. কেউ যখন অনবরত পাপ করতে থাকে তখন সে হতাশ হয়ে যায়। রক্ষা পাওয়ার আশা হারিয়ে ফেলে।
৩ পাপী প্রায়ই হতাশা ও উদ্বিগ্নতায় ভোগে-
لَا يَزَالُ بُنْيَانُهُمُ الَّذِي بَنَوْا رِيبَةً فِي قُلُوبِهِمْ
“তারা যে দালান তৈরি করেছে তা সর্বদাই তাদের মনে সন্দেহের (ও মুনাফিকির) কারণ হয়ে থাকবে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১১০)
৪. পাপীর মনে ভয় প্রবেশ করে : “অচিরেই আমি কাফেরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করব; কেননা, তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছে।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৫১)
৫. পাপীর জীবন জঘন্য হয়ে যায় : “ফলে অবশ্যই তার জন্য এক সংকটময় জীবন আছে।” (২০-সূরা ত্বাহা: আয়াত-১২৪)
৬. পাপীর অন্তর কালো ও কঠিন হয়ে যায় : “এবং আমি তাদের অন্তরসমূহকে কঠিন করে দিয়েছি।” (৫-সূরা মায়িদা: আয়াত-১৩)
৭. পাপীর চেহারা জ্যোতিহীন ও (রোগীর মতো) বিষন্ন হয় : “আর যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদের জিজ্ঞেস করা হবেঃ তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফুরি করেছিলে?” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১০৬)
৮. পাপীকে মানুষেরা ঘৃণা করে।
৯. পাপীর পার্থিব অবস্থা দারিদ্র পীড়িত হয়ে পড়ে : “আর যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জীল এবং (কুরআন নামে বর্তমানে) যা তাদের নিকট তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে তা অনুযায়ী আমল করত তবে তারা তাদের উপর থেকে এবং তাদের পদতল থেকে আহার্য পেত।” (৫-সূরা মায়িদা: আয়াত-৬৬)
১০. আল্লাহর ক্রোধ, ঈমানের কমতি এবং দুর্বিপাক বা বালা-মুসিবত এসব কিছুই পাপীর ভাগ্যে আছে।
“সুতরাং তারা ক্রোধের উপর ক্রোধের পাত্র হলো।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৯০)
“বরং তারা যে পাপ কাজ করে তার ফলেই তাদের অন্তরে জঙ ধরেছে।" (৮৩-সূরা আল মুতাফফিফীন: আয়াত-১৪)
“এবং তারা বলেছিল : “আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত।” (২-সূরা বাক্কারা: আয়াত-৮৮) অর্থাৎ কাফেররা বলেছিল যে, আল্লাহ ও তার রাসূলের কোন কথাই তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না।
“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ট পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১-তম পর্ব ১২-তম পর্ব ১৩-তম পর্ব ১৪-তম পর্ব ১৫-তম পর্ব ১৬-তম পর্ব ১৭-তম পর্ব ১৮-তম পর্ব ১৯-তম পর্ব ২০-তম পর্ব ২১-তম পর্ব ২২-তম পর্ব ২৩-তম পর্ব ২৪-তম পর্ব ২৫-তম পর্ব ২৬-তম পর্ব ২৭-তম পর্ব ২৮-তম পর্ব ২৯-তম পর্ব ৩০-তম পর্ব ৩১-তম পর্ব ৩২-তম পর্ব ৩৩-তম পর্ব ৩৪-তম পর্ব ৩৫-তম পর্ব ৩৬-তম পর্ব ৩৭-তম পর্ব ৩৮-তম পর্ব
***************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url