আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-২৪) || হতাশা দুর্দশা বয়ে আনে || হতাশা আত্মহত্যা ঘটাতে পারে || আপনার অবস্থা অনুযায়ী চলতে শিখুন ||





হতাশায় দূর্দশার শেষ নেই, বিশ্বাস করতে শিখুন রিজিক দেওয়া এবং নেওয়ার মালিক শুধু আল্লাহ

আপনার অবস্থা অনুযায়ী চলতে শিখুন

এ জীবনে আপনার যা পাওয়া অসম্ভব আপনি যদি মনে মনে তাকে ঘৃণা করেন তবে আপনার নিকট এর মূল্য কমে যাবে। যা আপনি সত্যিই পেতে চান তা না পাওয়ার জন্য যদি আপনি পরিতৃপ্ত থাকেন তাহলে আপনার আত্মা সান্ত্বনা খুঁজে পাবে।

سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ

“অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে দান করবেন এবং তার রাসূলও (দান করবেন); নিশ্চয় আমরা আল্লাহর নিকটই আকাঙ্ক্ষা করি।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৫৯)

একবার আমি এক লোকের ঘটনা (পত্রিকায়) পড়েছিলাম। ঐলোকের ঘরের জানালা দিয়ে তার আংটিটি বাইরে পড়ে গিয়েছিলেন। আংটিটি পড়ে গিয়ে তা কর্নিশের তাকে পোতা এক পেরেকের সাথে আটকে যায়। তারকাটাটি তাকে পুরাপুরি পোতা ছিল না, ফলে তার বাম হাতের অনামিকা অঙ্গুলি সমূলে উঠে যায়। এতে তার সে হাতে চার আঙ্গুল হয়ে গেল। যা আশ্চর্যজনক তা ঘটনাটি নয় বরং দুর্ঘটনার দীর্ঘকাল পরে লোকটি যে পরিতৃপ্তভাব দেখিয়েছেন তাই আশ্চর্যজনক। পরবর্তী কথায় তার পরিতুষ্টি প্রকাশ পায়।” আমার একহাতে যে চার আঙ্গুল বা আমি যে একটি আঙ্গুল হারিয়েছি তা আমি মনে করি না বললেই চলে। একথা আমার তখনই মনে পড়ে যখন আমার দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে। অন্যথায় আমার কাজ-কর্ম ভালোই চলছে আর যা ঘটেছে তাতে আমি পরিতুষ্ট।”

“আল্লাহ সবকিছু পূর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন।”

আমি এক পরিচিত লোক চিনি, যিনি রোগের কারণে তার বাম হাতটাকে হারিয়েছেন। তিনি অনেক বছর যাবতই (এখানে) বাস করছেন। তিনি বিয়ে শাদীও করেছেন এবং তার সন্তানাদিও আছে। বিনা কষ্টে তিনি তার গাড়ি - চালান এবং সহজেই তার বিভিন্ন কাজ সমাধান করেন। তিনি এতটাই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন যে, মনে হয় যেন শুধুমাত্র একহাত দিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন।

অল্পে তুষ্ট হওয়া জানলে তার মত সুখি কেউ নেই

“আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা রেখেছেন তাতে তুষ্ট হও, তাহলেই তুমি সর্বাপেক্ষা সুখী মানুষ হবে।”

কত দ্রুতইনা আমরা পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিই! এটা আশ্চর্যজনক যে, যখন জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন আমাদের উপর প্রভাব ফেলে তখন আমরা কিভাবেই না আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে খাপ খাইয়ে নিই! পঞ্চাশ বছর আগে একটি বাড়ির উপাদান (জিনিসপত্র) ছিল-তালপাতার তৈরি একটি মাদুর, একটি পানির কলসী, কিছু কয়লা এবং অন্যান্য তুচ্ছ কিছু জিনিসপত্র। বর্তমানে মানুষ যেভাবে জীবন চালিয়ে নিচ্ছে অতীতেও সেভাবে তারা জীবন চালিয়ে নিতে পারত; কোন উপাদানের বা উৎসের বা আরাম-আয়েশের অভাব অতীতের জীবনমানকে বর্তমানের চেয়ে কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ করেনি। একজন আরব কবি বলেছেন-

وَالنَفـسُ راغِبِـةٌ إِذا رَغَّبتَـهـا ٭ واذا تُـرَدُّ إِلـى قَليـلٍ تَقـنَـعُ

অর্থাৎ “তুমি যখন আত্মাকে প্রলোভন দেখাবে তখন আত্মা আরো চাইবে, আর যখন একে অল্পের কথা বলা হয় তখন এটা অল্পে তুষ্ট হয়।”

কুফার কেন্দ্রিয় মসজিদে দু'গোত্রের মাঝে ঝগড়া বেধে গেল। তখন একদল অপরদলকে অপমানসূচক কথা বলতে লাগল। আল আহনাফ বিন কায়সকে খুঁজে বের করার জন্য মসজিদের এক লোক চুপিসারে বের হয়ে পড়ল। আল আহনাফ ইবনে কায়স সবার নিকটে পরমোৎকৃষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। লোকটি তাকে বাড়িতে ছাগলের দুধ দোহন করা অবস্থায় পেলেন। আল আহনাফ এমন পোশাক পরিধান করেছিলেন যার মূল্য দশ দিনারও ছিল না (অর্থাৎ তা ছিল ছেড়া ও সস্তা)।

তিনি কৃশ, চোখ-মুখ বসা এবং তার এক পা অপর পা থেকে লম্বা ছিল; যার ফলে তিনি খোঁড়ায়ে খোঁড়ায়ে হাঁটতেন। যখন তাকে ঝগড়ার খবরটা দেয়া হলো তখন তার হাব-ভাবের কোন পরিবর্তন হলো না এবং তিনি শান্ত থাকলেন। এ ধরনের বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতা প্রদর্শন এ কারণেই সম্ভব হয়েছে যে, আল আহনাফ জীবনে অনেক বিবাদ ও সংকট প্রত্যক্ষ করেছেন। ফলে, তিনি এমন ঘটনায় অভ্যস্ত ছিলেন (অর্থাৎ এমন ঘটনায় অভিজ্ঞতা তার পূর্বেও হয়েছে)। তিনি লোকটিকে বললেন, “আল্লাহ চাহে তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

তারপর তিনি নাস্তা খেতে শুরু করলেন, যেন কোন কিছুই ঘটেনি। তার নাস্তা বলতে ছিল এক টুকরো শুকনো রুটি, তেল, লবণ ও এক গ্লাস পানি। তিনি আল্লাহর নাম নিয়ে খেলেন। তারপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করে পরে বললেন, “ইরাকের গম, সিরিয়ার তেল, ফোরাত নদীর পানি ও রাশিয়ার লবণ। নিশ্চয় এগুলো মহা নেয়ামত।” তিনি কাপড়-চোপড় পরে নিলেন। হাতের লাঠিখানা নিলেন ও ঐ লোকজনের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। তারা যখন তাকে দেখল তখন তাদের দৃষ্টি তার উপর নির্বদ্ধ হলো ও তিনি যা বললেন তারা তা মনোযোগ সহকারে, শুনল। তিনি শান্তি ও সমঝোতার কথা বললেন—তা উভয় দলকেই সন্তুষ্ট করল এবং তাদেরকে তিনি নিজ নিজ পথে চলে যেতে অনুরোধ জানালেন। তারা সবাই একথা নিরবে মেনে নিল ও প্রত্যেকেই মনে সামান্যতম হিংসা-বিদ্বেষ না রেখেই সে স্থান ত্যাগ করে গেল। আর এভাবেই সেই অগ্নী পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হলো।

একজন আরব কবি বলেছেন-

قَدْ يُدْرِكُ الشَّرَفَ الفَتَى ورِدَاؤُه ٭ خَلَقٌ وجَيْبُ قَميصِهِ مَرْقُوعُ

অর্থাৎ “যুবক মর্যাদার অধিকারী হতে পারে যদিও তার চাদর ছেড়া ও তার জামার পকেট তালি দেয়া হয়।”

এ ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তার মধ্যে একটি হলো-মাহাত্ম্য বাহ্যিক আকারে বা পোশাকে নিহিত নয়। অন্যান্য শিক্ষার মাঝে এও একটি যে, সামান্য কিছু পার্থিব জিনিসপত্র থাকা দুঃখ ও ধন-সম্পদের মাঝে নিহিত নয়।

“আর মানুষ তো এমনই যে, যখন তাকে তার প্রভু সম্মানিত করে ও ধন-সম্পদ দান করে পরীক্ষা করেন তখন বলে, “আমার প্রভু আমাকে সম্মানিত করেছেন।” আর যখন তার প্রভু তাকে রিযিক কমিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করেন তখন সে বলে, “আমার প্রভু আমাকে অপমানিত করেছেন।” (৮৯-সূরা আল ফাজর : আয়াত-১৫-১৬)

এ ঘটনা থেকে আমরা আরেকটি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। আর তা হলো মানুষের চরিত্র ও গুণই তার মূল্যের মাপকাঠি, তার পোশাক, জুতা বা ঘর-বাড়ি নয়। তার জ্ঞান, উদারতা, মাহাত্ম্য, আচার-আচরণ ও কাজ-কর্ম দ্বারা তাকে মূল্যায়ন করা হয়।

“তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত।” (৪৯-সূরা আল হুজুরাত: আয়াত-১৩)

“বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার দয়ায় তারা আনন্দ করুক। তারা যে সম্পদ জমায় তার চেয়ে এটা ভালো।” (১০-সূরা ইউনুস: আয়াত-৫৮)

আপনার ভাগ্যে যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে নিজেকে প্রশিক্ষণ দান করুন। আপনি আল্লাহর হুকুম বা তকদীরে বিশ্বাস না করে কী করবেন? আল্লাহর স্বর্গীয় বিধান বা তকদীরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য যে পরিকল্পনাই আপনি গ্রহণ করুন না কেন তাতে আপনার কোন লাভ হবে না এবং সে কারণেই আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, “সংকটের সমাধান কি?” সমাধান হলো একথা বলা যে, “আমরা অল্পেতুষ্ট, সন্তুষ্ট এবং আমাদের ইচ্ছাকে ত্যাগ করেছি।"

“তোমরা যেখানে থাক না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই; যদিও তোমরা সুদৃঢ় ও সুউচ্চ দুর্গে থাক না কেন।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-৭৮)

যেদিন চিকিৎসক আমাকে বলেছিল যে আমার ভাই মুহাম্মদের একটি হাত কেটে ফেলতে হবে সেদিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন ছিল। সংবাদটি আমার মনে বিনা মেঘে বজ্রপাত করেছিল। আমি আবেগে পরাভূত হয়ে গিয়েছিলাম আর আমার আত্মা আল্লাহর এই বাণীতে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিল।

“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন মুসিবত আসে না, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথ দেখান। (৬৪-সূরা আত তাগাবুনঃ আয়াত-১১)

“কিন্তু, ধৈর্যশীলদেরকে (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করুন, যারা (ধৈর্যশীলরা) মুসিবতে পড়লে বলে, “আমরা অবশ্যই আল্লাহর জন্য এবং তার নিকটই আমরা ফিরে যাব।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৫৫-১৫৬)

এসব আয়াতসমূহ আমার মনে শান্তি ও সান্ত্বনা বোধ সঞ্চার করেছিল। যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে গেছে তা প্রতিরোধ করার কোন কৌশলই নেই।

অতএব, আমাদেরকে অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে এবং আমাদের ইচ্ছাকে ত্যাগ করতে হবে।

أَمْ أَبْرَمُوا أَمْرًا فَإِنَّا مُبْرِمُونَ

নাকি তারা কোন পরিকল্পনা করছে? তাহলে আমিও পরিকল্পনা করছি। (৪৩-সূরা আয যুখরুফঃ আয়াত-৭৯)

“আল্লাহ তার কার্য সম্পাদনে পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (১২-সূরা ইউসুফঃ আয়াত-২১)

“আর যখন তিনি কোন বিষয় নির্ধারণ করেন, সেজন্য তিনি শুধুমাত্র বলেন, কুন (হয়ে যাও) আর তখনই তা হয়ে যায়।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১১৭)

আল খানসা আন্নাখ্‌য়িয়্যাকে তার চার পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ এক মুহুর্তে দেয়া হলো। কাদিসিয়ার যুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় তারা সবাই শহীদ হয়েছিল। তার একমাত্র প্রতিক্রিয়া ছিল আল্লাহর প্রশংসা করা ও যা সর্বোত্তম ছিল তা পছন্দ করায় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা। ঈমান বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ ইহকালের ও পরকালের সুখ লাভ করে। আপনার যদি এ উপদেশ মানতে মন না চায় তবে নিজেকে একথা জিজ্ঞেস করুন- টিকিয়ে থাকার মতো কোন বিকল্প পদ্ধতি আছে কি? যদি সে বিকল্প পদ্ধতি তিক্ততা, অভিযোগ এবং যা ঘটেছে তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি হয় তবে আপনি ইহকাল ও পরকালে আপনার নিজের উপর শুধু বেদনাই বয়ে আনবেন।

“যে সন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি আর যে ক্রুদ্ধ হয় তার জন্য রয়েছে ক্রোধ।”

বিপর্যয়ের পরে উত্তম প্রতিকার বা ক্রিয়াকলাপ হলো-

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

“নিশ্চয় আমরা (সবাই) আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।” একথা বলা।

এর অর্থ হলো যে, আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্টি; আল্লাহ আমাদের মালিক; আমরা তার রাজ্যে বাস করি এবং আমরা তার নিকট ফিরে যাব। তার মাধ্যমেই শুরু এবং তার নিকটেই শেষ। সবকিছুই আল্লাহর হাতে।

একজন আরব কবি বলেছেন-

نَفْسِي الَّتِي تَمْلِكُ الْأَشْيَاءَ ذَاهِبَةٌ ٭ فَكَيْفَ أَبْكِي عَلَى شَيْءٍ إِذَا ذَهَبَا

অর্থাৎ “আমার আত্মা যা দ্রব্যাদির মালিক সে নিজেই প্রস্থানকারী, অতএব, যখন কোন জিনিস চলে যায় তখন কিভাবে আমি কাঁদি?”

মহান আল্লাহ বলেছেন-

كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ

“আল্লাহর সত্তা ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল।” (২৮-সূরা ক্বাসাস: আয়াত-৮৮)

إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ

“নিশ্চয় আপনিও (হে মুহাম্মদ!) মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।” (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত ৩০)

আপনার বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে, আপনার ছেলে মারা গেছে বা আপনার জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে গেছে একথা শুনে যদি আপনি বিস্মিত হয়ে যান তবে আপনি কী করবেন? এ মুহূর্ত থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ভাগ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে তা থেকে পালানোর চেষ্টা করা হলো এক নিষ্ফল প্রচেষ্টা- এতে কোন লাভ হয় না। তকদীরে যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকুন, আপনার বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিন ও আপনার পুরস্কার অর্জন করুন। অন্য কোন কিছু বেছে নিবার অধিকার আপনার নেই।

একথা নিশ্চিত যে, আপনি বলতে পারেন যে, অন্য কোন কিছু পছন্দ করার অধিকার আমার আছে; কিন্তু, এটা হীন (তুচ্ছ) কোন কিছু এবং আমি আপনাকে এর থেকে পবিত্র থাকার সতর্ক করছি। এটা হলো অভিযোগ করা, ক্রুদ্ধ হওয়া এবং রাগে জ্বলে আপনার আত্মসংবরণ হারানো (রাগে জ্বলে-পুড়ে মরা)। এ মনোভাব ও আচরণ আসলে কী করতে পারে? (এ দ্বারা) আপনি আপনার প্রভুর ক্রোধ অর্জন করবেন আর লোকজন আপনাকে ভীষণ গালাগালি করবে। অধিকন্তু, আপনি যা হারিয়েছেন তা ফিরে আসবে না, আর আপনার মুসিবতও আপনার জন্য হাল্কা হবে না।

فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ لْيَقْطَعْ فَلْيَنظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُ مَا يَغِيظُ

“তবে যেন সে আকাশের দিকে একটি রশি বিস্তার করে, অতঃপর তাতে গলায় ফাঁস দিয়ে মরে, তারপর যেন দেখে তার এ চেষ্টা তার ক্রোধের কারণ দূর করে কি না।” (২২-সূরা আল হাজ্জঃ আয়াত ১৫)

পৃথিবীর সবকিছুই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে

হতাশ হবেন না-দুদিন আগে বা পরে এ পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।

আমরা অত্যাচারী ও অত্যাচারিত, শক্তিশালী ও দুর্বল, ধনী ও গরিব যাই হইনা কেন মৃত্যুই আমাদের সবার শেষ পরিণতি। আপনার মৃত্যু নতুন কিছু নয়, জাতির পর জাতি আগে চলে গেছে জাতির পর জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইবনে বতুতা বর্ণনা করেছেন যে, পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে এক গোরস্থানে এক হাজার রাজা বাদশাকে কবর দেয়া হয়েছে। এ কবরস্থানের প্রবেশ পথে একটি ফলকে লেখা আছে—

وسلاطينهم سَلِ الطينَ عنهم ٭ والرؤس العظام صارت عظاماً

“এ রাজা-বাদশাদের ও বড় বড় নেতাদের কবরের চারিধারের মাটিকে তাদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর, তারা সবাই এখন শুধু হাড় হয়ে আছে।” (এই রাজা-বাদশা ও বড় বড় নেতৃবর্গ সবাই মরে পচে গলে গেছে, এখন শুধু এদের হাড়ই অবশিষ্ট আছে বিশ্বাস না হয় তো এদের কবরের মাটি খুঁড়ে দেখ।) আশ্চর্যের বিষয় মানুষের মৃত্যুকে ভুলে যাওয়া এবং কীভাবে সে মৃত্যু সম্বন্ধে বেপরোয়া হয়ে থাকে অথচ দিন-রাত তার উপর মৃত্যুর বিভীষিকা ঝুলে

আছে মানুষ নিজেকে ধোকা দিয়ে এ চিন্তা করে যে, সে এ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর ও যৰ্থাথ কর্ম সম্পাদন কর, কেননা, কেয়ামতের প্রকম্প এক ভয়াবহ ব্যাপার।” (২২-সূরা আল হাজ্জ: আয়াত-১)

“মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা অবহেলায় বিমুখ হয়ে আছে।” (২১-সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-১)

“তুমি কি তাদের কাউকে দেখতে পাও অথবা তাদের ফিসফিসানি শুনতে পাও?” (১৯-সূরা মারইয়াম: আয়াত-৯৮)

হতাশা দুর্দশা বয়ে আনে

‘আলমুসলিমূন’ পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, ১৯৯০ সালে সারা বিশ্বে বিশ লক্ষ লোক হতাশায় ভুগেছে। হতাশা এমন এক রোগ যা মানব জাতির সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক ধ্বংস সাধন করে। এটা প্রাচ্যের লোক আর পশ্চিমা লোককে আলাদা করে দেখে না (অর্থাৎ তাদের বাছ-বিচার ছাড়াই সকলকে সমভাবেই কষ্ট দেয় ও ধ্বংস করে)। এটা ধনী ও দরিদ্র লোককেও আলাদা করে দেখে না। এটা এমন রোগ যা সব ধরনের লোককে আক্রমণ করে ... এবং কিছু কিছু লোককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়।

হতাশা, সম্পদ, সন্ত্রান্ত বংশ ও ক্ষমতাকে চিনে না ও এদেরকে ভয় করে না। যাই হোক, এটা মু’মিনদের থেকে দূরে থাকে। কতিপয় পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে বিশ কোটি লোক বর্তমানে হতাশায় ভুগছে। সম্প্রতি এক গবেষণার ফলে দেখা যায় যে, কমপক্ষে প্রতি দশজনে একজন জীবনে কোন না কোন সময়ে এই মারাত্মক রোগে ভুগেছে। বিপদ শুধুমাত্র বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বর্তমানে তরুণরাও হতাশার প্রতি সংবেদনশীল। এমনকি গর্ভস্থ ভ্রণও ঝুঁকির সম্মুখীন; কেননা, হতাশা তার সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় হিসেবে গর্ভপাত ঘটাতে পারে।

হতাশা আত্মহত্যা ঘটাতে পারে

“আর তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করিও না।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-২৯)

“এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করিও না।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৯৫)

এ তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছিল যে ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান সাংঘাতিক হতাশার শিকার হয়েছিলেন। তার এ অবস্থার কারণ ছিল তার সত্তোরোর্ধ বয়স হওয়া সত্ত্বেও বিশাল বিশাল মানসিক চাপযুক্ত কার্য সম্পাদন করা এবং বারবার শল্য চিকিৎসার অধিনস্থ হওয়া।

“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, এমনকি সুরক্ষিত (দৃঢ় ও সুউচ্চ) দুর্গেও যদি তোমরা থাক তবুও মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে বসবেই।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-৭৮)

অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে কলা বিভাগের লোকজন হতাশায় ভুগেন। কবি সালেহ জাহীনের মৃত্যুর একমাত্র কারণ না হলেও প্রধান কারণ ছিল হতাশা। একথাও বলা হয়েছে যে, নেপোলিয়ান বোনাপার্ট নির্বাসনে থাকাকালে হতাশ অবস্থায় মারা যান।

“তারা কাফের থাকা অবস্থায় তাদের আত্মা তাদের দেহ ত্যাগ করবে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৫৫)

অল্পকিছু দিন আগে এক জার্মান মহিলা তার তিন তিনটি সন্তানকে হত্যা করে ফেলেছে। পরে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, সে এ জঘন্য কাজ করেছিল হতাশার কারণে। সে তার সন্তানদেরকে খুবই ভালোবাসত এবং সে এই ভয় করত যে, সে জীবনে যে ব্যাথা-বেদনা-দুঃখ-কষ্ট ও সংকটের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তার সন্তানদেরও সেরূপ ব্যথা-বেদনা-দুঃখ-কষ্ট ও সংকট ভোগ করতে হবে। এ কারণে সে তাদেরকে শান্তি দিতে ও “তাদের প্রত্যেককে” জীবনের জটিলতা ও উত্থান-পতনের হাত হতে “রক্ষা করতে” সিদ্ধান্ত নেয়। তাদেরকে হত্যা করে সে নিজেও আত্মহত্যা করে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হতাশা রোগগ্রস্তদের) যে সংখ্যা প্রচার করেছে তাতে অবস্থার ভয়াবহতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ সংস্থা ১৯৭৩ সালে প্রচার করে যে পৃথিবী মোট জনসংখ্যার শতকরা তিনভাগ লোক হতাশাগ্রস্ত। সংখ্যাটি নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়ে ১৯৭৮ সালে তা শতকরা পাঁচ ভাগে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছু লোকের, যা আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে তা হলো যে, কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি চারজন আমেরিকানের মধ্য থেকে একজন (অর্থাৎ ২৫% আমেরিকান) হতাশায় ভুগছে। ১৯৮১ সালে আমেরিকায় শিকাগোতে অনুষ্ঠিত মানসিক রোগ সম্মেলনে সম্মেলনের সভাপতি ঘোষণা দেন যে, পৃথিবীতে ১০ (দশ) কোটি লোক হতাশায় ভুগছে। কিছু কিছু লোকের নিকট যা আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে তা হলো এই যে, অধিকাংশ হতাশার রোগী উন্নত তথা ধনী দেশের। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ কোটি লোক হতাশায় ভুগছে।

“তারা কি দেখে না যে, তাদেরকে (বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবত, দুর্বিপাক, রোগ-শোক ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা) প্রতি বছর একবার বা দু’বার পরীক্ষা করা হচ্ছে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১২৬)

বলা হয় যে, “যে ব্যক্তি তার লভ্যাংশকে বাড়াতে সক্ষম সে বুদ্ধিমান নয় বরং যে ব্যক্তি তাঁর লোকসানকে লাভে পরিণত করে সে বুদ্ধিমান।”

যা শেষ হয়ে গেছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত নয়। কেননা, এমন কাজ শুধু উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা ও সময়ের অপচয়ই ঘটাবে। করার মতো কোন কাজ না থাকলে বিভিন্ন উপকারী কাজ করে সময়কে কাজে লাগানো যায়। আমলে সালেহ বা সৎকাজ করা, অন্যদেরকে সাহায্য করা, রোগী দেখতে যাওয়া, কবর যেয়ারত করতে যাওয়া (শেষ ঠিকানার কথা মনে করা ও তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য)। মসজিদের কাজে সাহায্য সহযোগিতা করা, দান কার্যে অংশগ্রহণ করা, শারীরিক ব্যায়াম, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা করতে যাওয়া, কাজ কর্মকে সাজানো-গুছানো এবং বৃদ্ধ, গরীব ও দুর্বলদেরকে সাহায্য করা হলো এ ধরনের কিছু ভালো কাজ।

“নিশ্চয় তুমি (তোমার ভালো-মন্দ কাজসহ) তোমার প্রভুর নিকট ফিরে যাচ্ছ-এ এক নিশ্চিত প্রত্যাবর্তন।” (৮৪-সূরা আল ইনশিকাকঃ আয়াত-৬)

একজন আরব কবি বলেছেন- “মহৎ কাজ তার মিষ্ট স্বাদে ও সুন্দর চেহারায় অনন্য।”

কোনও একটি ইতিহাসের বই খুলে দেখুন, এর পাতায় পাতায় ব্যাথা বেদনা, অভাব-অনটন ও দুঃখ-দুর্দশার কথা দেখতে পাবেন। একজন আরব কবি বলেছেন- “ইতিহাস পড়, কেননা এতে শিক্ষণীয় ঘটনা আছে। সে জাতি ধ্বংস হয়ে যায় যে জাতি নিজেদের খবর রাখে না।”

“নবীদের যে সব ঘটনা আমি তোমার নিকট বর্ণনা করি তা দিয়ে আমি তোমার অন্তরকে দৃঢ় করি।” (১১-সূরা হুদঃ আয়াত-১২০)

“নিশ্চয় তাদের ঘটনাবলিতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।” (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-১১১)

“অতএব, ঘটনা বর্ণনা কর যাতে করে তার চিন্তা-ভাবনা করে।” (৭-সূরা আল আরাফ: আয়াত-১৭৬)

উমর (রাঃ) বলেছেন, “বর্তমানে আমার উদ্দেশ্য শুধু আমার তকদীরকে উপভোগ করা।” এটা এমন এক বর্ণনা যা থেকে আল্লাহর তকদীরের প্রতি তার সন্তুষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়।

এক প্লেগে এক বছরের মধ্যে আবু যুয়াইব হাযালির আটজন ছেলে মারা গেছে। তিনি কী বলেছেন বলে আপনি মনে করেন? তিনি আল্লাহর হুকুমের প্রতি ঈমান রেখেছেন, আত্মসমর্পণ করেছেন ও অনুগত থেকেছেন এবং বলেছেন “যারা আমার দুঃখে আনন্দ করেছে তাদেরকে আমি ধৈর্য প্রদর্শন করবই, যুগের উত্থান-পতনে আমি বিচলিত হব না। মৃত্যু যখন তার থাবা মারে, তখন কোন তাবিজই একে ফিরিয়ে দিতে পারে না।”

مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ

“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন মুসিবতই আসে না।” (৬৪-সূরা আত তাগাবুনঃ আয়াত-১১)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং নিজে নিজে (কবিতা আকারে) এ সান্ত্বনার বাণী বলতেন-

“যদিও আল্লাহ আমার চোখের জ্যোতি ছিনিয়ে নেন,

তবুও আমার অন্তর আলোকিত আছে;

আমার হৃদয় বুঝতে পারে ও মন বিপথগামী নয়,

আর আমার জিহ্বা উন্মুক্ত তরবারীর ফলার মতো ধারালো।”

মাত্র একটি নেয়ামত হারানোর পর আল্লাহর যে অসংখ্য নেয়ামত তার নিকট ছিল তা স্মরণ করে তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিতেন।

উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) তার একটি পা হারান এবং একই দিনে তাকে সংবাদ দেয়া হয় যে, তার পুত্রও মারা গেছে। এত সবের পর তিনি বললেন- “হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা তোমার। আপনি যদি নিয়ে থাকেন তবে তো আপনিই দিয়েছিলেন। আপনি যদি আমাকে কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন তবে তো আপনি রক্ষাও করেছেন এবং যত্নও করেছেন। আপনি আমাকে চার চারটি অঙ্গদান করেছেন এবং মাত্র একটি নিয়ে গেছেন। আপনি তো আমাকে চার চারটি ছেলে দান করেছেন আর মাত্র একটি নিয়ে গেছেন।”

“তারা যে ধৈর্য ধরেছে এজন্য তাদের পুরস্কার হলো জান্নাত ও রেশমী পোশাক।” (৭৬-সূরা আদ দাহর বা ইনসানঃ আয়াত-১২)

“তোমরা ধৈর্য ধরেছ এজন্য তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” (১৩-সূরা রাআদঃ আয়াত-২৪)

ইমাম শাফিয়ী (রহঃ) নিম্নোক্ত সান্ত্বনার বাণী বলতেন-

دَعِ الأَيَّامَ تَفْعَل مَا تَشَاءُ ٭ وطب نفساً إذا حكمَ القضاءُ

إِذَا نَزَلَ القَضَاء بارض قوم ٭ فَلاَ أَرْضٌ تَقِيهِ وَلاَ سَماءُ

অর্থাৎ “দিনসমূহকে যাচ্ছে তাই করতে দাও, আর যখন কোন হুকুম বর্তায় তখন সন্তুষ্ট থাক; যখন কোন জাতির দেশে কোন হুকুম অবতরণ করে, তখন জমিনও সে জাতিকে বাঁচাতে পারে না আর আসমানও পারে না।”

কতবারই না আমরা মৃত্যুকে ভয় পেয়েছি কিন্তু কিছুই হয়নি? কতবারই না আমরা শেষ মুহুর্তকে অতি নিকটে মনে করেছি তবুও আমরা আগের চেয়ে আরো জোরালো হয়ে গেছি? কতবারই না আমরা নিজেদেরকে সংকটাবস্থায় পেয়েছি তবু কিছু সময় পর আমরা আরাম ও উপশমের মিষ্টস্বাদ উপভোগ করতে পেরেছি।

“(হে মুহাম্মদ!) আপনি বলে দিন। আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিপদ থেকে এবং প্রতিটি বিপদ থেকে রক্ষা করেন।” (৬-সূরা আল আন’আম : আয়াত-৬৪)

কেবলমাত্র স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার হওয়ার জন্যই আমরা কতবারই না অসুস্থ হই।

“আর আল্লাহ যদি তোমার কোন ক্ষতি সাধন করেন তবে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা দূর করতে পারবে না।” (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-১৭)

যখন কেউ নিশ্চিতভাবে একথা জানে যে, আল্লাহ সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন সে কিভাবে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতে পারে? এবং যখন কেউ আল্লাহকে ভয় করে তখন কিভাবে আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে ভয় করতে পারে? বিশেষ করে আল্লাহর এই বাণী বিবেচনা করে-

“অতএব তাদেরকেও ভয় করিও না বরং আমাকে ভয় কর।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৭৫)

وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ

“আর নিশ্চয় (তারা) আমার বাহিনী; নিশ্চয় তারাই বিজয়ী হবে।” বা “আর নিশ্চয় আমার বাহিনীরাই বিজয়ী হবে।” (৩৭-সূরা আস সাফফাতঃ আয়াত-১৭৩)

“নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে সাহায্য করব (ফলে তারা বিজয়ী হবে) এবং তাদেরকেও সাহায্য করব (ফলে তারাও বিজয়ী হবে) যারা এ দুনিয়ার জীবনে ঈমান রাখে এবং সেদিনের প্রতিও ঈমান রাখে যেদিন সাক্ষীগণ (সাক্ষী দেয়ার জন্য) দাঁড়াবে।” (৪০-সূরা আল মু'মিন: আয়াত-৫১)

আল্লামা ইবনে কাসীর তার তফসীরে একটি হাদীসে কুদসী উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

“আমি আমার ইজ্জতের কসম ও আমার মাহাত্ম্যের কসম করে বলছি, আমার বান্দা যখন আমার উপর নির্ভর করে তখন আমি আসমান ও জমিনের মাঝে তার জন্য স্বচ্ছলতা ও মুক্তির পথ করে দেই। আমি আমার ইজ্জতের ও আমার মাহাত্ম্যের কসম করে বলছি, আমার বান্দা যখন আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের উপর নির্ভর করে তখন তার দু'পায়ের নিচের জমিনকে আমি তার উপর ক্রুদ্ধ করে দেই।”

ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ বলেছেন-

لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ

অর্থাৎ “আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকাজ করার কোন শক্তি নেই ও পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার কোন ক্ষমতা নেই।”

এই কালিমা দ্বারা অতি ভারী জিনিস বহন করা যায়, সকল বাধা দূর করা যায় এবং সম্মান অর্জন করা যায়। সুতরাং এই কালেমা সর্বদা স্মরণ করুন, কেননা, এটা বেহেশতের সম্পদসমূহের একটি এবং সুখ ও পরিতুষ্টির একটি খুঁটি।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



***************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url