আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-০৩) || সবর, প্রার্থনা ও প্রচেষ্টার দ্বারা ভাগ্যকে নিজের অনুকুলে আনুন || দুঃখের সাথেই রয়েছে সুখ ||




সবর, প্রার্থনা ও প্রচেষ্টার দ্বারা ভাগ্যকে নিজের অনুকুলে আনুন

এই পর্বের পাঠ্য বিষয়সমূহঃ

তক্বদীর বা ভাগ্যে বিশ্বাস করুন

পৃথিবীতে আর তোমাদের জীবনে যে বিপদ আসে তা আমি ঘটানোর পূর্বেই লিখে রেখেছি। (৫৭-সূরা আল হাদীদ: আয়াত-২২)

কলমের কালি শুকিয়ে গেছে, পাতাগুলো আরশে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে, যা কিছু ঘটবে তা সবই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদের জন্য যা কিছু রেখেছেন তার অধিক কিছুই আমাদের নিকট পৌছবে না। যা কিছু আপনার নিকট এসেছে (অর্থাৎ আপনার তকদীরে আছে) তা আপনাকে ফসকিয়ে যাবে না, আর যা কিছু আপনাকে ফসকিয়ে গিয়েছে (আপনার তকদীরে নেই) তা আপনার নিকট আসবে না। যদি এ বিশ্বাস আপনার অন্তরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়ে থাকে তবে সব কষ্ট ও জটিলতা সহজ ও আরাম হয়ে যাবে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি নানান সংকট দ্বারা জর্জরিত করেন।

এ কারণেই যদি আপনি রোগাক্রান্ত, পুত্রের মৃত্যুতে শোকাহত বা সম্পদে ক্ষতিগ্রস্ত হন তবে নিজেকে সমস্যায় জর্জরিত ভাববেন না। এ সমস্ত ঘটনা ঘটার জন্য আল্লাহ হুকুম করেছেন এবং সিদ্ধান্ত তার একারই। যখন আমরা সত্যি সত্যিই এ বিশ্বাস করব তখন আমরা ভালোভাবে পুরস্কৃত হব ও আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে বা আমাদের গুনাহ মাফ হবে।

সে জন্যেই যারা দুর্দশাগ্রস্ত তাদের জন্য সুসংবাদ অপেক্ষা করছে; সুতরাং আপনার প্রভুর প্রতি ধৈর্যশীল ও সন্তুষ্ট থাকুন।

لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ

তিনি যা করেন তা সম্বন্ধে তাকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, অথচ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (২১ -সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-২৩)

আল্লাহ যে সবকিছু পূর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছেন একথা যদি আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস না করেন তবে কখনও আপনি পরিপূর্ণ শান্তি পাবেন না। কলমের কালি শুকিয়ে গেছে তার সাথে আপনার যা কিছু ঘটবে তা সবই লিখা হয়ে গেছে। তাই যা আপনার হাতে নেই তার জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করবেন না। একথা ভাববেন না যে আপনি বেড়াটিকে খসে পড়া থেকে, পানিকে প্রবাহিত হওয়া থেকে বা গ্লাসটিকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারতেন। আপনি চাইলেও এগুলোকে রক্ষা করতে পারতেন না।

যা কিছু পূর্বেই নির্ধারণ করা হয়েছে তা ঘটবেই।

فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ

সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা কুফরি অবলম্বন করুক।” (১৮-সূরা আল কাহাফ: আয়াত-২৯)

আত্মসমর্পণ করুন (ইসলাম গ্রহণ করুন বা মুসলিম হন। -অনুবাদক) ক্রোধ ও অনুশোচনার যাতনা আপনাকে পেয়ে বসার আগেই তক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপন করুন বা তক্বদীরের প্রতি ঈমান আনুন। আপনার যতটুকু ক্ষমতা ছিল আপনি যদি তার সবটুকু করে থাকেন এবং আপনি যার বিরুদ্ধে (যা না ঘটার জন্য) আপ্রাণ চেষ্টা করতে ছিলেন যদি তাই ঘটে তবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন যে এটাই ঘটার ছিল। একথা বলবেন না যে, “যদি আমি অমুক অমুক কাজ করতাম তবে অমুক অমুক ঘটনা ঘটত।" বরং বলুন, “এটাই আল্লাহর হুকুম এবং তিনি যা চান তাই করেন।”

দুঃখের সাথেই রয়েছে সুখ


إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا

অবশ্যই দুঃখের সাথে সুখ আছে।” (৯৪-সূরা আল ইনশিরাহ: আয়াত ৬)

আহার করার পর পুনরায় ক্ষুধা লাগে, পান করার পর পুনরায় পিপাসা জাগে। অস্থিরতার পর ঘুম আসে। অসুস্থতার পর সুস্থতা আসে, পথ হারার পর পথ খুঁজে পাবে আর রাতের পর দিন আসবে এটাই নিয়ম।

"সম্ভবত আল্লাহ বিজয় ঘটাবেন অথবা তার ইচ্ছানুযায়ী কোন সিদ্ধান্ত নিবেন।" (সূরা-৫ মায়িদা: আয়াত-৫২)

অন্ধকার রাত্রিতে এক আলোকিত সুপ্রভাতের আগমনের সংবাদ জানাও, যে প্রভাতের আলো পাহাড় ও উপত্যকাসমূহে ছড়িয়ে পড়বে। দুঃখ-পীড়িতদেরকে এমন ত্বরিত প্রশান্তির শুভসংবাদ দাও যা নাকি তাদের কাছে আলোর গতিতে বা একপলকে পৌঁছে যাবে, যদিও বা আপনি মরুভূমিকে মাইলকে মাইল বিস্তৃত দেখছেন, তবুও জেনে রাখুন যে, এই দূরত্বের পরেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ছায়াঘেরা অনেক সবুজ অবারিত মাঠ রয়েছে।

আপনি যদি দেখেন যে, রশি শুধু কষছে আর কষছেই তবে জেনে রাখুন যে, এটা অচিরেই পটু করে ছিড়ে যাবে। কান্নার পর হাসি, ভয়ের পর সান্ত্বনা এবং উদ্বিগ্নতার পর প্রশান্তি আসে। যখন ইব্রাহীম (আঃ)-কে আগুনে ফেলা হল তখন তার প্রভুর সাহায্য পাওয়ার কারণে তিনি আগুনের তাপ অনুভব করেননি।

قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ

“আমি (আল্লাহ) বললাম: হে আগুন! তুমি ইব্রাহীমের জন্য শীতলতা প্রদানকারী ও নিরাপত্তা দানকারী হয়ে যাও।” (২১-সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-৬৯)

সাগরতো মূসা (আঃ)-কে ডুবাতে পারেনি; কেননা, তিনি অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী দৃঢ় ও সৎভাবে বলেছিলেন-

كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ

“কখনও নয়; নিশ্চয় আমার সাথে আমার প্রভু আছেন, তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।” (২৬-সূরা আশ শোয়ারা: আয়াত-৬২)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর (রাঃ)-কে গুহাতে বলেছিলেন যে, আল্লাহ তাদের সাথে আছেন, তারপর তাদের উপর শান্তি ও প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়েছিল।

যারা দুর্দিনের শিকার তারাতো শুধু দুর্দশা ও দুর্ভাগ্যই দেখে। এর কারণ এই যে, তারা কেবল ঘরের দেয়াল ও দরজাই দেখতে পায়, যখন নাকি তাদের সামনে যে বাধার প্রাচীরসমূহ আছে সেগুলোর বাইরে তাদের তাকানো উচিত।

অতএব, হতাশ হবেন না; অবস্থা একই রকম থাকা অসম্ভব। দিনগুলো ও বছরগুলো পালা করে ঘুরে ঘুরে আসে, ভবিষ্যৎ অদৃশ্য আর প্রতিদিনই আল্লাহ্ তায়ালার কিছু কাজ করার থাকে। আপনি তো এটা জানেন না, তবে এমনটা হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা পরবর্তীতে নতুন কিছু আনবেন। আর অবশ্যই, কষ্টের সাথে আরাম আছে।

টক লেবু দিয়েই মিষ্টি শরবত হয়

একজন মেধাবী ও দক্ষ ব্যক্তি ক্ষতি (লোকসান)-কে লাভে রূপান্তরিত করে, যেখানে নাকি একজন অদক্ষ লোক প্রায়ই এক মুসিবত থেকে আরেক মুসিবত সৃষ্টি করে নিজের দুর্দশাই কেবল বৃদ্ধি করে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ছাড়তে বাধ্য হলেন, কিন্তু তিনি তার দাওয়াতী কাজ বাদ না দিয়ে বরং মদীনাতে তিনি তা অনবরত চালিয়ে গেলেন। আর তাতে মদীনা বিদ্যুৎ গতিতে ইতিহাসে স্বীয় স্থান দখল করে নিল।

১. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)-কে সাংঘাতিকভাবে অত্যাচার করা ও নিষ্পেষিত করা হয়েছে, তবুও তিনি সে অগ্নিপরীক্ষা থেকে বিজয়ী বেশে সুন্নাহের ইমাম হয়ে বেরিয়ে এলেন।

২. ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে জেলখানায় বন্দী করা হল, পরবর্তীতে তিনি এমনকি আগের চেয়েও আর বেশি সুদক্ষ পণ্ডিত (কামেল আলেম) হয়ে গেলেন।

৩ ইমাম ছারাখছিকে বন্দী করে একটি পরিত্যক্ত কৃপের নিচে রাখা হল, সেখানে তিনি বিশ খণ্ড ইসলামী আইনশাস্ত্র প্রণয়ন করলেন।

৪. ইবনুল আছির পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর হাদীস শাস্ত্রের দুটি প্রসিদ্ধ কিতাব জামেউল উসূল ও নিহায়াহ লিখেছেন।

৫. ইমাম ইবনুল জাওয়ীকে বাগদাদ থেকে নির্বাসন করা হল। তারপর তার ভ্রমণকালে তিনি কুরআনের সাত কেরাআতের প্রসিদ্ধ ইমাম হয়ে গেলেন।

৬ মালেক ইবনে রাইব মৃত্যুশষ্যায় শায়িত অবস্থায় তার প্রসিদ্ধতম ও সুন্দর সুন্দর কবিতাগুলো আবৃত্তি করেছিলেন যেগুলো আজও মূল্যায়িত হয়।

৭. আবু জুয়াইব আল হাজালির ছেলেরা তার সামনেই মারা যাবার কালে তিনি তাদেরকে যে উচ্চ প্রশংসা সমৃদ্ধ কবিতা রচনা করে শুনান তা বিশ্ববাসী শুনে তার যথাযথ মূল্যায়ন করেছে।

তাই যদি আপনি দুর্ভাগ্যগ্রস্ত হন তবে আলোর দিকে তাকান। কেউ যদি আপনাকে লেবু চিপে এক গ্লাস রস দেয় তাতে আপনি এক মুঠো চিনি মিশিয়ে দিন। আর যদি কেউ আপনাকে একটি সাপ উপহার হিসেবে দেয় তবে আপনি এর দামী চামড়াটাকে রেখে বাকি অংশটুকু ফেলে দিন।

وَعَسَىٰ أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ

“আর এটাও হতে পারে যে, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর তাই তোমরা অপছন্দ করছ।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২১৬)

ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্স দু'জন মেধাবী কবিকে বন্দি করে: একজন আশাবাদী ও অন্যজন নিরাশাবাদী। তারা উভয়ই জেলখানার জানালার শিকের ফাক দিয়ে তাদের মাথা বের করেছিলেন। আশাবাদী কবি আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে হেসেছিলেন, যখন কি-না নিরাশাবাদী কবি রাস্তার ময়লার দিকে তাকিয়ে কেঁদেছিলেন। বিষাদময় ঘটনার অপর দিকে তাকান (তাকিয়ে দেখুন যে,) নির্ভেজাল মন্দ-পরিবেশ টিকে না এবং সব অবস্থাতেই একজন আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ, লাভ ও পুরস্কার পেতে পারে।

কে উত্তম আল্লাহ ছাড়া

“(তোমার দেবতাগণ ভালো) নাকি যিনি দুর্দশাগ্রস্তের ডাকে সাড়া দেন তিনি?” (২৭-সূরা আন নামল: আয়াত-৬২)

কার কাছে দুর্বল ও অত্যাচারিতরা বিজয় কামনা করে?

কার নিকট সকলে আকুল আবেদন করে? তিনি আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কারও উপাস্য হওয়ার অধিকার নেই।

অতএব, আমার ও আপনার কর্তব্য হল স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল উভয় অবস্থায়ই তাকে আহবান করা, তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা, দুঃসময়ে তার কাছে আশ্রয় চাওয়া, অনুতপ্ত হয়ে কেঁদে কেটে তার দরবারে আরাধনা করা; তাহলেই তার সাহায্য দ্রুত আসবে।

“(তোমার দেবতাগণ ভালো) না কি যিনি দুর্দশাগ্রস্তের ডাকে সাড়া দেন তিনি?” (২৭-সূরা আন নামল: আয়াত-৬২)

তিনি ডুবন্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করেন, মজলুমকে বিজয় দান করেন, পথহারাকে পথ দেখান, অসুস্থকে সুস্থ করেন, আর দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য যোগান।

“যখন তারা জল জাহাজে (নৌযানে) চড়ে তখন তারা (আল্লাহর) দ্বীনের (ধর্মের) একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে তাকে (আল্লাহকে) বিনীতভাবে ডাকে।" (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৬৫)

মানুষেরা দুর্দশা দূর করার জন্য যেসব আবেদন করে থাকে, আমি আপনাকে তার জন্য সুন্নাহের কিতাবের কথা বলছি। সে সব কিতাবে আপনি নবী প্রদত্ত দোয়া (প্রার্থনা) দেখতে পাবেন (ও শিখে নিবেন), তা দিয়ে আপনি আল্লাহ্‌কে ডাকতে পারবেন, তাঁর নিকট আকুল আবেদন জানাতে পারবেন এবং তার সাহায্য চাইতে পারবেন এবং যদি আপনি তার প্রতি আপনার ঈমান (বিশ্বাস) হারিয়ে ফেলেন তবে আপনি সব কিছু হারালেন। তার নিকট আকুল আবেদন করে আপনি সর্বোচ্চ ইবাদত করছেন। আপনি নিয়মিতভাবে, বিরতিহীনভাবে ও একনিষ্ঠভাবে প্রার্থনা করেন তবে আপনি দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তি লাভ করবেন। তারটা ছাড়া সব রশিই কাটা, তারটা ব্যতীত সকল দ্বারই রুদ্ধ। তিনি নিকটবর্তী, তিনি সবকিছুই শুনতে পান ও যারা তার নিকট আকুল আবেদন করে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন।

ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ

“তোমরা আমাকে ডাক (আমার নিকট আকুল আবেদন কর) তাহলেই আমি তোমাদের আবেদনে সাড়া দিব।" (৪০-সূরা আল মু'মিন: আয়াত-৬০)

যদি আপনি দুঃখ-বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকেন তবে আল্লাহকে স্মরণ করুন, তার তাসবীহ পাঠ করুন ও তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন। সত্যিকার মুক্তি পাওয়ার জন্য সেজদাহ করে তাঁর প্রশংসা জ্ঞাপন করুন। দু'হাত তুলে নাছোড় বান্দা হয়ে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন। তার দরজায় ধরনা ধরুন, তার সম্বন্ধে সুধারণা রাখুন এবং তার সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন তাহলেই আপনি সত্যিকার সুখ ও সাফল্য লাভ করবেন।

আপনার ঘরই আপনার জন্য যথেষ্ট

নিঃসঙ্গতা ও নির্জনতা শব্দদ্বয় আমাদের জীবন বিধানে এক বিশেষ অর্থ বহন করে। আর তা হচ্ছে- কুকাজ ও বোকা লোকদের থেকে দূরে থাকা। যখন আপনি নিজেকে এভাবে নিঃসঙ্গ করে নিবেন তখন আপনি ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা-গবেষণা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির চারণভূমিতে বিচরণ করার অবাধ সুযোগ পাবেন।

যে সব বিষয় (কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, লোকজন ইত্যাদি) আপনাকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে অমনোযোগী করে দেয়, আপনি যখন সেসব বিষয় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন (পৃথক, আলাদা) করে নেন, তখন আপনি এমন এক ঔষধ সেবন করছেন- যা নাকি হার্টের ডাক্তারগণ সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী আরোগ্যকর বলে পেয়েছেন। যখন আপনি নিজেকে নিঃসঙ্গ করে নেন তখন আপনার ব্রেন (মস্তিস্ক) কার্যক্ষম হয় বা মাথা কাজ করতে পারে। ফলে সর্বশক্তিমান, পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলার প্রতি বিশ্বাস (ঈমান), তার নিকট অনুশোচনা, অনুতাপ (তওবা) ও তার স্মরণ (জিকির) বৃদ্ধি পায়।

যা হোক, কতিপয় লোকসমাগম শুধু প্রস্তাবিতই নয়, অধিকন্তু প্রয়োজনীয়ও বটে। যেমন জামায়াতে সালাত, শিক্ষার পরিবেশ-পরিমণ্ডল ও সকল পুণ্যকর্মের মজলিস। যে সব আসরে ছেলেমি ও হাল্কাপনাই বেশি সেসব আসর সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন। এ ধরনের জনসমাগম থেকে দ্রুত সরে পড়ুন, আপনার ভুল কাজের জন্য কান্নাকাটি করুন, নিজের জিহ্বাকে সংযত করুন ও আপনার গৃহের চৌহদির মাঝেই সন্তুষ্ট থাকুন।

বোকা লোকদের সাথে মিশে আপনি আপনার মানসিক ভারসাম্যতাকে বিপদগ্রস্ত করবেন না, বাছ-বিচার না করে আপনি যে লোকদের সাথে মিশবেন তারা খুব সম্ভবত সময় নষ্ট করতে পটু, মিথ্যা কথা বলতে ও গুজব ছড়াতে সিদ্ধহস্ত এবং সমস্যা ও ক্ষতি উভয়টা বিস্তৃত করতে দক্ষ।

“যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো, তবে তারা বিভ্রান্তিই আরো বৃদ্ধি করত আর তোমাদের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য ছুটাছুটি করত।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৭)

আপরার নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নিজেকে সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য ও শক্তিশালী করার জন্য আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি। এ উদ্দেশ্যে আপনি নিজেকে আপনার ঘরে (জনসাধারণ থেকে) আলাদা করে রাখুন। শুধুমাত্র ভালো কথা বলা ও ভালো কাজ করার জন্যই বের হবেন। যখন আপনি এ উপদেশ মান্য করবেন তখন দেখবেন যে, আপনার আত্মা আপনার মাঝে আবার ফিরে আসবে। (নব জীবন লাভ করবেন তথা শান্তির জীবন ফিরে পাবেন। -অনুবাদক) সুতরাং, আপনার সময়ের সদ্ব্যবহার করুন এবং আপনার জীবনকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আপনার জিহ্বাকে গীবত (সমালোচনা) করা থেকে সংযত রাখুন, আপনার মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখুন এবং আপনার কর্ণদ্বয়কে ঈশ্বর, ধর্ম ও পবিত্র বস্তুসমূহের প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ কথাবার্তা হতে সংরক্ষণ (হেফাজত) করুন।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url