আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-০৪ || মধু আহরণ কর কিন্তু মৌচাক ভেঙ্গে নয় || আল্লাহর জিকিরেই আত্মার শান্তি ||






আল্লাহর কাছে আপনার প্রাপ্তি

মহান আল্লাহ যখন আপনার কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেন, তখন যদি আপনি শুধুমাত্র ধৈর্য ধারণ করেন এবং তার কাছ থেকে আপনার পুরস্কার প্রার্থনা করেন, তবে তিনি আপনাকে তার চেয়েও ভালো কোন কিছু দিয়ে ক্ষতিপূরণ করবেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যার দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে অথচ সে ধৈর্য ধরে, তাকে এর বিনিময়ে জান্নাত (বেহেশত) দিয়ে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।”

অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যদি কেহ এ জগত থেকে তার প্রিয় কাউকে হারিয়ে তার প্রভুর নিকট এর প্রতিদান প্রার্থনা (কামনা) করে তবে তাকে জান্নাত দিয়ে এর খেসারত দেয়া হবে।”

অতএব, কোন দুভাগ্যজনক ঘটনার জন্য অত্যন্ত দুঃখবোধ করবেন না। কারণ, যে মহান সত্তা এর হুকুম (আদেশ) দিয়েছেন তার নিকট এর ক্ষতিপূরণ ও এক মহাপুরস্কার জান্নাত রয়েছে।

যারা এ পৃথিবীতে দুর্দশা কবলিত ও আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত তারা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে প্রশংসিত হবে।

“তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক; কেননা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে; চূড়ান্ত গৃহ কতই না চমৎকার।” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-২৪)

কষ্ট সহিষ্ণুতার কারণে কেউ যে পুরস্কার পায় আমাদেরকে অবশ্যই তা গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।

“তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের ওপরেই কল্যাণ (অর্থাৎ তারাই ধন্য এবং তাদেরকে ক্ষমা করা হবে) ও তারাই তার অনুগ্রহ লাভ করে এবং তারাই সঠিকপথ প্রাপ্ত।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৫৭)

বাস্তবিক এ পার্থিব জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত ও এর ধন ভাণ্ডার খুবই নগণ্য। পরকাল উত্তম ও চিরস্থায়ী এবং এ জগতে যে সমস্যা জর্জরিত পরজগতে সে তার পুরস্কার পাবে। এখানে (দুনিয়াতে) যে-ই কঠোর পরিশ্রম করবে সেখানে (আখিরাতে) সে-ই শান্তি পাবে। যারা এ জগতের প্রতি আসক্ত, যারা এর সাথে গভীর সম্পর্ক রাখে, যারা এর প্রেমে পড়েছে, তাদেরকে যে সর্বাপেক্ষা কঠিন ভোগান্তি পোহাতে হবে তা হলো- তারা এ পরকালীন সুখ-সমৃদ্ধ (শান্তি ও সম্পদ) হারাবে। তারা শুধুমাত্র ইহজীবনকেই উপভোগ করতে চায়। তাদের এ কামনার কারণেই তারা এ জগতের মুসিবতকে কঠিন ভাবে। তারা তাদের চারপাশে ইহজীবন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। তারা দুনিয়ার অস্থায়িত্ব ও নগণ্যতা (তুচ্ছতা) দেখতে পায় না। হে দুর্দশা কবলিতরা! যদি আপনারা ধৈর্য ধারণ করেন তবে আপনারা কোন কিছু হারাবেন না; আর আপনারা বুঝতে না পারলেও এতে আপনারা লাভবান হবেন। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির উচিত পরকালের ফলাফলকে ভেবে দেখা- যে ফলাফল ধৈর্যশীলদের জন্য নির্ধারিত।

فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ

“অতঃপর উভয় দলের মাঝে একটি এক দরজাওয়ালা প্রাচীর খাড়া করা হবে। এর ভিতরে রহমত থাকবে আর এর বাইরে থাকবে আযাব (শাস্তি)”। (৫৭ সূরা আল হাদীদ: আয়াত-১৩)

বিশ্বাসই জীবন

ঈমান বা বিশ্বাস এর ধন-ভাণ্ডার হতে যারা রিক্তহস্ত তারাই প্রকৃত অর্থে হতভাগা। তারা সর্বদাই দুর্দশাগ্রস্ত ও ক্রুদ্ধ।

وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا

যে লোক আমার স্মারক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় (যে এ কুরআনে বিশ্বাসও করে না এবং কুরআনের বিধানানুযায়ী আমলও করে না) তার জন্য এক কষ্টদায়ক জীবন রয়েছে আর আখিরাতে আমি তাকে অন্ধ করে তুলব। (২০-সূরা ত্বাহা: আয়াত ১২৪)

আত্মাকে পবিত্র করার, উদ্বিগ্নতা ও দুশ্চিন্তা দূর করার একমাত্র উপায় হল সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর উপর পুরোপুরি ঈমান রাখা। প্রকৃতপক্ষে, যখন কারো ঈমান থাকে না তখন জীবনে কোন প্রকৃত অর্থ থাকতে পারে না।

একজন পাকা নাস্তিক যদি সে ঈমান না আনে তবে সে সর্বাপেক্ষা ভালো যে কাজটি করতে পারে তা হলো- সে আত্মহনন করতে পারে। এমনটি করে কমপক্ষে সে যে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও হতভাগা জীবন-যাপন করছে তার থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে। ঈমানহীন জীবন কতই না হীন ও তুচ্ছ!

আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনকারীদের জীবন কতইনা চিরন্তনভাবে অভিশপ্ত!

“(হেদায়েত পথ হতে) আমি তাদের মনোভাবের (তাদের দৃষ্টিভঙ্গির) তেমনি পরিবর্তন করে দিব যেমনি তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি (তথা ঈমান আনেনি) এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে দিব।” (৬-সূরা আল আন’আম : আয়াত-১১০)

আল্লাহ ছাড়া কারো উপাস্য হওয়ার অধিকার নেই। এ প্রশ্নাতীত ঈমান (বিশ্বাস) রাখার সময় কি পৃথিবীতে আসেনি? মূর্তিতে বিশ্বাস যে হাস্যকর, নাস্তিকতা যে অযৌক্তিক, নবীগণ যে সত্যবাদী ছিলেন এবং আকাশসমূহ ও পৃথিবীর মালিকানা যে একমাত্র আল্লাহরই শত শত বছর অভিজ্ঞতার পরেও কি মানবজাতিকে এ বাস্তবতার দিকে পরিচালিত হওয়া উচিত নয়? সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য এবং তিনি সবকিছুর ওপরই ক্ষমতাবান।

আপনার ঈমানের সবলতা বা দুর্বলতা ও দৃঢ়তা বা কোমলতার স্তর অনুপাতেই আপনি সুখী হবেন।

“খাটি ঈমানদার হয়ে তোমাদের মধ্য থেকে যে পুরুষ বা নারী নেক আমল সম্পাদন করে অবশ্যই তাকে আমি একটি পবিত্র জীবন দান করব। (অর্থাৎ এ দুনিয়ার সম্মান, পরিতৃপ্তি ও হালাল রিযিক দিব) এবং তারা যে উত্তম কাজ করত তদনুপাতে আমি তাদেরকে অবশ্যই পুরস্কার দিব।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-৯৭)

এ আয়াতে ‘পবিত্র জীবন’ বলতে আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও একটি অবিচল হৃদয় যা তাকে ভালোবাসে এর কথা বলা হচ্ছে। যে লোকেরা এ ‘পবিত্র জীবন’ যাপন করে তারা যখন সমস্যা কবলিত হয় তখন তাদের স্নায়ু (মন) শান্তও থাকে বটে। তাদের ওপর আপতিত সব কিছুর প্রতিই তারা সন্তুষ্ট থাকবে। কেননা, (তারা নিশ্চিত জানে যে) এটা তাদের জন্য (ভাগ্যে) লিখা ছিল। আরো এ কারণে যে, আল্লাহকে তারা তাদের প্রভু হিসেবে, ইসলামকে তাদের জীবন বিধান হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের নবী ও রাসূল হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছে।

মধু আহরণ কর কিন্তু মৌচাক ভেঙ্গে নয়

যাতে সৌম্যতা ও ভদ্রতা আছে তাই সুন্দর- আর যাতে তা নেই তাই খারাপ। কারো সাথে সাক্ষাৎকালে যখন আপনি সুন্দর হাসি দিবেন, একটি কোমল কথা বলবেন তখন আপনি একজন সত্যিকার সফল ব্যক্তির চরিত্র প্রদর্শন করবেন যে চরিত্র না কি একটি মৌমাছিও দেখায়।

যখন কোন মৌমাছি (ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে অর্থাৎ প্রয়োজনে) কোন ফুলে বসে তখন সে এটাকে ধ্বংস (নষ্ট) করে না, কেননা, আল্লাহ তা’আলা কোমলতার বদৌলতে যা দান করেন কঠোরতার বিনিময়ে তা দান করেন না। কিছু লোক আছেন যাদের ব্যক্তিত্ব চুম্বকের মতো আশেপাশের লোকদেরকে আকর্ষণ করে, শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা তাদের কোমল ও ভদ্র কথা, তাদের ভালো ব্যবহার এবং তাদের মহৎ কাজের জন্য তারা (ঐ লোকদের) ভালোবাসার পাত্র হন।

অন্যের বন্ধুত্বকে জয় করে নেয়ার কৌশল মহান ও ধাৰ্মিকগণ জানেন; সর্বদা একদল লোক তাদেরকে ঘিরে থাকে। কোন সমাবেশে শুধুমাত্র তাদের উপস্থিতিটাই আশীর্বাদ, তারা অনুপস্থিত থাকলে তাদের অভাববোধ করা হয় এবং তাদের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়।

এ ধন্য লোকদের একটি আচরণ সংহিতা আছে আর তা হল

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

“খারাপকে ভালো দিয়ে প্রতিহত কর, তাহলে তোমার আর যার মাঝে শক্ৰতা আছে সে এমন হয়ে যাবে যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহ: আয়াত-৩৪)

(মন্দকে ভালো দ্বারা দূর করা বলতে বুঝায় যে, আল্লাহ তা'আলা বিশ্বস্ত ঈমানদারদেরকে ক্রোধের সময় ধৈর্য ধারণ করতে এবং তাদের সাথে যারা মন্দ আচরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে আদেশ করেছেন।)

তারা তাদের সততা, ক্ষমা ও ভদ্রতা দিয়ে অন্যের ভিতর থেকে হিংসাকে বের করে ফেলেন। তাদের সাথে যে মন্দ আচরণ করা হয়েছে তারা তা ভুলে যান আর যে দয়া তারা পেয়েছেন তারা শুধু তাই মনে রাখেন। তাদেরকে কটু ও রুক্ষ কথা বলা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু তারা তা শুনেন না, বরং চিরতরে পিছনে না ফিরে তারা তাদের পথে অনবরত সামনে চলতে থাকেন। তারা শান্ত ও সৌম্য অবস্থায় থাকেন। সাধারণ জনগণ বিশেষ করে মুসলমানগণ তাদের হাত থেকে নিরাপদ থাকেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ، وَالْمُؤْمِنُ : مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ

“প্রকৃত মুসলিম সে যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকেন। আর প্রকৃত মু’মিন সে যাকে অন্য মানুষেরা তাদের রক্ত (জীবন) ও সম্পদের ব্যাপারে বিশ্বাস করে।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-

إن الله أَمرني أَنْ أَصِلَ مَنْ قَطَعَنِي وَأَنْ أَعْفُوَ عَمَّنْ ظَلَمَنِي وَأَنْ أُعْطِيَ مَنْ حَرَمَنِي

“যারা আমার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার জন্য, যারা আমার সাথে অন্যায় আচরণ করেছে বা আমাকে অত্যাচার করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে এবং যারা আমাকে বঞ্চিত করেছে তাদেরকে দান করতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন।”

“নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন- (বিশেষত তাদেরকে) যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৩৪)

এ ধরনের লোকদেরকে এ পৃথিবীতে শান্তি ও প্রশান্তির এক আসন্ন পুরস্কারের ঘোষণা দিন। পরকালে জান্নাতে তাদের ক্ষমাশীল প্রভুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকার এক মহা সুসংবাদও তাদেরকে দিন।

আল্লাহর জিকিরেই আত্মার শান্তি


أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির করেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত ২৮)

সততা আল্লাহর প্রিয় এবং আত্মাকে পরিষ্কার করার সাবান। আর আল্লাহর জিকির ছাড়া এমন কোন কাজ নেই যা আত্মাকে এমন শান্তি দিতে পারে যার পুরস্কার এর চেয়ে বেশি।

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ

“অতএব আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।" (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৫২)

আল্লাহর জিকির (স্মরণ)-ই দুনিয়াতে তার বেহেশত। আর এতে যে প্রবেশ করেনি সে আখেরাতের বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। জিকির শুধুমাত্র এ পৃথিবীর সমস্যা ও উদ্বিগ্নতা থেকে এক নিরাপদ স্বৰ্গই নয়; অধিকন্তু, চূড়ান্ত সাফল্য লাভের এক সংক্ষিপ্ত ও সহজ পথও বটে। আল্লাহর জিকির সম্বন্ধে বিভিন্ন আয়াত পড়ে দেখুন তাহলেই আপনি এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন।

যখন আপনি আল্লাহর জিকির করবেন তখন দুশ্চিন্তা ও ভয়ের কালো মেঘ দূরীভূত হয়ে যাবে ও আপনার সমস্যার পাহাড় সরে যাবে।

যারা আল্লাহর জিকির করেন তারা শান্তিতে আছেন বা থাকেন- একথা শুনে আমাদের আশ্চর্য হওয়া উচিত নয়। যা সত্যিই আশ্চর্য তা হল অবহেলাকারীরা ও অমনোযোগীরা তাকে স্মরণ না করে কীভাবে বেঁচে থাকে।

“তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব আর তারা জানেনা কখন তাদেরকে পুনরুথিত করা হবে।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-২১)

ওহে! যে নাকি বিনিদ্র রজনীর অভিযোগ করে ও তার দুর্দশার ভয়ে আতঙ্কগ্ৰস্ত, তার পবিত্র নাম ধরে ডাকুন।

هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا

“তার মতো কারো কথা কি তোমরা জান?” (১৯-সূরা মারইয়াম: আয়াত-৬৫)

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

তার মতো কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা। (৪২-সূরা শুরা: আয়াত-১১)

তুমি আল্লাহকে যে পরিমাণ স্মরণ করবে, তোমার আত্মা সে পরিমাণই শান্ত ও সন্তুষ্ট হবে। তার জিকিরের অর্থই হলো তার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা, সাহায্যের জন্য তার মুখাপেক্ষী হওয়া, তার সম্বন্ধে সুধারণা পোষণ করা এবং তার পক্ষ থেকে বিজয়ের অপেক্ষায় থাকা। সত্যিই যখন তার কাছে আবেদন করা হয় তখন তিনি নিকটেই থাকেন; যখন তাকে ডাকা হয় তিনি তখন শুনতে পান ও তার নিকট আকুল আবেদন করা হলে তিনি সাড়া দেন। তাই তার সামনে নিজেকে বিনীত কর ও একনিষ্ঠভাবে তার সাহায্য প্রার্থনা কর। বারবার তার কল্যাণময় (বরকতময়) নামের তাসবীহ পাঠ কর ও তার একমাত্র উপাস্য হওয়ার কথা উল্লেখ কর। তার প্রশংসা কর, তার নিকট কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা কর ও তার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাও, তাহলেই ইনশাআল্লাহ (আল্লাহ চাহে তো) তুমি সুখ, শান্তি ও অন্তরে আলোকস্ফুরণ পাবে।

فَآتَاهُمُ اللَّهُ ثَوَابَ الدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ الْآخِرَةِ

“তাই আল্লাহ তাদেরকে এ জগতের পুরস্কার ও পরকালের চমৎকার পুরস্কার দান করলেন।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৪৮)

হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে


أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَىٰ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ

“নাকি আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষদেরকে যা দান করেছেন সে বিষয়ে তারা তাদেরকে হিংসা করে।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-৫৪)

হিংসা এমন এক ব্যাধি যা শুধুমাত্র মনেরই নয় দেহেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বলা হয় যে, হিংসুক লোকের কোন বিশ্রাম (ঘুম) নেই ও সে বন্ধুর লেবাসে একজন শক্র । হিংসারোগ সম্বন্ধে ঠিকই বলা হয় যে, এটা কম পক্ষে একটা ভয়; কেননা, এটা হিংসুককেই প্রথমে হত্যা করে (অর্থাৎ হিংসা হিংসুককে তিলে তিলে ধ্বংস করে। -অনুবাদক) আমি আমাকে ও আপনাকে উভয়কেই হিংসা করতে নিষেধ করছি; কেননা অন্যদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার পূর্বে আমাদেরকে অবশ্যই প্রথমে নিজেদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে হবে। অন্যের প্রতি হিংসা করে আমাদের রক্তে মাংসে গড়া দেহখানাকে দুর্দশাগ্রস্ত করছি ও আমাদের গভীর ঘুমকে নষ্ট করছি। হিংসুক ব্যক্তি (যেন) আগুন জ্বালিয়ে সে আগুনে নিজেই বাপ দেয়। হিংসা দুঃখ-বেদনা ও ভোগান্তি এনে এক সময়ের শান্তিপূর্ণ ও পূর্ণময় জীবনকে ধ্বংস সাধন করে।

হিংসুক ব্যক্তির অভিশাপ এই যে, সে ভাগ্যকে অস্বীকার করে এবং তার সষ্টাকে অবিবেচক মনে করে।

হিংসা কোন রোগের মতো? এটাতো অন্যান্য রোগের মতো নয়। হিংসুক ব্যক্তি এ রোগের কারণে পরকালে কোন পুরস্কার পাবে না। (অথচ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের রোগ ভোগ ও তাতে ধৈর্য ধরার কারণে পরকালে পুরস্কার পাবে। -অনুবাদক)

হিংসুক ব্যক্তি তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বা অন্যদের সৌভাগ্য তাদের থেকে বিদায় না নেয়া পর্যন্ত প্রচণ্ড ক্রোধে জ্বলে পুড়ে শেষ হতে থাকবে। হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সকলের সাথেই মীমাংসা করা সম্ভব। কেননা, তার সাথে মীমাংসার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো- আপনি আপনার থেকে আল্লাহর সব কল্যাণ ও করুণা দূর করবেন বা আপনার সকল প্রতিভা ও সদগুণ পরিত্যাগ করবেন। যদি আপনি এরূপ করেন তবে হয়তোবা সে সুখী হবে। আল্লাহর নিকট আমরা হিংসুকের ক্ষতি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি। হিংসুক এমন এক বিষধর কালো সাপের মতো হয়ে যায়- যে সাপ একটি নির্দোষ দেহে এর বিষ ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত কোন বিশ্রাম পায় না।

সুতরাং হিংসা থেকে বহু দূরে থাকুন এবং হিংসুক লোক থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন। কেননা, সে সর্বদা আপনাকে সতর্কভাবে লক্ষ্য করছে।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url