আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-০৬) || তুচ্ছ কারণে ভেঙ্গে পড়বেন না || আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকুন ||




নিজেকে হালকা রাখুন, গোটা পৃথিবীর দায়িত্ব আপনার নয়


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

গোটা পৃথিবীর বোঝা নিজের ঘাড়ে নিবেন না

কিছু লোকের মাঝে আভ্যন্তরীণ যুদ্ধের এক তুলকালাম কাণ্ড ঘটতে থাকে, এ যুদ্ধ যুদ্ধের ময়দানে হয় না বরং তাদের শোয়ার ঘরে, অফিসে ও বাড়িতে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের ফলে তাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার বা হাইব্লাড প্রেসার দেখা দেয়।

সবকিছুতেই এসব লোক হতাশ হয়ে পড়ে। মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে এরা রাগান্বিত হয়ে যায়। বৃষ্টি হতে দেরি হলে অগ্নিশৰ্মা হয়ে উঠে, আর যখন তাদের মুদ্রার মানহ্রাস পেয়ে যায় তখন তারা অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। কারণ যাই হোক না কেন তারা সর্বদাই অস্থির, উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত।

يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ

“তারা যে কোন শোরগোলকে তাদেরই বিরুদ্ধে মনে করে।” (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূন: আয়াত-৪) আপনার প্রতি আমার পরামর্শ হল, গোটা বিশ্বের বোঝা নিজের ঘাড়ে নিবেন না। যা কিছু ঘটে তার বোঝা ভূমিকেই বহন করতে দিন। কিছু লোকের আত্মা সব ধরনের ধোকা, প্রতারণা ও ভ্রান্ত ধারণাকে স্থান দেয়; ফলে সর্বাপেক্ষা তুচ্ছ বিষয়েও সে কষ্ট পায়; এটা এমন আত্মা, যা তার অধিকারীকে ধ্বংস করবেই।

সুনীতিবান ও সৎপথে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ সঙ্কটে বিচলিত হয় না; বরং সঙ্কট তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ও ঈমানকে আরো শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। কিন্তু দুর্বলচিত্তদের জন্য বিপরীত অবস্থাটাই সত্য। যখন তারা প্রতিকূল অবস্থা ও সঙ্কটের কবলে পড়ে, তখন শুধু তাদের ভয়ের মাত্রাই বৃদ্ধি পায়। বিপর্যয়ের সময় আপনার জন্য একটি সাহসী আত্মার চেয়ে বেশি উপকারী আর কোন কিছুই নেই। যার এমন আত্মা আছে সেই প্রশান্তমনা- তার দৃঢ় বিশ্বাস ও শীতল স্নায়ু (প্রশান্ত মন ও ঠাণ্ডা মাথা) আছে।

অপরপক্ষে কাপুরুষ ও ভীতরা কোন নির্দিষ্ট দিনের আসন্ন বিপদের আশঙ্কা ও পূর্বানুভূতিতে নিজেদেরকে কয়েক দফা জবাই করে। তাই, আপনি যদি আপনার জন্য একটি সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন আশা করেন তবে সকল অবস্থাকে সাহস ও অধ্যবসায়ের সাথে মুকাবেলা করুন।

وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ

“আর এবং যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত না করে।” (৩০-সূরা আর রূম: আয়াত-৬০)

وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِمَّا يَمْكُرُونَ

“তাদের ষড়যন্ত্রে আপনি মনঃক্ষুন্ন হবেন না।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-১২৭)

আপনার পরিবেশের চেয়েও বেশি দৃঢ় প্রত্যয়ী হোন এবং দুর্বিপাকের ঝঞা বায়ুর চেয়েও বেশি হিংস্র হোন। দুর্বলচিত্তধারীদেরকে আল্লাহ করুণা করুন। কেননা, এমন কতই না ঘটে যে, তারা সামান্যতম ভূ-কম্পনেও বিচলিত হয়ে যায়।

“আর অবশ্যই আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সব মানুষের চেয়ে বেশি লোভী দেখতে পাবেন।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৯৬)

দৃঢ় প্রত্যয়ীদের সম্বন্ধে বলছি যে, তারা তাদের প্রতিপালকের সাহায্যপ্রাপ্ত হন ও তারা তার প্রতিশ্রুতির সম্বন্ধে দৃঢ় প্রত্যয়ী।

“তিনি তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন।” (৪৮-সূরা আল ফাত্হ: আয়াত-১৮)

তুচ্ছ কারণে ভেঙ্গে পড়বেন না

অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চাপে নয় বরং অতি তুচ্ছ ব্যাপারে অল্পতেই ভেঙ্গে পড়েন। মুনাফিকদের বিষয়টা একটু ভেবে দেখুন- তারা তাদের সংকল্পে কতই না দুর্বল! আল কুরআন তাদের কিছু কথা আমাদের নিকট বর্ণনা করছে:

“যারা (তাবুকের যুদ্ধ থেকে) পিছনে থেকে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের (বিরুদ্ধাচরণ করে) পিছনে বসে থাকাতেই আনন্দবোধ করল এবং তারা তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল: গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৮১)

“আমাকে (যুদ্ধ হতে) অব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৯)

“আর তাদের একদল নবীর নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, আমাদের ঘর-বাড়িগুলো সত্যিই অরক্ষিত’। আসলে সেগুলো অরক্ষিত ছিল না। আসলে তারা পালাতেই চেয়েছিল।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-১৩)

نَخْشَىٰ أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ

“আমাদের আশঙ্কা হয় যে, আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।” (৫-সূরা মায়িদা: আয়াত-৫২)

“আর (তখনকার কথা স্মরণ করুন, যখন) মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি তারা বলছিল; ‘আল্লাহ ও তার রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-১২)

এমন লোকদের আত্মা কতই না হতভাগা!

পেট পূজা, গাড়ি-বাড়ি, দালান-কোঠাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারা আদৌও কখনো একবারের জন্যেও আদর্শ ও পুণ্যবান লোকদের জীবনাদর্শের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েও দেখেনি। তাদের জ্ঞানের পরিধি হল দামী দামী গাড়ি, পোশাক, জুতা ও খাবার, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, সন্তান বা আত্মীয়ের সাথে মনোমালিন্য, সমালোচনা বা তিরস্কার হজম করতে বাধ্য হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোন সামান্য কারণে অনেকে দিন-রাত মর্মপীড়ায় ভোগেন বা মৰ্মপীড়াগ্রস্ত থাকেন। এমন সব বিষয়ই হল এসব লোকদের দুর্দশা, দুর্বিপাক বা মুসিবত। তাদের এমন কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, যা তাদেরকে ব্যস্ত রাখবে, তাদের জীবনে এমন কোন মহৎ আকাঙ্ক্ষাও নেই, যা অর্জনের জন্য তারা দিন-রাত চেষ্টা করবে।

প্রবাদ আছে, যখন কোন পাত্র পানি শূন্য হয় তখন তা বায়ুপূর্ণ হয়। তাই যে বিষয় আপনাকে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছে, তা নিয়ে একটু ভেবে দেখুন ও নিজেকে প্রশ্ন করুন। এটা কি আপনার শক্তি নষ্ট করার ও আপনাকে কষ্টে ফেলার যোগ্যতা রাখে? এটা এক অপরিহার্য প্রশ্ন। কেননা, এটা যাই হোক না কেন- এটা আপনার উদ্বিগ্নতার কারণ। আপনার শরীর রক্ত-মাংসে গড়া। এ বিষয়টির জন্য শক্তি ও সময়ের অপচয় করছেন। যদি এটা (যে বিষয়টি আপনাকে উদ্বিগ্ন করছে তা) আপনার শক্তি ও সময় নষ্ট করার যোগ্যতা না রাখে তবে (এ নিয়ে ভেবে ভেবে) আপনি আপনার সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সময়, জীবন, যৌবন ও ধন-সম্পদের এক বিশাল অংশ অপব্যয় করে ফেলবেন।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আপনাকে প্রতিটি জিনিসের যথাযথ মূল্যানুপাতে বিচার করতে হবে ও তাকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। এর চেয়ে আরো বেশি সত্য হল মহান আল্লাহর বাণী-

قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

“অবশ্যই আল্লাহই প্রতিটি জিনিসের জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” (৬৫-সূরা আত তালাক: আয়াত-৩)

অতএব, প্রতিটি অবস্থাকে তার আকার, ওজন, পরিমাণ ও গুরুত্ব অনুসারে বিবেচনা করুন এবং অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি থেকে বেঁচে থাকুন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিন। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল গাছের নিচে বাইয়াত হয়ে (আনুগত্যের অঙ্গীকার করে) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাদের সাথে এমন এক লোক ছিল, যার লক্ষ্য ছিল একটি হারানো উট আর এ চিন্তার বশীভূত হয়েই সে বাইয়াত থেকে বঞ্চিত থাকল। ফলে, অন্যেরা যে পুরস্কার পেল তা থেকেও সে বঞ্চিত থাকল।

সুতরাং, নগণ্য বিষয়ের চিন্তায় বিভোর হবেন না। যদি আপনি এ পরামর্শ মানেন তবে দেখবেন যে, আপনার অধিকাংশ দুশ্চিন্তাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।

আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকুন 

সম্পদ, চেহারা, সন্তানাদি, গৃহ ও মেধা আপনার ভাগে যা আছে তাতে আপনাকে অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

“সুতরাং, আমি আপনাকে যা দান করেছি তা গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞ হোন।” (৭-সূরা আল আরাফ: আয়াত-১৪৪)

ইসলামের প্রাথমিক যুগের অধিকাংশ আলেম ও ধাৰ্মিক মুসলিমগণ দরিদ্র ছিলেন; তাই তো একথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, তাদের সুন্দর সুন্দর বাড়ি ঘর বা গাড়ি ঘোড়া ছিল না। এমন অসুবিধা সত্ত্বেও তারা সফল জীবন যাপন করেছিলেন। কোন যাদু দিয়ে নয় বরং তাদের যা দান করা হয়েছিল তার যথাযথ প্রয়োগ করে, তাদের সময়কে সঠিক পথে ব্যয় করে তারা মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেছিলেন। এ কারণে তাদের জীবন, তাদের সময় ও তাদের মেধা বরকতময় ও কল্যাণকর হয়েছিল।

অপরপক্ষে, কিছু লোক আছে, যাদেরকে সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও সব ধরনের নেয়ামত দ্বারা ভূষিত করা হয়েছে। আবার এ নেয়ামতসমূহই তাদের দুর্দশা ও ধ্বংসের কারণ হয়েছে। তারা তাদের সহজাত প্রকৃতি যা বলত, তা থেকে অর্থাৎ একমাত্র পার্থিব জিনিসই যে সবকিছু নয়-এ কথা থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল। যারা বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে বহু উপাধি অর্জন করা সত্ত্বেও অখ্যাতির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে আছে, তাদের দিকে লক্ষ্য করুন। তাদের মেধা ও ক্ষমতা অকেজোই থাকছে। যখন নাকি অন্যরা যাদের জ্ঞান সীমিত— তাদের যা দান করা হয়েছে তা দিয়েই তাদের নিজেদের ও সমাজের উভয়ের পাহাড়সম উপকার করতে পেরেছেন।

আপনি সুখ সন্ধানী হয়ে থাকলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যে চেহারা সুরত দিয়েছেন, তাতে আপনার পারিবারিক অবস্থাতে, আপনার কণ্ঠস্বরে, আপনার বুঝ শক্তির স্তরে ও আপনার বেতনের পরিমাণের উপর পরিতৃপ্ত থাকুন। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে আপনার যা আছে তার চেয়েও কমের উপরও (বা তার চেয়ে কম নিয়েও) নিজেকে পরিতৃপ্ত মনে করা উচিত।

আমাদের পূর্ববতী যে সব মুসলিমগণ বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে জীবনে উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন তার একটি তালিকা নিম্নে আপনাদের দেয়া হল:

আতা ইবনে রাবাহ: তিনি তার সময়ে জগদ্বিখ্যাত একজন আলেম ছিলেন। তিনি শুধু মুক্ত ক্রীতদাস ও নাকবোচাই ছিলেন না, অধিকন্তু পক্ষাঘাতগ্রস্তও ছিলেন।

আল আহনাফ ইবনে ক্বাইছ : তিনি আরবদের মাঝে তার অনন্য ধৈর্যের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলেন। শীর্ণ, কুজো, পঙ্গু (খোড়া) ও দুর্বল-ভঙ্গুর দেহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঐ সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

আল আ-মাশ : তিনি তার সময়ের একজন অতি প্রসিদ্ধ হাদীস শাস্ত্রবিদ ছিলেন। তিনি এক আজাদ ক্রীতদাস ছিলেন। তার দৃষ্টিশক্তি ভালো ছিল না। তিনি ছিলেন দরিদ্র। তার পোশাক ছিল ছেড়া-ফাটা। তার বেশভূষা ছিল আলুথালু এবং তিনি দরিদ্র জীবন যাপন করতেন।

প্রত্যেক নবীই (আঃ) কোন না কোন সময় রাখাল ছিলেন। দাউদ (আঃ) কামার ছিলেন, যাকারিয়া (আঃ) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন ও ইদ্রীস (আঃ) দর্জি ছিলেন; তবুও তারা শ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন।

অতএব, আপনার দক্ষতা, সৎকাজ, আচার-আচরণ ও সমাজের প্রতি অবদানের ওপর আপনার মূল্য নির্ভর করে। তাই রূপ-লাবণ্য, সম্পদ বা পরিবার যাই আপনার জীবনে হারিয়েছেন তার জন্য দুঃখ করবেন না এবং আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালা যা বরাদ্দ করেছেন, তাতে পরিতুষ্ট থাকুন।

نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا

আমিই এ জগতে তাদের মাঝে তাদের জীবিকা বণ্টন করি। (৪৩-সূরা আয যুখরুফ: আয়াত ৩২)

জান্নাতের কথা স্মরণ করুন


এ পৃথিবীতে আপনি যদি ক্ষুধার্ত, দুঃখিত, রুগ্ন ও অত্যাচারিত হন, তবে চিরস্থায়ী পরম স্বৰ্গসুখের কথা স্মরণ করুন। আপনি যদি এমনটি ভাবেন তবে আপনার লোকসান সত্যি সত্যিই লাভে পরিণত হবে ও আপনার দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন সত্যিই উপহারে পরিণত হবে।

পরকালের জন্য যারা আমল করে তারাই বিজ্ঞতম (সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী) ব্যক্তি। কেননা, পরকাল (আখেরাত) দুনিয়ার তুলনায় উত্তম ও চিরস্থায়ী। সবচেয়ে বোকা লোক তারাই যারা দুনিয়াকে প্রাধান্য দিবে তাদের চিরস্থায়ী আবাসস্থল মনে করে। এতেই তাদের সব আশা-ভরসা। এরা যখন দুর্বিপাকে পড়ে তখন আপনি এদেরকে সবচেয়ে বেশি দুঃখিত দেখতে পাবেন। পার্থিব ক্ষতির কারণে তারা সবচেয়ে বেশি বিচলিত হয় শুধু এ কারণে যে, তারা যে তুচ্ছ জীবনযাপন করে-এর বাইরে তারা কোন কিছুই দেখতে পায় না। তারা শুধু এই অস্থায়ী জীবনটাই দেখে ও শুধু এর কথাই ভাবে। তারা চায় না যে, কোন কিছু তাদের পরম সুখকে মাটি করে দিক। যদি তাদের চোখ থেকে মূর্খতার পর্দা সরানো হত তবে তারা চিরস্থায়ী আবাস, এর নেয়ামত, আনন্দ ও প্রাসাদসমূহের সাথে একাত্ববোধ করত ও কুরআন সুন্নাহের মাধ্যমে তাদেরকে আখেরাত সম্বন্ধে অবহিত করা হলে তারা তা মনোযোগ সহকারে শ্ৰবণ করত।

বাস্তবিকই, আমাদের উচিত আখেরাতের বাড়ির প্রতি মনোনিবেশ করা। ঐ বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবীর করা, যাতে আমরা এর সর্বোত্তমটি (জান্নাতুল ফেরদাউস) অর্জন করতে পারি। বেহেশতবাসীদের বর্ণনা সম্বন্ধে আমরা কি বিস্তারিতভাবে চিন্তাভাবনা করে দেখেছি? তারা অসুস্থ হবে না, দুঃখ তাদের কাছেও ঘেঁষবে না, তারা মরবে না, তারা চিরকুমার থাকবে এবং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ থাকবে উত্তম, নিখুঁত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তারা সুন্দর গৃহে অবস্থান করবে। জান্নাতে এমন জিনিস পাওয়া যাবে, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং মানব মন কখনো যার কল্পনাও করেনি। আরোহী ব্যক্তি একশত বছর একটি গাছের নিচে ভ্রমণ করেও এর শেষ সীমায় পৌছতে পারবে না। বেহেশতে একটি তাবুর দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। জান্নাতের নদীগুলো সদা প্রবাহিত, এর প্রাসাদগুলো বিশাল বিশাল এবং এর ফলগুলো শুধুমাত্র হাতের নাগালের মধ্যেই নয়; অধিকন্তু, অতি সহজেই তোলা যাবে (মন চাওয়া মাত্রই হাতে চলে আসবে। -অনুবাদক)

“সেখানে (বেহেশতে) প্রবাহমান ঝর্ণা থাকবে। সুউচ্চ আসন থাকবে। আর থাকবে হাতের কাছে প্রস্তুত পান পাত্র, সারি সারি গদি ও বিছানো গালিচা।” (৮৮-সূরা আল গাশিয়াহ: আয়াত-১২-১৬)

জান্নাতের সুখ হবে অসীম। তবে কেন আমরা বিষয়টিকে গভীরভাবে ভেবে দেখছি না? স্বৰ্গই যদি আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হয় আর আমরা যদি আল্লাহর নিকট বেহেশতই চেয়ে থাকি-তবে এ দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট যতটা দুৰ্বহ মনে হয় তার চেয়ে অনেক কম ভারী মনে হওয়ার কথা। অতএব, (এমনটি ভেবে) দুর্দশাগ্রস্তদের আত্মা শান্তি পাক।

ওহে, আপনারা যারা এ দরিদ্র জীবন যাপন করছেন বা দুর্বিপাকে পতিত সৎকর্ম (নেক আমল) করুন, তাহলেই আপনারা আল্লাহর জান্নাতে বাস করতে পারবেন।

سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, কেননা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে। চূড়ান্তগৃহ বাস্তবিক কতই না উত্তম!” (১৩-সূরা রা’আদ: আয়াত-২৪)


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url