আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-০৮) || একটু ভাবুন ব্যথা শুধু আপনার কষ্টের কারণ নয়, আছে শিক্ষা এবং কল্যাণ || ব্যথার দান ||





এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

হাসুন এবং একটু ভাবুন 

গতকাল যখন আপনি বিষন্নতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, তখন আপনার দুঃখিত হওয়ার কারণে আপনার অবস্থা একটুও ভালো হয়নি। আপনার ছেলে পরীক্ষায় ফেল করেছে আর আপনি বিষন্ন হয়ে গেছেন। তবুও কি আপনার বিষন্নতা সে যে ফেল করেছে- এ সত্য কথা বদলে দিতে পেরেছে? আপনার পিতা মারা গেছেন আর আপনি ভগ্ন হৃদয় হয়ে গেছেন। তবুও কি তা (আপনার মনমরা ভাব) তার জীবন ফিরিয়ে দিতে পেরেছে? আপনার ব্যবসাতে লোকসান হয়েছে আর আপনি বিষগ্ন হয়ে আছেন। আপনার বিষণ্ণতা কি আপনার লোকসানকে লাভে পরিণত করে আপনার অবস্থাকে পরিবর্তিত করে দিয়েছে?

বিষন্ন হবেন না: কোন দুর্যোগের কারণে আপনি মনমরা হয়ে গেলেন। এমনটি করে আপনি অতিরিক্ত দুর্বিপাকের সৃষ্টি করলেন। আপনি দরিদ্রতার কারণে হতাশ হয়ে গেলেন আর এতে শুধু আপনার অবস্থার তিক্ততাই বাড়বে। আপনাকে লক্ষ্য করে আপনার শক্ররা যা বলেছে, তাতে আপনি বেজার হয়ে গেলেন। এই মানসিক অবস্থায় পৌছে আপনি অজ্ঞাতভাবে আপনাকে আক্রমণ করার জন্য তাদেরকে সাহায্য করলেন। একটি বিশেষ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করার কারণে আপনি গোমরামুখ হয়ে গেলেন, অথচ কখনও তা নাও ঘটতে পারে।

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না : সত্যি বলতে কি, একটি বিশাল অট্টালিকা আপনাকে হতাশার কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না। এমনকি একজন সুন্দরী স্ত্রীও না, প্রচুর সম্পদও না এবং মেধাবী সন্তান-সন্ততিরাও না।

দুঃখিত হবেন না : বিষন্নতা ও হতাশার কারণে আপনি বিশুদ্ধ পানিকে বিষ, গোলাপকে ফনীমনসা, বিলাসবহুল বাগানকে উষর মরুভূমি এবং বিশাল পৃথিবীতে বাস করা সত্ত্বেও আপনি এক দুঃসহ জেলখানায় আছেন ভাবতে বাধ্য হবেন।

হতাশ হবেন না : আপনার দু'টি কান, দুটি চোখ, দুটি হাত, দুটি পা, একটি জিহ্বা, একটি হৃদয়, শান্তি, নিরাপত্তা ও একটি স্বাস্থ্যবান শরীর আছে।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

“অতএব, হে জ্বীন ও ইনসান জাতি, তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?” (৫৫-সূরা আর রাহমান: আয়াত-১৩)

ব্যথিত হবেন না: নির্ভর করার মতো আপনার একটি ধর্ম আছে। বসত বাড়ি, খাদ্য পানীয়, পোশাক ও যার কাছে সান্ত্বনা পাবেন এমন একজন স্ত্রী আছে, তবে কেন বিষন্নতা?

ব্যথার দান 

দুঃখ-বেদনা সর্বদাই ঋণাত্মক শক্তি নয় এবং এমন কিছু নয় যাকে সর্বদা আপনার ঘূণা করা উচিত। কখনো কখনো মানুষ ব্যথাবোধ করে উপকৃত হয়।

আপনি স্মরণ করতে পারেন যে, কখনও কখনও আপনি দুঃখবোধ করলে আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছেন ও তাকে স্মরণ করেছেন। ছাত্র থাকাকালে প্রায়ই বিরাট বোঝার বেদনা (আতঙ্ক) বোধ করে। মাঝে মাঝে সম্ভবত একঘেয়েমির বোঝার আতঙ্কে ভোগে, তবুও অবশেষে সে ছাত্র জীবনের এ স্তর শেষ করে। শুরুতে সে ব্যথা-ভারাক্রান্তবোধ করে। কিন্তু শেষে সে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

প্রচণ্ড আবেগের ব্যথা-বেদনা, দারিদ্র; অন্যের অবজ্ঞা, ঘৃণা, অবিচার পেয়ে অত্যাচারিত হয়ে হতাশা ও ক্রোধ এসব কিছুই কবিকে সাবলীল ও বিমোহিতকারী কবিতার চরণ লিখতে বাধ্য করে। কারণ, সে তার হৃদয়ে, তার স্নায়ুতে যাতনা বোধ করে, ফলে তার কাজের (কবিতার) মাধ্যমে সে একই আবেগ অন্যের অন্তরে সঞ্চারিত করতে সক্ষম হয়। উত্তম লেখকদের কতই না বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয়েছে- যে সব অভিজ্ঞতা চমৎকার কাজের (কবিতার, গল্পের, উপন্যাস ইত্যাদির) অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে-যেসব কাজ থেকে আজও উত্তর পুরুষেরা অনবরত আনন্দ ও উপকার লাভ করছে।

যে ছাত্র আরাম-আয়েশের জীবন কাটায় ও কষ্টভোগ করেনি বা যে ছাত্র কখনও দুর্দশাগ্রস্ত হয়নি সে অনুৎপাদী, অলস ও নিশ্চেষ্ট হবে।

বাস্তবিক, যে কবি কোন দুঃখ-বেদনার কথা জানে না, কখনও আশা ভঙ্গের তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বাদ গ্রহণ করেনি, সে অতি অবশ্যই সস্তা শব্দের গাদাগাদা স্তুপ রচনা করবে। এটা এ কারণে যে, তার শব্দাবলী তার মুখ থেকে বেরোয়- তার আবেগ-অনুভূতি থেকে নিঃসৃত হয় না এবং যা সে লিখেছে, যদিও সে তা বুঝে তবুও তার দেহ-মন জীবনে অভিজ্ঞতা লাভ করেনি।

প্রাথমিক যুগের মু’মিনদের জীবন পূর্বোল্লিখিত উদাহরণসমূহের সাথে অধিকতর উপযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গত। তারা কুরআন অবতীর্ণকালে জীবন যাপন করছিলেন এবং মানবজাতি চিরকালের দৃষ্ট সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাস্তবিকপক্ষে, পরবর্তীদের তুলনায় তাদের অধিকতর বেশি ঈমান, মহত্তর আত্মা, অধিকতর সত্যবাদী জবান এবং গভীরতর জ্ঞান ছিল- তাদের এসব থাকার কারণ হলো-তারা দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন। দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তি এতদুভয়ই মহাবিপ্লবের প্রয়োজনীয় সহগামী। ক্ষুধা, দারিদ্র, প্রত্যাখ্যান, গালি-গালাজ, বাড়ি-ঘর ও স্বদেশ থেকে বিতাড়ন, সকল আনন্দ বিসর্জন, আঘাত, অত্যাচার ও মৃত্যু যন্ত্রণা তারা ভোগ করেছিলেন। সত্যিই তারা বাছাইকৃত, মানবজাতির সর্বাধিক অভিজাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তারা বিশুদ্ধতা, মহত্ত্ব ও উৎসর্গের নমুনা ছিলেন।

ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ لَا يُصِيبُهُمْ ظَمَأٌ وَلَا نَصَبٌ وَلَا مَخْمَصَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَطَئُونَ مَوْطِئًا يَغِيظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُونَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا إِلَّا كُتِبَ لَهُم بِهِ عَمَلٌ صَالِحٌ إِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ

“কারণ আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি, ক্ষুধায় কাতর হওয়া, কাফেরদের ক্রোধ উদ্রেক করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শক্রদের পক্ষ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া তাদের আমলনামায় সৎকর্মরূপে লিখিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের কর্মফল নষ্ট করেন না।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১২০)

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের মহত্তম কর্ম (রচনা) দুঃখকষ্ট ও ভোগান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করার কারণেই সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। আরবী বিখ্যাত কবি মুতানাব্বি যখন সাংঘাতিক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল তখন তিনি তার কিছু উত্তম কাব্য রচনা করেছিলেন। নুমান ইবনে মুনযির যখন আন্নাবিগাহকে মৃত্যু ভয় দেখিয়েছিলেন, তখনই নাবিগাহ তার কিছু সর্বোত্তম কাব্য রচনা করেছিলেন। যে প্রসিদ্ধ পংক্তিটি তিনি বলেছিলেন তা হলো-

فانك شمس والملوك كواكب ٭ اذا طلعت لم يبد منهن كواكب

ভাবানুবাদ: আপনি হলেন সূর্য আর সব রাজারা তারকা,

উদিত হলে সূর্য, দেখা যায় না একটিও তারকা।

বাস্তবিক, যাতনার অভিজ্ঞতা লাভ করার ফলে যারা সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে ও কৃতিত্ব অর্জন করেছে তাদের অনেক উদাহরণ আছে। সুতরাং, যখন আপনি যাতনার কথা ভাবেন, তখন অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হয়ে যাবেন না। এমনটা যুক্তিসঙ্গতভাবেই হতে পারে যে, দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আপনি আরো শক্তিশালী হবেন। তাছাড়া আপনার জন্য দংশিত, জুলন্ত ও আবেগপ্রবণ আত্মা নিয়ে বেঁচে থাকা শীতল আত্মা ও অদূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গিযুক্ত লোকের উদাসীন অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে অধিকতর পবিত্র ও মহৎ।

“কিন্তু আল্লাহ তাদের অভিযানে প্রেরিত হওয়াকে অপছন্দ করলেন। তাই তাদেরকে পিছনে বসিয়ে রাখলেন এবং তাদেরকে বলা হলো, যারা বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৬)

আবেগে ভরপুর ওয়াজ-নসিহতের শব্দাবলি সাধারণত এই কারণে অন্তরের অন্ত:স্থলে পৌছে যেতে পারে যে, নসিহতকারী নিজেই দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।

“তিনি তাদের অন্তরে যা ছিল তা জেনেছেন ও তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।” (৪৮-সূরা আল ফাতহ: আয়াত-১৮)

আমি বহু কাব্যগ্রন্থ পড়েছি এবং তাদের অধিকাংশই আবেগহীন, প্রাণহীন বা প্রেরণাহীন। এর কারণ হলো যে, এসব গ্রন্থের রচয়িতারা কখনও কষ্টভোগ করেননি এবং এ কারণে যে ঐ পুস্তকগুলো আরামদায়ক পরিবেশে সৃজন করা হয়েছে। এ কারণেই এ ধরনের লেখকদের লেখা বরফ খণ্ডের মতো ঠাণ্ডা।

ওয়াজ-নসিহতে ভরা এমন অনেক কিতাব আমি পড়েছি যেগুলো শ্রোতার শরীরের একটি পশমেও শিহরণ জাগাতে পারে না এবং সেগুলোর এক অণুর ওজনও নেই। বক্তা (যার ওয়াজ ছাপানো হয়েছে) আবেগ-অনুভূতি নিয়ে অন্য কথায় ব্যথা-বেদনাসহ কথা বলছেন না (তাই এমনটি হচ্ছে)

يَقُولُونَ بِأَفْوَاهِهِم مَّا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ

“তাদের অন্তরে যা নেই তা তারা মুখে বলে।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৬৭)

আপনি যদি আপনার কথা, কাব্য অথবা কাজ দ্বারাও অন্যদেরকে প্রভাবিত করতে চান, তবে প্রথমে আপনার অন্তরের আবেগকে অনুভব করুন। অন্যকে আপনি যা জানাতে চাচ্ছেন, তা দিয়ে আপনার নিজেকে অবশ্যই শিহরিত হতে হবে। কেবলমমাত্র তখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনি অন্যদের উপর প্রভাব ফেলছেন।

“কিন্তু, যখন আমি এর উপর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম, তখন এটা নড়ে-চড়ে, ফুলে-ফেঁপে উদগত হলো।” (২২-সূরা আল হাজ্জ: আয়াত-৫)

জ্ঞানের কল্যাণ 

وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا

“আপনি যা জানতেন না, আল্লাহ আপনাকে তা শিখিয়েছেন। আর আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ চির মহান।” (সূরা-৪ আন নিসা: আয়াত-১১৩)

মূর্খতা মানুষের বিবেক ও আত্মাকে হত্যা করে।

إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ

“আমি আপনাকে সতর্ক করছি, আপনি যেন একজন মূর্খ না হন।” (১১-সূরা হুদ: আয়াত-৪৬)

জ্ঞান এমন এক আলো, যা প্রজ্ঞার দিকে নিয়ে যায়। এটি মানুষের আত্মার প্রাণ ও চরিত্রের ইন্ধন।

“যে মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি ও মানুষের মধ্যে চলার জন্য একটি আলো দিয়েছি, সে কি তার মতো, যে অন্ধকারে আছে এবং সেখান থেকে সে কখনও বের হয়ে আসতে পারবে না?” (৬-সূরা আল আন’আম: আয়াত-১২২)

সুখ ও মনের তেজ শিক্ষার মাধ্যমে আসে। (২২তম সংস্করণের মূল আরবী কিতাবে আছে: আনন্দ ও প্রফুল্লতা জ্ঞানের মাধ্যমে আসে।) কারণ জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ তার উদ্দেশ্য পুরো করতে পারে এবং পূর্বে তার থেকে যা গোপন করা হয়েছিল, তা আবিষ্কার করতে পারে। আত্মা স্বভাবগতভাবেই মনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে।

মূর্খতা হলো বিরক্তি ও বিষন্নতা। কেননা মূর্খ ব্যক্তি এমন জীবন যাপন করে, যা কখনও নতুন বা মন-উত্তেজক কিছু উৎসর্গ করে না। গতকাল আজকের মতোই, আজও পালাক্রমে আগামীকালের মতোই। (অর্থাৎ মূর্খদেরর সময় জ্ঞান নেই, তাদের কাছে সময়ের মূল্য নেই। তারা মূর্খতার কারণে অতীতকে যেভাবে নষ্ট করেছে, বর্তমানকেও সেভাবে নষ্ট করে ও একইভাবে ভবিষ্যৎকেও নষ্ট করবে -অনুবাদক)।

আপনি যদি সুখ চান তবে জ্ঞান ও শিক্ষার সন্ধান করুন, তাহলেই দেখবেন, দুশ্চিন্তা, হতাশা ও দুঃখ-বেদনা আপনাকে ছেড়ে পালাবে।

“এবং বলুন: প্রভু! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।” (সূরা-২০ ত্বাহা: আয়াত-১১৪)

“তোমার প্রভু- যিনি (তোমাকে এবং সবকিছু) সৃষ্টি করেছেন, তোমার সে (মহান) প্রভুর নামে পড়।” (৯৬-সূরা আল আলাক: আয়াত-১)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে তিনি দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।”

অতএব, কেহ মূর্খ হলে সে যেন তার সম্পদ ও তার সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বড়াই না করে : তার জীবন অর্থহীন এবং তার কৃতিত্ব শোচনীয়ভাবে অসম্পূর্ণ।

“আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য বলে যে জানে তবে কি সে তার মতো যে অন্ধ?” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-১৯)

কুরআনের প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা যামাখশারী (রহঃ) কবিতাকারে বলেছেন-

سهري لتنقيح العلوم ألذ لي * من وصل غانية وطيب عناق
وتمايلي طربا لحل عويصة * أشهى وأحلى من مدامة ساقي
وصرير أقلامي على أوراقها * أحلى من الدوكاء والعشاق
وألذ من نقر الفتاة لدفها * نقري لألقي الرمل عن أوراقي
يا من يحاول بالأماني رتبتي * كم بين مستغل وآخر راقي
أأبيت سهران الدجى وتبيته * نوما وتبغي بعد ذاك لحاقي

১. “ইলম শিক্ষায় আমি যে বিনিদ্র রজনী যাপন করি তা আমার কাছে সম্মোহনকারিনী রমণীর সঙ্গ বা আলিঙ্গনের চেয়েও বেশি প্রিয়।

২. কোন জটিল বিষয় বুঝার সময় আমার হৃদয়ের গভীরে আনন্দ উল্লাস হয় তা আমার নিকট সর্বাপেক্ষা চমৎকার পানীয়ের চেয়েও বেশি সুস্বাদু।

৩. কাগজের উপরে (লিখার সময়ে) আমার কলমে যে খসখস্ শব্দ হয় তা প্রেমিক-প্রেমিকার (আলিঙ্গনের শব্দের) চেয়েও বেশি মজাদার।

৪. কাগজের ধুলি ঝাড়ার সময় আমার হাতে যে শব্দ হয় তা ঢোল বাজানোর সময় নারীর হাতে যে শব্দ হয় তার চেয়েও বেশি আনন্দদায়ক।

৫. ওহে! যে শুধু বৃথা আশার মাধ্যমে আমার সমান মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা করে, অনেক বেশি উচ্চ বলে যে চড়তে কষ্ট পায় তার মাঝে আর অন্যজন যে চড়ে ও চূড়ায় পৌছে তার মাঝে কতইনা বেশি পার্থক্য!

৬. আমি রাতভর জেগে থাকি আর তুমি তখন ঘুমিয়ে থাক, অথচ তুমি আমাকে ছাড়িয়ে যেতে চাও! শিক্ষা কতই না মহৎ! আর এর মাধ্যমে আত্মা কতই না সুখী হয়!

“যে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আসা সুস্পষ্ট প্রমাণের ওপর আছে সে কি তার মত, যার জন্য তার মন্দ কাজকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে আর যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে?" (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতাল: আয়াত-১৪)

সুখের শিল্পকলা 

একটি শান্ত, দৃঢ় ও সুখী মনই হলো সবচেয়ে বড় নেয়ামত। কেননা, সুখের মাঝে মন থাকে পরিচ্ছন্ন, সুখ মানুষকে উৎপাদনশীল ব্যক্তি হতে শক্তি যোগায়। বলা হয়েছে যে, সুখ এমন একটি কলা (শিল্প) যা শিক্ষা করা দরকার। যদি আপনি এটা শিখেন তবে আপনি ইহজীবনে ধন্য হবেন। কিন্তু কীভাবে এটা শেখা যায়? সুখ লাভের মূলনীতি হলো, পরিস্থিতিকে সহ্য করার ও তাকে সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা থাকা। সুতরাং জটিল পরিস্থিতিতে আপনাকে টলমলে হওয়া চলবে না, এর শিকার হওয়াও চলবে না আর তুচ্ছ বিষয়ে বিরক্ত হওয়াও চলবে না। আত্মার বিশুদ্ধতা ও একে মহৎ করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে মানুষ জীবনে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

আপনি যখন নিজেকে ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দিবেন, তখন দুঃখ-কষ্ট-অভাব-অনটন ও দুর্যোগ-দুর্বিপাক-দুর্ঘটনা সহ্য করা আপনার জন্য সহজ হবে। পরিতৃপ্ত হওয়ার বিপরীত হলো অদূরদর্শী হওয়া, স্বার্থপর হওয়া এবং পৃথিবীকেও এর সবকিছুকে ভুলে থাকা। আল্লাহ তার শক্রদের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন-

“(অন্যদেরকে ও নবীকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্ষা করার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদেরকে কীভাবে রক্ষা করা যায় এ চিন্তায়) তারা নিজেরাই নিজেদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৫৪)

বিষয়টি এমন যে, এ ধরনের লোকেরা যেন নিজেদেরকে গোটা বিশ্ব মনে করে বা কমপক্ষে এর কেন্দ্রবিন্দু মনে করে। তারা অন্যদের কথা চিন্তাও করে না, নিজেদের ছাড়া অন্যদের জন্য বেঁচে থাকে না। শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের জন্য চিন্তা না করে বরং অন্যদেরকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য সময় বের করা এবং আমাদের আঘাত ও ক্ষতের কথা ভুলে থাকার জন্য নিজেদের সমস্যাবলী থেকে আমাদেরকে মাঝে মাঝে দূরে রাখা আমার আপনার সবারই দায়িত্ব। এ কাজ করে আমরা দুটি জিনিস অর্জন করতে পারি

১. আমরা আমাদেরকে সুখী করতে পারি,
২. এবং আমরা অন্যদেরকে আনন্দ দিতে পারি।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url