আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-১৬) || বই পাঠের উপকারিতা || ধৈর্যের মাধ্যমে উত্তম জীবন লাভ || নিজেকে প্রশ্ন করুন ||





এই জীবনই শেষ নয় আরেকটি জীবন আসবে, ধৈর্যের মাধ্যমে উত্তম জীবন লাভ করুন


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

বই পাঠের উপকারিতা

১. পাঠ উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা দূর করে।

২. পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকাকালে মিথ্যায় ডুবে থাকা থেকে বাঁচা যায়।

৩. স্বভাবগত পাঠ বা পড়ার অভ্যাস (মানুষকে) এত ব্যস্ত রাখে যে, অলস ও অকৰ্মাদের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করা যায় না।

৪. ঘনঘন পাঠের দ্বারা বাগ্মিতার এবং স্পষ্ট বক্তব্যের গুণ লাভ করা যায়।

৫. পাঠ মনকে উন্নত করতে এবং চিন্তা-ভাবনাকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

৬. পাঠ জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতি ও বোধশক্তি উভয়কেই উন্নত করে।

৭ পড়ার মাধ্যমে অন্যদের অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞদের প্রজ্ঞা ও পণ্ডিতদের বোধ (বা বুঝ) দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।

৮ ঘনঘন পড়ার দ্বারা জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্বন্ধে শিক্ষা করে সেগুলো জীবনে বাস্তবায়ন করা এ উভয়বিধ যোগ্যতাই অর্জন করা যায়।

৯. কল্যাণকর বই পড়ার সময় বিশ্বাস বাড়ে বিশেষ করে আমলকারী মুসলিম লেখকদের বই পাঠে। এ ধরনের পুস্তক ধর্মোপদেশে পরিপূর্ণ আর এসব ধর্মোপদেশ কল্যাণের পথ দেখাতে ও অকল্যাণ থেকে দূরে সরাতে খুবই শক্তিশালী।

১০. পাঠ মনকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে এবং সময়কে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচায়।

১১. বারবার পাঠের দ্বারা বহু শব্দের উপর দক্ষতা অর্জন করা যায় এবং বিভিন্ন বাক্য গঠন শিক্ষা করা যায়। অধিকন্তু, ধারণা করার ও বুঝার ক্ষমতা উন্নত হয় যার কথা নিচের দু’পংক্তি কবিতার মাঝে লিখা আছে—

“আত্মার পুষ্টি ধারণা করার ও বুঝার মাঝেই- খাদ্য ও পানির মাঝে নয়।”

ধৈর্যের মাধ্যমে উত্তম জীবন লাভ

উমর (রাঃ) বলেছেন- “আমরা যে উত্তম জীবন লাভ করেছি তা ধৈর্যের মাধ্যমেই এসেছে।”

তিনি আরো বলেছেন- “আমরা যে উত্তম জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তা ধৈর্যের জীবন এবং ধৈর্য যদি মানুষ হতো তবে সে সবচেয়ে বেশি উদার হতো।”

আলী (রাঃ) বলেন- “বাস্তবিকই ঈমানের জন্য ধৈর্য হলো এমনটি যেমনটি নাকি দেহের জন্য মাথা। মাথা কাটা গেলে দেহ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়” অর্থাৎ ধৈর্য না থাকলে ঈমান বা বিশ্বাসও নষ্ট হয়ে যায়।

এরপর তিনি উচ্চস্বরে বলেছেন- “নিশ্চয়, যার ধৈর্য নেই তার ঈমানও নেই”

তিনি আরো বলেন- “ধৈর্য এমন এক বাহন যা কখনও হোচট খায় না।”

হাসান (রহঃ) বলেছেন- “ধৈর্য এমন এক কল্যাণের ভাণ্ডার যা আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যোগ্য মনে করেন শুধুমাত্র তাকেই দান করেন।”

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহঃ) বলেছেন- “আল্লাহ তা'আলা যদি তার কোন বান্দাকে কোন নেয়ামত দিয়ে তা ছিনিয়ে নিয়ে তার বদলে তাকে ধৈর্য প্রদান করেন তবে ধৈর্যই (ঐ ছিনিয়ে নেয়া নেয়ামতের চেয়ে) উত্তম।”

সুলাঈমান ইবনুল কাসিম বলেছেন- “ধৈর্য ছাড়া সকল কাজের প্রতিদানই জানা আছে।”

একমাত্র ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান অধিক মাত্রায় বেহিসাবে দেয়া হবে।” (৩৯-সূরা আয যুমার: আয়াত-১০)

এই জীবনই শেষ নয় আরেকটি জীবন আসবে

এমন একদিন আসবে যখন আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টির প্রথম ও শেষ অর্থাৎ সকল সৃষ্টিকে একত্রিত করবেন। শুধুমাত্র এ ঘটনার জ্ঞানই আল্লাহর বিচার সম্বন্ধে আপনাকে নিশ্চয়তা প্রদান করে। সুতরাং, কারো টাকা-পয়সা অন্যায়ভাবে বেদখল হয়ে থাকলে সে সেখানে (হাশরের মাঠে) তা পাবে; যাকে অত্যাচার করা হয়েছে সে সেখানে ন্যায় বিচার পাবে এবং যে অত্যাচার করেছে সে সেখানে শাস্তি পাবে।

জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কেন্ট বলেছেন- “এ জীবনের নাটক (এখানেই) শেষ নয়, এ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য হবে। কেননা, আমরা দেখছি যে, অত্যাচারী ও তার শিকার ন্যায়বিচার না দেখেই নিবৃত বা ক্ষান্ত হচ্ছে বা অত্যাচারিত তার প্রতিশোধ নিতে পারছে না। অতএব, অবশ্যই অন্য জগৎ হবে, সেখানে ন্যায় বিচার করা হবে।”

শায়খ আলী তানতাবী এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, “এ অমুসলিম দার্শনিকের এ বর্ণনার দ্বারা (এমন এক) পরকালের বা আখেরাতের অস্তিত্বের কথার স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়- যেখানে বিচার করা হবে।”

একজন আরব কবি বলেছেন- “যখন মন্ত্রী ও তার প্রতিনিধি স্বেচ্ছাচারী হয় এবং বিচারক তার বিচারে পক্ষপাতিত্ব করে বা অবিচার করে, তখন ধ্বংস, ধ্বংস; আকাশের বিচারকের পক্ষ থেকে জমিনের বিচারকের জন্য রয়েছে ধ্বংস।”

الْيَوْمَ تُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া হবে। আজ (কারো প্ৰতি) কোনো জুলুম করা হবে না; নিশ্চয় আল্লাহ তরিৎ হিসাব গ্রহণকারী।” (৪০-সূরা আল মু’মিন: আয়াত-১৭)

অনেক কাজ জমে গেলেও কষ্টবোধ করবেন না

রবার্ট লুই স্টেভেনসন বলেছেন- “প্রতিটি ব্যক্তিই তার দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম—সে কাজগুলো যতই কঠিন হোক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না এবং প্রতিটি লোকই সূর্য ডুবার আগ পর্যন্ত তার সারাটা দিন সুখে কাটাতে সক্ষম আর সেটাই জীবনের অর্থ।”

ষ্টেফেন লীকক বলেছেন- “শিশু বলে : আমি যখন বালক হব...। বালক বলে : আমি যখন তরুণ হব. আর যখন সে সময় আসে তখন সে বলে : আমি যখন বিয়ে করব...। বিয়ের পরে কী ঘটে? আর এসব পর্যায় পার হওয়ার পর কী হয়? সবাই একটি চিন্তার পিছনে সদাই পড়ে আছে যে, যখন আমি অবসর হতে পারব...। কিন্তু, সে যখন সত্যিই বৃদ্ধ বয়সে পৌছে তখন পিছন ফিরে তাকায় (অর্থাৎ অতীতের বিষয় নিয়ে চিন্তা করে দেখে।) আর এক শীতল বায়ু প্রবাহে আক্রান্ত হয় (অর্থাৎ অতীতের দুঃখময় ঘটনার কথা ভেবে বিষাদিত হয়ে যায়। (সে ভাবে যে) সে তার সারা জীবন (বৃথা) নষ্ট করেছে, এক মুহুৰ্তও (সুখে) কাটাতে পারেনি। আর আমরা এভাবেই অনেক পরে বা দেরীতে শিখতে পারি যে, বর্তমান কালের প্রতিটি মুহুর্তেই জীবনকে উপভোগ করাই বা বর্তমান কালের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগানোই (প্রকৃত সুখের) জীবন।”

যারা তওবা করতে বিলম্ব করে-এই হলো তাদের অবস্থা।

আমাদের একজন ধাৰ্মিক পূর্বসূরি বলেছেন- “বিলম্ব করার ব্যাপারে এবং ‘আমি পরে করব’ ও কথা বলার ব্যাপারে আমি তোমাকে সতর্ক করছি কারণ, এটা এমন কথা যা মানুষকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখে এবং সওয়াবের কাজ করা থেকে পিছনে ফেলে দেয়।”

“তাদেরকে খাওয়া-দাওয়া ও ফুর্তি করতে দাও এবং মিথ্যা আশায় তারা মোহাচ্ছন্ন থাকুক। কেননা, শীঘ্রই তারা (প্রকৃত ঘটনা) জানতে পারবে।” (১৫-সূরা হিজর: আয়াত-৩)

ফরাসী দার্শনিক মন্টেইন বলেছেন- “আমার জীবনটা দুর্ভাগ্যে ভরা ছিল, (আমার জীবন) আমাকে কখনো করুণা দেখাওনি।”

আমি একথা স্বীকার করছি যে, তাদের জ্ঞান ও মেধা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রসিদ্ধ অনেকেই তাদের সৃষ্টির আড়ালে যে রহস্য রয়েছে তার কিছুই জানত না। আল্লাহ তার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে যে শিক্ষা পাঠিয়েছেন তারা সে শিক্ষা দ্বারা পরিচালিত হতেন না।

“আর যার জন্য আল্লাহ আলোর ব্যবস্থা করেননি, তার জন্য কোনো আলো নেই।” (২৪-সূরা আন নূর: আয়াত ৪০)

إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا

আমি অবশ্যই তাকে পথ দেখিয়েছি, হয়তো সে কৃতজ্ঞ হোক নয়তো অকৃতজ্ঞ হোক।” (৭৬-সূরা দাহর: আয়াত-৩)

ডেন্‌টি বলেছেন -“একথা ভাবুন যে, আজকের এই দিনটি আর কখনো ফিরে আসবে না।”

এর চেয়ে উত্তম, সুন্দরতর ও অধিকতরপূর্ণ হলো এই হাদীসটি- “এমনভাবে সালাত (নামাজ) আদায় করো যেন এটা তোমার বিদায়কালীন সালাত।”

যে ব্যক্তি এ কথা মনে রাখে যে, আজকের দিনটিই তার শেষ দিন সে খাঁটি তওবা করবে, আমলে সালেহ বা নেক আমল করবে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অনুগত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন

১. ভবিষ্যতের ভয় ও দুশ্চিন্তার কারণে অথবা দিগন্তের ওপারের যাদুময় বাগানের আশায় (আলেয়ার আলোর আশায়) আমি বর্তমান জীবন ভোগ বা বর্তমানে জীবনযাপন ত্যাগ করছি কি?

২. অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে চিন্তা করে করে আমি কি আমার বর্তমানকে তিক্ত করছি?

৩. আমি আমার দিনটি ভালোভাবে কাজে লাগানোর ইচ্ছা নিয়ে কি আমি ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠি?

৪. আমি কি আমার বর্তমান জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হচ্ছি?

৫. অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে কখন আমি বর্তমান জীবন ভোগ করা বা বর্তমান জীবন যাপন শুরু করব? কি আগামী সপ্তাহে? না-কি আগামী কাল? না আজই?


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url