যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (১১) || আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া || কারোর উপর এমনিতেই রাগ করা ||







একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

(একাদশ পর্ব)

  • কোন ব্যাপারে মনে সন্দেহ আসার পরও তা করা
  • কারোর বাহ্যিক আমল দেখেই তার ভালো পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া
  • আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া
  • বাচ্চাদের আলজিহ্বায় আঘাত করে গলা ব্যথার চিকিৎসা করা
  • কারোর উপর এমনিতেই রাগ করা
  • কোন অঘটন ঘটলে শয়তান ধ্বংস হোক এমন বলা
  • সিকি দিনারের কম চুরি করলেও তাতে কারোর হাত কাটা
  • কারোর কোন ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলেও তাতে কারোর হাত কাটা
  • কোন হারাম বস্তু বা হারাম কাজকে সম্মানসূচক শব্দে উচ্চারণ করা
  • কাফির, মুশরিক কিংবা কোন মুনাফিককে এমন শব্দে ভূষিত করা যা মুসলমানদের উপর তার কোন ধরনের কর্তৃত্ব বুঝায়

কোন ব্যাপারে মনে সন্দেহ আসার পরও তা করা

আবু উমামাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا حَاكَ فِيْ نَفْسِكَ شَيْءٌ فَدَعْهُ

‘‘কোন ব্যাপারে তোমার মনে সন্দেহ আসলে তা তুমি পরিত্যাগ করো’’।[1]
[1] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৪৮৪)

কারোর বাহ্যিক আমল দেখেই তার ভালো পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া

আবু উমামাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَعْجَبُوْا بِعَمَلِ عَامِلٍ ، حَتَّى تَنْظُرُوْا بِمَ يُخْتَمُ لَهُ

‘‘তোমরা কারোর বাহ্যিক আমল দেখে আশ্চর্য হইও না যতক্ষণ না তার পরিণতি তথা সে কোন আমল নিয়ে দুনিয়া থেকে প্রস্থান করেছে তা দেখবে’’।[1]
[1] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৭৩৬৬)

আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া

’ইকরিমাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা ’আলী (রা.) কিছু মুরতাদ্কে আগুনে পুড়িয়ে মারলেন। খবরটি আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু ’আনহুমা) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি বলেন: আমি যদি উক্ত স্থানে হতাম তাহলে আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কারণ, রাসূল (সা.) বলেছেন:

مَنْ بَدَّلَ دِيْنَهُ فَاقْتُلُوْهُ
‘‘যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করবে তাকে তোমরা হত্যা করো’’।
আমি তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারতাম না। কারণ, রাসূল (সা.) বলেন:

لاَ تُعَذِّبُوْا بِعَذَابِ اللهِ
‘‘তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার শাস্তি তথা আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দিও না’’।[1]
ব্যাপারটি ’আলী (রা.) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি বলেন: ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ সত্য বলেছে।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) আমাদেরকে একদা একটি প্রনিনিধি দলে পাঠিয়ে বললেন:

إِنْ وَجَدْتُمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا فَأَحْرِقُوْهُمَا بِالنَّارِ
‘‘তোমরা যদি অমুক অমুককে পাও তা হলে তোমরা তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারবে’’।

অতঃপর আমরা যখন গন্তব্যের পথে রওয়ানা হলাম তখন তিনি আমাদেরকে ডেকে বললেন:

إِنِّيْ أَمَرْتُكُمْ أَنْ تُحْرِقُوْا فُلاَنًا وَفُلاَنًا ، وَإِنَّ النَّارَ لاَ يُعَذِّبُ بِهَا إِلاَّ اللهُ ، فَإِنْ وَجَدْتُمُوْهُمَا فَاقْتُلُوْهُمَا
‘‘আমি তোমাদেরকে ইতিপূর্বে আদেশ করেছিলাম অমুক অমুককে আগুনে পুড়িয়ে মারতে ; অথচ আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই রাখেন। তাই তোমরা ওদেরকে পেলে হত্যা করবে’’।[2]
[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮ আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১)
[2] (বুখারী, হাদীস ৩০১৬)

বাচ্চাদের আলজিহ্বায় আঘাত করে গলা ব্যথার চিকিৎসা করা

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تُعَذِّبُوْا صِبْيَانَكُمْ بِالْغَمْزِ مِنَ الْعُذْرَةِ ، وَعَلَيْكُمْ بِالْقُسْطِ
‘‘তোমরা নিজেদের বাচ্চাদের আলজিহবায় আঘাত করে তাদের গলা ব্যথার চিকিৎসা করো না। তবে তোমরা এ ব্যাপারে চন্দন কাঠই ব্যবহার করবে’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৫৬৯৬ মুসলিম, হাদীস ১৫৭৭)

কারোর উপর এমনিতেই রাগ করা

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি নবী (সা.) এর নিকট এসে বললো: হে নবী! আমাকে ওসিয়ত করুন। তখন নবী (সা.) তাকে বললেন:

لاَ تَغْضَبْ
‘‘তুমি অহেতুক কোন রাগ করো না’’।[1]
লোকটি নবী (সা.) কে বার বার ওসিয়ত করতে বললেও নবী (সা.) তাকে একই ওসিয়ত করেন। তুমি অহেতুক কোন রাগ করো না।

আবুদ্দারদা’ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَغْضَبْ ، وَلَكَ الْـجَنَّةُ
‘‘তুমি অহেতুক কোন রাগ করো না। তা হলে তুমি জান্নাত পাবে’’।[2]
[1] (বুখারী, হাদীস ৬১১৬)
[2] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৭৩৭৪)

কোন অঘটন ঘটলে শয়তান ধ্বংস হোক এমন বলা

আবুল্-মালী’হ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেনঃ আমি একদা নবী (সা.) পিছনে একই উটে আরোহণ করছিলাম। এমতাবস্থায় একটি উট পা পিছলে পড়ে গেলো। তখন আমি বললাম: শয়তান ধ্বংস হোক। নবী (সা.) বললেন:

لاَ تَقُلْ : تَعِسَ الشَّيْطَانُ ! فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ ؛ تَعَاظَـمَ حَتَّى يَكُـوْنَ مِثْلَ الْبَيْتِ ، وَيَقُوْلُ : بِقُوَّتِيْ ، وَلَكِنْ قُلْ : بِسْمِ اللهِ ؛ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ ؛ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُوْنَ مِثْلَ الذُّبَابِ

‘‘শয়তান ধ্বংস হোক এমন কথা বলো না। কারণ, সে এমন কথা বললে ফুলতে শুরু করে। এমনকি ফুলতে ফুলতে সে একদা ঘরের মতো হয়ে যায় এবং সে বলে: আমি নিজ ক্ষমতা বলেই এমন করেছি। বরং তুমি বলবেঃ ’’বিস্মিল্লাহ্’’। কারণ, এমন বললে সে চুপসে যায়। এমনকি চুপসে চুপসে সে একদা মাছির মতো হয়ে যায়’’।[1]
[1] (আহমাদ্, হাদীস ১৯৭৮২ আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৮২)

সিকি দিনারের কম চুরি করলেও তাতে কারোর হাত কাটা

আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تُقْطَعُ يَدُ السَّارِقِ إِلاَّ فِيْ رُبْعِ دِيْنَارٍ فَصَاعِدًا

‘‘সিকি দিনার তথা এক গ্রাম থেকে একটু বেশি স্বর্ণ (অথবা উহার সমমূল্য) এবং এর চাইতে বেশি চুরি করলেই কোন চোরের হাত কাটা হয়। নতুবা নয়’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১ মুসলিম, হাদীস ১৬৮৪ তিরমিযী, হাদীস ১৪৪৫ আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৮৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৬৩৪)

কারোর কোন ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলেও তাতে কারোর হাত কাটা

রা’ফি’ বিন্ খাদীজ ও আবু হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ قَطْعَ فِيْ ثَمَرٍ وَلاَ كَثَرٍ
‘‘কেউ কারোর ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলে অথবা কারোর খেজুর গাছের মাথি-মজ্জা খেয়ে ফেললে তার হাত কাটা হবে না’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৮৮ তিরমিযী, হাদীস ১৪৪৯ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৬৪২, ২৬৪৩ ইবনু হিববান, হাদীস ১৫০৫ নাসায়ী ৮/৮৮ আহমাদ্ ৩/৪৬৩)

কোন হারাম বস্তু বা হারাম কাজকে সম্মানসূচক শব্দে উচ্চারণ করা

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَقُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ لِلْعِنَبِ : الْكَرْمَ ، إِنَّمَا الْكَـرْمُ الرَّجُلُ الْـمُسْلِمُ ، وَفِيْ رِوَايَةٍ : قَلْبُ الْـمُؤْمِنِ

‘‘তোমাদের কেউ আঙ্গুরকে ’’কার্ম’’ তথা তার সুরা পানকারীর মাঝে দানশীলতা সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করো না। কারণ, দানশীল তো হবে মূলতঃ একজন মুসলমানই। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, দানশীলতার গুণ তো স্বভাবত একজন মু’মিনের অন্তরেই লুক্বায়িত থাকে’’।[1]

ওয়া’ইল্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَقُوْلُوْا : الْكَرْمُ ، وَلَكِنْ قُوْلُوْا : الْعِنَبُ وَالْـحَبْلَةُ

‘‘তোমরা আঙ্গুরকে ‘‘কার্ম’’ তথা তার সুরা পানকারীর মাঝে দানশীলতা সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করো না। বরং আঙ্গুরকে ‘‘ইনাব’’ অথবা ‘‘হাব্লাহ্’’ তথা আঙ্গুরই বলবে।[2]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২২৪৭)
[2] (মুসলিম, হাদীস ২২৪৮)

কাফির, মুশরিক কিংবা কোন মুনাফিককে এমন শব্দে ভূষিত করা যা মুসলমানদের উপর তার কোন ধরনের কর্তৃত্ব বুঝায়

বুরাইদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَقُوْلُوْا لِلْمُنَافِقِ : سَيِّدٌ ؛ فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ سَيِّدًا ؛ فَقَدْ أَسْخَطْتُمْ رَبَّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ

‘‘তোমরা কোন মুনাফিককে ’’সাইয়েদ’’ তথা নেতা কিংবা অভিভাবক বলে আখ্যায়িত করো না। কারণ, সে যদি তোমাদের ’’সাইয়েদ’’ তথা নেতা কিংবা অভিভাবকই হয়ে যায় তা হলে তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু আল্লাহ্ তা’আলাকে অসন্তুষ্ট করলে’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৭৭)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url