যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (১৩) || আলাইকাস্-সালাম বলে সালাম || স্থির পানিতে প্রস্রাব করা || দু’ বার বিতিরের নামায পড়া ||





একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

(ত্রয়োদশ পর্ব)

  • দন্ডবিধি ছাড়াই দশের বেশি বেত্রাঘাত
  • সাফা-মারওয়ার মাঝে ধীরে ধীরে হাঁটা
  • আলাইকাস্-সালাম বলে সালাম
  • আল্লাহ্ তা’আলার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এমন বলা
  • অনুমতি ছাড়াই মুসলিম ভাইয়ের জিনিসপত্র নেওয়া
  • দু’ বার বিতিরের নামায পড়া
  • পুরো মাথা না কামানো
  • স্থির পানিতে প্রস্রাব করা
  • মাগরিবের নামায দেরি করে পড়া
  • হিংস্র প্রাণীর চামড়া পরিধান

দন্ডবিধি ছাড়াই দশের বেশি বেত্রাঘাত

কোন দন্ডবিধি ছাড়াই কাউকে দশের বেশি বেত্রাঘাত করা

আবু বুরদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يُجْلَدُ أَحَدٌ فَوْقَ عَشَرَةِ أَسْوَاطٍ ، إِلاَّ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ

‘‘কাউকে শরীয়তের কোন দন্ডবিধি ছাড়া শুধুমাত্র শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে দশের বেশি বেত্রাঘাত করা যাবে না’’।[1]

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تُعَزِّرُوْا فَوْقَ عَشَرَةِ أَسْوَاطٍ

‘‘তোমরা কাউকে দশ বেতের বেশি শাস্তি দিও না’’। (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৬৫১)

[1] (বুখারী, হাদীস ৪৮৪৮ মুসলিম, হাদীস ১৭০৮ আবু দাউদ, হাদীস ৪৪৯১ তিরমিযী, হাদীস ১৪৬৩ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৬৫০)

সাফা-মারওয়ার মাঝে ধীরে ধীরে হাঁটা

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ’উমরা কিংবা হজ্জের সময় সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়ানোর জায়গায় ধীরে ধীরে হাঁটা

শাইবাহ্’র উম্মে ওয়ালাদ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يُقْطَعُ الْأَبْطَحُ إِلاَّ شَدًّا

‘‘(সামর্থ্য থাকাবস্থায়) স্বাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী দৌড়ানোর জায়গা যেন দৌড়ানো ছাড়া অতিক্রম করা না হয়’’।[1]

[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩০৪২)

আলাইকাস্-সালাম বলে সালাম

কোন মুসলমানকে ’আলাইকাস্-সালাম’ বলে সালাম দেয়া

জাবির বিন্ সুলাইম (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি একদা রাসূল (সা.) এর নিকট এসে তাঁকে ‘‘আলাইকাস্-সালাম’’ বলে সালাম দিলে তিনি বলেন:

لاَ تَقُلْ : عَلَيْكَ السَّلاَمُ ؛ فَإِنَّ عَلَيْكَ السَّلاَمُ تَحِيَّةُ الْـمَيِّتِ ، قُلْ : السَّلاَمُ عَلَيْكَ

‘‘আলাইকাস্-সালাম’’ বলো না। কারণ, ‘‘আলাইকাস্-সালাম’’ হচ্ছে মৃত লোকের সম্ভাষণ। বরং বলবেঃ ’’আস্সালামু ’আলাইকা’’।[1]

[1] (আবু দাউম, হাদীস ৪০৮৪ তিরমিযী, হাদীস ২৭২২)

আল্লাহ্ তা’আলার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এমন বলা

নামাযের বৈঠকে কিংবা অন্য কোন সময় ’আসসালামু ’আলাল্লাহ্’ তথা আল্লাহ্ তা’আলার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এমন বলা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা রাসূল (সা.) সাথে নামায পড়ার সময় বসাবস্থায় বলতাম: ’’আস্সালামু ’আলাল্লাহি ক্বব্লা ’ইবা-দিহী’’ তথা সর্ব প্রথম আল্লাহ্ তা’আলার উপর শান্তি বর্ষিত হোক অতঃপর তাঁর বান্দাহ্দের উপর। রাসূল (সা.) তা শুনে বললেন:

لاَ تَقُوْلُوْا : السَّلاَمُ عَلَى اللهِ ؛ فَإِنَّ اللهَ هُوَ السَّلاَمُ ، وَلَكِنْ إِذَا جَلَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ : التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ...

‘‘তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এমন বলো না। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলাই তো নিজেই শান্তি বর্ষণকারী। বরং তোমরা যখন বসবে তখন বলবেঃ ’’আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ...’’ তথা সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৯৬৮ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৯০৭)

অনুমতি ছাড়াই মুসলিম ভাইয়ের জিনিসপত্র নেওয়া

কোন মুসলিম ভাইয়ের যে কোন জিনিসপত্র তার অনুমতি ছাড়াই নিজের জন্য নিয়ে নেওয়া ; যদিও তা হাস্যোচ্ছলেই হোক না কেন

ইয়াযীদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَأْخُذَنَّ أَحَدُكُمْ مَتَاعَ أَخِيْهِ لاَعِبًا وَلاَ جَادًّا ، وَمَنْ أَخَذَ عَصَا أَخِيْهِ فَلْيَرُدَّهَا

‘‘তোমাদের কেউ যেন তার কোন মুসলিম ভাইয়ের জিনিসপত্র তার অনুমতি ছাড়া নিয়ে না নেয়। চাই তা হাস্যোচ্ছলেই হোক অথবা বাস্তবে। যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের একটি লাঠিও এভাবে নিয়ে নেয় সে যেন তা অতিসত্বর ফিরিয়ে দেয়’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৫০০৩ তিরমিযী, হাদীস ২১৬০)

দু’ বার বিতিরের নামায পড়া

একই রাত্রিতেই দু’ বার বিতিরের নামায পড়া

ত্বালক্ব বিন্ ’আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ وِتْرَانِ فِيْ لَيْلَةٍ

‘‘একই রাত্রিতে দু’ বার বিতিরের নামায পড়া যাবে না’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ১৪৩৯ তিরমিযী, হাদীস ৪৭০)

পুরো মাথা না কামানো

পুরো মাথা না কামিয়ে মাথার কিছু অংশ অমুন্ডিত রেখে দেয়া

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা নবী (সা.) একটি বাচ্চার কিছু মাথা মুন্ডিত আর কিছু অমুন্ডিত দেখলে তিনি তাঁর সাহাবাগণকে আর এমন করতে নিষেধ করে বলেন:

احْلِقُوْهُ كُلَّهُ ، أَوِ اتْرُكُوْهُ كُلَّهُ

‘‘তোমরা পুরো মাথাই মুন্ডন করবে অথবা পুরো মাথাই অমুন্ডিত রেখে দিবে’’।[1]

[1] (আহমাদ্ ২/৮৮ আবু দাউদ, হাদীস ৪১৯৫)

স্থির পানিতে প্রস্রাব করা

স্থির পানিতে প্রস্রাব করা

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الْـمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِيْ لاَيَجْرِيْ ثُمَّ يَغْتَسِلُ مِنْهُ

‘‘তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না। অতঃপর সে নিজেই তো আবার সে পানি দিয়ে গোসল করবে’’।[1]

[1] (বুখারী, হাদীস ২৩৯ মুসলিম, হাদীস ২৮২)

মাগরিবের নামায দেরি করে পড়া

মাগরিবের নামায দেরি করে পড়া

আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَزَالُ أُمَّتِيْ بِخَيْرٍ أَوْ قَالَ : عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَمْ يُؤَخِّرُوْا الْـمَغْرِبَ إِلَى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُوْمُ

‘‘আমার উম্মত সর্বদা কল্যাণ ও সহজাত স্বভাবের উপর থাকবে যতক্ষণ না তারা মাগরিবের নামায দেরি করে পড়ে। এমন দেরি যে আকাশে তখন প্রচুর নক্ষত্র প্রজ্বলিত হয়’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪১৮)

হিংস্র প্রাণীর চামড়া পরিধান

কোন হিংস্র প্রাণীর চামড়া পরিধান করা কিংবা তার পিঠে চড়া

মিক্বদাম (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ لُبْسِ جُلُوْدِ السِّبَاعِ وَالرُّكُوْبِ عَلَيْهَا

‘‘রাসূল (সা.) কোন হিংস্র প্রাণীর চামড়া পরিধান এবং তার পিঠে আরোহণ করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪১৩১)



একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url