যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (০২) || কোমরে হাত রেখে নামায পড়া || খাদ্য এবং পানীয়তে ফুঁ দেয়া ||
ইসলামের কোন ফায়দায় আসে না এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন
তীর নিক্ষেপ, উট কিংবা ঘোড় দৌড় অথবা ইসলামের যে কোন ফায়দায় আসে এমন কোন প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য যে কোন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
لا سَبَقَ إِلاَّ فِيْ خُفٍّ أَوْ فِيْ حَافِرٍ أَوْ نَصْلٍ
‘‘তীর নিক্ষেপ, উট বা ঘোড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য কোন প্রতিযোগিতা ইসলামে নেই’’।[1]
উক্ত প্রতিযোগিতাগুলো একদা জিহাদের কাজে লাগতো। তাই ইসলাম এগুলোর প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছে এবং এগুলোর ব্যাপারে পুরস্কার বা বিনিময় বিতরণও জায়িয করেছে। অতএব এখনো যে সকল প্রতিযোগিতা জিহাদ ও ইসলাম প্রচারের কাজে আসে সে সকল প্রতিযোগিতা জায়িয এবং সেগুলোর ব্যাপারে পুরস্কার বা বিনিময় বিতরণ করাও জায়িয। এ ছাড়া অন্য সকল প্রতিযোগিতা হারাম ও জুয়া সমতুল্য।
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ২৫৭৪)
কোমরে হাত রেখে নামায পড়া
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن يُصَلِّيَ الرَّجُلُ مُخْتَصِرًا
‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন কোমরে হাত রেখে নামায পড়তে’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৫৪৫)
শুধু জুমু’আর দিনে রোযা এবং শুধু জুমু’আর রাত্রিতে নফল নামায পড়া
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
لا تَخْتَصُّوْا لَيْلَةَ الْـجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِيْ ، وَلاَ تَخْتَصُّوْا يَوْمَ الْـجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ ، إِلاَّ أَنْ يَكُوْنَ فِيْ صَوْمٍ يَصُوْمُهُ أَحَدُكُمْ
‘‘তোমরা বিশেষভাবে জুমু’আর রাত্রিতেই নফল নামায পড়ো না এবং বিশেষভাবে জুমু’আর দিনেই রোযা রাখো না। তবে কারোর ধারাবাহিক রোযার মাঝে জুমু’আর দিন পড়লে তাতে কোন অসুবিধে নেই’’।[1]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
لا يَصُمْ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ ، إِلاَّ أَنْ يَصُوْمَ قَبْلَهُ أَوْ يَصُوْمَ بَعْدَهُ
‘‘তোমাদের কেউ শুধু জুমু’আর দিন রোযা রাখো না। তবে কেউ এর পূর্বের দিন অথবা পরের দিনও রোযা রাখলে তাতে কোন অসুবিধে নেই’’।
[1] (মুসলিম, হাদীস ১১৪৪)
কিবলামুখী হয়ে, ডান হাতে ইস্তিঞ্জা করা
সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা মুশরিকরা আমাকে বললোঃ আরে এ কি? তোমাদের নবী তো তোমাদেরকে সব কিছুই শিক্ষা দেয়। এমনকি মল-মূত্র ত্যাগ করাও। তখন তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে মল-মূত্র ত্যাগ করাও শিক্ষা দিয়েছেন। আর এতে আশ্চর্যের কি রয়েছে? অতঃপর তিনি বলেন:
لَقَدْ نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ ، أَوْ نَسْتَنْجِـيَ بِالْيَمِيْنِ ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيْعٍ أَوْ بِعَظْمٍ
‘‘রাসূল (সা.) আমাদেরকে কিব্লামুখী হয়ে মল-মূত্র ত্যাগ, ডান হাতে ইস্তিঞ্জা, তিনটি ঢিলার কমে ইস্তিঞ্জা কিংবা পশুর মল অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
মুশরিকদের সাথে সাল্মান ফারসী (রা.) এর উক্ত আচরণ এটাই প্রমাণ করে যে, কাফির বা মুনাফিকদের কোন তিরস্কার মূলক প্রশ্নের মুখে পড়ে কোন মুসলমান যেন নিজের অহেতুক সম্মান উদ্ধারের মানসে শরীয়তের কোন বিধানকে অস্বীকার না করে অথবা উহার কোন অপব্যাখ্যা না দেয়। বরং তখন শরীয়তের বিধানটির সগর্ব স্বীকারোক্তিই হবে এক জন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক।
হাড় হচ্ছে জ্বিনদের খাদ্য এবং মানবপালিত পশুর মল হচ্ছে জ্বিনদের পশুর খাদ্য।
আব্দুল্লাহ বিন মাস্ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জ্বিনরা যখন রাসূল (সা.) কে তাদের খাদ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন তিনি বলেন:
لَكُمْ كُلُّ عَظْمٍ ذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ يَقَعُ فِيْ أَيْدِيْكُمْ أَوْفَرَ مَا يَكُوْنُ لَحْماً ، وَكُلُّ بَعْرَةٍ عَلَفٌ لِدَوَابِّكُمْ
‘‘বিসমিল্লাহ্ তথা আল্লাহ্ তা’আলার নাম উচ্চারিত হয়েছে এমন প্রতিটি হাড় তোমাদের খাদ্য। তা তোমরা গোস্তে পরিপূর্ণ পাবে। তেমনিভাবে উটের প্রতিটি মলখন্ড তোমাদের পশুর খাদ্য। অতঃপর রাসূল (সা.) সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
فَلاَ تَسْتَنْجُوْا بِهِمَا، فَإِنَّهُمَا طَعَامُ إِخْوَانِكُمْ
‘‘অতএব তোমরা এ দু’টি বস্তু দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে না। কারণ, ওগুলো তোমাদেরই ভাই জ্বিনদের খাদ্য’’।[2]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২৬২ তিরমিযী, হাদীস ১৬)
[2] (বুখারী, হাদীস ৩৮৬০ মুসলিম, হাদীস ৪৫০)
কোন মুহরিমা (যে মহিলা মিক্বাত থেকে হজ্জ বা ’উমরাহ্’র নিয়্যাত করেছে) মহিলা নিকাব কিংবা হাত মোজা পরা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
وَلاَ تَنْتَقِبُ الْـمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ وَلاَ تَلْبَسُ الْقُفَّازَيْنِ
‘‘কোন মুহরিমা মহিলা যেন নিকাব ও হাত মোজা না পরে’’।[1]
তবে কোন বেগানা পুরুষের সামনে মুহরিমা মহিলা অবশ্যই চেহারা ডাকবে। যদিও সে ইহ্রাম অবস্থায় থাকুক না কেন।
[1] (বুখারী, হাদীস ১৮৩৮)
খাদ্য এবং পানীয়তে ফুঁ দেয়া
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّفْخِ فِيْ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ
‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন খাদ্য এবং পানীয়তে ফুঁ দিতে’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯১৩)
জীবিত ছাগলকে গোস্তের বিনিময়ে বিক্রি
সামুরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعِ الشَّاةِ بِاللَّحْمِ
‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন জীবিত ছাগলকে গোশতের বিনিময়ে বিক্রি করতে’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯৩৩)
ঘোড়া, উট, গরু ও ছাগলকে খাসি করানো
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ خِصَاءِ الْـخَيْلِ وَالْبَهَائِمِ
‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন ঘোড়া ও গৃহপালিত চতুষ্পাদ জন্তু তথা উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি খাসি করতে’’।[1]
মূলতঃ উক্ত নিষেধাজ্ঞা খাসির মাধ্যমে কোন পশুর বংশ বিস্তার রোধের মানসিকতার কারণেই এসেছে। তবে কোন পশুকে তরতাজা কিংবা তার গোস্তকে সুস্বাদু করার জন্য খাসি করা হলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
’আয়িশা ও আবু হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيْمَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوْءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ بِالتَّوْحِيْدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ ، وَذَبَحَ الْآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ
‘‘রাসূল (সা.) যখন কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি শিঙ বিশিষ্ট বড় সাইজের দু’টি সুদর্শন ভেড়া খাসি খরিদ করতেন। যার একটি যবাই করতেন তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে যারা আল্লাহ্ তা’আলার ব্যাপারে তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূল (সা.) এর ব্যাপারে তাওহীদের বাণী পৌঁছে দেয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে। আর অন্যটি যবাই করতেন তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে।[2]তবে খাসি করার সময় অত্যন্ত সহজ পন্থাই অবলম্বন করবে। যাতে পশুর বেশি কষ্ট না হয়’’।
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯৫৬)
[2] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩১৮০)
ঈদের নামাযের আগে কুরবানী
বারা’ বিন্ আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لا يَذْبَحَنَّ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُصَلِّيَ
‘‘তোমাদের কেউ নামাযের পূর্বে যেন যবাই না করে’’।[1]
[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৫০৮)
কুরবানীর পূর্বে কুরবানী দাতার নখ ও চুল কাটা
উম্মু সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ رَأَى هِلاَلَ ذِيْ الْحِجَّةِ ، وَأَرَادَ أَنْ يُّضَحِّيَ ؛ فَلاَ يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ
‘‘যে ব্যক্তি যিলহজ্জের চাঁদ দেখেছে এবং তার কুরবানী করারও ইচ্ছা রয়েছে তা হলে সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে’’।[1]
[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩
একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ট পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১তম পর্ব ১২তম পর্ব ১৩তম পর্ব ১৪তম পর্ব ১৫তম পর্ব ১৬তম পর্ব ১৭তম পর্ব ১৮তম পর্ব ১৯তম পর্ব ২০ম পর্ব ২১তম পর্ব ২২তম পর্ব ২৩তম পর্ব ২৪তম পর্ব ২৫তম পর্ব ২৬তম পর্ব ২৭তম পর্ব ২৮তম পর্ব ২৯তম পর্ব ৩০ম পর্ব ৩১তম পর্ব ৩২তম পর্ব ৩৩তম পর্ব ৩৪ম পর্ব
****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url