যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (০৩) || দ্রুত পদে মসজিদে আগমন করা || অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ খাওয়া ||





একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

(তৃতীয় পর্ব)
কোন মুসলিম ভাইকে আতঙ্কিত করা
অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ খাওয়া
মেহমানদারি নিয়ে প্রতিযোগিতা ও সেই দা’ওয়াত গ্রহণ
দ্রুত পদে মসজিদে আগমন করা
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় অথবা হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া-
প্রস্রাব কিংবা পায়খানারত অবস্থায় সালাম দেয়া
কারোর সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে অনুমতি ছাড়া প্রস্থান করা
ঘর কিংবা মসজিদে এমন কিছু রাখা যা নামাযীকে নামায থেকে গাফিল করে
জানাযা কবরের পাশে রাখার আগে সেখানে বসা
কোন বিবাহিত মহিলার ঘরে রাত্রি যাপন করা

কোন মুসলিম ভাইকে আতঙ্কিত করা

আব্দুর রহমান বিন্ আবু লাইলা (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: সাহাবাগণ আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তাঁরা নবী (সা.) এর সাথে সফরে ছিলেন। ইতিমধ্যে জনৈক ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়লে জনৈক সাহাবী তার সাথে থাকা একটি রশি টান দিলে সে ভয় পেয়ে যায়। তখন রাসূল (সা.) বললেনঃ

لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يُرَوِّعَ مُسْلِمًا

‘‘কোন মুসলমানের জন্য হালাল হবে না তার অন্য কোন মুসলমান ভাইকে যে কোনভাবে আতঙ্কিত করা’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৫০০৪)

অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ খাওয়া

হানিফাহ্ রাক্বাশী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلاَّ بِطِيْبِ نَفسٍ مِنْهُ

‘‘কোন মুসলমানের মনো সন্তুষ্টি ছাড়া তার সম্পদ অন্যের জন্য কোনভাবেই হালাল হবে না’’।[1]

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لَأَلْقَيَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ أُعْطَى مِنْ مَالِ أَحَدٍ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيْبِ نَفْسِهِ ، إِنَّمَا الْبَيْعُ عَنْ تَرَاضٍ

‘‘আমি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাত করতে চাই যে, অথচ আমাকে ইতিপূর্বে কারোর সম্পদের কিয়দংশ তার মনোসন্তুষ্টি ছাড়া দেয়া হয়নি। বেচা-বিক্রি তো নিশ্চয়ই উভয় পক্ষের সন্তুষ্টির ভিত্তিতেই হতে হবে’’।[2]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৭৬৬২)
[2] (ইরওয়াউল-গালীল, হাদীস ১২৮৩)

মেহমানদারি নিয়ে প্রতিযোগিতা ও সেই দা’ওয়াত গ্রহণ

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

الْـمُتَبَارِيَانِ لاَ يُجَابَانِ ، وَلاَ يُؤْكَلُ طَعَامُهُمَا

‘‘মানুষকে দেখানো কিংবা গর্বের বশবর্তী হয়ে মেহমানদারি নিয়ে প্রতিযোগিতাকারীদ্বয়ের দা’ওয়াত গ্রহণ করা যাবে না। এমনকি তাদের খানাও খাওয়া যাবে না’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৬৭১)

দ্রুত পদে মসজিদে আগমন করা

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا أُقِيْمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ تَأْتُوْهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوْهَا تَمْشُوْنَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِيْنَةَ ، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا ، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوْا

‘‘যখন নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন তোমরা দ্রুত গতিতে মসজিদে আসবে না। বরং ধীর পদে তোমরা নামাযে আসবে এবং শান্ত চিত্তে মসজিদে উপস্থিত হবে। অতঃপর তোমরা ইমামের সাথে যতটুকু নামায পাবে তা পড়বে। আর যতটুকু ছুটে গিয়েছে তা আদায় করে নিবে’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৯০৮ মুসলিম, হাদীস ৬০২)

মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় অথবা হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَبِيْعُ أَوْ يَبْتَاعُ فِيْ الْـمَسْجِدِ ؛ فَقُوْلُوْا: لاَ أَرْبَحَ اللهُ تِجَارَتَكَ! ، وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ فِيْهِ ضَالَّةً ؛ فَقُوْلُوْا: لاَ رَدَّ اللهُ عَلَيْكَ!

‘‘তোমরা কাউকে মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখলে বলবেঃ আল্লাহ্ তা’আলা তার ব্যবসায় লাভ না দিক! তেমনিভাবে তোমরা মসজিদে কাউকে হারানো কোন বস্ত্ত খুঁজতে দেখলে তথা এ সংক্রান্ত কোন ঘোষণা দিতে দেখলে বলবেঃ আল্লাহ্ তা’আলা তার হারানো বস্ত্তটি ফিরিয়ে না দিক’’![1]
[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৩২১)

প্রস্রাব কিংবা পায়খানারত অবস্থায় সালাম দেয়া

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি নবী (সা.) এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে প্রস্রাবরত অবস্থায় সালাম দিলে রাসূল (সা.) তাকে ডেকে বললেন:

إِذَا رَأَيْتَنِيْ عَلَى مِثْلِ هَذِهِ الْـحَالَةِ فَلاَ تُسَلِّمْ عَلَيَّ ، فَإِنَّكَ إِنْ فَعَلْتَ ذَلِكَ لَمْ أَرُدَّ عَلَيْكَ

‘‘যখন তুমি আমাকে এমতাবস্থায় দেখবে তখন আমাকে সালাম করো না। কারণ, তুমি আমাকে এমতাবস্থায় সালাম করলে আমি তোমার সালামের উত্তর দেবো না’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫৮)

কারোর সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে অনুমতি ছাড়া প্রস্থান করা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا زَارَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَجَلَسَ عِنْدَهُ ، فَلاَ يَقُوْمَنَّ حَتَّى يَسْتَأْذِنَهُ

‘‘যখন তোমাদের কেউ তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ বসে তখন সে যেন তার অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে না দাঁড়ায়’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৫৮৩)

ঘর কিংবা মসজিদে এমন কিছু রাখা যা নামাযীকে নামায থেকে গাফিল করে

আসলামিয়্যাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি উসমান (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ; রাসূল (সা.) (কা’বা ঘরে ঢুকে) আপনাকে ডেকে কি বলেছিলেন: তখন তিনি বলেন: রাসূল (সা.) আমাকে বলেছিলেন:

إِنِّيْ نَسِيْتُ أَنْ آمُرَكَ أَنْ تُخَمِّرَ الْقَرْنَيْنِ ؛ فَإِنَّهُ لَيْسَ يَنْبَغِيْ أَنْ يَكُوْنَ فِيْ الْبَيْتِ شَيْءٌ يَشْغَلُ الْمُصَلِّيَ

‘‘আমি তোমাকে শিঙ দু’টো ঢাকার আদেশ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। (মূলতঃ শিঙ দু’টো ইসমাঈল এর পরিবর্তে যবাই করা ভেড়ারই শিঙ ছিলো) কারণ, কা’বা ঘর তথা যে কোন মসজিদে এমন কিছু থাকা উচিত নয় যা নামাযীকে নামায থেকে গাফিল করে’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ২০৩০)

জানাযা কবরের পাশে রাখার আগে সেখানে বসা

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا اتَّبَعْتُمْ جَنَازَةً فَلاَ تَجْلِسُوْا حَتَّى تُوْضَعَ

‘‘যখন তোমরা জানাযার পেছনে পেছনে যাবে তখন তোমরা কবরের পাশে গিয়ে বসে পড়বে না যতক্ষণ না সেখানে জানাযা রাখা হয়’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৯৫৯)

কোন বিবাহিত মহিলার ঘরে রাত্রি যাপন করা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَلاَ لاَ يَبِيْتَنَّ رَجُلٌ عِنْدَ امْرَأَةٍ ثَيِّبٍ ، إِلاَّ أَنْ يَكُوْنَ نَاكِحًا أَوْ ذَا مَحْرَمٍ

‘‘জেনে রাখো, কোন ব্যক্তি যেন অন্য কোন বিবাহিত মহিলার ঘরে রাত্রি যাপন না করে। তবে সে ব্যক্তি উক্ত মহিলার স্বামী বা মুহরিম (যার সাথে বিবাহ্ বসা হারাম) হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই’’।[1]

আব্দুর রহমান বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা বানী হাশিম গোত্রের কিছু লোক আসমা বিনতে উমাইস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর ঘরে ঢুকলো। ইতিমধ্যে আবু বকর (রা.) ও তাঁর ঘরে ঢুকলেন। আর আসমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন তখন আবু বকর (রা.) এর স্ত্রী। আবু বকর (রা.) তাদেরকে ঘরে দেখে অসন্তুষ্ট হলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (সা.) কে ব্যাপারটি জানিয়ে বললেন: আমি তো খারাপ কিছুই দেখিনি। যা দেখেছি ভালোই দেখেছি। তখন রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা আসমাকে পবিত্রই রেখেছেন। এরপর রাসূল (সা.) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন:

لاَ يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ بَعْدَ يَوْمِيْ هَذَا عَلَى مُغِيْبَةٍ إِلاَّ وَمَعَهُ رَجُلٌ أَوِ اثْنَانِ

‘‘আজকের পরে কোন ব্যক্তি যেন স্বামী অনুপস্থিত কোন মহিলার ঘরে প্রবেশ না করে। তবে তার সাথে আরো এক জন পুরুষ অথবা দু’ জন পুরুষ থাকলে কোন অসুবিধে নেই’’।[2]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২১৭১)
[2] (মুসলিম, হাদীস ২১৭৩)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব



***************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url