যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (০৭) || কবরস্থানে জানাযার নামায আদায় || চুল বাঁধা অবস্থায় পুরুষদের নামায আদায় ||






একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

(সপ্তম পর্ব)


দোষ কিংবা গুণ বুঝায় এমন নামে সন্তানদের নাম রাখা
চারপাশ ঘেরা নেই এমন ছাদে রাত্রি যাপন কিংবা উত্তাল নদীতে নদী ভ্রমণ
তীর কিংবা গোলা-বারুদ নিক্ষেপ শিখে তা ভুলে যাওয়া
নিজের অংশীদারকে না জানিয়ে জমিন বা বাগান অন্যের নিকট বিক্রি করা
চুল বাঁধা অবস্থায় পুরুষদের নামায আদায়
কবরস্থানে জানাযার নামায আদায়
লুটতরাজ করা, পশু বা মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকৃত করা
মেহমানকে আপ্যায়ন করতে সাধ্যাতিরিক্ত কিছু করা
মল খাওয়া পশুর গোস্ত ও দুধ খাওয়া
সিল্কের কাপড় ও চিতা বাঘের চামড়া বসার কাজে ব্যবহার

দোষ কিংবা গুণ বুঝায় এমন নামে সন্তানদের নাম রাখা

’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لَئِنْ عِشْتُ إِنْ شَاءَ اللهُ لَأَنْهَيَنَّ أَنْ يُّسَمَّى رَبَاحٌ وَنَجِيْحٌ وَأَفْلَحُ وَيَسَارٌ

‘‘ইনশাআল্লাহ্! (আল্লাহ্ চায় তো) আমি ভবিষ্যতে বেঁচে থাকলে ‘‘রাবাহ্’’ তথা লভ্যার্জন, ‘‘নাজীহ্’’ তথা ধৈর্যশীল, আফ্লাহ্’’ তথা ঠোঁট ফাটা এবং ‘‘ইয়াসার’’ তথা সচ্ছলতা নামে কারোর নাম রাখতে অবশ্যই নিষেধ করবো।[1]
[1] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৫০৫৪)

চারপাশ ঘেরা নেই এমন ছাদে রাত্রি যাপন কিংবা উত্তাল নদীতে নদী ভ্রমণ

যুহাইর (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ بَاتَ فَوْقَ بَيْتٍ لَيْسَ لَهُ إِجَّارٌ فَوَقَعَ فَمَاتَ ؛ فَبَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ ، وَمَنْ رَكِبَ الْبَحْرَ عِنْدَ ارْتِجَاجِهِ فَمَاتَ ؛ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ

‘‘যে ব্যক্তি চারদিক ঘেরা নেই এমন ছাদে রাত্রি যাপন করা অবস্থায় নিচে পড়ে মারা গেলো কারোর উপর তার কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি উত্তাল সাগরে ভ্রমণ করে মারা গেলো কারোর উপর তারও কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না’’।[1]
[1] (আহমাদ্ ৫/২৭১ সিল্সিলাতুল-আহাদীসিস-সাহীহাহ্, হাদীস ৮২৮)

তীর কিংবা গোলা-বারুদ নিক্ষেপ শিখে তা ভুলে যাওয়া

’উক্ববাহ্ বিন্ ’আমির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ عَلِمَ الرَّمْيَ ثُمَّ تَرَكَهُ فَلَيْسَ مِنَّا أَوْ قَدْ عَصَى

‘‘যে ব্যক্তি (তীর বা গোলা-বারুদ) নিক্ষেপ করা শিখে তা পরিত্যাগ করলো সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয় অথবা সে আমার অবাধ্য হলো’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ১৯১৯)

নিজের অংশীদারকে না জানিয়ে জমিন বা বাগান অন্যের নিকট বিক্রি করা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَيُّكُمْ كَانَتْ لَهُ أَرْضٌ أَوْ نَخْلٌ فَلاَ يَبِعْهَا حَتَّى يَعْرِضَهَا عَلَى شَرِيْكِهِ

‘‘তোমাদের কারোর নিকট কোন জমিন কিংবা খেজুর বাগান থাকলে সে যেন তা বিক্রি না করে যতক্ষণ না তা নিজের অংশীদারের সামনে উপস্থাপন করে’’।[1]
[1] (আহমাদ্ ৩/৩০৭ নাসায়ী ২/২৩৪)

চুল বাঁধা অবস্থায় পুরুষদের নামায আদায়

আবু সা’দ্ অথবা আবু সা’ঈদ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আবু রাফি’ (রা.) ’হাসান (রা.) কে মাথার চুল বাঁধা অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর চুলের বাঁধন খুলে দিলেন অথবা এমন করতে নিষেধ করে বললেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُّصَلِّيَ الرَّجُلُ وَهُوَ عَاقِصٌ شَعْرَهُ وَفِيْ رِوَايَةٍ أَنَّهُ قَالَ: ذَلِكَ كِفْلُ الشَّيْطَانِ

‘‘রাসূল (সা.) পুরুষদেরকে মাথার চুল বাঁধা অবস্থায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন: এটি হচ্ছে শয়তানের খোঁপা’’।[1]

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) একদা আব্দুল্লাহ্ বিন্ হারিসকে মাথার চুল বাঁধা অবস্থায় নামায পড়তে দেখলে তিনি তা খুলে দেন। আব্দুল্লাহ্ বিন্ হারিস্ নামায শেষ করে আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে বললেনঃ আপনি আমার মাথা নিয়ে এতো ব্যস্ত হলেন কেন? তখন তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّمَا مَثَلُ هَذَا مَثَلُ الَّذِيْ يُصَلِّيْ وَهُوَ مَكْتُوْفٌ

‘‘এর দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তির ন্যায় যে তার উভয় হাত বাঁধা অবস্থায় নামায আদায় করছে’’।[2]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৬৪৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১০৫১ আহমাদ্ ৬/৮, ৩৯১ দারিমী ১/৩২০)
[2] (মুসলিম, হাদীস ৪৯২ আবু দাউদ, হাদীস ৬৪৭)

কবরস্থানে জানাযার নামায আদায়

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُّصَلَّى عَلَى الْجَنَائِزِ بَيْنَ الْقُبُوْرِ
‘‘রাসূল (সা.) কবরস্থানে জানাযার নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

তবে সদ্য দাফনকৃত কোন ব্যক্তির কবরকে সামনে নিয়ে তাঁর কোন নিকটাত্মীয় অথবা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তার জানাযার নামায পড়তে পারে। যিনি বা যাঁরা ইতিপূর্বে অত্যধিক আগ্রহ থাকা সত্তেবও তার জানাযার নামাযে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

انْتَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إلَى قَبْرٍ رَطْبٍ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَصَفُّوْا خَلْفَهُ وَكَبَّرَ أَرْبَعاً
‘‘রাসূল (সা.) সদ্য দাফনকৃত জনৈক ব্যক্তির কবরের কাছে গিয়ে তার জানাযার নামায আদায় করেন। সাহাবায়ে কিরামও তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে চার তাকবীরে উক্ত ব্যক্তির জানাযার নামায আদায় করেন’’।[2]

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈকা কালো মহিলা অথবা জনৈক কালো যুবক রাসূল (সা.) এর মসজিদ ঝাড়ু দিতো। একদা রাসূল (সা.) তাকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সাহাবায়ে কিরাম বললেন: সে তো মরে গিয়েছে। রাসূল (সা.) বললেনঃ তোমরা কেন আমাকে এ ব্যাপারে কিছুই জানালে না ? মূলত: সাহাবায়ে কিরাম ব্যাপারটিকে নিতান্ত ছোটই মনে করলেন। তাই তাঁরা রাসূল (সা.) কে এ ব্যাপারে ইতিপূর্বে কিছুই জানাননি। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন: তোমরা আমাকে তার কবরটি দেখিয়ে দাও। তাঁরা রাসূল (সা.) কে তার কবরটি দেখিয়ে দিলে রাসূল (সা.) তার কবরটি সামনে রেখে তার জানাযার নামায আদায় করেন। অতঃপর বলেন:

إِنَّ هَذِهِ الْقُبُوْرَ مَمْلُوْءَةٌ ظُلْمَةً عَلَى أَهْلِهَا ، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلاَتِيْ عَلَيْهِمْ

‘‘নিশ্চয়ই কবরগুলো তার অধিবাসীদের উপর অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। আর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর আমার জানাযার নামাযের বরকতে তা তাদের জন্য আলোকিত করে দেন’’।[3]
[1] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৬৮৩৪)
[2] (মুসলিম, হাদীস ৯৫৪)
[3] (মুসলিম, হাদীস ৯৫৬)

লুটতরাজ করা, পশু বা মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকৃত করা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ইয়াযীদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النُّهْبَةِ وَالْـمُثْلَةِ

‘‘রাসূল (সা.) লুটতরাজ কিংবা কোন পশু বা মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে তার গঠনাকৃতি বিকৃত করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৫৫১৬)

মেহমানকে আপ্যায়ন করতে সাধ্যাতিরিক্ত কিছু করা

সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ التَّكَلُّفِ لِلضَّيْفِ
‘‘রাসূল (সা.) মেহমানের মেহমানদারিতে (সাধ্যাতিরিক্ত) বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

সাল্মান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَتَكَلَّفَنَّ أَحَدٌ لِضَيْفِهِ مَا لاَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ
‘‘কেউ যেন তার মেহমানের জন্য সাধ্যাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করে’’।[2]
[1] (’হাকিম ৪/১২৩)
[2] (খতীব ১০/২০৫)

মল খাওয়া পশুর গোস্ত ও দুধ খাওয়া

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْـجَلاَّلَةِ وَأَلْبَانِهَا

‘‘রাসূল (সা.) মল খাওয়া পশুর গোস্ত ও দুধ খেতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৭৮৫ তিরমিযী, হাদীস ১৮২৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩২৪৯)

সিল্কের কাপড় ও চিতা বাঘের চামড়া বসার কাজে ব্যবহার

মু’আবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَرْكَبُوْا الْـخَزَّ وَلاَ النِّمَارَ

‘‘তোমরা সিল্কের কাপড় ও চিতা বাঘের চামড়ার উপর বসো না’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪১২৯)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url