ইসলামী শরীয়া মোতাবেক নবজাতকের জন্মের পর করণীয় (পর্ব-০১) || সন্তান জন্মের পর ইসলামে করণীয় || নবজাতকের জন্য ইসলামের বিধান ||






সন্তান ভূমিষ্টের পর নবজাতকের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় ইসলামের নিদর্শনা

পৃথিবী জুড়ে মুসলিমদের ঘরে ঘরে প্রতি দিন আগমন হচ্ছে নতুন মেহমান ও নতুন সন্তানের। কিন্তু আমরা কজন আছি যারা এ সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের সূচনা লগ্নে ইসলামি আদর্শের অনুশীলন করি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতলানো সব সুন্নতগুলো পালন করি? পরিতাপের বিষয়, আমরা অনেকেই তা করি না। এর কারণ, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতা। তবে এটাও ঠিক যে, ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেকে না-জানার কারণে তা করতে সক্ষম হয় না। আবার কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে ইসলামি আদর্শ ত্যাগ করে বিধর্মী ও অমুসলিমদের অনুসরণ করে, অথচ তারা মুসলিম। যেমন, জন্মদিন পালন, জন্মদিনের কেক কাটা ইত্যাদি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর সঙ্গে নেই কোনো ইসলামের সম্পর্ক; বরং এটা মুসলিম জাতির অধঃপতনের ‘আলামত এবং নিজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমি এ নিবন্ধের মাধ্যমে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। হয়তো কোনো মুসিলম ভাই কাফিরদের অনুসরণ ত্যাগ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করবে। নিজ সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় ইসলামের নিদর্শনা মেনে চলবে।

বিষয় সূচীপত্রঃ

সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রসংশা করা

সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রসংশা করা, তার শুকরিয়া আদায় করা ও সন্তানের জন্য দো‘আ করা। পবিত্র কুরআনে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, সন্তান লাভ করার পর তিনি বলেন,

﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى ٱلۡكِبَرِ إِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَۚ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٩ رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ ٤٠﴾ [ابراهيم: ٣٩،  ٤٠]

“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দো‘আ শ্রবণকারী। হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব! আর আমার দো‘আ কবুল করুন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৯-৪১]

তদ্রূপ আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ীদের সুসংবাদ প্রদান করা, সন্তানের জনক-জননীকে মোবারকবাদ দেওয়া ও তাদের খুশিতে অংশ গ্রহণ করা। পবিত্র কুরআনে এসেছে,

﴿وَٱمۡرَأَتُهُۥ قَآئِمَةٞ فَضَحِكَتۡ فَبَشَّرۡنَٰهَا بِإِسۡحَٰقَ وَمِن وَرَآءِ إِسۡحَٰقَ يَعۡقُوبَ ٧١﴾ [هود: ٧١]

“আর তার (ইবরাহীমের) স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়াকূবের।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৭১]

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রীকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। অন্যত্র বলা হয়েছে,

﴿فَنَادَتۡهُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٞ يُصَلِّي فِي ٱلۡمِحۡرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيَىٰ﴾ [ال عمران: ٣٩]

“অতঃপর ফিরিশতারা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৯]

অন্যত্র বলেন,

﴿يَٰزَكَرِيَّآ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَٰمٍ ٱسۡمُهُۥ يَحۡيَىٰ لَمۡ نَجۡعَل لَّهُۥ مِن قَبۡلُ سَمِيّٗا ٧﴾ [مريم: ٧]

“হে যাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। ইতিঃপূর্বে কাউকে আমি এ নাম  দেই নি।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৭]

এ আয়াত দু‌’টিতে আল্লাহ তা‘আলা যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। অন্যত্র এসেছে,

﴿فَأَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِيفَةٗۖ قَالُواْ لَا تَخَفۡۖ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَٰمٍ عَلِيمٖ ٢٨﴾ [الذاريات: ٢٨]

“এতে তাদের (ফিরিশতাদের) সম্পর্কে সে (ইবরাহীমের স্ত্রী) মনে মনে ভীত হলো। তারা বলল, ভয় পেয়োনা, তারা তাঁকে এক বিদ্বান পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।” [সূরা আয-যারিয়াত, আযাত: ২৮]

এসব আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) জন্মের পর খুশি হওয়া, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং সন্তানের জন্য দো‘আ করা ইসলামের আদর্শ বরং সওয়াবের কাজ। লক্ষণীয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ সময়ও পিতা-মাতা ও মুমিনদের জন্য দো‘আ করতে ভুলেন নি।

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “সন্তান জন্মের সংবাদ পেলে সন্তানের জন্য কল্যাণ ও বরকতের দো‘আ করা কর্তব্য”।[1]

হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কারো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদ শুনলে এ বলে দো‘আ করতেন,

بورك لك في الموهوب، وشكرت الواهب، وبلغ أشده، ورزقت بره

“আল্লাহ তোমার জন্য এ সন্তানে বরকত দান করুন। তুমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। এ সন্তান তাঁর পূর্ণ শক্তিমান অবস্থায় উপনীত হোক। আর আল্লাহ তোমাকে এর সদ্ব্যবহার দান করুন”।[2]

[1] তুহফাতুল মওলূদ
[2] ইমাম নববির আযকার গ্রন্থ দ্রষ্টব্য

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজান দেওয়া

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডান কানে আযান দেওয়া সুন্নত। আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ফাতেমার ঘরে হাসান ইবন আলী ভূমিষ্ঠ হলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে তার কানে আযান দিতে দেখেছি।[1]

আর বাম কানে একামত দেওয়ার ব্যাপারে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা বিশুদ্ধ সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়।

[1] আবু দাউদ, তিরমিযী, সহীহ সূত্রে

সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাহনিক করা

ইমাম নববি রহ. বলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেওয়া, যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে। তিনি বলেন, কতক আলেম বলেছেন, খেজুর সম্ভব না হলে অন্য কোনো মিষ্টি দ্রব্য দিয়ে তাহনিক করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, সবার নিকটই তাহনিক করা মুস্তাহাব, আমার জানা মতে এ ব্যাপারে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেন নি।[1]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, তোমার সঙ্গে কি খেজুর আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর চিবালেন। অতঃপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিব্বা দিয়ে চুসে ও ঠোটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এ দৃশ্য দেখে বলেন, দেখ, আনসারদের খেজুর কত প্রিয়![2]

আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার এক সন্তানের জন্ম হলে, আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন ইবরাহিম। অতঃপর খেজুর দিয়ে তাহনিক করেন, তার জন্য বরকতের দো‘আ করেন এবং আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। এটা আবু মুসার বড় সন্তানের ঘটনা।[3]

[1] শরহে মুহাজ্জাব: ৮/৪২৪
[2] সহীহ মুসলিম
[3] সহীহ বুখারী ও মুসলিম

সন্তান ভুমিষ্টের সপ্তম দিন মাথা মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম দিন হাসান ও হুসাইনের চুল কাটার নির্দেশ দেন এবং চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করেন। ছেলে কিংবা মেয়ে হোক জন্মের সপ্তম দিন চুল কাটা সুন্নত। সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। অতএব, সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, তার চুল কাট ও তার নাম রাখ।[1]

নবজাতকের চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করা সুন্নত। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম হাসানের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা, তার মাথা মুণ্ডন কর ও তার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা কর।[2]

হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, সব বর্ণনাতে রৌপ্যের কথাই এসেছে। (তালখিসুল হাবির) হ্যাঁ, অবশ্য কোনো কোনো বর্ণনাতে রৌপ্য বা স্বর্ণ সদকার কথাও বলা হয়েছে।

[1] আহমদ, তিরমিযী। সহীহ সূত্রে
[2] তিরমিযী

সন্তানের আকিকা করা

আকিকার আভিধানিক অর্থ: আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেওয়া ও আল্লাহর নি‘আমতের মোকাবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় আকিকা হচ্ছে, নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। আলেমদের অনেকেই আকিকা করাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবেহ করেছেন।[1]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, দুটি বকরি জবেহ করেছেন। খায়সামি রহ. বলেছেন, আনাসের বর্ণনা শুদ্ধতার বিচারে বুখারী-মুসলিমের বর্ণনার সমমর্যাদা রাখে।

ইমাম মালেক রহ. তার মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার সন্তান হয় সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, নাম রাখ ও চুল কর্তন কর।[2]

ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, ছেলের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে দু’টি বকরি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। জন্মের সপ্তম দিন, সম্ভব না হলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত। বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, সপ্তম দিন অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর।[3]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ উভয়ের মাধ্যমেই আকিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, বাচ্চার সঙ্গে আকিকার দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ থেকে আকিকা কর এবং তার শরীর থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দাও।[4]

উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি পশু। নর-মাদি যে কোনো এক প্রকার হলেই চলে, এতে কোনো সমস্যা নেই।[5]

অধিকাংশ আলেম আকিকার গোস্ত পাকানো মুস্তাহাব বলেছেন, এমনকি সদকার অংশও। হ্যাঁ, পাকানো ব্যতীত বণ্টন করাও বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে সমমানের দু’টি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি জবেহ কর।[6]

অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মেয়ের পক্ষ থেকে একটি এবং ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি বকরি জবেহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।[7]

আরো জ্ঞাতব্য যে, কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ পশুর কোনো অংশ মজদুরি হিসেবে দেওয়া যাবে না এবং এর চামড়া বা গোশত বিক্রি করা যাবে না বরং এর গোশত খাবে, সদকা করবে ও যাকে ইচ্ছে উপহার হিসেবে প্রদান করবে।

একদল আলেম বলেছেন, কুরবানিতে যেমন অংশিদারিত্ব বৈধ এখানে সে অংশিদারিত্ব বৈধ নয়। যদি কেউ গরু বা উটের মাধ্যমে আকিকা করতে চায় তাকে একজনের পক্ষ থেকে পূর্ণ একটি পশু জবেহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  আমল ও বাণী থেকে এ মতই সঠিক মনে হয়।

ইবন হাযম রহ. বলেন, আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে কোনো অসুবিধা নেই। যেসব বর্ণনায় আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। অধিকন্তু তিনি আবু বকর ইবন আবু শায়বা রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ইমাম যুহরী রহ. বলেছেন, আকিকার পশুর হাড় ও মাথা ভাঙা যাবে; কিন্তু তার রক্তের কোনো অংশ বাচ্চার শরীরে মাখা যাবে না।[8]

[1] আবু দাউদ, সহীহ সূত্রে
[2] আহমদ ও সুনান গ্রন্থসমূহ, তিরমিযী হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[3] তিরমিযী
[4] সহীহ বুখারী
[5] আবু দাউদ, নাসাঈ
[6] আহমদ, তিরমিযী। ইমাম তিরমিযীর নিকট হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
[7] ইমাম তিরমিযীর নিকট হাদীসটি সহীহ ও হাসান।
[8] মুহাল্লা: ৭/৫২৩

সন্তানের আকিকার উপকারিতা

(ক) আকিকা একটি ইবাদাত। এর দ্বারা বাচ্চা দুনিয়াতে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করার সৌভাগ্য অর্জন করে।

(খ) এর ফলে বাচ্চা বন্ধক মুক্ত হয় ও মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করার উপযুক্ত হয়।

(গ) এটা জানের সদকা। এর মাধ্যমে বাচ্চা তার জানের সদকা পেশ করে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা ইসমাঈলের পক্ষে বকরি ফিদইয়া হিসেবে পেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَفَدَيۡنَٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٖ ١٠٧﴾ [الصافات: ١٠٧]

“আর আমরা এক মহান যবেহের (একটি জান্নাতী দুম্বার) বিনিময়ে তাকে (ইসমাঈলকে) মুক্ত করলাম।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০৭]





****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url