ইসলামের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করেন ইহুদী সাংবাদিক গিল তামারি, প্রতিবাদের ঝড়





পরিচয় লুকিয়ে ইহুদি সাংবাদিকের পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশ


পবিত্র মক্কা নগরী ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র শহর। ইসলামী বিধান মতে এখানে কোনো অমুসলিমের প্রবেশের অনুমতি নেই। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ইসরাইলি এক ইহুদি সাংবাদিক নগরী ও সেখানকার আরাফাতের পাহাড়গুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিষয়টি আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারও করেছেন তিনি। গিল তামারি নামের ওই ইসরাইলি সাংবাদিক ভালোভাবেই অবগত ছিলেন, মক্কা ইসলামের একটি পবিত্র শহর এবং অমুসলিমদের জন্য এতে প্রবেশের অনুমতি নেই। তারপরও তিনি গোপনে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন এবং আরাফাতের পাহাড় পরিদর্শন করেন।

সোমবার ইসরাইলি গণমাধ্যম চ্যানেল-১৩ একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। সেখানে এ গণমাধ্যমটির বিশ্ব সংবাদ সম্পাদক গিল তামারি পবিত্র শহরটির চারপাশে গাড়ি চালাচ্ছেন এবং উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ও অবকাঠামোগুলোকে দেখাচ্ছিলেন।

গিল তামারি পবিত্র শহর মক্কার কোথায় কোথায় সফর করেছেন

খিলানযুক্ত মক্কা গেট, যা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত এবং সেখানে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মসজিদ আল হারাম, ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এসব পবিত্র স্থানের পাশ দিয়েও গাড়ি চালিয়ে পথ অতিক্রম করেছেন তামারি। তিনি আরাফাত পর্বতে একটি সেলফিও তুলেছেন। এটা ওই পর্বত যেখানে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিদায় হজের খুতবা প্রদান করেছিলেন। মক্কার উপকণ্ঠে থাকা এ স্থানে মুসলিমরা বার্ষিক হজ যাত্রার সময় সমবেত হন।

মক্কা ও পবিত্র মদিনার কিছু অংশে অমুসলিমদের প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রবেশের চেষ্টা করলে জরিমানা বা নির্বাসনসহ জরিমানা হতে পারে। গত সপ্তাহে তিনজন ইসরাইলি সাংবাদিককে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক আঞ্চলিক সম্মেলন কভার করার অনুমতি দেয়া হয়। অমুসলিম (ইহুদি) তামারি ছিলেন ওই তিন সাংবাদিকের একজন।

ইহুদী সাংবাদিকের মক্কায় প্রবেশে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড়

এরপর অনলাইনে হ্যাশট্যাগ ‘ইহুদি ইন দ্য হারাম’ (মুসলিমদের মসজিদ আল হারাম ও অন্যান্য পবিত্রস্থানের মধ্যে ইহুদির অনুপ্রবেশ) ব্যবহার করে কিছু মুসলিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সফরের ব্যাপক নিন্দা করেছেন। টুইটার ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি তার টুইটে বলেছেন, ‘মক্কার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এবং (আটককৃত ইসলামিক স্কলার) ড. মুসা আল-শরিফের মতো মহান পণ্ডিতরা সৌদি কারাগারে আছেন, কিন্তু এক জায়নবাদী ইহুদি মক্কায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

ইসরাইলপন্থী অনেক ব্যক্তিও ওই ইহুদি সাংবাদিকের গোপন সফরের নিন্দা করেছেন। যেমন: ইসরাইলপন্থী সৌদি ব্লগার মোহাম্মদ সৌদ, যিনি ইসরাইল (!) সফর করেছেন এবং তেল আবিব ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণকে সমর্থন করেছেন। তিনিও বলেছেন, ‘ইসরাইলে অবস্থানকারী আমার প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের একজন সাংবাদিক পবিত্র মুসলিম নগরী মক্কায় প্রবেশ করেছেন এবং কোনো লজ্জা ছাড়াই ছবি প্রকাশ করেছেন। এটা আমার কাছে সিনাগগে (ইহুদি মন্দির) প্রবেশ করা এবং তাওরাত পড়ার মতো মনে হয়েছে। আপনাদের চ্যানেল-১৩-এর জন্য এটা লজ্জাজনক। এভাবে ইসলামকে অসম্মান করতে তামারির লজ্জা হওয়া উচিত ছিলো।

বেশ কিছু ইসরাইলিও তামারির সমালোচনা করেছেন এবং তাকে ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেছেন। অনেকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তাকে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ইহুদি সাংবাদিকের মক্কায় প্রবেশে ইসরায়েলি মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইসলামের পবিত্রতম স্থান মক্কায় প্রবেশ করা ইহুদি সাংবাদিককে মূর্খ আখ্যা দিয়েছেন ইসরায়েলের আঞ্চলিক সহযোগিতা মন্ত্রী এসাউই ফ্রেইজ। পুরো বিষয়টিকে তিনি ইসরায়েল-উপসাগরীয় সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকারক বলে মন্তব্য করেছেন। খবর রয়টার্স।

ইসরায়েলের আঞ্চলিক সহযোগিতা মন্ত্রী এসাউই ফ্রেইজ


গত সোমবার ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ নিউজে ইহুদি সংবাদিক গিল তামারির ১০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তামারি মক্কার বায়তুল্লাহ শরিফের খুব কাছাকাছি স্থান দিয়ে গাড়িতে করে ভ্রমণ করছিলেন। পরে তিনি আরাফার ময়দানেও যান। কোনো অমুসলিমের জন্য এসব জায়গায় যাওয়া নিষিদ্ধ। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তামারি তার পরিচয় লুকিয়ে মুসলমানদের এসব পবিত্র স্থানে গমন করেন এবং ভিডিও করেন।

তার সাথে যে গাইড ছিল তার কাছেও পরিচয় গোপন করেন গিল তামারি। ফলে ভিডিওতে হিব্রু ভাষায় কথা বলার সময় তিনি আস্তে বলতেন আবার কখনো কখনো তার ইসরায়েলি পরিচয় লুকানোর জন্য ইংরেজিতে কথা বলতেন।

ইসরায়েলের আঞ্চলিক সহযোগিতা মন্ত্রী এসাউই ফ্রেইজ কান নামের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে আমি দুঃখিত। তামারি যা করেছে সেটা পুরোপুরি বোকামি। আবার তামারির প্রতিবেদনটি প্রচার করাও ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ক্ষতিকর আচরণ।

ফ্রেইজ আরো বলেন, ২০২০ সালের চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মতো সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে তামারির এই ভিডিও।

ইসরাইলপন্থীরাও তামারির মক্কায় প্রবেশের নিন্দা জানিয়েছে

প্রতিবেদনটি প্রচারের পর টুইটারে হ্যাশট্যাগ ‘মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ইহুদি’ ভাইরাল হয়ে যায়। মোহাম্মদ সৌদ নামের একজন ইসরায়েলপন্থী সৌদি তাতে মন্তব্য করেন, ইসরায়েলে আমার প্রিয় বন্ধুরা, একজন ইহুদি সাংবাদিক ইসলামের পবিত্র মক্কা শহরে প্রবেশ করেছেন এবং সেখানে নির্লজ্জভাবে ভিডিও করেছেন। ইসলাম ধর্মকে এভাবে আঘাত করার জন্য আপনার প্রতি একরাশ ঘৃণা। আপনি অভদ্র।

ইহুদী সাংবাদিক তামারির ক্ষমা প্রার্থনা

জানা গেছে, গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফর কভার করতে জেদ্দায় গিয়েছিলেন তামারি। পরে পরিচয় গোপন করে মক্কায় প্রবেশ করেন তিনি। এর জন্য যথাযথ অনুমোদন নিয়েছিলেন কি-না, তা জানা যায়নি। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তামারি অবশ্য পরে ক্ষমা চান এবং বলেন, মুসলমানদের বিরক্ত করার উদ্দেশ্য তিনি এ ভিডিও বানাননি।

তিনি টুইটারে লেখেন, যদি কেউ এই ভিডিওতে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। মক্কার গুরুত্ব ও ধর্মের সৌন্দর্য প্রদর্শন করাই আমার এ ভিডিওর উদ্দেশ্য ছিল।

ইসরাইলি সাংবাদিককে সহায়তাকারী সৌদি নাগরিক গ্রেফতার

অমুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ পবিত্র শহর মক্কায় প্রবেশে গিল তামারি নামে এক ইসরাইলি-ইহুদি সাংবাদিককে সহায়তা করার জন্য এক সৌদি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে মক্কা পুলিশ। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্টমিডলইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে তামারিকে ‘মার্কিন নাগরিকত্বধারী অমুসলিম সাংবাদিক’ হিসেবে উল্লেখ করা 

সাংবাদিকের মামলাটি ‘তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া’ গ্রহণের জন্য পাবলিক প্রসিকিউশনের কাছেও উল্লেখ করা হয়েছে বলে মক্কা পুলিশ জানিয়েছে। 

মক্কা পুলিশ জোর দিয়ে জানায়,  ‘যারা সৌদিতে আসছেন তাদের অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে চলতে হবে।  বিশেষ করে দুটি পবিত্র মসজিদ এবং পবিত্র স্থানগুলোর ব্যাপারে। এই ধরনের যেকোনো নিয়মের লঙ্ঘন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে যা সহ্য করা হবে না।  প্রাসঙ্গিক বিধানের ভিত্তিতে এ ধরনের অপরাধীদের জন্য শাস্তি প্রয়োগ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ইসরাইলি গণমাধ্যম চ্যানেল থার্টিনে কর্মরত সাংবাদিক গিল তামারি গোপনে মক্কা সফরের সময় আরাফাতের জাবালে রহমত পর্বতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানের ভিডিও ধারণ করেন।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আঞ্চলিক সম্মেলনের কভার করার জন্য অন্য দুই ইসরাইলি সাংবাদিকের সঙ্গে সৌদি আরবে প্রবেশের একটি বিশেষ অনুমতি পেয়েছিলেন গিল তামারি।

সোমবার চ্যানেল থার্টিনে  প্রকাশিত প্রতিবেদনে তামারি উল্লেখ করেছেন, অমুসলিমদের মক্কায় প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে তিনি কীভাবে শহরে প্রবেশ করতে পেরেছেন এবং একজন মুসলিম চালকের সঙ্গে আরাফাত পর্বতে যেতে পেরেছেন তা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।

অবশ্য তামারি  জোর দিয়ে বলেছেন যে, ওই গাড়ি চালক জানতেন না যে তিনি একজন ইসরাইলি সাংবাদিক কারণ তিনি শুধু ইংরেজিতে কথা বলেছিলেন।

অমুসলিমদের মক্কা নগরীতে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। মদিনা শহরেও কোনো কোনো অংশে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মদিনায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তামারির ওই প্রতিবেদন স্কুপ নিউজ হিসেবে প্রচার করা হয়। বলা হয়, তামারিই প্রথম ইহুদি-ইসরাইলি সাংবাদিক, যিনি হজের সময় প্রতিবেদন করেছেন। 

প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর টুইটারে ‘মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ইহুদি’ হ্যাশট্যাগ  ট্রেন্ডিংসহ টুইটারে এর ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। 




***************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url