কেমন ছিল রাসুল (সা:) এর সালাত || রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নামাজ || (পর্ব - ১৬)




ইশরাক্ব ও চাশতের ছালাত, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ছালাত এবং ছালাতুল ইস্তিস্কা আদায়ের নিয়ম

মহান আল্লাহর বাণী- ‘সফলকাম হবে সেই সব মুমিন যারা সালাতে রত থাকে ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে’। অতএব গভীরভাবে চিন্তা করুন! আপনার প্রভু আল্লাহ কিজন্য আপনাকে সৃষ্টি করেছেন? মনে রাখবেন তিনি আপনাকে বিনা প্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি। তাঁর সৃষ্ট এ সুন্দর সৃষ্টি জগতকে সুন্দরভাবে আবাদ করার দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়েই তিনি আপনাকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। কে এখানে কত বেশী সুন্দর আমল করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার হুকুম যথাযথভাবে পালন করে, তা পরীক্ষার জন্য আল্লাহ মউত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন। আপনার হাত-পা, চক্ষু-কর্ণ, নাসিকা-জিহবা সর্বোপরি যে মূল্যবান জ্ঞান-সম্পদ এবং ভাষা ও চিন্তাশক্তির নেয়ামত দান করে আপনাকে আপনার প্রভু এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তার যথার্থ ব্যবহার আপনি করেছেন কি-না, তার কড়ায়-গন্ডায় হিসাব আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার নিকটে দিতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ও জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ও প্রার্থনার অনুষ্ঠান ‘সালাতে’ রত হই ‘তাকবীরে তাহরীমা’-র মাধ্যমে দুনিয়ার সবকিছুকে হারাম করে একনিষ্ঠভাবে বিনম্রচিত্তে বিগলিত হৃদয়ে!! শ্রেষ্ট ইবাদত সালাত বা নামাজে সফলতার জন্য চাই সালাতের সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ। আর এই সঠিক পদ্ধতিটি পাওয়া যাবে কেবলমাত্র হযরত মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা:) এর সালাত বা নামাজের মধ্যেই। তাই আমরা এখানে রাসুল (সা:) এর সালাত বা নামাজ কেমন ছিল এই বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করবো। পুরো আলোচনাটিই নেওয়া হয়েছে ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত “ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)” নামক গ্রন্থ থেকে। আল্লাহ আমাদেরকে সালাত বা নামাজের সকল বিষয়ে সঠিকভাবে জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।।

ইশরাক্ব ও চাশতের ছালাত

‘শুরূক্ব’ অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। ‘ইশরাক্ব’ অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া ‘মুস্তাহাব’। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন।[1]

ফযীলত: আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে পড়ে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও ওমরাহর নেকী হয়।[2] ইমাম নববী বলেন, ‘ইবনু ওমর (রাঃ) ছালাতুয যোহাকে বিদ‘আত বলেছেন’ তার অর্থ হ’ল, এটি নিয়মিত মসজিদে পড়া বিদ‘আত।[3] বুরাইদা আসলামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হ’ল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা। ছাহাবীগণ বললেন, কার শক্তি আছে এই কাজ করার, হে আল্লাহর নবী? তিনি বললেন, চাশতের দু’রাক‘আত ছালাতই এজন্য যথেষ্ট।[4] চাশতের ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত পড়েছিলেন।[5] প্রতি দু’রাক‘আত অন্তর সালাম ফিরাতে হয়।

উল্লেখ্য যে, দুপুরের পূর্বের এই ছালাতকেই ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলে।[6] মাগরিবের পরের ছয়, বিশ বা যে কোন পরিমাণ নফল ছালাতকে আউওয়াবীন বলার হাদীছগুলি যঈফ। [7]

[1] . মির‘আত শরহ মিশকাত ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮; ৪/৩৪৪-৫৮।
[2] . তিরমিযী হা/৫৮৬, মিশকাত হা/৯৭১ ‘ছালাতের পরে যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[3] . মির‘আত ৪/৩৪৬।
[4] . আবুদাঊদ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১ ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।
[5] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩০৯ ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।
[6] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২; মির‘আত ৪/৩৫১।
[7] . তিরমিযী, মিশকাত ১১৭৩-৭৪, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯, ৪৬৭, ৪৬১৭।

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ছালাত

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ কালে যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ছালাতুল কুসূফখুসূফ বলা হয়। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহর অপার কুদরতের অন্যতম নিদর্শন। এই গ্রহণ শুরু হ’লে আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভীতি সহকারে এর ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে জামা‘আত সহ দু’রাক‘আত ছালাত দীর্ঘ ক্বিরাআত ও ক্বিয়াম সহকারে আদায় করতে হয় এবং শেষে খুৎবা দিতে হয়।[1] এই ছালাতের বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যাতে দু’রাক‘আত ছালাতে (২+২) ৪টি রুকূ হয় এবং এটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ।[2]

পদ্ধতি: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময়ে একবার সূর্য গ্রহণ হ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করেন ও লোকেরাও তাঁর সাথে ছালাত আদায় করে। প্রথমে তিনি ছালাতে দাঁড়ালেন এবং সূরা বাক্বারাহর মত দীর্ঘ ক্বিরাআত করলেন। অতঃপর (১) দীর্ঘ রুকূ করলেন। তারপর মাথা তুলে ক্বিরাআত করতে লাগলেন। তবে প্রথম ক্বিরাআতের চেয়ে কিছুটা কম ক্বিরাআত করে (২) রুকূতে গেলেন। এবারের রুকূ প্রথম রুকূর চেয়ে কিছুটা কম হ’ল। তারপর তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে সিজদা করলেন। অতঃপর সিজদা শেষে তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং লম্বা ক্বিরাআত করলেন। তবে প্রথমের তুলনায় কিছুটা ছোট। এরপর তিনি (৩) রুকূ করলেন, যা আগের রুকূর চেয়ে কম ছিল। রুকূ থেকে মাথা তুলে পুনরায় ক্বিরাআত করলেন। যা প্রথমের তুলনায় ছোট ছিল। অতঃপর তিনি (৪) রুকূ করলেন ও মাথা তুলে সিজদায় গেলেন। পরিশেষে সালাম ফিরালেন।

ইতিমধ্যে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। অতঃপর ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে তিনি খুৎবা দিলেন এবং হামদ ও ছানা শেষে বললেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি বিশেষ নিদর্শন। কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে এই গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দিবে, ছালাত আদায় করবে ও ছাদাক্বা করবে। ... আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহ’লে তোমরা অল্প হাসতে ও অধিক ক্রন্দন করতে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অতএব যখন তোমরা সূর্য গ্রহণ দেখবে, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফারে রত হবে। [3]

বিজ্ঞানের যুক্তি: সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি বেশী মাত্রায় পৃথিবীর উপরে পতিত হয়। এর প্রচন্ড টানে অন্য কোন গ্রহ থেকে পাথর বা কোন মহাজাগতিক বস্ত্ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে পৃথিবী ধ্বংসের একটা কারণও হ’তে পারে। ১৯০৮ সালের ৩০ শে জুন ১২ মেগাটন টিএনটি ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশালাকার জ্বলন্ত পাথর (মিটিওরাইট) রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জঙ্গলে পতিত হয়ে ৪০ মাইল ব্যাস সম্পন্ন ধ্বংসগোলক সৃষ্টি করেছিল। আগুনের লেলিহান শিখায় লক্ষ লক্ষ গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।[4]

কুসূফ’ ও ‘খুসূফ’-এর ছালাত আদায়ের মাধ্যমে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব হ’তে আল্লাহর নিকটে পানাহ চাওয়া হয়। এই ছালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য হ’ল, আল্লাহর এই সব সৃষ্টিকে পূজা না করা এবং ভয় না করা। আল্লাহ বলেন, لاَ تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا ِللهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ ‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছসালাত ৪১/৩৭)।

[1] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮২-৮৩, ‘চন্দ্র গ্রহণের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৫০।
[2] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮০, ৮২, টীকা-আলবানী দ্রঃ পৃঃ ১/৪৬৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫।
[3] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮২-৮৪। উল্লেখ্য যে, ঘটনাক্রমে সূর্য গ্রহণের দিন নবীপুত্র ইবরাহীম ১৮ মাস বয়সে মদীনায় ইন্তেকাল করেন (১০ম হিজরী ২৯ শাওয়াল সোমবার ২৭শে জানুয়ারী ৬৩২ খৃঃ)। সে সময় আরবদের মধ্যে ধারণা প্রচলিত ছিল যে, উচ্চ সম্মানিত কোন মানুষের মৃত্যুর কারণেই সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে’ (বুখারী হা/১০৬৩, ‘কুসূফ’ অধ্যায় ১৭ অনুচ্ছেদ; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫; সুলায়মান মানছূরপুরী, রহমাতুল লিল আলামীন (দিল্লী : ১৯৮০ খৃঃ) ২/৯৭-৯৮ পৃঃ।
[4] . ঢাকা, দৈনিক ইনকিলাব, ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০০, পৃঃ ১১। উল্লেখ্য যে, ১০ লাখ টনে এক মেগাটন হয়।


ছালাতুল ইস্তিস্কা

ইস্তিস্‌ক্বা অর্থ: পান করার জন্য পানি প্রার্থনা করা। শারঈ পরিভাষায় ব্যাপক খরা ও অনাবৃষ্টির সময় বিশেষ পদ্ধতিতে ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে পানি প্রার্থনা করাকে ‘ছালাতুল ইস্তিস্ক্বা’ বলা হয়। ৬ষ্ঠ হিজরীর রামাযান মাসে সর্বপ্রথম মদ্বীনায় ইস্তিসক্বার ছালাতের প্রবর্তন হয়।[1]

বিবরণ: মলিন ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে চাদর গায়ে দিয়ে বিনয়-নম্র চিত্তে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবে। সাথে ইমামের জন্য মিম্বর নিতে পারবে। অতঃপর নিম্নের যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বনে ইস্তিসক্বার ছালাত আদায় করবে।

পদ্ধতি-১: ঈদের ছালাতের ন্যায় আযান ও ইক্বামত ছাড়াই প্রথমে জামা‘আত সহ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।[2] ইমাম সরবে ক্বিরাআত করবেন। প্রথম রাক‘আতে সূরা আ‘লা ও দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা গাশিয়াহ কিংবা অন্য যে কোন সূরা পড়বেন। অতঃপর ছালাত শেষে ইমাম মিম্বরে বসে বা দাঁড়িয়ে অথবা মিম্বর ছাড়াই মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লা-হু আকবর, আলহামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আলামীন ওয়াছ ছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’ বলে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ শেষে মুছল্লীদের প্রতি ইস্তিস্ক্বার গুরুত্ব সম্পর্কে ঈমান বর্ধক উপদেশসহ সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। [3] অতঃপর ইমাম ও মুক্তাদী সকলে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে স্ব স্ব চাদর উল্টাবে। অর্থাৎ চাদরের নীচের অংশ উপরের দিকে উল্টে নিবেন এবং চাদরের ডান পাশ বাম কাঁধে ও বাম পাশ ডান কাঁধে রাখবে। অতঃপর দু’হাত উপুড় অবস্থায় সোজাভাবে চেহারা বরাবর উঁচু রাখবে, যেন বগল খুলে যায়। [4]

অতঃপর নিম্নের দো‘আ সমূহ পাঠ করবেন-

(1) اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ، مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ- اَللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ عَلَيْنَا قُوَّةً وَّ بَلاَغًا إِلَى حِيْنٍ-

(১) উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, আররহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ইয়াফ‘আলু মা ইউরীদু। আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আনতাল গানিইয়ু ওয়া নাহ্নুল ফুক্বারা-উ। আনঝিল ‘আলায়নাল গায়ছা ওয়াজ‘আল মা আনঝালতা ‘আলায়না কুউওয়াতাঁও ওয়া বালা-গান ইলা হীন।

অনুবাদ: সকল প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। যিনি করুণাময় ও কৃপানিধান। যিনি বিচার দিবসের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই-ই করেন। হে প্রভু! আপনি আল্লাহ। আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আপনি মুখাপেক্ষীহীন ও আমরা সবাই মুখাপেক্ষী। আমাদের উপরে আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন! যে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তা যেন আমাদের জন্য শক্তির কারণ হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়’।[5]

(2) اَللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَاحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ-

(২) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাস্ক্বে ‘ইবা-দাকা ওয়া বাহা-এমাকা ওয়ানশুর রহমাতাকা ওয়াহ্ইয়ে বালাদাকাল মাইয়েতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পান করান আপনার বান্দাদেরকে ও জীবজন্তু সমূহকে এবং আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন ও আপনার মৃত জনপদকে পুনর্জীবিত করুন’। [6]

(3) اَللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ-

(৩) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাসক্বেনা গায়ছাম মুগীছাম মারীআম মারী‘আ, না-ফে‘আন গায়রা যা-র্রিন ‘আ-জেলান গায়রা আ-জেলিন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দান করুন, যা চাহিদা পূরণকারী, পিপাসা নিবারণকারী ও শস্য উৎপাদনকারী। যা ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং যা দেরীতে নয় বরং দ্রুত আগমনকারী’।[7]

এই সময় বৃষ্টি দেখলে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)।[8] বৃষ্টিতে চাদর ভিজিয়ে আল্লাহর বিশেষ রহমত মনে করে আগ্রহের সাথে তা বরণ করে নিতে হবে। [9]

পদ্ধতি-২: প্রথমে সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবেন।[10] অতঃপর দাঁড়িয়ে পূর্বে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী দো‘আ করতে থাকবেন।

তাৎপর্য: চাদর উল্টানোর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যেন খরা উল্টে গিয়ে বৃষ্টিপাত হয়।[11]এছাড়াও রয়েছে রাজাধিরাজ আল্লাহর সামনে বান্দার পরিবর্তিত অসহায় অবস্থার ইঙ্গিত। দাঁড়িয়ে দু’হাত উপুড় ও সোজাভাবে ধরে রাখার মধ্যে রয়েছে পালনকর্তা আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ ও একান্তভাবে আত্মনিবেদনের ইঙ্গিত। ময়দানে বেরিয়ে একত্রিত হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে একই বিষয়ে হাযারো বান্দার ঐকান্তিক প্রার্থনার গুরুত্ববহ ইঙ্গিত।

ছালাত ব্যতীত অন্যভাবে বৃষ্টি প্রার্থনা
(ক) জুম‘আর খুৎবা দানের সময় খত্বীব দু’হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করবেন। একই সাথে মুছল্লীগণ হাত উঠিয়ে দো‘আ করবেন (অথবা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন)। এ সময়ের সংক্ষিপ্ত দো‘আ হ’ল اَللَّهُمَّ اَغِثْنَا আল্লা-হুম্মা আগিছনা (হে আল্লাহ! আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন) কমপক্ষে ৩ বার।[12] অথবা اَللَّهُمَّ اسْقِنَا আল্লা-হুম্মাস্ক্বেনা (হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি পান করান) কমপক্ষে ৩ বার। [13]

(খ) জুম‘আ ও ইস্তিসক্বার ছালাত ছাড়াই স্রেফ দো‘আর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। এ সময় দু’হাত তুলে বর্ণিত ৩নং দো‘আটি ও অন্যান্য দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। [14]

অন্যান্য জ্ঞাতব্য:
(ক) জীবিত কোন মুত্তাক্বী পরহেযগার ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে ওমর (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন।[15] কিন্তু কোন মৃত ব্যক্তির দোহাই বা অসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবেনা। কারণ এটি হ’ল সবচেয়ে বড় শিরক।

(খ) ইস্তিস্ক্বার খুৎবা সাধারণ খুৎবার মত নয়। এটির সবটুকুই কেবল আকুতিভরা দো‘আ আর তাকবীর মাত্র। [16]

(গ) অতিবৃষ্টি হ’লে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। [17] আর তাতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করে বলবে, اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَاআল্লা-হুম্মা হাওয়া-লায়না অলা ‘আলায়না (হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও। আমাদের উপর দিয়ো না)। [18]

[1] . মির‘আত ৫/১৭০।
[2] . আবুদাঊদ হা/১১৬১, ৬৫; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৯৭; মির‘আত ৫/১৭৯।
[3] . আবুদাঊদ হা/১১৬৫, ইবনু আববাস (রাঃ) হতে; বুখারী হা/১০২২ ‘দাঁড়িয়ে ইস্তিস্কার দো‘আ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৫; মির‘আত ৫/১৮৯।
[4] . আবুদাঊদ হা/১১৬৪, ৬৮; ঐ, মিশকাত হা/১৫০৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬১; মির‘আত ৫/১৭৬।
[5] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসকা’ অনুচ্ছেদ-৫২।।
[6] . মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসক্বা’ অনুচ্ছেদ-৫২।
[7] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৭।
[8] . বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০।
[9] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৫০১।
[10] . আবুদাঊদ হা/১১৬৫, ৭৩; মিশকাত হা/১৫০৮; মির‘আত ৫/১৭৮।
[11] . হাকেম, বায়হাক্বী, মির‘আত ৫/১৭৬।
[12] . বুখারী হা/১০১৪, ১০২৯ ‘ইস্তিসক্বা’ অধ্যায়-১৫, অনুচ্ছেদ-৭, ২১।
[13] . বুখারী হা/১০১৩, অনুচ্ছেদ-৬।
[14] . ইবনু মাজাহ হা/১২৬৯।
[15] . বুখারী হা/১০১০, মিশকাত হা/১৫০৯।
[16] . আবুদাঊদ হা/১১৬৫।
[17] . বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০।
[18] . বুখারী হা/৯৩৩, ১০২১; আবুদাঊদ হা/১১৭৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯০২, অধ্যায়-২৯, অনুচ্ছেদ-৭




************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও নবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url