ইউসুফ (আঃ)-এর জীবনী (৯ম পর্ব) || ইয়াকূব-পরিবারের মিসর উপস্থিতি ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন || ইউসুফ (আঃ) এর প্রশংসায় আল্লাহ তা‘আলা ||





ইউসুফ (আঃ)-এর ব্যবহৃত জামা গন্ধে ইয়াকূব (আঃ) এর দৃষ্টিশক্তি ফেরা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য

ইউসুফ (আঃ)-এর ব্যবহৃত জামা প্রেরণ ও তা মুখের উপরে রাখার মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার এ বিষয়টির উপর বর্তমানে গবেষণা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, মানবদেহের ঘামের মধ্যে এমন উপাদান আছে যার প্রতিক্রিয়ায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসা সম্ভব। উক্ত গবেষণার মূল সূত্র ছিল ইউসুফ (আঃ)-এর ব্যবহৃত জামা মুখের উপরে রাখার মাধ্যমে ইয়াকূব (আঃ)-এর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার কুরআনী বর্ণনা।[31]

[31]. সূরা ইউসুফ ৮৪ এবং ৯৩-৯৬ আয়াতগুলি গবেষণা করে মিসরের সরকারী ‘ন্যাশনাল সেন্টার অফ রিসার্চেস ইন ইজিপ্ট’-এর মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. আবদুল বাসিত মুহাম্মাদ মানুষের দেহের ঘাম থেকে একটি ‘আইড্রপ’ আবিষ্কার করেন, যা দিয়ে ২৫০ জন রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, কোনরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ৯০%-এর বেশী চোখের ছানি রোগ সেরে যায় ও তারা দৃষ্টি ফিরে পায়। ইতিমধ্যে এই ঔষধটি ‘ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল প্যাটেন্ট ১৯৯১’ এবং ‘আমেরিকান প্যাটেন্ট ১৯৯৩’ লাভ করেছে। এছাড়া একটি সুইস ঔষধ কোম্পানীর সাথে তাঁর চুক্তি হয়েছে এই মর্মে যে, তারা তাদের ঔষধের প্যাকেটের উপর ‘মেডিসিন অফ কুরআন’ লিখে তা বাজারে ছাড়বে।- সূত্র: ইন্টারনেট।

ইয়াকূব (আঃ) এর নিকট ছেলেদের ক্ষমা প্রার্থনা

প্রকৃত ঘটনা সবার নিকটে পরিষ্কার হয়ে গেলে লজ্জিত ও অনুতপ্ত বিমাতা ভাইয়েরা সবাই এসে পিতার কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং আল্লাহর নিকটে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুরোধ করল। যেমন আল্লাহ বলেন,

قَالُواْ يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِيْنَ- قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ-(يوسف ৯৭-৯৮)-

‘তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের অপরাধ মার্জনার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আমরা গোনাহগার ছিলাম’। ‘পিতা বললেন, সত্বর আমি আমার পালনকর্তার নিকটে তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইব। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইউসুফ ১২/৯৭-৯৮)।

ইয়াকূব-পরিবারের মিসর উপস্থিতি ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন

৯৩ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইউসুফ তার ভাইদেরকে তাদের পরিবারবর্গসহ মিসরে আসতে বলেছিলেন। মিসরে তাদের এই যাওয়াটাই ছিল কেন‘আন থেকে স্থায়ীভাবে তাদের মিসরে হিজরত। আরবের ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিল, ইয়াকূব পরিবারের মিসরে হিজরতের কারণ কি? তার জবাব এটাই যে, ইউসুফের আহবানে ইয়াকূব পরিবার স্থায়ীভাবে মিসরে হিজরত করেছিল এবং প্রায় চারশ’ বছর পরে সেখানে মূসা (আঃ)-এর আবির্ভাবকালে তাদের সংখ্যা ছিল মিসরের মোট জনসংখ্যার ১০ হ’তে ২০ শতাংশের মত।[32]

মিসর থেকে ভাইদের কেন‘আনে ফেরৎ পাঠানোর সময় কোন কোন বর্ণনা মোতাবেক ইউসুফ (আঃ) দু’শো উট বোঝাই খাদ্য-শস্য ও মালামাল উপঢৌকন স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা যাবতীয় দায়-দেনা চুকিয়ে ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মিসরে স্থায়ীভাবে ফিরে আসতে পারে। ইয়াকূব পরিবার সেভাবেই প্রস্তুতি নিলেন। অতঃপর গোটা পরিবার বিরাট কাফেলা নিয়ে কেন‘আন ছেড়ে মিসর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। এই সময় তাদের সংখ্যা নারী-পুরুষ সব মিলে ৭০ জন অথবা তার অধিক ছিল বলে বিভিন্ন রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে।[33]

অপর দিকে মিসর পৌঁছার সময় নিকটবর্তী হলে ইউসুফ (আঃ) ও নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাঁদের অভ্যর্থনার জন্য বিশাল আয়োজন করেন। অতঃপর পিতা-মাতা ও ভাইদের নিয়ে তিনি শাহী মহলে প্রবেশ করেন। ইউসুফের শৈশবকালে তার মা মৃত্যুবরণ করার কারণে তার আপন খালাকে পিতা বিবাহ করেন, ফলে তিনিই মা হিসাবে পিতার সাথে আগমন করেন। তবে কেউ বলেছেন, তাঁর নিজের মা এসেছিলেন।[34] অতঃপর তিনি পিতা-মাতাকে তাঁর সিংহাসনে বসালেন। এর পরবর্তী ঘটনা হল শৈশবে দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনন্য দৃশ্য। এ বিষয়ে বর্ণিত কুরআনী ভাষ্য নিম্নরূপ:

فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلَى يُوْسُفَ آوَى إِلَيْهِ أَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُوْا مِصْرَ إِنْ شَآء اللهُ آمِنِيْنَ- وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّوْا لَهُ سُجَّداً وَقَالَ يَا أَبَتِ هَـذَا تَأْوِيْلُ رُؤْيَايَ مِنْ قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّيْ حَقّاً وَقَدْ أَحْسَنَ بِيْ إِذْ أَخْرَجَنِيْ مِنَ السِّجْنِ وَجَاءَ بِكُم مِّنَ الْبَدْوِ مِنْ بَعْدِ أَن نَّزَغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِيْ وَبَيْنَ إِخْوَتِيْ إِنَّ رَبِّيْ لَطِيفٌ لِّمَا يَشَآءُ، إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ- (يوسف ৯৯-১০০)-

‘অতঃপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছল, তখন ইউসুফ পিতা-মাতাকে নিজের কাছে নিল এবং বলল, আল্লাহ চাহেন তো নিঃশংকচিত্তে মিসরে প্রবেশ করুন’। ‘অতঃপর সে তাঁর পিতা-মাতাকে সিংহাসনে বসালো এবং তারা সবাই তার সম্মুখে সিজদাবনত হল। সে বলল, হে পিতা! এটিই হচ্ছে আমার ইতিপূর্বে দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার পালনকর্তা একে বাস্তবে রূপায়িত করেছেন। তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমাকে জেল থেকে বের করেছেন এবং আপনাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে দেওয়ার পর। আমার পালনকর্তা যা চান, সুক্ষ্ম কৌশলে তা সম্পন্ন করেন। নিশ্চয়ই তিনি বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (ইউসুফ ১২/৯৯-১০০)।

দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর পিতা-পুত্রের মিলনের সময় ইউসুফের কথাগুলি লক্ষণীয়। তিনি এখানে ভাইদের দ্বারা অন্ধকূপে নিক্ষেপের কথা এবং পরবর্তীতে যোলায়খার চক্রান্তে কারাগারে নিক্ষেপের কথা চেপে গিয়ে কেবল কারামুক্তি থেকে বক্তব্য শুরু করেছেন। তারপর পিতাকে গ্রাম থেকে শহরে এনে মিলনের কথা ও উন্নত জীবনে পদার্পণের কথা বলেছেন। অতঃপর ভাইদের হিংসা ও চক্রান্তের দোষটি শয়তানের উপরে চাপিয়ে দিয়ে ভাইদেরকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন। সবকিছুতে আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি উচ্চাঙ্গের বর্ণনা এবং এতে মহানুভব ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ইয়াকূবী শরী‘আতে সম্মানের সিজদা বা সিজদায়ে তা‘যীমী জায়েয ছিল। কিন্তু মুহাম্মাদী শরী‘আতে এটা হারাম করা হয়েছে। এমনকি সালাম করার সময় মাথা নত করা বা মাথা ঝুঁকানোও হারাম। এর মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের প্রতি সিজদা করার দূরতম সম্ভাবনাকেও নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।

[32]. মাওলানা মওদূদী, রাসায়েল ও মাসায়েল (ঢাকাঃ ১৯৯৬), ৫/২৫০ পৃঃ।
[33]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/২০৪।
[34]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ১/১৮৪, ২০৪।

ইউসুফ (আঃ) এর দো‘আ

এভাবে ইউসুফের শৈশবকালীন স্বপ্ন যখন স্বার্থক হ’ল, তখন তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে আল্লাহর নিকটে প্রাণভরে দো‘আ করেন নিম্নোক্ত ভাষায়-

رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِيْ مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِيْ مِنْ تَأْوِيْلِ الأَحَادِيْثِ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ أَنْتَ وَلِيِّيْ فِي الدُّنُيَا وَالآخِرَةِ تَوَفَّنِيْ مُسْلِماً وَّأَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ-(يوسف ১০১)-

‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন এবং আমাকে (স্বপ্নব্যাখ্যা সহ) বাণীসমূহের নিগুঢ় তত্ত্ব ব্যাখ্যা দানের শিক্ষা প্রদান করেছেন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের হে সৃষ্টিকর্তা! আপনিই আমার কার্যনির্বাহী দুনিয়া ও আখেরাতে। আপনি আমাকে ‘মুসলিম’ হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিত করুন’ (ইউসুফ ১২/১০১)।

ইউসুফের উক্ত দো‘আর মধ্যে যুগে যুগে সকল আল্লাহভীরু মযলূমের হৃদয় উৎসারিত প্রার্থনা ফুটে বেরিয়েছে। সকল অবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসাকারী ও সমর্পিত চিত্ত ব্যক্তির জন্য ইউসুফ (আঃ)-এর জীবনী নিঃসন্দেহে একটি অনন্য সাধারণ প্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত।

ইউসুফ (আঃ) এর প্রশংসায় আল্লাহ তা‘আলা

সূরা আল-আন‘আমের ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াতে আল্লাহ পাক একই স্থানে পরপর ১৮ জন নবীর নাম উল্লেখ পূর্বক তাঁদের প্রশংসা করে বলেন, আমি তাদের প্রত্যেককে সুপথ প্রদর্শন করেছি, সৎকর্মশীল হিসাবে তাদের প্রতিদান দিয়েছি এবং তাদের প্রত্যেককে আমরা সারা বিশ্বের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ) -(৮৬)। তারা প্রত্যেকে ছিল পুণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত (كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ) -(৮৫)। বস্ত্ততঃ ঐ ১৮ জন প্রশংসিত নবীর মধ্যে হযরত ইউসুফও রয়েছেন (আন‘আম ৬/৮৪)।

ইউসুফকে আল্লাহ সম্ভবতঃ ছহীফা সমূহ প্রদান করেছিলেন, যেমন ইতিপূর্বে ইবরাহীম (আঃ)-কে প্রদান করা হয়েছিল (আ‘লা ৮৭/১৯)। আল্লাহ তাঁকে নবুঅত ও হুকূমত উভয় মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। মানুষ তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকলেও মিসরবাসী সকলে তাঁর দ্বীন কবুল করেনি। উক্ত প্রসঙ্গে আল্লাহ ইউসুফের প্রশংসা করেন এবং মানুষের সন্দেহবাদের নিন্দা করে বলেন,

وَلَقَدْ جَاءَكُمْ يُوْسُفُ مِنْ قَبْلُ بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا زِلْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّمَّا جَاءَكُمْ بِهِ حَتَّى إِذَا هَلَكَ قُلْتُمْ لَنْ يَّبْعَثَ الله ُمِنْ بَعْدِهِ رَسُوْلاً كَذَلِكَ يُضِلُّ الله ُمَنْ هُوَ مُسْرِفٌ مُّرْتَابٌ-

‘ইতিপূর্বে তোমাদের কাছে ইউসুফ সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিল। অতঃপর তোমরা তার আনীত বিষয়ে সর্বদা সন্দেহ পোষণ করতে থাক। অবশেষে যখন সে মারা গেল, তখন তোমরা বললে, আল্লাহ ইউসুফের পরে কখনো আর কাউকে রাসূল রূপে পাঠাবেন না... (অথচ রিসালাতের ধারা অব্যাহত ছিল)। আল্লাহ এমনিভাবে সীমালংঘনকারী ও সন্দেহবাদীদের পথভ্রষ্ট করে থাকেন’ (মুমিন ৪০/৩৪)।

শেষনবীর প্রতি আল্লাহর সম্বোধন ও সান্ত্বনা প্রদান

৩ থেকে ১০১ পর্যন্ত ৯৯টি আয়াতে ইউসুফের কাহিনী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার পর আল্লাহ পাক শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেন, ذَلِكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُوْنَ- ‘এগুলি হ’ল গায়েবী খবর, যা আমরা তোমার কাছে প্রত্যাদেশ করলাম। তুমি তাদের নিকটে (অর্থাৎ ইউসুফ ভ্রাতাদের নিকটে) ছিলে না, যখন তারা তাদের পরিকল্পনা অাঁটছিল এবং ষড়যন্ত্র করছিল’ (ইউসুফ ১২/১০২)।

এর দ্বারা আল্লাহ একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, প্রায় আড়াই হাযার বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ইউসুফ ও ইয়াকূব পরিবারের এই অলৌকিক ঘটনা ও অশ্রুতপূর্ব কাহিনী সবিস্তারে ও সঠিকভাবে বর্ণনা করা নবুঅতে মুহাম্মাদীর এক অকাট্য দলীল। কুরআন অবতরণের পূর্বে এ ঘটনা মক্কাবাসী মোটেই জানত না। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, تِلْكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَا إِلَيْكَ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلاَ قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَـذَا، ‘ইতিপূর্বে (নবীদের) এ সকল ঘটনা না তুমি জানতে, না তোমার স্বজাতি জানত’ (হূদ ১১/৪৯)। ইমাম বাগাভী (রহঃ) বলেন, (মদীনা থেকে প্রেরিত) ইহুদী প্রতিনিধি এবং কুরায়েশ নেতারা একত্রিতভাবে রাসূলকে ইউসুফ ও ইয়াকূব-পরিবারের ঘটনাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তাদের প্রশ্নের জবাবে অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত উপরোক্ত ঘটনাবলী সুন্দরভাবে বলে দেওয়া সত্ত্বেও এবং তা তাওরাতের অনুকূলে হওয়া সত্ত্বেও যখন তারা অবিশ্বাস ও কুফরীতে অটল রইল, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্তরে দারুন আঘাত পেলেন। এ সময় আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে পরবর্তী আয়াত নাযিল করে বলেন, وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ- ‘তুমি যতই আকাংখা কর, অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপনকারী নয়’ (ইউসুফ ১২/১০৩; তাফসীরে বাগাভী)। অর্থাৎ নবী হিসাবে একমাত্র কাজ হ’ল প্রচার করা ও সাধ্যমত সংশোধনের চেষ্টা করা। চেষ্টাকে সফল করার দায়িত্ব বা ক্ষমতা কোনটাই নবীর এখতিয়ারাধীন নয়। কাজেই লোকদের অবিশ্বাস বা অস্বীকারে দুঃখ করার কিছুই নেই। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ وَمَا أَنْتَ عَلَيْهِمْ بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْآنِ مَن يَّخَافُ وَعِيْدِ-

‘তারা যা বলে আমরা তা সম্যক অবগত আছি। তুমি তাদের উপরে যবরদস্তিকারী নও। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দাও’ (ক্বাফ ৫০/৪৫)।


ইউসুফ (আঃ) এর সুন্দরতম জীবন কাহিনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-



************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url