সাহাবাগণের জীবনকথা-২২ || হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা)-এর জীবনী (৬ষ্ট পর্ব)





খলীফা হযরত উসমানের (রা) শাহাদাত বরণ ও উটের যুদ্ধ

বিদ্রোহীদের হাতে খলীফা হযরত উসমানের (রা) শাহাদাত বরণ ইসলামের ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ঘটনা। এরই প্রেক্ষিতে উম্মুল মুমিনীন হযরত ‘আয়িশা (রা) সরাসরি তৎকালী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আর তাঁর প্রেক্ষাপটে ঘটে আর এক হৃদয়বিদারক ঘটনা উটের যুদ্ধ। হযরত ‘উসমানের (রা) শাহাদাত পরবর্তী ঘটনাবলীতে তাঁর এভাবে জড়িয়ে পড়া কতটুকু ঠিক বা বেঠিক ছিল, সে বিষয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্তে যাবনা। আমরা শুধু বিশ্বাস করবো, তাঁর সকল কর্ম-প্রচেষ্টা নিবন্ধ ছিল দীন ও উম্মাহর কল্যাণের জন্য। ঐতিহাসিক এ সকল ঘটনা বুঝার জন্য একটু বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন।

হযরত ‘উসমানের (রা) খিলাফাতকাল প্রায় বারো বছর। এ সময়ের প্রথম অর্ধাংশে সকল প্রকার ঝামেলা ও হৈ-হাঙ্গামা মুক্ত শান্ত পরিবশে বিরাজমান ছিল। তারপর ধীরে ধীরে জনগণের পক্ষ থেকে নানা রকম অভিযোগ উঠতে থাকে। হযরত ‘আয়িশা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমানকে (রা) উপদেশ দিয়েছিলেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে কখনও খিলাফতের জামা পরান তাহলে স্বেচ্ছায় তা যেন খুলে না ফেলেন।

মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে হযরত ‘আয়িশার (রা) খুবই গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা অনুযায়ী তিনি ছিলেন মুসলমানদের মা। হিজায, ইরাক, মিসর তথা খিলাফতের প্রতিটি অঞ্চলে তাঁকে মায়ের মত মানা হত। লোকেরা তাঁর নিকট এসে নিজেদের নানা অভিযোগ ও অসুবিধার কথা বলতো, আর তিনি উপদেশ ও সান্তুনা দিতেন।

হযরত ‘উসমানের (রা) খিলাফতের প্রথম পর্ব পর্যন্ত বড় মাপের প্রজ্ঞাবান সাহাবীরা জীবিত ছিলেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করা হতো। খিলাফতের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁদেরকে নিয়োগ দান করা হতো। পূর্ববর্তী দুই খলীফার সময়ে কারো কোন অভিযোগ ছিল না। সে সময় যাঁরা উচ্চাভিলাষী যুবক ছিলেন-যেমন ‘আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর, মুহাম্মদ ইবন আবী বকর, মারওয়ান ইবনহাকাম, মুহাম্মদ ইবন আবী হুজায়ফা, সা‘ঈদ ইবন আল-আস প্রমুখ, তাঁরা বড়দের সাহায্য করতেন। খিলাফত এবং ইমারাতের কোন উঁচু পদ ছিল তাঁদের জন্য দুরাশা মাত্র।

‘আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা) ছিলেন হযরত সিদ্দীকে আকবরের নাতী এবং রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফুফাতো ভাই ও হাওয়ারী যুবাইয়ের (রা) ছেলে। তিনি নিজেকে খিলাফতের একজন হকদার মনে করতেন।

মুহাম্মদ ইবন আবী বকর ছিলেন প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের (রা) ছোট ছেলে এবং উম্মুল মুমিনীন আয়িশার (রা) বৈমাত্রেয় ভাই। এই মুহাম্মাদের মাকে আবু বকরের মৃত্যুর পর আলী (রা) বিয়ে করেন। এ কারণে আলীর (রা) নিকট লালিত-পালিত হন। আর আলীও (রা) তাঁকে ছেলের মত দেখতেন।

মুহাম্মদ ইবন আবী হুজায়ফা বেড়ে ওঠেন হযরত উসমানের (রা) তত্ত্বাবধানে। বয়স হলে খলীফা উসমানের (রা) নিকট কোন একটি বড় পদের আশা করেন। খলীফা তাঁকে যোগ্য মনে না করায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে মদীনা ছেড়ে মিসর চলে যান।

‘মারওয়ান ও সা‘ঈদ ইবন ‘আস উভয়ে উমাইয়্যা বংশের দুই নব্য যুবক ছিলেন। উঁচু মর্যাদার অধিকারী মুহাজিরদের ইনতিকালের পর তাঁদের সন্তানরাও খিলাফতের নিকট বহু কিছু প্রাপ্তির আশা নিয়ে এগিয়ে আসেন। হযরত ‘উসমান (রা) উমাইয়্যা খান্দানের লোক ছিলেন। তাই তিনি যখনই মারওয়ান ও সা‘ঈদ ইবন ‘আসের মত লোকদের উঁচুপদ দান করলেন, তখন কুরাইশ-খান্দানের অন্যসব উচ্চাভিলাষী যুবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। এ কারণে মুহাম্মদ ইবন আবী বকর ও মুহাম্মদ ইবন আবী হুজায়ফা ‘উসামন (রা) বিরোধী বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া এই সকল নওজোয়ানের মধ্যে উঁচু স্তরের সাহাবায়ে কিরামের মত সাম্য ও ন্যায়পরায়ণতা, সততা, আমানতদারি, তাকওয়া খোদাভীতি ছিল না। এ কারণে জনসাধারণ ও সৈনিকদের মধ্যে যাঁরা প্রথম স্তরের সাহবীদেরকে দেখেছিলেন, তারা এই লোকদের নেতৃত্ব ও শাসনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, আরবরা ছিল চির স্বাধীন। মরু প্রকৃতিতে তারা স্বাধীন আবহাওয়ায় বেড়ে উঠতো। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গোত্রের আনুগত্য করতো এবং নিজের গোত্রকে অন্য গোত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করতো। ইসলামী সাম্যের আদর্শ তাদের সকল আভিজাত্য ভুলিয়ে দেয় এবং তাদেরকে একই স্তরে নামিয়ে আনে। প্রথম স্তরের সাহাবায়ে কিরাম (রা) ইসলামী সাম্যের শিক্ষা সমুন্নত রাখলেও তাঁদের পরবর্তী নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তা ও পদাধিকারী ব্যক্তিরা যেমন তা ভুলে বসেন, তেমনি অন্যদেরকেও ভুলিয়ে দেন। তাঁরা প্রকাশ্যে নিজেদের মজলিস ও দরবারে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা ও গোত্রীয় আভিজাত্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। অন্যান্য আরব গোত্রসমূহ তাঁদের এমন মনোভাব ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তারা ছিল সম অধিকারের দাবীদার। অন্যদিকে নওমুসলিম আনারব গোষ্ঠী কুরাইশ বা বনু উমাইয়্যা কোন আরব গোত্রেরই শাসন সহ্য করতে পারছিল না। এই জন্য খিলাফতের অভ্যন্তরে যে কোন ধরনের হৈ-হাঙ্গামায় অতি উৎসাহের সাথে তারা অংশগ্রহণ করতো।

আরব-আজমের মিলনস্থলরূপে যে কয়টি শহর চিহ্নিত ছিল তার মধ্যে কূফা অন্যতম। ইসলামী খিলাফতের ফিতনার সূচনা এই শহর থেকেই হয়। এটি ছিল আরব গোত্রসমূহের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। সা‘ঈদ ইবনুল ‘আস ছিলেন এই কূফার ওয়ালী। রাতের বেলা তাঁর দরবারে সকল গোত্রের সরদারদের মাজমা বসতো। সাধারণত আরবদের যুদ্ধ বিগ্রহ ও আরব গোত্রসমূহের মর্যাদার তারতম্য বিষয়ে আলোচনা হতো। আর বিষয়টি এমন ছিল যে, কোন গোত্রই অন্য গোত্র থেকে মর্যদায় খাটো মনে করতো না। অনেক সময় আলোচনা তর্ক-বির্তক, ঝগড়া-ঝাটি ও মারামারিতে রূপ নিত। এ ক্ষেত্রে সা‘ঈদ ইবন ‘আসের মুখে নিজেকে কুরাইশ বংশজাত বলে গর্বের সাথে প্রকাশ করা আগুনে তেল ঢালার মত কাজ করতো। তাঁর এমন কর্মপন্থায় গোত্রীয় নেতাদের অভিযোগ সৃষ্টি হয়। মূলত তা একটি ফিতনার রূপ ধারণ করে।

ঠিক এই সময়ে ইবন সাবা নামক এক ইহুদী মুসলমান হয়। ইহুদীদের নিয়ম হলো, শক্র হিসেবে যদি শক্রর ক্ষতি না করতে পারে তাহলে রূপ পাল্টে বন্ধু হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমের শক্রর সর্বনাশের চূড়ান্ত করে ছাড়ে। অতীতে খৃষ্টধর্মের সাথে তারা এমন আচরণই করেছিল।

এই ইহুদীর সন্তান ইবন সাবা জনগণের মধ্যে এই কথা প্রচার কতে থাকে যে, হযরত ‘আলী (রা) প্রকৃত পক্ষে খিলাফতের হকদার। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর খলীফা হওয়ার ব্যাপারে অসীয়াত করে গিয়েছিলেন। সর্বশক্তি দিয়ে সে তাঁর এই ভ্রান্তবিশ্বাস প্রচার করতে থাকে। খিলাফতের বিভিন্ন ছোটখাট রাজনৈতিক হৈ-চৈ কে বাহানা বানিয়ে সে তার ষড়যন্ত্রের জালকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়। সে গোটা খিলাফত চষে ফেলে। কূফা, বসরা, মিসর তথা যেখানে বড় বড় সৈন্য ছাউনী ছিল সেখানে কিছু না কিছু বিপ্লবপন্থী সে তৈরি করে। সে মিসরকে এ বিপ্লবপন্থীদের কেন্দ্র বানিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ব্যক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেলে। ইতিহাসে এটাকে ‘সাবায়ী’ আন্দোলন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

খলীফা উসমানের (রা) সময়ে আফ্রিকাতেই অধিকাংশ যদ্ধ-বিগ্রহ চলছিল। একারণে সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশ সেখানেই থাকতো। যুদ্ধে অংশগ্রহণের বাহানায় মুহাম্মদ ইবন আবী বকর ও মুহাম্মদ ইবন আবী হুজায়ফা স্বাধীনভাবে সৈন্যদের সাথে মেলামেশার সুযোগ পেতেন এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষের বীজ রোপণ করতেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যে মিসর ‘উসমান (রা) বিরোধী বিদ্রোহের কেন্দ্রে পরিণত হয়ে ওঠে। আর সেই সময় ‘আবদুল্লাহ ইবন আবী সারাহ মিসরের ওয়ালী ছিলেন। মুহাম্মদ ইবন আবী বকর, মুহাম্মদ আবন আবী হুজায়ফা ও অন্যরা ‘আবদুল্লাহ ইবন আবী সারাহও খলীফা ‘উসমানের (রা) বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আন্দোলন শুরু করে দিলেন। এভাবে তাঁরা মিসরে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতায় পরিণত হলেন।

হজ্জের মওসুম এসে গেল। পারস্পরিক যোগাযোগ ও সিদ্ধান্ত মুতাবিক কূফা, বসরা ও মিসর থেকে এক হাজার মানুষের একটি দল হজ্জের বাহানায় হিজাযের দিকে যাত্রা করলো এবং মদীনার কাছাকাছি এসে শিবির স্থাপন করলো। হযরত ‘আলী (রা) ও অন্য বড় বড় সাহাবীরা তাদেরকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিলেন। তারা কিছুদূর যেতে আবার ফিরে আসে এবং মিসরের গভর্ণরের নিকট লেখা একটি চিঠি দেখায়। তাতে মিসরের গভর্নরের প্রতি খলীফার নির্দেশ ছিল, মিসরী বিদ্রোহীদের নেতৃবৃন্দকে মিসর প্রত্যাবর্তনের পরপরই হত্যা অথবা বন্দি করার। বিদ্রোহীদের ধারণা মতে, এই পত্রখানি ছিল খলীফার সেক্রেটারী মারওয়ানের হাতের লেখা। এ কারণে তারা সমবেতভাবে খলীফা উসমানের (রা) বাড়ী ঘেরাও করে এবং খলীফার নিকট দুইটি প্রস্তাব পেশ করে। হয় তিনি মারওয়ানকে বিদ্রোহীদের হাতে অর্পণ করবেন অথবা তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। হযরত ‘উসমান দুইটি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেন।

হযরত ‘আয়িশা (রা) তখন মদীনায়। তিনি বৈমাত্রেয় ভাই মুহাম্মদ ইবন আবী বকরকে ডেকে বুঝালেন এবং খলীফার বিরুদ্ধে এমন চরম সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে বললেন। কিন্তু তিনি বোনের কথায় কান দিলেন না।

মদীনায় যখন এমন একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান, তখন হযরত ‘আয়িশা (রা) প্রতিবছরের মত হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় চলে গেলেন। অবশ্য তিনি মুহাম্মদ ইবন আবী বকরকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে রাজি করাতে পারেননি। তারপর কিছুদিন হযরত ‘উসমান (রা) নিজ গৃহে অবরুদ্ধ থাকেন এবং অবশেষে বিদ্রোহীদের হাতে শাহাদান বরণ করেন।

হযরত ‘উসমান (রা) বিদ্রোহীদের হাতে শাহাদাত বরণ করলেন। এখন একজন নতুন খলীফা নির্বাচনের পালা। স্বাভাবিক ভাবেই সকলের দৃষ্টি সেই চারজন জীবিত বিশিষ্ট সাহাবীর প্রতি পড়ার কথা, যাঁরা খলীফা হযরত ‘উমারের (রা) মনোনীত ছয় সদস্যের খলীফা প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। তারা হলেনঃ তাহলা, যুবাইর, সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস ও আলী (রা)। এ সময় সা‘দ (রা) একেবারেই নিজেকে দূরে সরিয়ে মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে চলে যান। বসরার অধিবাসীরা তালহার (রা) পক্ষ অবলম্বনকারী ছিল। মিসরবাসীদের একাংশ ছিল যুবাইরের (রা) পক্ষে; কিন্তু অপর অংশ এবং বিপ্লবীদের গরিষ্ঠ অংশ ছিল আলীর (রা) পক্ষে। ‘আলীর (রা) সমর্থকদের মধ্যে আগ্রণী ভূমিকা পালন করছিলেন আশতার নাখ‘ঈ, ‘আম্মার ইবন ইয়াসির ও মুহাম্মদ ইবন আবী বকর (রা)। এমনিভাবে প্রত্যেক দল বা গোষ্ঠী নিজেদের পছন্দনীয় ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে থাকে। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ‘উমারের (রা) ছেলে ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার, তৃতীয় খলীফা হরত ‘উসমানের (রা) ছেলে আবান ও প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের (রা) ছেলে আবদুল রহমানের নামটিও প্রস্তাবে আসে। দীর্ঘ আলোচনা, পর্যালোচনা ও তর্ক বিতর্কের পর বিদ্রেহীদের চাপ ও মদীনাবাসীদের ইচ্ছায় হযরত ‘আলীকে (রা) খলীফা নির্বাচন করা হয়।

মদীনায় যখন এ সকল ঘটনা ঘটছে তখন সিরিয়ায় হযরত আমীর মুয়াবিয়া (রা) স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছেন এবং মুহাম্মদ ইবন আবী হুজায়ফা মিসরে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে বসে আছেন। মদীনার পবিত্র ভূমিতে পবিত্র মাসে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খলীফা এবং মুসলিম জাহানের ইমামের এমন নৃশংস হত্যাকান্ড সর্বশ্রেণীর মানুষর অন্তরে দারুণ ছাপ ফেলে। পূর্বে যাঁরা হযরত ‘উসমানের (রা) কর্মপদ্ধতির সমালোচক ছিলেন, তাঁরাও এহেন ঘৃণিত কাজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। হযরত ‘আয়িশাও (রা) এই শ্রেণীর লোকদের অন্যতম। এমন বাড়াবাড়ি তাঁরা কেউই চাননি। এই ঘটনার পূর্বে আশতার নাখ‘ঈ একদিন ‘আয়িশাকে (রা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, আল্লাহর পানাহ্! আমি ইমামদের ইমামকে হত্যার কথা বলতে পারি? এতেই ফিতনাবাজ লোকেরা রটিয়ে দেয় যে, উসমান (রা) হত্যাকান্ডে ‘আয়িশারও (রা) সমর্থন ছিল। তাছাড়া, মানুষের এমন ধারণার আরেকটি কারণ ছিল। তা হলো তাঁর ছোট সৎ ভাই মুহাম্মদ ইবন আবী বকর (রা) ছিলেন বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা।

আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁর ভাইকে ‘উসমান (রা) বিরোধী হঠকারী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। হযরত ‘আয়িশা (রা) পরবর্তীকালে একবার হযরত ‘উসমানের (রা) আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি কখনও চাইনি যে ‘উসমানের (রা) কোন রকম অসম্মান হোক। আমি যদি তা চেয়ে থাকি তাহলে আমারও যেন তার মত পরিণতি হয়। হে ‘উবাইদুল্লাহ ইবন ‘আদী! (আদী ছিলেন ‘আলীর রা. পক্ষে) একথা জানার পর কেউ যেন তোমাকে ধোঁকা দিতে না পারে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের কর্মকান্ডকে কেউ ততদিন অসম্মান করতে পারেনি যতদিন তাঁদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়নি। যে ‘উসমানের সমালোচনা করেছে, সে এমন সব কথা বলেছে যা বলা উচিত ছিল না। আমরা তাদের কর্মকান্ডকে গভীরভাবে দেখেছি, তাতে বুঝেছি তা সাহাবীদের কর্মকান্ডের ধারে কাছেও ছির না।’ ইতহিাস ও সীরাতের গ্রন্থে হযরত ‘আয়িশার (রা) এ জাতীয় এমনানেক কথা পাওয়া যায়, যা দ্বারা বুঝা যায় ‘উসমান (রা) এ জাতীয় এমন অনেক কথা পাওয়া যায়, যা দ্বারা বুঝা যায় ‘উসমান (রা) হত্যার ব্যাপারে তার কোন রকম ভূমিকা ছিল না। তাঁর প্রতি যে দোষারোপ করা হয়েছিল তা ছিল বিদ্রোহীদের একটি অপপ্রচার মাত্র।

মদীনার এই মর্মবিদারী ঘটনায় তৎকালীন গোটা মুসলিম উম্মাহ শোকে কাতর হয়ে পড়ে। সাহাবায়ে কিরামের ছোট্ট একটি দল, যাঁরা নিজেদের দেহের রক্ত দিয়ে গড়া উদ্যান তছনছ হতে দেখছিলেন-স্থির থাকতে পারলেন না। তাঁরা এর একটা দফারফা করার জন্য তৎপর হয়ে উঠলেন। এ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন তিনিজন মহান সাহাবীঃ উম্মুল মুমিনীন হযরত ‘আয়িশা, হযরত যুবাইর ও হযরত তালহা (রা)। হযরত তালহা (রা) ছিলেন কুরাইশ খান্দারন লোক এবং প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের (রাঃ) কন্যার স্বামী, ইসরামের আদি পর্বের একজন সুমলমান এবং রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমলে সংঘটিত সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ। যুবাইর ইসলামের একজন বীর সৈনিক। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফূফাতো ভাই এবং প্রথম খলীফার কন্যা হযরত আসমার (রা) স্বামী। উভয়ে ছিলেন দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের (রা) মনোনীতখলীফা প্যানেলের অন্যতম সদস্য।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মদীনায় যখন খলীফা উসমান (রাঃ) বহিরাগত বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ তখন হযরত আয়িশা (রা) প্রতি বছরের অভ্যাসমত হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় চলে যান। হজ্জ শেষ করে মদীনায় ফিরছিলেন, এমন সময় খলীফা উসমানের (রা) শাহাদাতের খবর পেলেন। সামনে কিছুদূর অগ্রসর হতেই হযরত তালহা ও যুবাইরের (রা) সাক্ষাৎ পেলেন। তাঁরা খলীফা হযরত আলীর (রা) অনুমতি নিয়ে মদীনা থেকে বেরিয়ে মক্কার দিকে যাচ্ছেন। তাঁরা তখন হযরত আয়িশার (রা) নিকট মদীনার আইন-শৃঙ্খলার যে চিত্রতুলে ধরেছিলেন তাবারী সহ বিভিন্ন প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তার কিছু অংশ নিম্নরূপঃ

‘আমরা মদীনা থেকে বেদুইন ও সাধারণ মানুষের হাত থেকে কোন রকম পালিয়ে এসেছি। আমরা জনগণকে এমন অবস্থায় ছেড়ে এসেছি যে, তারা কিংবর্তব্যবিমূঢ়। তারা যেমন সত্যকে চিনতে পারছে না, তেমনি মিথ্যাকেও অস্বীকার করতে সক্ষম হচ্ছে না। নিজেদেরকে রক্ষাও করতে পারছেনা।’

হযরত আয়িশা (রা) বললেন, এখন আমাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ করা উচিত। এ সময় তিন নিম্নের এ চরণটি আবৃত্তি করেনঃ

-যদি আমার কাওমের নেতারা আমার আনুগত্য করতো তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে এ বিপদ থেকে বাঁচাতে পারতাম।

তিনি আবার মক্কায় ফিরে গেলেন। খলীফার শাহাদাতের খবর মক্কায় ছড়িয়ে পড়লে চতুর্দিক থেকে মানুষ কাছে ছুটে আসতে লাগলো। ‘উমরা বিনত আবদির রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছে। সে সময় উম্মুল মুমিনীন বলেনঃ সেই কাওমের (সম্প্রদায় মত অন্য কোন কাওম নেই যারা নিম্নোক্ত আয়াতের হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করেঃ

-যদি মু’মিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং ইনসাফ করবে।

হজ্জের মওসুম ছিল। ঘোষনার সাথে সাথে হারাম শরীফ থেকের কয়েকশো মানুষ সাড়া দিল। আবদুল্লাহ ইবন আমের বসরা থেকে প্রচুর নগদ অর্থ নিয়ে এসে আয়িশার (রা) সাথে যোগ দিল। ই‘য়ালা ইবন মুনাইয়্যা ইয়ামন থেকে সাত শো উট ও ছয় লাখ দিরহাম এনে আয়িশার (রা) হাতে দিল। এই বাহিনী কোন দিকে যাত্রা করবে তা ঠিক করার জন্য হযরত আয়িশার (রা) আবাস গৃহে পরামর্শ বৈঠক বসালো। আয়িশার (রা) মত ছিল মদীনার দিকে যাত্রা করার। কারণ সাবায়ী ও বিদ্রোহীরা সেখানেই অবস্থান করছিল। সেদিন তাঁর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ইসলামী উম্মার ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো। কিন্তু তাঁরা এই সদ্ধান্তে আসেন যে, উসমানের (রা) রক্তের বদলা গ্রহণের জন্য বসরা ও কূফা থেকে-যেখানে হযরত তালহা ও যুবাইরের (রা) প্রচুল সমর্থক ছিল, সামরিক সাহায্য নেওয়া হবে। অতঃপর এই কাফেলা মক্কা থেকে বসরার দিকে যাত্রা করে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) তখন মক্কায়। তাঁকেও বসরার দিকে যাওয়ার অনুরোধ করা হলো। আমি মদীনার মানুষ, মদীনাবাসীরা যা করে, আমি তাই করবো’-একথা বলে তিনি এই কাফেলার সাথে বসরার দিকে চলতে অস্বীকৃতি জানালেন। অন্যান্য উম্মাহতুল মুমিনীন-যাঁরা আয়িশার (রা) সাথে মদীনায় ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, কেউ এই কাফেলার সাথে বসরার দিকে গেলেন না। একমাত্র হাফসা (রা) যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বারণ করায় তিনিও আর গেলেন না। তবে অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন ও মক্কার সাধারণ মানুষ ‘জাতুল ইরাক’ পর্যন্ত বসরাগামী কাফেলাকে এগিয়ে দেন। তাঁরা সেদিন ইসলামের এমন দুর্দিন দেখে এমন কান্নাকাটি ও মাতাম করেছিলেন যে আর কোনদিন তেমন দেখা যায়নি। এ কারণে ইতিহাসে এ দিনটিকে ইয়াউমুন নাহীব’ বা কান্নার দিন বলা হয়। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (রা) একটি উটের উপর সাওয়ার হয়ে কাফেলার সাথে বসরার দিকে চললেন। ইতিহাসের এক মস্তবড় ট্রাজেডির সাক্ষী এই উটের একটু পরিচয় দেওয়া এখানে অগ্রাসঙ্গিক হবে না বলে মনে করি। উটটি উম্মুল মুমিনীনকে কে দিয়েছিল, সে সম্পর্কে দুই ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। ই‘য়ালা ইবন মুনাইয়্যা আশি দীনার দিয়ে খরিদ করে তাঁকে দেন। উটটির নাম ছিল আল-আসকার’। মতান্তরে উটটি ছিল উরাইনা’ গোত্রের এক ব্যক্তির। উরায়নী গোত্রের সেই লোকটি বর্ণনা করেছেনঃ আমি একটি উটে চড়ে চলছি। এমন সময় এক অশ্বারোহী এসে আমাকে বললোঃ তুমি কি তোমার এ উটটি বেচবে? বললামঃ হ্যাঁ বেচতে পারি। লোকটি বললোঃ কত দাম? বললামঃ এক হাজার দিরহাম। বললোঃ তুমি কি পাগল? বললামঃ কেন? আল্লাহর কসম! এর উপর সোয়ার হয়ে আমি যাকেই ধরতে চেয়েছি, সফল হয়েছি। আর এই পিঠে থাকা অবস্থায় কেউ আমাকে ধরতে পারেনি। সে বললোঃ তুমি যদি জানতে, উটটি আমি কার জন্য কিনতে চাই। এটা আমি কিনতে চাই উম্মুূল মু’মিনীন আয়িশার (রা) জন্য। বললামঃ তাহলে আমি বিনা মূল্যেই দিলাম। সে বললোঃ তা হয় না, তুমি বরং আমার সাথে কাফেলার কাছে চলো, আমরা তোমাকে একটি মাদী উট ও অনেক দিরহাম দিব। আমি তার সাথে কাফেলার কাছে গেলাম। তারা আমাকে বিনিময়ে একটি মাদী উট ও চার মতান্তরে ছয় শো দিরহমা দিল।’ এই উরানী লোকটিকে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাফেলার সাথে নেওয়া হয়।

কাফেলার যাত্রাপথে মানুষ যখন শুনতে পেল, এই বাহিনীর পুরোধা উম্মুল মুমিনীন, তখন বহু লোক অত্যন্ত আবেগ ও উৎসাহের সাথে যোগদান করলো। এভাবে এক মানযিল পথ অতিক্রম করতে না করতে তিন হাজারের একটি বাহিনী তৈরি হয়ে গেল। হযরত উসমানের (রা) গোত্র বনু উমাইয়্যার যুবকদের ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর কি হতো পারতো? সে সময়ের পরিস্থিতি তাদের এত প্রতিকূল ছিল যে, চতুর্দিক থেকে তাড়া খেয়ে তারা পালিয়ে মক্কায় এসে বড় হচ্ছিল। হযরত আয়িশার (রা) ঘোষণা ছিল তাদের জন্য এক মহা সুযোগ। তারা সকলে তাঁর বাহিনীর মধ্যে ঢুকে গেল।

বনু উমাইয়্যার ইবনুল ‘আস ও মারওয়ান ইবনুল হাকামও কাফেলার সাথে বের হলেন। মারুজ জাহরান’ মতান্তরে ‘জাতুল ইরাক’ পৌঁছে সা‘ঈদ ইবনুল ‘আস তাঁর দলীয় লোকদের বললেনঃ ‘তোমরা যদি উসমান (রা) হত্যার বদলা নিতে চাও তাহলে আগে এই লোকদের হত্যা কর। তাঁর ইঙ্গিত ছিল তালহা, যুবাইর, প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি। কারণ বনু উমাইয়্যাদের মধ্যে সাধারণভাবে এ ধারণা প্রচলিত ছিল যে, উসমানের (রা) হত্যাকারী কেবল তারাই নয় যারা তাঁকে হত্যা করেছে অথবা তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বাইরে থেকে এসেছে, বরং ঐ সকল ব্যক্তির সকলে তাঁর হত্যাকারীদের মধ্যে পরিগণিত যাঁরা বিভিন্ন সময়ে হযরত উসমানের (রা) কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করেছেন এবং তারাও যাঁরা হাঙ্গামার সময় মদীনায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেননি। মাওয়ান বললেনঃ আমরা তাঁদের (তালহা, যুবাইর ও আলী রা.) একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে লড়াবো। যাঁর পরাজয় হবে, তিনি এমনিই শেষ হয়ে যাবেন। আর যিনি জয়ী হবেন, এত দুর্বল হয়ে পড়বেন যে, অতি সহজেই আমরা তাঁকে কাবু করে ফেলতে পারবো।’

আসলে বনু উমাইয়্যাদের আসল উদ্দেশ্যে ছিল হযরত আয়িশার (রাঃ) আপোষ-মীমাংসার আহবান ও আন্তরিক চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া। শুধু তাই নয়, আয়িশার (রা) নেতৃত্বে তৃতীয় আরেকটি শক্তির উত্থান হচ্ছে দেখে তাদের অনেকে এই বাহিনীর মধ্যে নানা ভাবে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। তারা প্রশ্ন তোলে আলীকে (রা) পরাভূত করার পর তালহা ও যুবাইরের মধ্যে কে খলীফা হবেন? হযরত আয়িশা (রা) জানতে পেরে এ প্রপাগান্ডা থামিয়ে দেন। তারপর আরেকটি প্রশ্ন তোলা হয়-খিলাফতের ফায়সালা না হয় পরে হবে, কিন্তু এ মুহূর্তে নামাযের ইমাম হবেন কে? হযরত আয়িশা (রাঃ) তাহলা ও যুবাইরের (রা) ছেলেদের নামাযের ইমামতির জন্য একদিন করে নির্ধারণ করে দিয়ে এ ফিতনাও থামিয়ে দেন।

চলার পথে হাওয়াব’ নামক জলাশয়ের নিকট পৌঁছলে এই বিশাল কাফেলা দেখে সেখানকার কুকুর হাঁকডাক আরম্ভ করে দেয়। ‘আয়িশা (রা) জিজ্ঞেস করেন স্থানটির নাম কি? বলা হলো, ‘হাওয়াব’। তখন তাঁর স্মরণ হয় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাণী, একবার তিনি বেগমদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেনঃ আল্লাহ জানেন তোমাদের মধ্যে কাকে দেখে হাওয়াবের’ কুকুরগুলি ডাকবে।’ এই ভবিষ্যদ্বাণী স্মরণ করতেই হযরত আয়িশা (রাঃ) ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ভবিষ্যদ্বাণী স্মরণ হতেই আয়িশা (রাঃ) ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একদিন একরাত কাফেলা এখানে থেমে থাকে।অবশেষে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, এটা হাওয়াব নয়। তখন তিনি নিশ্চিন্ত হন। তাছাড়া হযরত যুবাইর তখন বলেনঃ আপনি ফিরে যাবেন। কিন্তু হতে পারে আল্লাহ তা‘য়ালা আপনার দ্বারা এই বিবাদ মীমাংসা করে দেবেন। কোন কোন বর্ণনায় কথাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ তার (‘আয়িশার (রা.) সঙ্গীদের কেউ কেউ বললেন, পিছনে না ফিরে সামনে অগ্রসর হোন। লোকেরা যখন আপনাকে দেখতে পাবে তখন আল্লাহ তাদের মধ্যে একটা মীমাংসা করে দেবেন। সামনে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় আছেন, তখন তাঁকে বলা হলো, আপনি দ্রুত চলুন, পিছন থেকে আলীর (রা) বাহিনী আসছে। এ সকল বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় হযরত আয়িশার (রা) বসরার দিকে চলার উদ্দেশ্য ছিল কেবল ইসলাম ও মীমাংসা।

হযরত আয়িশা (রাঃ) এর ১২ পর্বের পুরো জীবনী পড়ুন-



*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url