উসমান ইবন আফফান (রাঃ) || জান্নাতে রাসুলের (সাঃ) বন্ধু হবেন হযরত উসমান (রাঃ) ||




উসমান ইবন আফফান (রাঃ)

উসমান ইবন আফফান (রাঃ) এর জীবনী’র আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

উসমান (রাঃ)-এর বংশ পরিচয়

নাম উসমান, কুনিয়াত আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা এবং লকব যুননূরাইন। (তাবাকাত ৩/৫৩, তাহজীবুত তাহীব) পিতা আফফান, মাতা আরওরা বিনতু | কুরাই। কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা শাখার সন্তান। তার উর্ধ পুরুষ 'আবদে মান্নাফে গিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) নসবের সাথে ভার নসব মিলিত হয়েছে। খুলাফায়ে রাশেদার তুৰ্তীয় খলীফা। তাঁর নানী বায়দা বিনতু আবদিল মুত্তালিব রাসূলুল্লাহর (সা) ফুফু। জন্ম হস্তীসনের দু’বর পরে ৫৭৬ খৃষ্টাব্দে। (আল-ইসতিয়াব) এ হিসাবে রাসূলে করীম (সা) থেকে তিনি ছয় বছর ছােট। দুৰে ভঁর অনুসন সম্পর্কে বিস্তুর মতভেদ রয়েছে। ফলে শাহাদাতের সময় তার সঠিক বয়স কত ছিল সে সম্পর্কে অনুরূপ মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কোন কোন বর্ণনা মতে, তাঁর জন্ম হয় তায়েফে। (ফিনাতুল কুবরা, ও দােহা হুসাইন)।

উসমান (রাঃ)-এর দৈহিক গঠন

হযরত উসমান (রা) ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। মাংসহীন গণ্ডদেশ, ঘন দাড়ি, উজ্বল ফর্সা, ঘন কেশ, বুক ঐ কোমর চওড়া, কান পর্যন্ত কোনাে ফুলফী, পায়ের নলা মােটা, পশম ভরা লম্বা বাহু, মুখে বসন্তের দাগ, মেহেলী রঙের পাড়ি এবং স্বর্ণখচিত দাত। | 

উসমান (রাঃ)-এর শৈশবকাল

হযরত উসমানের জীবনের প্রাথমিক অবস্থা অন্যান্য সাহাবীর মত জাহিলী যুগের অন্ধকারেই রয়ে গেছে। তার ইসলামপূর্ব জীবন এমনভাবে বিলীন হয়েছে যেন ইসলামের সাথেই তার জন্ম। ইসলামপূর্ব জীবনের বিশেষ কোন তথ্য ঐতিহাসিকরা আমাদের কাছে পৌছাতে পারেননি। | হযরত উসমান ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুষ্টিবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্ৰাৰ্চীন ইতিহাসেও ছিল তার গভীর জ্ঞান। ভঁর প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্য স্ত্র লৌকিকতাবােধ ইত্যাদি গুণাবলীর জন্য সব সময় তার পাশে মানুষের ভীড় জমে থাকতে। জাহিলী যুগের কোন অপকর্ম তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর। আত্মমর্যাদাবােধ ছিল তার মহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যৌবনে তিনি অন্যান্য অভিজাত করাইশদের মন্ত্র ব্যবসা শুরু কৱেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার সুণে ব্যবসায়ে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। মক্কার সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসাবে। ‘গনী' উপাধি লাঙকরেন।

উসমান (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ

হযরত 'উসমানকে আস-সাবেকুনাল আওয়ালুন' (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী), 'আশারায়ে মুবাশশারা এবং সেই দু’জন শ্রেষ্ঠ সাহাবীর মধ্যে গণ্য করা হয় যাদের প্রতি রাসুলে করীম (সা) আমরণ খুশী ছিলেন। আবু বকর সিদ্দীকের সাথে তার ভাই সম্পর্ক ছিল। তাঁরই তাবলীগ ও উৎসাহে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। (সীরাতে ইবন হিশাম) মক্কার আরো অনেক নেতৃবৃন্দের অচিরণের বিপরীত হযরত উসমান রাসূলুল্লাহর (সা) নবুওয়াতের সূচনা পর্বেই তাঁর দাওয়াতে সাড়া দেন এবং আর্জীবন জান-মাল ও সহায় সম্পত্তি দ্বারা মুসলমানদের কল্যাব্রতী ছিলেন। হযরত উসমান বলেনঃ “আমি ইসলাম গ্রহণকারী চারজনের মধ্যে চতুর্থ।' (উসুদুল গৰাি) ইবন ইসহাকের মতে, আবু বকর, আলী এবং যায়িদ বিন হারিসের পরে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হযরত উসমান।

হযরত উসমানের ইসলাম গ্রহণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সীরাহু লেখক ও মুহাদ্দীসগণ যেসব বর্ণনা দিয়েছেন তার সারকথা নিম্নরূপ-
কেউ কেউ বলেন, 'তার থালা সুদা ছিলেন সে যুগের একজন বিশিষ্ট কাহিন' বা ভবিষ্যদ্বক্তা। তিনি নবী করীম (সা) সম্পর্কে উসমানকে কিছু কথা বলেন এবং তঁার প্রতি ঈমান আনার জন্য উৎসাহ দেন। তারই উৎসাহে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল ফিনাতুল কুবরা) পক্ষান্তরে ইবন সা'দ সহ আরাে অনেকে বর্ণনা করেন । হযরত উসমান সিরিয়া সফরে ছিলেন। যখন তিনি 'মুয়াল ও যারকার মধ্যবর্তী স্থানে বিশ্রাম করছিলেন দুখন তুন্দ্রালু অবস্থায় এক আহবানকারীকে বলতে শুনলেন : ওহে ঘুমন্ত ব্যাি , তাড়াতাড়ি কর। আহমাদ নামের রাসূল মক্কায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। মক্কায় ফিরে এসে শুনতে পেলেন ব্যাপারটি সত্য। অতঃপর 'আবু বকরের অহিবানে ইসলাম গ্রহণ করেন। (তাবাকাতঃ ৩৫৫)।

হযরত উসমান যখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তখন তঁার বয়স তিরিশের উপরে। ইসলামপূর্ব যুগেও আবু বকরের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রায় প্রতিদিনই 'তার আর বরের বাড়ীতে যাতায়াত ছিল। একদিন হযরত আবু বকর (রা) ভঁার সামনে ইসলাম পেশ করলেন। ঘটনাক্রমে রাসূল (সা) তখন সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ 'উসমান, জান্নাতের প্রবেশকে মেনে নাও। আমি তোমাদের এবং আল্লাহর সকল মাখলুকের প্রতি তার রাসূল হিসেবে এসেছি। একথা শুনার সাথে সাথে তিনি ইসলাম কবুল করেন। হযরত উসমানের ইসলাম গ্রহণের পর তার খালা সুদা কে অভিনন্দন ঘনিয়ে একটি কাসীদা রচনা করেছিলেন।

হযরত উসমানের সহোদরা আমীনা, বৈপিত্রীয় ভাই বােন ওয়ালীদ, আলি, অম্মািরা, উম্মু কুলসুম সবাই মুসলমান হয়েছিলেন। তাদের পিতা উকবা ইবন আবী মুয়ীত। দারু কুহনী বর্ণনা করেছেন, উনু কুলসুম প্রথম পর্বের একজন মুহাজির। বলা হয়েছে তিনিই প্রথম স্মাইশ বধূ যিনি রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াত কনে। হযরত উসমানের অন্য ভাই-বোন মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাকে ইসলামের শত্রুদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। তার চাচা হকিমি ইবন আবিল আস তাকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম মার দিত। সে বললাে, একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে তুমি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছ। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্তু তােমাকে ছাড়া হবে না। এতে হত "উসমানের ঈমান একটুও টলেনি। তিনি বলতেন তোমাদের যা ইচ্ছে কর, এ দ্বীন আমি কক্ষণাে ছাড়তে পারবাে না। (তাবাকতি ঃ ৩/৫৫)

উসমান (রাঃ)-এর বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন

হযরত উসমান ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল্লাহ (সা) নিজ কন্যা কাইয়্যাকে তাঁর সাথে বিয়ে দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে মণীনায় রুকাইয়্যার ইনতিকাল হলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর দ্বিতীয় কন্যা উলু কুলসুমকে তার সাথে বিয়ে দেন। এ কারণে তিনি যুননূরাইন'— দুই জ্যোক্তির অধিকারী উপাধি লাভ করেন। | রুকাইয়া ছিলেন হযরত খাদীজার (রা) গর্ভজাত সন্তান। তাঁর প্রথম শাদী হয় উবা ইবন 'আবী লাহাবের সাথে এবং উষ্ম কুলসুমের শালী হয় আবু লাহাবের দ্বিতীয় পুত্র উতাইবার সাথে। আবু লাহাব ছিল আয়ুাহর নবীর কর দুশমন। পবিত্র কুরআনের সূরা লাহাব নাযিলের পর আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মু জামীল (হাম্মা লাকাল হাতা) তাদের পুত্রদ্বয়কে নির্দেশ দিল মুহাম্মাদের কন্যাদ্বয়কে তালাক দেওয়ার জন্য। তারা তালাক দিল। অবশ্য ইমাম সুয়ুতী মনে করেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই রুকাইয়্যার সাথে উসমানের শার্দী হয়। উপরােক্ত ঘটনার আলােকে সুস্থীর মতটি গ্রহণযােগ্য মনে হয় না।

দ্বীনের জন্য উসমান (রাঃ)-এর আত্মত্যাগ

নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রথম যে দলটি হাবশায় হিজরত করেছিলেন স্থদের মধ্যে উসমান ও তার স্ত্রী রুকাইয়াও ছিলেন। হযরত আনাস (রা) বলেনঃ ‘হাবশার মাটিতে প্রথম হিজরতকারী উসমান ও তঁার স্ত্রী। নবী দুহিতা রুকাইয়া।' রাসূল (সা) দীর্ঘদিন তাদের কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে ভীষণ উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। সেই সময় এক কুরাইশ মহিলা হাবশা থেকে মক্কায় এলাে। তার কাছে রাসূল (সা) ভঁাদের দু'জনের কুশল জিজ্ঞেস করেন। সে সংবাদ দেয়, আমি দেখেছি, রুকাইয়া গাধার ওপর সওয়ার হয়ে আছে এবং "উসমান গাধাটি ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূল (সা) ইরি জন্য দু'আ করেন? আল্লাহ তার সহায় হোন। তের (আ) পর উসমান আল্লাহর রাস্তায় পরিবার পরিজনসহ প্রথম হিয়াভকারী। (আল-ইসাবা) হাবশা অবস্থানকালে তাঁদের সন্তান আবদুল্লাহ অনুগ্রহণ করে এবং এ ছেলের নাম অনুসারে তার কুনিয়াত হয় আবু আবদিল্লাহ। হিজরী ৪র্থ সনে আবদুল্লাহ মারা যান। রুকাইয়ার সাথে তার দাম্পত্য জীবন খুব সুখের হয়েছিল। লােকেরা বলাবলি করতো কেউ যদি সর্বোত্তম জুটি দেখতে চায়, সে যেন উসমান ও রুকাইয়্যাকে দেখে।

উসমান (রাঃ)-এর হিজরাত

হযরত উসমনি বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান করেন। অতঃপর মক্কায় ফিরে আসেন এই গুজব শুনে যে, মক্কার নেতৃবৃন্দ ইসলাম গ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় হিজরাতের পর আবার তিনি মীনায় হিজরত করেন। এভাবে তিনি চুল হিজরাতাইন'দুই হিজরাক্তে অধিকারী হন।


উসমান (রাঃ)-এর যুদ্ধ ও বীরত্ব

একমাত্র বদর ছাড়া সকল যুদ্ধে তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। রাসূল (সা) যখন বদর যুদ্ধে রওয়ানা হন, হযরত রুকাইয়া তখন রোগ শয্যায়। রাসূলের (স) নির্দেশে হযরত উসমান পীড়িত খ্রীর সেবার জন্য মদীনায় থেকে যান। বদরের বিজয়ের খবর যেদিন মদীনায় এসে পৌছুলাে সেদিনই হযরত রুকাইয়্যা ইনতিকাল করেন। রাসূল (সা) উসমানের জন্য বদরের যােদ্ধাদের মত সওয়াব ও গনীমতের অংশ ঘােষণা করেন। (তাবাকাত। ৩/৫৬) এ হিসেবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী সাহাবী।
রুকাইয়্যার ইনতিকালের পর রাসূল (সা) রুকাইয়ার ছােট বােন উম্মু কুলসুমকে উসমানের সাথে বিয়ে দেন হিজরী তৃতীয় সনে। একটি বর্ণনায় জানা যায়, আল্লাহর নির্দেশেই রাসূল (সা) ইমু কুলসুমকে উসমানের সাথে বিয়ে দেন। হিজরী নবম সনে

উম্মু কুলসুমও নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। উম্মু কুলসুমের মৃত্যুর পর রাসূল (সা) বলেনঃ আমার যদি তৃতীয় কোন মেয়ে থাকতাে তাকেও আমি উসমানের সাথে বিয়ে দিতাম।' (হায়াতু উসমান ঃ নিজা মিসরী)

হযরত উসমান উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সেই মুষ্টিমেয় কিছু যােদ্ধাদের মত রাসূল্লাহর (সা) সাথে অটল থাকতে পারেননি। অধিকাংশ মুজাহিদদের সাথে তিনিও ময়দান ছেড়ে চলে যান। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। পৰ্ববর্তী সকল যুদ্ধেই অন্যসব বিশিষ্ট সাহাবীদের মত অংশগ্রহণ করেছেন।


রাসূল (সাঃ) তাবুক অভিযানের প্রস্তুতির ঘােষণা দিলেন। মক্কা ও অন্যান্য আরব গােত্রসমূহেও ঘােষণা দিলেন এ অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য। ইসলামী ফৌজের সংগঠন ও ব্যয় নির্বাহের সাহায্যের আবেদন জানালেন। সাহাবীরা ব্যাপকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। আবু বকর প্রায় সকল অর্থ রাসূলের হাতে তুলে দিলেন। "উমার তাঁর মােট আর্থের অর্ধেক নিয়ে হাজির হলেন। আর এ যুদ্ধের এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় ব্যয়ভার উসমান নিজ কাঁধে তুলে নিলেন। তিনি সাড়ে নয় শ' উট ও পঞ্চাশটি ঘোড়া সরাহ করেন। ইবন ইসহাক বলেন, তাবুকের বাহিনীর পেছনে হযরত উসমান। এত বিপুল অর্থ ব্যয় করেন যে, তার সমপরিমাণ আর কেউ ব্যয় করতে পারেনি। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তাবুকের প্রস্তুতির জন্য উসমান কোচে করে এক হাজার দীনার নিয়ে এসে রাসুলুল্লাহর (সা) কোলে ঢেলে দেন। রাসূল (সা) খুশীতে দীনারগুলি উল্টে পাটে দেখেন এবং বলেনঃ 'আজ খেকে উসমান যা কিছুই করবে, কোন কিছুই তার জন্য ক্ষতিকর হবেনা। এভাবে অধিকাংশ যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় তিনি প্রাণ খুলে চাঁদা দিতেন। একটি বর্ণনায় এসেছে, তাবুকের যুদ্ধে তার দানে সন্তুষ্ট হয়ে রাসূল (সা) তার আগে-পিছের সকল গুনাহ মাফের জন্য দু'আ করেন এবং তাঁকে জান্নাতের ওয়াদা করেন। (আল-ফিতনাতুল কুরআন) | 

বাইয়াতু রিদওয়ানবাইয়াতুশ শাজারা

রাসূল (সা) “উমারকে ডেকে বললেন তুমি মক্কায় যাও। মক্কার নেতৃবৃন্দকে আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য অবহিত কর। উমার বিনীতভাবে বললেন : ইয়া রাসুলাহ! কুরাইশদের কাছ থেকে আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি। আপনি জানেন তাদের সাথে আমার দুমশনি কতখানি। আমি মনে করি উসমানই এ কাজের উপযুক্ত। রাসূল (সা) উসমানকে ডাকলেন। আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য কুরাইশ নেতৃবৃন্দের নিকট এ পয়গামসহ উসমানকে পাঠালেন যে, আমরা যুদ্ধ নয়, বরং বাইতুল্লাহর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এসেছি।

রাসূলুল্লাহর (সা) পয়গাম নিয়ে উসমান মক্কায় পৌছলেন। সর্ব প্রথম আবান ইবন সাঈদ ইবন আস-এর সাথে তাঁর দেখা হয়। আবান তাকে নিরাপত্তা দেন। অবানকে সঙ্গে করে তিনি কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করে রাসূলুল্লাহর (সা) পয়গাম পৌছে দেন। তারা উসমানকে বলে, তুমি ইচ্ছে করলে তাওয়াফ করতে পার। কিন্তু উসমান তাদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (স) যতক্ষণ “তাওয়াফ' না করেন, আমি তাওয়াফ করতে পারিনে। কুরাইশরা তার এ কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে দ্বাকে আটক করে।

কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, উসমানকে তারা তিনদিন আটক করে রাখে। এ দিকে হুদাইবিয়ায় মুসলিম শিবিরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে উসমানকে শহীদ করা হয়েছে। রাসূল (সা) ঘােষণা করলেন উসমানের রক্তের বদলা না নিয়ে আমরা প্রত্যাবর্তন করবাে না। রাসূল (সা) নিজের ডান হাতটি বাম হাতের ওপরে রেখে বলেনঃ হে আল্লাহ, এ বাইয়াত উসমানের পক্ষ থেকে। সে তােমার ও তােমার রাসূলের কাজে মক্কায় গেছে। হযরত উসমান মক্কা থেকে ফিরে এসে বাইয়াতের কথা জানতে পারেন। তিনি নিজেও রাসুলুল্লাহর হাতে বাইয়াত করেন। ইতিহাসে এ ঘটনা বাইয়াতু রিদওয়ান, বাইয়াতুশ শাজারা ইত্যাদি নামে খ্যাত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এ বাইয়াতের প্রশংসা করা হয়েছে।

উসমান (রাঃ) এর খিলাফত লাভ

রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর যখন আবু বকরের হাতে বাইয়াত নেওয়া হচ্ছিল উসমান সংবাদ পেয়ে খুব দ্রুত সেখানে যান এবং আবু বকরের হাতে বাইয়াত করেন। মৃত্যুকালে আবু বকর ‘উমারকে (রা) খলীফা মনােনীত করে যে অঙ্গীকার পত্রটি লিখে যান, তার লিখক ছিলেন উসমান। খলীফা উমারের (রা) হাতে তিনিই সর্বপ্রথম বাইয়াত করেন। | হযরত উমার (রা) ছুরিকাহত হয়ে যখন মৃত্যু শয্যায়, তাঁর কাছে দাবী করা হলাে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের জন্য। কিন্তু তিনি ইতস্ততঃ করে বললেন : আমি যদি খলিফা বানিয়ে যাই, তবে তার দৃষ্টান্ত অবশ্য আছে, যেমনটি করেছেন আমার থেকে এক উত্তম ব্যক্তি, অর্থাৎ, আবু বকর (রা) আর যদি না-ও বানিয়ে যাই তার দৃষ্টান্ত আছে। যেমনটি করেছিলেন আমার থেকে এক উত্তম ব্যক্তি, অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা)। তিনি আরাে বললেন ? আবু উবাইদা জীবিত থাকলে তাকেই খলীফা বানিয়ে যেতাম। আমার রব আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলাম, আপনার নবীকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি এই উম্মাতের আমীন বা পরম বিশ্বাসী ব্যক্তি। যদি আবু হুজাইফার আযাদকৃত দাস সালেম আজ জীবিত থাকতাে, তাকেও খলীফা বানিয়ে যেতে পারতাম, আমার রব জিজ্ঞেস করলে বলতাম, আপনার নবীকে আমি বলতে শুনেছি, সালেম বড় আল্লাহ-প্রেমিক। এক ব্যক্তি তখন বললাে, আবদুল্লাহ ইবন উমার তাে আছে। তিনি বলে উঠলেন, 'আল্লাহ তােমার অমঙ্গল করুন। কসম আল্লাহর, আমি আল্লাহর কাছে এমনটি চাই না। খিলাফতের এ দায়িত্বের মধ্যে যদি ভালাে কিছু থাকে, আমার বংশের থেকে আমি তা করেছি। আর যদি তা মন্দ হয় ও আমরা পেয়েছি। উমারের বংশের এক ব্যক্তির হিসাব নিকাশই এজন্য যথেষ্ট। আমি আমার নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, আমার পরিবারবর্গকে মাহরুম কত্রেছি। কেনি পুরস্কারও নয় এবং কোন তিরস্কারও নয় এমনভাবে যদি আমি কোন মতে রেহাই পাই, নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবাে।

যখন একই কথা তার কাছে আবার বলা হলো, তিনি আলীর (রা) দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, তােমাদেরকে হকের ওপর পরিচালনার তিনিই যােগ্য। তবে আমি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় এ দায়িত্ব বহন করতে রাজী নই। তােমাদের সামনে এই একটি দল আছেন, যাঁদের সম্পর্কে রাসুল (সা) বলেছেন, তারা জান্নাতের অধিবাসী। তঁারা হলেন আবদে মান্নাফের দুই পুত্র আলী ও উসমান, সূলের (সা) দুই মাল আবদুর রাহমান ও সা'দ, রাসূলের (সা) হাওয়ারী ও ফুফাতাে ভাই যুবাইর ইবনুল আওয়াম এবং তালহা। তাদের যে কোন একজনকে খলীফা নির্বাচিত করবে। তাদের যে কেউ খলীফা নির্বাচিত হলে তােমরা তাকে সাহায্য করবে, তার সাথে সুন্দর আচরণ করবে। তিনি যদি তােমাদের কারাে উপর কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন, যথাযথভাবে তােমরা তা পালন করবে।

হযরত উমার উল্লেখিত দলটির সদস্যদের ডেকে বললেন, আপনাদের ব্যাপারে আমি ভেবে দেখেছি। আপনারা জনগণের নেতা ও পরিচালক। খিলাফতের দায়িত্বটি আপনাদের মধ্যেই থাকা উচিত | আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট অবস্থায় রাসূল (সা) ইনতিকাল করেছেন। আপনারা ঠিক থাকলে জনগণের ব্যাপারে আমার কোন ভয় নেই। তবে আপনাদের পারস্পরিক বিবাদকে আমি ভয় করি। জনগণ তাতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে।

তারপর তিনি নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছিলেন তার মৃত্যুর পর তিন দিন তিন রাত্রি। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদকে বললেন, আমাকে কবরে শায়িত করার পর এই দলটিকে একত্র করবে এবং তারা তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করবে। সুহায়িবকে বললেন ঃ তিন দিন তুমি নামাযের জামায়াতের ইমামতি করবে। আলী, উসমান, সা'দ, আবদুর রাহমান, যুবাইর ও তালহরি কাছে যাবে, যদি তালহা মদীনায় থাকে (তাল তখন মদীনার বাইরে ছিলেন)। তাদেরকে এক স্থানে সমবেত করবে। আবদুল্লাহ ইবন উমারকে হাজির করবে। তবে খিলাফতের কোন হক তার নেই। তাদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে। তাদের পাঁচজন যদি কোন একজনের ব্যাপারে একমত হয় এবং একজন দ্বিমত পোষণ করে, তরবারি দিয়ে তার কল্লা কেটে ফেলবে। আর যদি চারজন একমত হয় এবং দু'জন 'অয়ীকার করে, তবে সে দু'জনের কল্লা উড়িয়ে দেবে। আর যদি তিনজন কৱে দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়, আবদুল্লাহ বিন উমার যে পক্ষ সমর্থন করবে তারা তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করবে। অন্য পক্ষ যদি আবদুল্লাহ বিন উমারের সিদ্ধান্ত না মানে, তাহলে আবদুর রাহমান বিন আউফ যে দিকে থাকবে তোমরা সেদিকে যাবে। বিরােধীরা যদি জনগণের সিদ্ধান্ত না মানে তাহলে তাদেরকে মানাতে বাধ্য করবে।

হযরত উমারকে দাফন করার পর মিকদাদ বিন আসওয়াদ শূরার সদস্যদের মিসওয়াব ইবনুল মাখরামা মতান্তরে হযরত আয়িশার হুজরায় একত্র করলেন। তাঁরা পাঁচজন। তালহা তখনাে মদীনার বাইরে। তাদের সাথে যুক্ত হলেন আবদুল্লাহ বিন "উমার। বাড়ীর দরজায় প্রহরী নিয়ােগ করা হলাে আৰু তালহাকে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলােচনা ও তুমুল বাক-বিত হলাে। এক পর্যায়ে আবদুর রহমান বললেন তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ, যে তার দাবী ত্যাগ করতে পার এবং তােমাদের উত্তম। ব্যক্তিকে নির্বাচনের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করতে পার? আমি আমার খিলাফতের দাবী ত্যাগ করছি। হযরত উসমান সর্বপ্রথম এ প্রস্তাবে রাজী হয়ে আবদুর রাহমানের হাতে তার ক্ষমতা ন্যস্ত করলেন। তারপর অন্য সকলে তার অনুসরণ করলেন। এভাবে খলীফা নির্বাচনের গােটা দায়িত্বটি আবদুর রাহমানের ওপর এসে বর্তায়।

হযরত আবদুর রাহমান দিনরাত রাসূলুল্লাহর (সা) অন্যসব সাহাবী, মদীনায় অবস্থানরত সকল সেনা-অফিসার, স্ক্রান্ত ব্যক্তিবর্গসহ সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলােচনা করলেন। কখনাে ব্যক্তিগতভাবে, কখনাে সম্মিলিতভাবে। প্রায় সকলেই হত্ব উসমানের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেন।

যেদিন সকালে ‘উমার-নির্ধারিত সময় সীমা শেষ হবে, সে রাতে আবদুর রাহমান এলেন মাখরামার বাড়ীতে। তিনি প্রথমে যুবাইর ও সা’দকে ডেকে মসজিদে নববীর সুফায় বসে এক এক করে তাঁদের সাথে কথা বললেন, এভাবে উসমান আলীর সাথেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত একান্তে আলাপ করেন।

এদিকে মসজিদে নববী লােকে পরিপূর্ণ। শেষ সিদ্ধান্তটি শােনার জন্য সবাই ব্যাকুল। ফজরের নামাযের পর সমবেত মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আবদুর রাহমান খলীফা হিসেবে হযরত উসমানের নামটি ঘোষণা করেন এবং তার হাতে বাইয়াত করেন। তারপরই হযরত আলীও বাইয়াত করেন। অতঃপর সমবেত জনমন্ডলী হযরত উসমানের হাতে বাইয়াত করেন। হিজরী ২৪ সনের ১লা মুহাররম। সােমবার সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। (তারীখুল উম্মাহ আলইসলামিয়্যাহ, খিরী বেক)

হযরত উসমান (রাঃ) এর শাহাদাত বরণ

হযরত উসমান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। খিলাফতের প্রথম পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ শােনা যায়না। তবে শেষের দিকে বসরা, কুফা, মিসর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে। মূলতঃ এ অসন্তোষ সৃষ্টির পশ্চাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে পরাজিত ইয়াহুদী শক্তি। ধীরে ধীরে তারা সংঘবদ্ধভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং মদীনায় খলীফার বাসভবন ঘেরাও করে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে কোন উল্লেখযােগ্য ব্যক্তি ছিল না। তারা খলীফাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পদত্যাগ দাবী করে। খলীফার বাসগৃহের খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। মসজিদে নামায আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তারা খলীফার বাড়ীতে ঢুকে পড়ে এবং রোযা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত বয়োবৃদ্ধ খলীফাকে হ্যা করে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫ সনের ১৮ খ্রিলহজ্জ, শুক্রবার 'আসর নামাযের পর। রাসূলের (সা) ওফাত ও হযরত উসমানের শাহাদাতের মধ্যে ২৫ বছরের ব্যবধান। বারো দিন কম বারাে বছর তিনি খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।

জান্নাতুল বাকীর 'হাশশে কাওকাব' নামক অংশে তাকে দাফন করা হয়। মাগরিব ও ঈশার মাঝামাঝি সময়ে তার দাফন কার্য সমাধা হয়। যুবাইর ইবন মুঈম (রা) তার জানাযার ইমামতি করেন। কাবুল থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিশাল খিলাফতের কর্ণধারের জানাযায় মাত্র সত্তরজন লােক অংশগ্রহণ করেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স কত হয়েছিল সে সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ৮২ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ছিল। (আল-ফিকুলাতুল কুবরা) 

খলীফা উসমান বিদ্রোহীদের দ্বারা ঘেরাও হওয়ার পর ইচ্ছা করলে তাদের নির্মূল করতে পারতেন। অন্য সাহাবীরা সেজন্য প্রস্তুও ছিলেন। কিন্তু হযরত উসমান নিজের জন্য কোন মুসলমানের রক্ত ঝরাতে চাননি। তিনি চাননি মুসলমানদের মধ্যে রক্তপাতের সূচনাকারী হতে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক নাজুক মুহূর্তে হযরত উসমান (রা) যে কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করেন তা একজন খলীফা ও একজন বাদশার মধ্যে যে পার্থক্য তা স্পষ্ট করে তােলে। তঁার স্থলে যদি কোন বাদশাহ হতাে, নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যেকোন কৌশল প্রমাণ করতে দ্বিধাবােধ করতাে না। তাতে যত ক্ষতি বা ধ্বংসই হােক কেন। কিন্তু তিনি ছিলেন খলীফা রাশেদ। নিজের জীবন দেওয়াকে তুই মনে করেছেন। তবুও যেন এমন সম্মান বিনষ্ট না হতে পারে যা একজন মুসলমানের সবকিছু থেকে প্রিয় হওয়া উচিত।' (খিলাফত ও মুলুকিয়াত ঃ আবুল আ'লা মওদূদী) ইসলামের জন্য হযরত উসমানের অবদান মুসলিম জাতি কোন দিন ভুলতে পারবে। ইসলামের সেই সংকটকালে আল্লাহর রাস্তায় তিনি যেভাবে খচ করেছেন, অন্য কোন ধনাঢ্য মুসলমানের মধ্যে তার কোন নর্জীর নেই। তিনি বিস্তুর অর্থের বিনিময়ে ইয়াহুদী মালীকানাধীন বীয়ে রুমা'- কূপটি খরীদ করে মদীনার মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করেন। বিনিময়ে রাসূল (স) দ্বাকে জান্নাতের অঙ্গীকার করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। যিনি একদিন বীরে রুমা' ওয়াকফ করে মদীনাবাসীদের পানি-কষ্ট দূর করেছিলেন, তার বাড়ীতেই সেই কূপের পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘেরাও অবস্থায় একদিন তিনি জানালা দিয়ে মাথা বের করে মদীনাবাসীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাসুল্লাহর (সা) নির্দেশে আমিই বীরে রুমা খরীদ করে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফ করেছি। আজ সেই কূপের পানি থেকেই তােমরা আমাকে বঞ্চিত করছে। আমি আজ পানির অভাবে ময়লা পানি দিয়ে ইফতার করছি।

জান্নাতে রাসুলের (সাঃ) বন্ধু হবেন হযরত উসমান (রাঃ)

হযরত উসমানের ফজীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা) হতে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সারকথা তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) অ্যন্ত প্রিয় ছিলেন। রাসূল্লাহর (সা) নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর বিশেষ স্থান ছিল। রাসূল (সা) বার বার তাঁকে জান্নাতের খােশখবর দিয়েছেন। নবী (সা) বলেছেন : 'প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে উসমান।' (তিরমিযী) হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার বলেন নবীর (স) সময়ে মুসলমানরা আবু বকর, উমার ও উসমানকে সকলের থেকে অধিক মর্যাদাবান মনে করতেন। এ ছাড়া অন্য কোন সাহাবীকে বিশেষ কোন মর্যাদা দেওয়া হতাে না।

হৱত উসমান (রা) রাসুল্লাহর (সা) সময়ে 'কাঙিবে এই’- অহী লিখক ছিলেন। সিদ্দীকী ও ফারুকী যুগে ছিলেন পরামর্শৰ্দান্স। প্রতিমন্ত্রই তিনি হজ্জ আদায় করতেন। তবে যে বহর শহীদ হন, ঘেরাও থাকার কারণে হজ্জ আদায় করতে পারেননি। সারা বছরই রােযা রাখতেন। সারা রাত ইবাদতে কাটতো। এক রাকাতে একবার কুরআন শরীফ খতম করতেন। রাতে কারও ঘুমের ব্যাঘাদ ঘটাতেন না। রাতে চাকরদের খিদমান্ত গ্রহণ করছেন না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। রাসূল (সা) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে উসমান সর্বাধিক লজ্জাশীল। তিনি আরাে বলেছেনঃ উসমানকে দেখে ফিরিশতারাও লজ্জা পায়। আশ্মীয়-বন্ধুদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত সদয় । 'তার গুণাবলী ও মর্যাদা সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে প্রকাশ করা যাবে না।




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url