রাহে আমল-৮ || জামায়াতে নামায পড়ার গুরুত্ব ও মর্যাদা || বিনা ওযরে জামায়াত ত্যাগ করলে নামায কবুল হয় না ||





জামায়াতে নামায পড়ার গুরুত্ব ও মর্যাদা

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلوةٌ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلوةَ الْغَذِ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَة
(بخاري، مسلم، عبد الله بن عمر رض)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি শরীয়ত সম্মত ওযর ছাড়া মুসলমানদের জামায়াত থেকে পৃথক একাকী নামায পড়ে, তার নামায অপেক্ষা জামায়াতের নামায সাতাইশ গুন বেশী মর্যাদার অধিকারী। (বোখারী, মুসলিম)

এ হাদীসে “ফা” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ একাকী ও বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থানকারী। জামায়াতের নামাযে সকল ধরনের মুসলমান অংশ গ্রহণ করে। ধনী, গরীব, দামী ও সুন্দর পোশাকধারী এবং পুরানো ছেড়া ফাটা কাপড় পরিধানকারী লখাই। যারা অভিজাত্য ও ধন-ঐশ্বর্যের অহংকারে মত্ত থাকে, তারা পছন্দ করে না যে, তাদের সাথে কোন গরীব মানুষ নামাযে দাঁড়াক। তাই তারা নামায একাকী বাড়ীতে পড়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা) এই মানসিক রোগের চিকিৎসার্থে আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা জামায়াতের সাথে নামায পড়, নিজের ঘরে বা মসজিদে একা একা নামায পড়োনা ।

এ কথাও জানা দরকার যে, সাধারণত জামায়াতের সাথে নামায পড়ায় শয়তানের কু-প্ররোচনা সৃষ্টির অবকাশ খুবই কম থাকে। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক মজবুত হয়। এ কারণেই রাসূল (সা)-এর ঘোষণা অনুসারে জামায়াতে নামাযের মর্যাদা সাতাইশ গুন বেশী। পরবর্তী ৫৩নং হাদীসেও এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

إِنَّ صَلوةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلوتِ وَحْدَةً، صَلَاتُهُ مَعَ رَجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلوتِهِ مَعَ الرَّجُلِ
و مَا أَكْثَرَ فَهُوَ أَحَبَّ إِلَى الله (أبوداؤد، أبي بن كعب)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কোন ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির সাথে যে নামায আদায় করে, তা তার একাকী পড়া নামাযের চেয়ে অধিকতর ঈমানী প্রেরণা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক। আর যে নামায সে দু'জনের সাথে পড়ে তা একজনের সাথে পড়া নামাযের চেয়ে বেশী ঈমানোদ্দীপক। এভাবে যত বেশী লোকের সাথে নামায পড়া হবে ততই তা আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে । (আবু দাউদ)

অর্থাৎ ততই আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত হবে। বিনা জামায়াতে নামায় পড়লে শয়তানের প্রভাব জোরদার হয়।

مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِي قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوِ لَا تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلوة إِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ، فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ
فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّنْبُ الْقَاصِيَة. (أبوداؤد، ابودرداء رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে জনপদে বা গ্রামে তিনজন মুসলমান বাস করে অথচ তারা জামায়াতের সাথে নামায পড়ে না, সেই গ্রাম বা জনপদের অধিবাসীদের ওপর শয়তান বিজয়ী হয়। সুতরাং তুমি জামায়াতের সাথে নামায পড়াকে নিজের জন্য বাধ্যতামূলক বানিয়ে নাও। মনে রেখ, বাঘ সেই ছাগলেরই ঘাড় মটকায়, যে তার রাখাল থেকে দূরে ও পাল থেকে আলাদা থাকে।

এ হাদীসের মর্মার্থ এই যে, জামায়াতবদ্ধভাবে নামায আদায়কারীদের ওপর আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তাদের হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কিন্তু কোন জনপদে যদি জামায়াতবদ্ধভাবে নামায পড়ার ব্যবস্থা না করা হয়, , তাহলে আল্লাহ সেই জনপদবাসীর হেফাজত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেন। ফলে তারা শয়তানের কর্তৃত্বে চলে যায়। তারপর সে তাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা শিকার করে এবং যেদিকে ইচ্ছা চালায়। উদাহরণস্বরূপ, ছাগলের পাল যতক্ষণ রাখালের নিকটে থাকে, ততক্ষণ তার ওপর দু'দিক থেকে প্রহরা থাকে। প্রথমত রাখালের প্রহরা, দ্বিতীয়ত নিজেদের একতা। এই দুটি কারণে বাঘ তাদেরকে শিকার করতে পারে না। কিন্তু কোন নির্বোধ ছাগল যদি তার রাখালে মর্জির বিরুদ্ধে পাল থেকে বেরিয়ে যায় ও পেছনে একাকী পড়ে থাকে, তবে বাঘ অতি সহজেই তাকে শিকার করে। কেননা একে তো একাকী হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। উপরন্ত রাখালের হেফাজত থেকেও নিজেকে বঞ্চিত করেছে।

বিনা ওযরে জামায়াত ত্যাগ করলে নামায কবুল হয় না

٥٥ من سمع المنادي فلم يمنَعهُ مِنْ اِتِّبَاعِهِ عُذَر قَالُوا وَمَا الْعُذْرِ ؟ قَالَ خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ لَمْ تُقْبَلْ
مِنْهُ الصَّلوةَ الَّتِي صَلي. (أبوداؤد، ابن عباس رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনলো এবং তার এমন কোন ওযর নেই, যা তাকে তৎক্ষণাত আযানের ডাকে সাড়া দিতে বাধা দেয়, সে ব্যক্তি যদি একাকী নামায পড়ে তবে সে নামায কবুল হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো ওষর দ্বারা কি বুঝানো হচ্ছে? তিনি বললেন : ভয় অথবা রোগ ।
                                                                                                                                                            
এখানে ভয় দ্বারা প্রাণনাশের ভয় বুঝানো হয়েছে। চাই কোন শত্রুর কারণে হোক অথবা হিংস্র প্রাণী বা সাপের কারণে হোক। আর রোগ দ্বারা এমন শারীরিক অবস্থা বুঝানো হয়েছে, যার কারণে মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয় না। প্রবল ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টি বা অস্বাভাবিক ঠাণ্ডাও ওযর হিসাবে গণ্য। তবে শীত প্রধান দেশে ঠাণ্ডা ওযর হিসাবে গণ্য নয়। বরঞ্চ গরম দেশে কখনো কখনো প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে এবং তাতে প্রাণনাশের আশংকা থাকে। এ ধরনের ঠাণ্ডা ওযর হিসাবে গণ্য। অনুরূপ ঠিক নামাযের সমরে যদি পেশাব বা পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে সেটিও ওযরের অন্তর্ভুক্ত।

মসজিদে জামায়াতে নামায পড়া বিধিবদ্ধ সুন্নাত

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ رَأَيْتَنَا وَ مَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلوةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْعْلِمَ نِفَاقَهُ أَوْ مَرِيضٌ إِنْ كَانَ الْمَرِيضُ لَيَمْشِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلوةَ وَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الهدى، وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلوةَ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَنَ فِيْهِ، وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللَّهَ غَدًا مِّسْلِمًا فَلْيُحَافِظُ عَلَى هَذِهِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ سُنَنَ الْهُدَى إِنَّهُنَّ مِنْ سَنَنِ الْهُدَى وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلَّفَ فِي بَيْتِهِ لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ (مسلم)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মানউদ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে আমাদের অবস্থা ছিল এ রকম যে, মোনাফেক হিসাবে সুপরিচিত অথবা রোগী ছাড়া আমাদের আর কেউ জামায়াতবদ্ধ নামায থেকে পিছিয়ে থাকতো না। এমনকি রোগীও দু'জন লোকের সাহায্যে মসজিদে পৌঁছতো এবং জামায়াতে অংশ গ্রহণ করতো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আরো বলেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে সুন্নাতুল হুদা (বিধিবদ্ধ সুন্নাত) শিক্ষা দিয়েছেন এবং যে মসজিদে আযান দেয়া হয়, সে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়াও সুন্নাতুল হুদার অন্তর্ভুক্ত। (সুন্নাতুল হুদা বা বিধিবদ্ধ সুন্নাত বলা হয় আইনগত মর্যাদার অধিকারী সুন্নাতকে। যা করার জন্য উম্মাতকে আদেশ দেয়া হয়েছে।) অপর এক বর্ণনা মতে তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন অনুগত ও ফরমাবরদার বান্দা হিসাবে আল্লাহর সাথে মিলিত হতে চায়, সে যেন এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায সেই মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করে, যেখান থেকে আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নবীকে বিধিবদ্ধ সুন্নাত শিখিয়েছেন এবং এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায বিধিবদ্ধ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা যদি মোনাফেকদের মত (মসজিদের পরিবর্তে নিজ নিজ বাড়ীতে নামায পড় তাহলে তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ করবে। আর নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে তোমরা বিপথগামী হয়ে যাবে। (মুসলিম)



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url