জবর দখল, খেয়ানত ও আত্মসাত সম্পর্কে কুরআন হাদিসের সাবধান বাণী





জবর দখল, খেয়ানত ও আত্মসাত

জবর দখল, খেয়ানত ও আত্মসাত বিষয়ে আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
  • যুলুম ও জবরদস্তির মাধ্যমে অন্যের সম্পত্তি দখল করা
  • যে সম্পদ তার মালিক খুশী মনে দেয় না তা হালাল নয়
  • ধার কর্জ ফেরত দেয়া অপরিহার্য
  • খেয়ানতকারীর সাথে খেয়ানত করা যাবে না
  • যেখানে খেয়ানত সেখানে শয়তান
  • ক্ষেত খামার ও বাগান করা সদকায় পরিণত হয়
  • প্রয়ােজনের অতিরিক্ত পানি আটকে রাখার ভয়াবহ পরিণাম
  • শ্রমিকের মজুরী ঘাম শুকানাের আগে দিতে হয়
  • শ্রমিকের মজুরী আত্মসাতের পরিণাম

যুলুম ও জবরদস্তির মাধ্যমে অন্যের সম্পত্তি দখল করা

قال رسول الوصلى الله عليه وسلم مث أمم
لما فإنه يكون يوم القيامة من شبرا بين الأرض سبع أرضين. (بخاری، مسلم - سعید بن زید رض)

রাসূল (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি কারাে এক বিঘত পরিমাণ ভূমিও অত্যাচার ও বল প্রয়ােগের মাধ্যমে দখল ও আত্মসাত করবে। আল্লাহ কেয়ামতের দিন সাতটা পৃথিবী তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেবেন। (বােখারী) 

যে সম্পদ তার মালিক খুশী মনে দেয় না তা হালাল নয়

قال رسول الل صلى الله عليه وسلم ألا تظلموا أبل مال امرئ إبطيب نفس نه. (بيهقي)

রাসূল (সা) বলেছেন : সাবধান, কেউ যুলুম করাে না। কোন ব্যক্তির সম্পদ ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল নয়, যতক্ষণ তার মালিক সস্তুষ্ট চিত্তে তা না দেয়। (বায়হাকী)

ধার কর্জ ফেরত দেয়া অপরিহার্য

قال رسول الوصلى الله علي وتم العقارية مؤداه واث مژدودوالذي مضي و الكفيل غارم. ترمذي، أبو أمامة رض)

রাসূল (সা) বলেছেন : ধরে নেয়া জিনিস, দুধ খাওয়ার জন্য প্রদত্ত জন্তু ও ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। আর যে ব্যক্তি কারাে জামিন হবে তাকে তার জামানত অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। (তিরমিযী) 

অর্থাৎ যে জিনিস কারাে কাছ থেকে সাময়িক ব্যবহারের জন্য চেয়ে আনা হয় তা ব্যবহারের পর ফেরত দিতে হবে। আরবের রীতি ছিল যে, ধনী লােকেরা নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে দুধ খাওয়ানাের জন্য উটনী দিত। একে "মিনহা' বলা হতাে। হাদীসের মর্ম এই যে দুধ খাওয়ার জন্য যে জন্তু দেয়া হবে তার দুধ শেষ হওয়া মাত্রই অস্কুকে মালিকের নিকট ফেরত দিতে হবে। আর ঋণ অশাই যথা সময়ে পরিশােধ করতে হবে। আত্মসাত করা যাবে না। আর যে ব্যক্তি কারাে জামিন হবে, তার কাছ থেকে জামানত অবশ্যই আদায় করতে হবে।

খেয়ানতকারীর সাথে খেয়ানত করা যাবে না

قال رسول الله صلى الله علي وستم أو الأمانة إلى من ائتمن و تن من سمائك. (ترمذي، أبو هريرة رض)

রাসূল (সা)  বলেছেন; তােমাকে বিশ্বস্ত মনে করে যে ব্যক্তি তােমার কাছে কোন আমানত রাখবে, তার আমানত ফিরিয়ে দিও। আর যে ব্যক্তি তােমার সাথে খেয়ানত ও বিশ্বাস ঘাতকতা করবে, তুমি তার সাথে খেয়ানত ও বিশ্বাস ঘাতকতা করবে না। (নিজের ন্যায় পাওনা আদায়ে অন্য কোন বৈধ পন্থা অবলম্বন কর।) (তিরমিযী)। 

যেখানে খেয়ানত সেখানে শয়তান

قال البي صلى الله عليه وتم إن الله
وجل يقول أن اليث الشريكين ماكمين أحدهما صاحبة إذا خائة خرجت من بينهما، وفي رواية وجاء الشيطان. (ابو داؤد، أبو هريرة رض)

রাসূল (সা) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা বলেন যতক্ষণ কোন কারবারের দুই সহযােগী পরস্পরের সাথে খেয়ানত-বিশ্বাসঘাতকতা না করবে ততক্ষণ আমি তাদের সাথে থাকি। কিন্তু যখন এক শরীক অপর শরীকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন আমি সেই দুজনের মধ্য থেকে বের হয়ে আসি। আর আমার বের হওয়ার সাথে সাথে সেখানে চলে আসে শয়তান। (আবু দাউদ) 

এ হাদীসের মর্ম হলাে, কারবারে শরীক লোকেরা যতক্ষণ পরস্পরের সাথে খেয়ানত, বিশ্বাসঘাতকতা ও ধােকাবাজী-ঠগবাজী না করে, ততক্ষণ আমি তাদেরকে সাহায্য করি, তাদের উপর রহমত ও করুণা বর্ষণ করি এবং তাদের ব্যবসায়ে ও পারস্পরিক সম্পর্কে বরকত দেই। কিন্তু যখন তাদের কারাে নিয়ত তথা মানসিকতা খারাপ হযে যায় এবং বিশ্বাস ঘাতকতায় লিপ্ত হয়, তখন আমি সাহায্য ও রহমত বর্ষণ বন্ধ করে দেই। এরপর সেখানে শয়তান চলে আসে এবং তাদের উভয়কে ও তাদের কারবারকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। 

ক্ষেত খামার ও বাগান করা সদকায় পরিণত হয়

عن أنس قال قال رسول الله صلى الله عليه
ژاويغرس غرسا ياكل وتم ما من شلم ژ بنه طير أو إنا أو بهيمة إ كان له به صدقة (مسلم)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে মুসলমান কৃষি কাজ করে, গাছের চারা লাগায় এবং তা থেকে (ফলমূল ও চারা) পাখী, মানুষ বা অন্য কোন প্রাণী খেয়ে ফেলে, তা তার জন্য সদকায় পরিণত হয়। (মুসলিম) 

প্রয়ােজনের অতিরিক্ত পানি আটকে রাখার ভয়াবহ পরিণাম

قال رسول اللوصلى الله عليه وستم ده
مهم الله يوم القيام ودين إليهم، رجل لف على العولقد أعلى بها أكتر امي وهو كايب ورج حلف على يمين گاز بو بثد العشريثتع بها
تو الله مال جير شام، مم ممتع فشل ما اليوم امممم مممميلي گما نفت نه ما لم تثمن يداك . (بخاری و مسلم)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন তিন শ্রেণীর ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কেয়ামতের দিন কথাও বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না; প্রথমত, যারা নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যে কসম খেয়ে বলে যে, এর যত দাম আমি চাইছি, তার চেয়ে বেশী দাম খরিদ্দাররা বলে গেছে। দ্বিতীয়তঃ যারা আছরের নামাযের পর মিথ্যে কসম খায় এবং তার মাধ্যমে কোন মুসলমানকে ঠকিয়ে তার পণ্য নিয়ে নেয়। তৃতীয়তঃ যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানির অধিকারী হয়ে তা আটকে রাখে এবং কাউকে দেয় না। | শেষােক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন বলবেন : তুমি যেমন তােমার অতিরিক্ত পানি আটকে রেখেছ অথচ তুমি পানির স্রষ্টা নও, আমিও তেমনি আজ (তােমার প্রতি) আমার অনুগ্রহ আটকে রাখবাে।
| (বােখারী, মুসলিম) 

শ্রমিকের মজুরী ঘাম শুকানাের আগে দিতে হয়

 قالو الوصلى الله علي وتم أتموا الأجير
رثة. (ابن ماجة، ابن عمر رض)| أجره قبل أن يجة

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : শ্রমিকের ঘাম শুকানাের আগেই তার মজুরী দিয় দাও। (ইবনে মাজা) 

বস্তুত শ্রমিক বলাই হয় সেই ব্যক্তিকে, যে নিজের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের ভরণ পােষণ চালানাের জন্য প্রতিদিন শ্রম খাটাতে বাধ্য হয়। তখন তার মজুরী যদি পরবর্তী কোন দিনে দেয়া হবে বলে বিলম্বিত করা হয়, অথবা আত্মসাত করা হয়, তাহলে ঐ দিন সন্ধ্যায় সে নিজেই বা কী খাবে। আর তার ছেলেমেয়েকেই বা কি খাওয়াবে? 

শ্রমিকের মজুরী আত্মসাতের পরিণাম

۱۲۱- قال رسول الل صلى الله عليه وسلم قال الله
ناشهم يوم القيامة رجل أعطى پي تعالی ک
ا كل منه ل در جباع اشتاجراجيا اشتونی مثه لم يعلم أجره. بخاري، أبي هريرة رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : আমি কেয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবাে : এক, যে ব্যক্তি আমার নাম নিয়ে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং তারপর তা ভংগ করে। দুই, যে ব্যক্তি কোন ভ্রান্ত ও স্বাধীন ব্যক্তিকে (অপহরণ করে) বিক্রি করে দেয় এবং তার পণের অর্থ আত্মসাত করে। তিন, যে ব্যক্তি কোন শ্রমিককে নিয়ােগ করলাে, তার কাছ থেকে পুরাে কাজ আদায় করলাে, অতঃপর কাজ আদায় করার পর তাকে মজুরী দিল না। (বোখারী) 




********************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url