Mohammadia Foundation
https://www.mohammadiafoundationbd.com/2022/12/doridroder-odhikar.html
রাহে আমল - ২৪ || দরিদ্র, অভাবী ও ভৃত্যদের অধিকার ||

দরিদ্র লোকদের অধিকার
অভাবী লোকদের খাওয়ালে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায়
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّوَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيمَةِ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي قَالَ يَارَبِّ كَيْفَ أَطْعِمُكَ وَانْتَ رَبُّ الْعَلَمِيْنَ؟ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فَلَانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ إِنَّكَ لَوْ اطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَالِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ أَدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي، قَالَ يَارَبِّ كَيْفَ أَسْقِيْكَ وَانْتَ رَبِّ الْعَلَمِينَ؟ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فَلَانٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْسَقَيْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَالِكَ
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন: হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে খাওয়াও নি । সে বলবে হে আমার প্রতিপালক, আমি তোমাকে কিভাবে খাওয়াবো? তুমি তো সর্ব জগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন : তুমি কি জান না, তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিল । কিন্তু তুমি তাকে খাওয়াও নি? তুমি কি জান না, তুমি তাকে খাওয়ালে তা আজ এখানে আমার কাছে পেতে ? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাও নি। সে বলবে হে আমার প্রতিপালক, আমি তোমাকে কিভাবে পানি পান করাবো ? তুমি তো সারা বিশ্বের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল। কিন্তু তুমি তাকে পানি দাও নি। তুমি যদি তাকে পানি দিতে তবে সেই পানি আজ আমার এখানে পেতে। (মুসলিম)
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো ও তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো খুবই সওয়াবের কাজ এবং তা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা
ক্ষুধার্তকে পেট ভরে খাওয়ানো
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُّالصَّدَقَةِ أَنْ تُشْبِعَ كَبِدًا جَائِعًا. (مشكوة)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন সর্বোত্তম সদকা এই যে, তুমি কোন ক্ষুধার্তকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে। (মেশকাত)
সাহায্য প্রার্থনাকারীকে কিছু না কিছু দেয়া উচিত
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَرُدُّوا السَّائِلَ وَلَوْ بِظُلْفٍ تُحْرَقٍ . (مشكوة)
রাসূল (সা) বলেন: যে ব্যক্তি সাহায্য চাইতে আসে, তাকে কিছু না কিছু দিয়ে ফেরত দিও। এমনকি পোড়া ক্ষুর হলেও দিও। (মেশকাত) অর্থাৎ কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি তোমার দরজায় আসে তবে তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিও না। তাকে কিছু না কিছু দিও। তা সে যত ক্ষুদ্র ও মামুলী জিনিসই হোক না কেন।
প্রকৃত দরিদ্রের পরিচয়
۱۹۲ - قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ الْمِسْكِينُ الَّذِي يَطُونُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقَمَة وَاللقَمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَكِنِ الْمُسْكِينُ الَّذِي لَا يَجِدُ غِنَى يُغْنِيْهِ وَلَا يُعْطَنْ لَهُ فَيْتَصَدَّقَ عَلَيْهِولا يقوم فيسأل النَّاسَ. (بخاري، مسلم)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : প্রকৃত দরিদ্র সে নয়, যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং এক গ্লাস, দু'গ্রাস বা একটা খেজুর বা দুটো খেজুর নিয়েই বিদায় হয়ে যায়। প্রকৃত দরিদ্র হলো সেই ব্যক্তি, যার কাছে নিজের প্রয়োজন পূরণের উপযুক্ত দ্রব্য সামগ্রী বা অর্থ থাকে না। এমনকি সাধারণ মানুষ তার দরিদ্র বুঝতেও পারে না, যে তাকে সদকা দেবে এবং সে মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পেতে ভিক্ষাও করে না। (বোখারী, মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা উম্মাতকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা সেই প্রকৃত দরিদ্র লোকদের সন্ধান কর, যারা অভাব অনটনে বিপর্যস্ত হলেও আত্মসম্মান ও আত্মাভিমানের কারণে নিজের দুরবস্থাকে মানুষের সামনে প্রকাশ পেতে দেয় না । নি:স্ব মানুষের মত মুখমণ্ডলকে বিষর্ষ বানিয়ে ঘুরে বেড়ায় না এবং অন্যদের কাছে হাতও পাতে না। এ ধরনের লোকদেরকে খুঁজে খুঁজে সাহায্য দেয়া খুব বড় নেক কাজ।
দরিদ্র ও বিধবাদের সেবা করা
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّاعِى عَلَى الْأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالْجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ وَاحْسَبُهُ قَالَ وَكَالْقَاعِمِ الَّذِي لَا يَفْتُرُ وَكَالصَّاعِمِالَّذِي لَا يُفْطِرُ. (بخاري، مسلم)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যারা দরিদ্র ও বিধবাদের সেবার জন্য সচেষ্ট, তারা সেই ব্যক্তির মত, যে আল্লাহর পথে জেহাদ করে এবং সেই ব্যক্তির মত যে, সারা রাত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে (নামায পড়ে) এবং কখনো ক্লান্ত হয় না এবং সবসময় রোযা থাকে, কখনো রোযা ভাংগে না। (বোখারী, মুসলিম)
ভৃত্যদের অধিকার
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْمَعْلُونِ طَعَامُهُ وَكِسُوتُهُ ولا يكلف مِنَ الْعَمَلِ الاما يطيق. (مسلم)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: ভৃত্যের অধিকার এই যে, তাকে খাবার ও পোশাক দিতে হবে এবং তাকে তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী কাজ দিতে হবে। (মুসলিম)
মূল হাদীসে ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে “মামলুক”, যা দ্বারা দাসদাসী বুঝানো হয় । ইসলামের পূর্বে আরব সমাজে যে দাসদাসী চিল তাদের সংগে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করা হতো। তাদেরকে ঠিকমত খাবারও দেয়া হতো না, পোশাক পরিচ্ছেদও দেয়া হতো না। উপরন্তু তাদেরকে তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হতো। যখন ইসলামের অভ্যুদয় ঘটলো, তখন এই শ্রেণীটি বিদ্যমান ছিল। রাসূল (সা) মুসলমানদের কঠোর নির্দেশ দিলেন যে, তাদের সাথে মানুষের মত আচরণ কর। তোমরা যা খাও তাই তাদেরকে খাওয়াও, তোমরা যে কাপড় চোপড় পর, তাই তাদেরকে পরাও এবং তাদের ওপর তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ চাপিওনা। যতটা কাজ করা তাদের সাধ্যে কুলায়, ততটাই তাদের ওপর চাপিও।
যে সমস্ত চাকর নকর স্থায়ীভাবে আমাদের অধীনে থাকে এবং দিনরাত আমাদের সাথে কাটায়, তাদের সাথেও অনুরূপ আচরণই করা উচিত। ভৃত্যদের সাথে আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে আৰু কুলাবার বর্ণনাটি প্রণিধান যোগ্য । আবু কুলাবা (রা) বলেন : হযরত সালমান ফারসী যখন একটি প্রদেশের গভর্নর, তখন এক ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে দেখলো, তিনি নিজ হাতে আঁটা তৈরী করছেন। লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, এ কী ব্যাপার? হযরত সালমান বললেন আমি আমার চাকরকে একটা কাজের জন্য বাইরে পাঠিয়েছি। দু'টো কাজের ই দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপানো আমি পছন্দ করি না।
দাসদাসীরা ভাই বোন তুল্য
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِخْوَانُكُمْ جَعَلَهُمُ الله تَحْتَ ايْدِيكُمْ، فَمَنْ جَعَلَ اللَّهُ أَخَاهُ تَحْتَ يَدَيْهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلَيُلْبِسَهُ مِمَّا يَلْبَسُ وَلَا يُكَلَّفَهُ مِنَ الْعَمَلِ مَا يَغْلِبُهُ، فَإِنْ كَلَّفَهُ مَا يَغْلِبُهُفليعنه عليه - (بخاری، مسلم)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: দাসদাসীরা তোমাদের ভাইবোন তুল্য । আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তোমাদের কর্তৃত্বের অধীন করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যার কর্তৃত্বে তার ভাইকে অর্পণ করেছেন, সে যেন নিজে যা খায়, তাকেও তাই খাওয়ায়, নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তাই পরিধান করায় এবং যে কাজ তার ক্ষমতার বাইরে সে কাজ তাকে করতে বাধ্য না করে। আর যদি তার ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ করতে তাকে বাধ্য করে তবে সে যেন তাকে সেই কাজে সাহায্য করে। (বোখারী, মুসলিম)
ভৃত্যকে সাথে বসিয়ে খাওয়ানো উচিত
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَنَعَلا حَدِكُمْ خَادِمُهُ طَعَامَهُ ثُمَّ جَاءَهُ بِهِ وَقَدْ وَلِيَ حَرَّهُ وَدُخَانَة فَلْيَقْعِدَهُ مَعَهُ فَلْيَأْكُلْ، فَإِنْ كَانَ الطَّعَامُ مَشْفُوهَا قَلِيلًا فَلْيَضَعُ فِي يَدِهِ مِنْهُ أكْلَةً اَوْ أكْلَتَيْنِ
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন তোমাদের ভৃত্য যখন তোমাদের জন্য খাবার তৈরী করে, অতঃপর তা তোমাদেরকে পরিবেশন করে এবং সে খাবার তৈরী করতে গিয়ে আগুনের তাপ ও ধুয়ায় কষ্ট পায়, তবে তাকে নিজের কাছে বসিয়ে খাওয়ানো উচিত। কিন্তু খাবার যদি পরিমাণে কম হয়, তবে তাকে অন্তত এক লোকমা বা দু'লোকমা দেয়া উচিত । (মুসিলম, আবু হুরায়রা)
ভৃত্যদেরকে সন্তানের মত সমাদর করা উচিত
عَنْ أَبِي بَكْرِ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ سَيِّ الْمَلَكَةِ، قَالُوا يَارَسُولَ اللهِ أَلَيْسَ أَخْبَرْتَنَا أَنَّ هُذِهِ الأمة أَكْثَرُ الأُمَمِ مَمْلُوكِيْنَ وَيَتَامَى؟ قَالَ نَعَمْفَاكْرِ مُوهُمْ كَكَرَامَةِ أَوْلَادِكُمْ وَأَطْعِمُوهُمْ مِمَّا تَأْكُلُونَ -
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন: দাসদাসী ও ভৃত্যদের ওপর ক্ষমতার অপপ্রয়োগকারী বেহেশতে যেতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো হে রাসূলুল্লাহ, আপনি কি আমাদেরকে জানাননি যে, এই উম্মাতে অন্য সকল উম্মাতের চেয়ে দাসদাসী ও এতীমের সংখ্যা বেশী? তিনি বললেন : হা, সুতরাং তাদেরকে আপন সন্তানের মত সমাদর কর এবং তোমরা যা খাও, তাদেরকেও তাই খাওয়াও। (ইবনে মাজাহ)
নামাযী ভৃত্যকে প্রহার করা চলবে না
إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهَبَ لِعَلِي غُلَامًا فَقَالَ لَا تَضْرِبُهُ فَإِنِّي نُهِيْتُ عَنْ ضَرْبٍ أَهْلِالصَّلوةِ، وَقَدْ رَأَيْتُهُ يُصَلّى - (مشكوة، ابو امامه)
রাসূলুল্লাহ (সা) আলী (রা)কে একটি ক্রীত দাস দিলেন, অতঃপর বললেন ওকে মার ধর করো না। কেননা নামাযীকে প্রহার করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। ওকে আমি নামায পড়তে দেখেছি। (মেশকাত)
*******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন