রাহে আমল - ২০ || স্বামীর অধিকার ||




স্বামীর অধিকার

স্বামীর আনুগত্য স্ত্রীর বেহেশতে যাওয়ার অন্যতম উপায়

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.مشكوة، أنس (رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন স্ত্রী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমযানের রোযা রাখবে, লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন সে বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে। (মেশকাত)

সর্বোত্তম স্ত্রী

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ ۚ قَالَ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ، وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَ لَا تُخَالِفَة فِي نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ (نسائيأبو هريرة رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম স্ত্রী কে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন যে স্ত্রীর দিকে তাকালেই স্বামী খুশী হয়, স্বামী নির্দেশ দিলেই তা পালন করে এবং নিজের ও নিজের সহায় সম্পদের ক্ষেত্রে এমন কোন কর্মপন্থা অবলম্বন করে না, যা স্বামী অপছন্দ করে। (নাসায়ী)
এখানে নিজের সহায় সম্পদ দ্বারা সেই সম্পদ-সম্পত্তিকে বুঝানো হয়েছে, যা স্বামী গৃহকর্ত্রী হিসাবে স্ত্রীর কাছে সোপর্দ করেছে।

স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর নফল রোযা রাখা

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ عِنْدَهُ، فَقَالَتْ زَوْجِي صَفْوَانُ بْن الْمُعَطَّلِ يَضْرِبَنِي إِذَا صَلَّيْتُ، وَ يُفَطِرُنِي إِذَا صُمْتُ، وَلَا يُصَلِي الْفَجْرَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، قَالَ وَصَفْوَانُ عِنْدَه ، قَالَ فَسَأَلَهُ، عَمَّا قَالَتْ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَمَّا قَوْلُهَا يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ فَإِنَّهَا تَقَرَا بِسُورَتَيْنِ وَقَدْ نَهَيْتُهَا ، قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَتْ سُوْرَةً وَاحِدَةً لَّكَفَتِ النَّاسَ، قَالَ وَأَمَّا قَوْلُهَا يُفَطِرُ رنِي إِذَا صُمْتُ فَإِنَّهَا تَنْطَلِقُ تَصُومٌ وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ فَلَا أَصْبِرُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَصُومُ امْرَأَةٌ إِلَّا بِإِذْنِ زَوْجِهَا وَأَمَّا قَوْلُهَا إِنِّي لَا أَصَلِّي حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإِنَّا أَهْلِ بَيْتِ قَدْعُرِفَ لَنَا ذَلِكَ لَا نَكَادُ نَسْتَيْقِظُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ قَالَ فَإِذَا اسْتَيْقَظَتَ يَا صَفْوَانُ فَصَلِّ. (ابو داؤد)

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে আমরা বসেছিলাম। এমতাবস্থায় এক মহিলা তাঁর কাছে এল। সে বললো, সাফওয়ান ইবনুল মুয়াত্তাল আমার স্বামী। আমি নামায পড়লে আমাকে মারপিট করে, রোযা রাখলে রোযা ভাংতে বলে। আর সূর্য না ওঠা পর্যন্ত ফজরের নামায পড়ে না। এ সময়ে সাফওয়ান ওখানেই বসা ছিলেন । রাসূল (সা) সাফওয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন, তার স্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে তার বলার কি আছে। সাফওয়ান বললেন : হে রাসূলুল্লাহ, নামায পড়লে মারপিটের যে অভিযোগ সে করেছে, তার প্রকৃত রহস্য এই যে, সে নামাযে দু'টো সূরা পড়ে। অথচ আমি তা করতে তাকে নিষেধ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন একটা সূরা পড়াই যথেষ্ট। সাফওয়ান বললেন রোযা ভাঙ্গনের অভিযোগের রহস্য এই যে, সে ক্রমাগত রোযা রাখতে থাকে, অথচ আমি যুবক মানুষ। ধৈর্য ধারণ করতে পারি না। রাসূল (সা) বললেন: কোন স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া (নফল) রোযা রাখতে পারে না । অতঃপর সাফওয়ান বললেন : সূর্য ওঠার পর নামায পড়া সম্পর্কে আমার বক্তব্য এই যে, আমরা এমন এক গোত্রের লোক যার সম্পর্কে সবাই জানে যে, আমরা সূর্য ওঠার আগে জাগতে পারি না। রাসূল (সা) বললেন, হে সাফওয়ান ঘুম থেকে যখনই জাগবে তখনই নামায পড়ে নিও। (আবু দাউদ) এ হাদীস থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে-

১. স্ত্রীকে ফরয নামায পড়তে নিষেধ করার অধিকার তো কোন স্বামীর নেই, তবে স্বামীর প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। দ্বীনদারীর আবেগে লম্বা লম্বা সূরা কিরাত পড়া তার উচিত নয়। নফল নামাযের বেলায়ও স্বামীর প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তার অনুমতি ছাড়া নফল নামাযে নিয়োজিত থাকা ঠিক নয়। অনুরূপভাবে নফল রোযাও তার অনুমতি ছাড়া রাখা যাবে না।

২. সাফওয়ান বিন মুয়াত্তাল রাত জেগে মানুষের ক্ষেত খামারে পানি দিতেন। রাতের একটা বিরাট অংশ জুড়ে এ ধরনের পরিশ্রম করলে ঠিক সময়ে জেগে ফজরের নামায পড়া যে সম্ভব নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাফওয়ান বিন মুয়াত্তাল (রা) উঁচুস্তরের সাহাবী। তাঁর সম্পর্কে এ কথা বলা যায় না যে, তিনি ফজরের নামাযের ব্যাপারে শিথিল, অসতর্ক বা বেপরোয়া ছিলেন। সম্ভবত ঘটনাক্রমেই এমন হতো যে, রাতে দেরীতে ঘুমিয়েছেন, সকালে কেউ জাগায়নি, ফলে ফজরের নামায কাযা হয়ে গেছে। এ রকম পরিস্থিতির কারণেই রাসূল (সা) বলেছেন, হে সাফওয়ান যখনই ঘুম থেকে ওঠো, নামায পড়ে নিও। নতুবা রাসূলের দৃষ্টিতে তিনি যদি নামাযের ব্যাপারে শিথিল ও অসাবধান হতেন, তাহলে তাঁর ওপর তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করতেন ।

নারীর অকৃতজ্ঞতার ব্যাধি

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ الْأَنْصَارِيَةِ قَالَتْ، مَرَّبِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا فِي جَوَارٍ أَتْرَابٍ لِي فَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَقَالَ إِيَّا كُنَّ وَكَفَرَ الْمُنْعِمِينَ قَالَ وَلَعَلَّ إِحْدَاكُنَّ تَطُولُ أَيْمَتُهَا مِنْ أَبَوَيْهَا، ثُمَّ يَرْزُقُهَا زُوجًا وَيَرْزُقُهَا مِنْهُ وَلَدًا، فَتَغْضَبُ الْغَضْبَة فَتَكْفُرُ فَتَقُولُ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ الادبالمفرد)

আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা) বলেন আমি আমার সমবয়স্কা কয়েকটি মেয়ের সাথে বসেছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাদেরকে সালাম করলেন এবং বললেন তোমরা সদাচারী স্বামীর অকৃতজ্ঞতা থেকে দূরে থাক। তোমাদের অনেকের এমন হয়ে থাকে যে, দীর্ঘদিন মা-বাবার বাড়ীতে কুমারী অবস্থায় কাটিয়ে দেয়, তারপর আল্লাহ তাকে স্বামী দান করেন, তাঁর পক্ষ থেকে তার সন্তানাদিও হয়, তারপর কোন এক ব্যাপরে সে রেগে যায় এবং স্বামীকে বলে : “তোমার কাছ থেকে কখনো শান্তি পেলাম না, তুমি আমার সাথে কখনো ভালো আচরণ করলে না।” (আদাবুল মুফরাদ)

এ হাদীসে মহিলাদেরকে অকৃতজ্ঞতা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এটা মহিলাদের একটা সাধারণ ব্যাধি। তাই মহিলাদের এটি থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।

নেককার স্ত্রী সর্বোত্তম সম্পদ

عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ، فَقَالَ بَعْضُ أَصْحَابِهِ نَزَلَتْ فِي الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ لَوْ عَلِمْنَا أَى الْمَالِ خَيْرٌ فَنَتَّخِذَهُ فَقَالَ أَفْضَلُهُ لِسَانُ ذَاكِرٌ وَقَلْبٌ شَاكِرٌ وَ زَوَجَةٌ مُّؤْمِنَةٌ تَعِينُهُ عَلَى

ছাওবান (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : যখন এ আয়াত নাযিল হলো, “যারা সোনা, রূপা সঞ্চয় করে রাখে.....” তখন আমাদের কেউ কেউ বললো এ আয়াত তো সোনা রূপা সঞ্চয় করা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যা দ্বারা বুঝা গেল, সোনা, রূপা সঞ্চয় করা ভালো কাজ নয়। আমরা যদি জানতাম কোন সম্পদ উত্তম, তাহলে সেটাই সঞ্চয় করার কথা ভাবতাম। রাসূল (সা) বললেন সর্বোত্তম সম্পদ হলো আল্লাহকে স্মরণকারী জিহবা, আল্লাহর শোকরকারী মন এবং নেককার স্ত্রী যে স্বামীকে ইসলামের পথে টিকে থাকতে সাহায্য করে। (তিরমিযী)

এ হাদীস দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহর যিকির বা স্মরণ জিহবা দ্বারা করা উচিত, আর যে যিকির শোকরের মনোভাব নিয়ে করা হয় সেই যিকিরই কাংখিত। এও জানা গেলে যে, যে স্ত্রী নিজের দ্বীনদার স্বামীর সাথে দুঃখ কষ্ট ও বিপদ মুসিবতেও সংগ দেয় দ্বীনের পথে চলতে উৎসাহ উদ্দীপনা জোগায় এবং পথের বাধা হয়ে দাড়ায় না, সেই স্ত্রী আল্লাহর মস্ত বড় নেয়ামত ।

স্ত্রী স্বামীর বাড়ী ও সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْأَمِيرُ رَاعٍ وَالرَّجُلُ رَاعِ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَّسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَفِي رِوَايَةٍ وَالْخَادِمُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ.

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক। যারা তোমাদের অধীন, তাদের সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। শাসকও তত্ত্বাবধায়ক এবং তাকে তার শাসিতদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্বামী তার পরিবার-পরিজনের তত্ত্বাবধায়ক এবং স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ী ও সন্তানদের তত্ত্বাবধায়ক। মোটকথা তোমাদের প্রত্যেকেই তত্ত্বাবধায়ক এবং নিজ নিজ অধীনস্থদের ব্যাপারে জবাবদিহী করতে বাধ্য। কোন কোন বর্ণনায় আরো আছে চাকরও তার মনিবের সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক ।

হাদীসের এ অংশটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, স্ত্রী তার স্বামীর সন্তান ও ঘরবাড়ীর তত্ত্বাবধায়ক। এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, স্বামী তার স্ত্রীর শুধু খাদ্য পানীয়ের দায়িত্বশীল নয়। বরং তার দ্বীনদারী ও চরিত্রেরও রক্ষণাবেক্ষণ তার দায়িত্বের আওতাভুক্ত। আর স্ত্রীর দায়িত্ব তার দ্বিগুন। সে স্বামীর বাড়ী ও সম্পদের রক্ষক তো আছেই, তার সন্তানদের লালন পালনের বিশেষ দায়িত্বও তার ওপর অর্পিত । কেননা স্বামী তো জীবিকা উপার্জনের তাগিদে বেশীর ভাগ সময় বাইরে কাটাতে বাধ্য হয়। বাড়ীতে ছেলেমেয়েরা মায়ের প্রতিই অধিকতর অনুরক্ত থাকে। তাই ছেলেমেয়েদের লালন পালনের অতিরিক্ত দায়িত্ব তাদের মারের ওপরই অর্পিত।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url