সাহাবাগণের জীবনকথা-৪৩ || আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) এর জীবনী || আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)





আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)


আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কুরআনের সাধক হিসেবে আজো বিশ্ববিখ্যাত। তার ব্যাখ্যা এবং মতামত এখনো সবার শীর্ষে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছিলেন কুরআনুল কারিমের একনিষ্ঠ সেবক ও গবেষক। জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। হয়েছেন রইসুল মুফাসসিরিনদের একজন। হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনি কোরআনের ৭০টি সুরা মুখস্থ করেছিলেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নিজেই বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলতেন এবং তাঁর তেলাওয়াত শুনে তিনি অস্রুসিক্ত হতেন।’


আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের (রা) নাম ও বংশ পরিচয়

এটা সেই সময়ের কথা যখন তিনি একজন কিশাের মাত্র, তখনও যৌবনে পদার্পণ করেননি। কুরাইশ গোত্রের এক সর্দার উকবা ইবন আবু মুইতের একপাল ছাগল নিয়ে তিনি মক্কার গিরিপথগুলােতে চড়িয়ে বেড়াতেন। লােকে তাকে ইবন উম্মু আবদ’ বলে ডাকতাে। তবে তার নাম আবদুল্লাহ, পিতার নাম মাসউদ, কুনিয়াত আবু আবদির রহমান এবং মাতার নাম উম্মু অবিদ।

হিজরাতের সময় দুধ পান করানো সেই বালক

তার গােত্রে যে একজন নবীর আবির্ভাব ঘটেছে, সে সম্পর্কে নানা খবর এ কিশাের ছেলে সবসময় শুনতেন। তবে অল্প বয়স এবং বেশীরভাগ সময় মক্কার সমাজ জীবন থেকে দূরে অবস্থানের কারণে সে সম্পর্কে তিনি গুরুত্ব দিতেন না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে উঠে “উকবার ছাগলের পাল নিয়ে বের হয়ে যেতেন আর সন্ধ্যায় ফিরতেন। 


একদিন এ কিশাের ছেলেটি দেখতে পেলেন, দুজন বয়স্ক লােক, যাদের চেহারায় আত্মমর্যাদার ছাপ বিরাজমান, দূর থেকে তার দিকেই এগিয়ে আসছেন। তাঁরা ছিলেন এত পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত যে, তাদের ঠোট ও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। নিকটে এসে লোক দুটি সালাম জানিয়ে বললেন, বৎস! এ ছাগলগুলি থেকে কিছু দুধ দুইয়ে আমাদেরকে দাও। আমৱা পান করে পিপাসা নিবৃত্ত করি এবং আমাদের শুকনা গলা একটু ভিজিয়ে নেই।'

ছেলেটি বললেনঃ এ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। ছাগলগুলি তাে আমার নয়। আমি এগুলির রাখাল ও আমানতদার মাত্র।' লােক দুটি তার কথায় অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং তাদের মুখ মণ্ডলে এক উৎফুল্লতার ছাপ ফুটে উঠলাে। তাদের একজন আবার বললেনঃ তাহলে এমন একটি ছাগী আমাকে দাও যা এখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি।' ছেলেটি নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছােট্ট ছাগীর দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। লােকটি এগিয়ে গিয়ে ছাগীটি ধরে ফেলেন এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' বলে হাত দিয়ে ধরে তার ওলান মলতে লাগলেন। অবাক বিস্ময়ে ছেলেটি এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বললেনঃ কখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি এমন ছােট ছাগী কি দুধ দেয়। কিন্তু কি আশ্চর্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাগীর ওলানটি ফুলে উঠে এবং প্রচুর পরিমাণ দুধ বের হতে থাকে। দ্বিতীয় লােকটি গর্তবিশিষ্ট পাথর উঠিয়ে নিয়ে বাঁটের নীচে ধরে তাতে দুধ ভর্তি করেন। তারপর তারা উভয়ে পান করেন এবং ছেলেটিকেও তাদের সাথে পান করালেন। ইবন মাসউদ বলেনঃ আমি যা দেখছিলাম তা সবই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। আমরা সবাই যখন পরিতৃপ্ত হলাম তখন সেই পুণ্যবান লােকটি ছাগীর ওলানটি লক্ষ্য করে বল্লেন ‘চুপসে যাও। আর অমনি সেটি পূর্বের ন্যায় চুপসে গেল।

তারপর আমি সেই পুণ্যবান লােকটিকে অনুরােধ করলাম? আপনি যে কথাগুলি উচ্চারণ করলেন, তা আমাকে শিখিয়ে দিন। বললেন, তুমি তাে শিক্ষাপ্রাপ্ত বালক।

ইসলামের সাথে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের পরিচিতির এটাই হলাে প্রথম কাহিনী। এ মহাপুণ্যবান ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর তাঁর সংগীটি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)। কুরাইশদের অত্যাচার উৎপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য এ সময় তাঁরা মক্কার নির্জন গিরিপথ সমূহে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাসূল (সা) ও তাঁর সংগীকে যেমন ছেলেটির ভালাে লেগেছিল তেমনি তাদের কাছেও ছেলেটির আচরণ, আমানতদারী ও বিচক্ষণতা খুব চমৎকার মনে হয়েছিল। তারা ছেলেটির মধ্যে কল্যাণ ও মংগলের শুভলক্ষণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

ইসলাম গ্রহণ ও রাসুলের সেবায় আত্মনিয়োগ

এ ঘটনার অল্পকিছুদিন পর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিজেকে রাসূলুল্লাহর (সা) একজন খাদিম হিসাবে উৎসর্গ করেন। রাসূল (সা)ও তাকে খাদিম হিসাবে নিয়ােগ করেন। সেইদিন থেকে এ সৌভাগ্যবান বালক ছাগলের রাখালী থেকে সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষের খাদিমে পরিণত হন।


'সাহিবুস সির' বা রাসূলুল্লাহর (সা) সকল গােপন বিষয়ের অধিকারী

অবদুল্লাহ ইবন মাসউদ ছায়ার মত নিজের মনিবকে অনুসরণ করেন। সফরে বা ইকামতে, গৃহের অভ্যন্তরে বা বাইরে সব সময় তিনি ভার সাথে সাথে থাকতেন। রাসূল (সা) ঘুমালে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন, গােসলের সময় পর্দা করতেন, বাইরে যাবার সময় জুতো পরিয়ে দিতেন, ঘরে প্রবেশের সময় জুতাে খুলে দিতেন এবং তাঁর লাঠি ও মিসওয়াক বহন করতেন। তিনি যখন হুজরায় অবস্থান করতেন তখনও তাঁর কাছে যাতায়াত করতেন। রাসূল (সা) তাকে যখনই ইচ্ছা তার কামরায় প্রবেশ এবং কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংকোচ না করে তার সকল বিষয় অবগত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে 'সাহিবুস সির' বা রাসূলুল্লাহর (সা) সকল গােপন বিষয়ের অধিকারী বলা হয়।

রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট উত্তম ব্যক্তি

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ নবী-গৃহে প্রতিপালিত হন, তাকে অনুসরণ করেন এবং তাঁরই মত আচার-আচরণ, ও চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন। এ কারণে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'হিদায়াত প্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনিই হচ্ছেন রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট উত্তম ব্যক্তি।'


সর্বোত্তম কুরআন পাঠক

ইবনে মাসউদ খােদ রাসূলুল্লাহর (সা) শিক্ষালয়ে শিক্ষালাভ করেন। তাই সাহাবীদের মধ্যে যারা কুরআনের সবচেয়ে ভালাে পাঠক, তার ভাব ও অর্থের সবচেয়ে বেশী সমঝদার এবং আল্লাহর আইন ও বিধি-বিধানের সবচেয়ে বেশী অভিজ্ঞ, তিনি ছিলেন তাদেরই একজন।

একবার হযরত উমার (রা) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললােঃ আমীরুল মু'মিনীন! আমি কুফা থেকে এসেছি। সেখানে আমি দেখে এসেছি, এক ব্যক্তি নিজের স্মৃতি থেকেই মানুষকে কুরআন শিখাচ্ছেন।' একথা শুনে তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, সচরাচর তাকে তেমন রাগ করতে দেখা যায় না। তিনি উটের হাওদার অভ্যন্তরে রাগে ফুলতে থাকেন। তারপর প্রশ্ন করেন তােমার ধ্বংস হােক! কে সে লােকটি?”

- 'আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ। জ্বলন্ত আগুনে পানি ঢেলে দিলে যে অবস্থা হয়, ইবন মাসউদের নাম শুনে তাঁরও সে অবস্থা হলাে। তার রাগ পড়ে গেল। তিনি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেলেন। তারপর বললেনঃ তোমার ধ্বংস হোক! আল্লাহর কসম, এ কাজের জন্য তার চেয়ে অধিক যােগ্য কোন ব্যক্তি বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা। এ ব্যাপারে তােমাকে আমি একটি ঘটনা বলছি।' উমার (রা) বলতে লাগলেন- “একদিন রাতের বেলা রাসূল (সা) আবু বকরের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। তারা মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলােচনা করছিলেন। আমিও তাদের সাথে ছিলাম। কিছু সময় পর রাসূল (সা) বের হলেন, আমরাও তার সাথে বেরুলাম। বেরিয়েই আমরা দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি মসজিদে নামাযে দাঁড়িয়ে; কিন্তু আমরা তাঁকে চিনতে পারলাম না। রাসূল (সা) দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তার কুরআন তিলাওয়াত শুনলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন। “যে ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করে আনন্দ পেতে চায়, যেমন তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে যেন ইবন উম্মু আবদের পাঠের অনুরূপ কুরআন পাঠ করে। এরপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বসে দু'আ শুরু করলেন। রাসূল (সা) আস্তে আস্তে তাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেনঃ “চাও, দেওয়া হবে, চাও, দেওয়া হবে।'


উমার (রা) বলেন, আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম, আমি আগামীকাল প্রত্যুষেই, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের নিকট গিয়ে তার দু'আ সম্পর্কে রাসূলের (সা) মন্তব্যের সুসংবাদটি তাকে দিব। সকাল সকাল আমি তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি আবু বকর সিদ্দীক (রা) আমার আগেই তাঁর কাছে পৌঁছে গেছেন এবং তাঁকে সুসংবাদটি দিয়ে ফেলেছেন। সত্যিই যখনই কোন কাজে আবু বকরের সাথে আমি প্রতিযোগিতা করেছি তখন তিনিই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছেন।

আল্লাহর কিতাব কুরআনের জ্ঞানে তিনি কতখানি পারদর্শী ছিলেন সে সম্পর্কে তার নিজের একটি মন্তব্য এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তিনি বলেন, “যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই সেই আল্লাহর কসম! আল্লাহর কিতাবের এমন কোন একটি আয়াত নাযিল হয়নি যে সম্পর্কে আমি জানিনা যে, তা কোথায় নাযিল হয়েছে এবং কি সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার থেকে অধিক পারদর্শী কোন ব্যক্তির কথা আমি যদি জানতে পারি এবং তার কাছে পৌছা সম্ভব হয়, তাহলে আমি তার কাছে উপস্থিত হই।"

নিজের সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ যে কথাটি বলেছেন তাতে অতিরঞ্জন নেই। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা পাঠকদের কাছে তুলে ধরা সমীচীন বলে মনে করি। একবার হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) কোন এক সফরে রাত্রিবেলা একটি অপরিচিত কাফিলার সাক্ষাত লাভ করেন। রাতের ঘাের অন্ধকারে কাফিলার কোন লোকজনকে দেখা যাচ্ছিল না। ঘটনাক্রমে সেই কাফিলায় আবদুল্লাহ ইবন মাসউদও ছিলেন। কিন্তু উমার (রা) তা জানতেন না। উমরা (রা) একজন লােককে তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে বললেন, কাফিলা কোথা থেকে আসছে? অন্য কাফিলা থেকে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ জবাব দিলেনঃ


- “আমীক উপত্যকা থেকে।' - কোথায় যাচ্ছে?'
- “ইলাল বাইতিল আতীক- বাইতুল আতীকে (অর্থাৎ কাবা শরীফে)।' জবাব শুনে উমার (রা) বললেন : “নিশ্চয় তাদের মধ্যে কোন আলিম ব্যক্তি আছেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করতে বললেন, কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত কোনটি?

২:২৫৫ اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُهٗ سِنَۃٌ وَّ لَا نَوۡمٌ ؕ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ ۚ وَ لَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ کُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوۡدُهٗ حِفۡظُهُمَا ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ ﴿۲۵۵

- “আল্লাহু লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম, লা তখুজুহু সিনাতুন ওয়ালা নাউম- সেই চিরন্তন চিরঞ্জীব সত্তা আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তন্দ্রাও তাকে স্পর্শ করেনা এবং নিদ্রাও তাকে পায়না। 
- সর্বাধিক ন্যায়-নীতির ভাব প্রকাশক আয়াত কোনটি?

১৬:৯০ اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۹۰

- ‘ইন্নাল্লাহা ইয়া’মুরু বিল আদলি ওয়াল ইহসান ওয়া ই’তায়িজিল কুরবা ওয়া ইয়ানহা আনিল ফাহসা-য়ি ওয়াল মুনকার ওয়াল বাগয়ি’ বা আল্লাহ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, পরােপকার এবং নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করার নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার প্রশ্ন হলো ?

- ‘সর্বাধিক ব্যাপক অর্থবােধক আয়াত কোনটি?

৯৯:৭ فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَهٗ ؕ﴿۷
৯৯:৮ وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَهٗ ﴿۸

- “ফামাইঁ ইয়া‘মাল মিছকা-লা যাররাতিন খাইরাইঁ ইয়ারাহ। ওয়া মাইঁ ইয়া‘মাল মিছকা-লা যাররাতিন শাররাইঁ ইয়ারাহ”- “যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ সৎকাজ করবে সে তার বিনিময় লাভ করবে, তেমনিভাবে যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ অসৎকাজ করবে তার বিনিময়ও সে লাভ করবে।'

- সর্বাধিক ভীতিপ্রদ আয়াত কোনটি?

৪:১২৩ لَیۡسَ بِاَمَانِیِّکُمۡ وَ لَاۤ اَمَانِیِّ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ ؕ مَنۡ یَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا یُّجۡزَ بِهٖ ۙ وَ لَا یَجِدۡ لَهٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیۡرًا ﴿۱۲۳

- ‘লাইসা বিআমানিয়্যিকুম ওয়ালা আমানিয়্যি আহলিল কিতাব, মান ই’মাল সূয়্যান ইউজযা বিহি ওয়ালা ইয়াজিদ লাহু মিন দুনিল্লাহি ওয়ালিয়ান ওয়ালা নাসীরান'- 'না তােমাদের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী, আর না আহলি কিতাবদের কামনা-বাসনা অনুযায়ী সবকিছু হবে। যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল ভােগ করতে হবে। আর আল্লাহ ছাড়া তার জন্য আর কোন অভিভাবকও পাবেনা এবং কোন সাহায্যকারীও না।'

সর্বাধিক আশার সঞ্চারকারী আয়াত কোনটি? 

৩৯:৫৩ قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵۳

- ‘কুল ইয়া ইবাদিল্লাজীনা আসরাফু 'আলা আনফুসিহিম লা-তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ ইল্লাল্লাহি ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরজুনুবা জামীয়ান। ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহীম'- “হে নবী আপনি বলুন। হে আমার বান্দারা, যারা নিজের উপর বাড়াবাড়ি করছে, আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে নিরাশ হয়ােনা। নিশ্চয় আল্লাহ সব পাপই ক্ষমা করে দেবেন। তিনিই তো গাফুরুর রাহীম।


- আচ্ছা আপনাদের মাঝে কি আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ আছে? - হ্যা।'

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের চারিত্রিক গুণাবলী

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কেবল একজন ভালাে কারী, আলিম, আবিদ ও যাহিলই ছিলেন না, সেইসাথে তিনি ছিলেন একজন কর্মঠ ও বিচক্ষণ ব্যক্তি এবং কঠিন বিপদ মুহূর্তে অগ্রগামী একজন মুজাহিদ। তার জন্য এ গৌরবটুকুই যথেষ্ট যে, রাসূলুল্লাহর (সা) পর তিনিই ভূ-পৃষ্ঠের প্রথম মুসলিম যিনি প্রকাশ্যে কুরাইশদের মাঝে কুরআন পাঠ করেছিলেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীরা একদিন মক্কায় একত্রিত হলেন। তারা তখন সংখ্যায় অল্প ও দুর্বল। নিজেদের মধ্যে তাঁরা বলাবলি করলেন, 'আল্লাহর শপথ, প্রকাশ্যে কুরআন তিলাওয়াত করে কুরাইশদেরকে কখনও শুনানাে হয়নি। তাদেরকে কুরআন শােনাতে পারে এমন কে আছে?”

মক্কায় সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে কুরআন তেলাওয়াত

আবদুল্লাহ উবন মাসউদ বললেন : 'আমিই তাদেরকে শোনাবাে।' অন্যরা বললেন, তােমার ব্যাপারে আমাদের ভয় হচ্ছে। আমরা এমন এক ব্যক্তিকে চাই, যার লােকজন আছে, কুরাইশরা তার ওপর কোনরূপ অত্যাচার করতে চাইলে তারা তখন বাধা দিতে পারবে।' ইবন মাসউদ বললেন, আমাকে অনুমতি দিন। আল্লাহ আমাকে হিফাজত করবেন।' একথা বলে তিনি মসজিদের দিকে রওয়ানা হলেন এবং মধ্যাহ্নের কিছু আগে মাকামে ইবরাহীমে এসে পৌঁছলেন। তিনি মাকামে ইবরাহীমের নিকট দাঁড়িয়ে জোরে জোরে তিলাওয়াত শুরু করলেনঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আররাহমানু আল্লামাল কুরআন, খালাকাল ইনসান আল্লামাহুল বায়ান.......।


তিনি তিলাওয়াত করে যেতে লাগলেন। কুরাইশরা শুনে ক্ষণিকের জন্য চিন্তা করলাে। তারপর একে অপরকে প্রশ্ন করলাে, 'ইবন উম্মু আবদ কি বলে? তার সর্বনাশ হােক! মুহাম্মাদ যা বলে তাই তাে সে পাঠ করছে। তারা সবাই উঠে তার দিকে ধেয়ে গেল এবং তার মুখে নির্দয়ভাবে মারতে লাগলাে। এ অবস্থায় আল্লাহ যতটুকু চাইলেন ততটুকু তিনি তিলাওয়াত করলেন। তারপর রক্তাক্ত দেহে সংগীদের কাছে ফিরে এলেন। তারা বললেন, 'আমরা এরই আশংকা করছিলাম।' তিনি বললেন, 'আল্লাহর কসম। আল্লাহর শত্রুরা এখন আমার কাছে অতি তুচ্ছ যা আগে ছিলনা। আপনারা চাইলে আগামী কালও আমি এমনটি করতে পারি।' তারা বললেন, 'না, যথেষ্ট হয়েছে। তাদের অপছন্দনীয় কথা তুমি তাদেরকে শুনিয়ে দিয়েছ।'

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের হিজরত

হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ ইসলাম গ্রহণ করার পর কুরাইশদের অত্যাচারের শিকারে পরিণত হন। বাধ্য হয়ে দুইবার হাবশায় হিজরত করেন। অবশেষে মাদীনায় চিরদিনের জন্য হিজরত করে চলে যান। মদীনায় প্রখ্যাত আনসারী সাহাবী হযরত মুয়াজ ইবন জাবালের অতিথি হন। রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আসার পর তাদের দুজনের মধ্যে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে দেন এবং তার বসবাসের জন্য মসজিদে নববীর পাশে একখণ্ড ভূমি দান করেন।

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের জিহাদ

রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে সকল গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে দু'জন আনসারী যুবক ইসলামের চির দুশমন আবু জাহলকে হত্যা করে ময়দানে ফেলে আসে। যুদ্ধ শেষে রাসূল (সা) বললেনঃ “কেউ যেয়ে আবু জাহলের অবস্থা একটু দেখে আস তাে।' আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ দৌড়ে চলে গেলেন। আবু জাহলের প্রাণস্পন্দন তখনও থেমে যায়নি। আবদুল্লাহ তার দাড়ি সজোরে মুট করে ধরে বললেনঃ 'বল, তুই আবু জাহল কিনা।


উহুদ, খন্দক, হুদাইবিয়া, খাইবারসহ মক্কা বিজয়েও তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সাথী ছিলেন। হুনাইন যুদ্ধে কাফিরদের অতর্কিত আক্রমণে দশ হাজারের মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। মাত্র আশিজন যােদ্ধা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে রাসূলুল্লাহর (সা) চতুম্পার্শে অটল থাকেন। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ সেই আশিজনের একজন। এ যুদ্ধে রাসূল (সা) মুশরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে যে এক মুঠো ধূলাে নিক্ষেপ করেছিলেন, রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে তা তুলে দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ।

রাসুলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর দীর্ঘদিন যাবত সকল কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকেন। তবে হযরত উমারের (রা) খিলাফতকালে হিজরী ১৫ সনে তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না। জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ারমুক যুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। 

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের রাস্ট্রীয় দায়িত্ব

হিজরী ২০ সনে খলীফা উমার (রা) তাঁকে কুফার কাজী নিয়ােগ করেন। কাজীর দায়িত্ব ছাড়াও বায়তুল মাল, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং কুফার ওয়ালীর উমীরের দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত করা হয়।

পুরাে দশ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এতগুলি দায়িত্ব তিনি পালন করেন। এ দীর্থ সময়ে খলীফা উমারের (রা) শাহাদাত বরণ, হযরত উসমানের খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণসহ কুফার ওয়ালীরও রদবদল হয়েছে, কিন্তু আবদুল্লাহ বিন মাসউদ স্বীয় পদে বহাল থাকেন। খলীফা উসমানের খিলাফতের শেষ পর্বে আবদুল্লাহকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি সংগীসাথী ও পরিবার পরিজনসহ কুফা থেকে হিজাযের দিকে যাত্রা করেন। পথে মরুভূমিতে ‘বজা' নামক স্থানে পৌঁছে জানতে পারেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু যর গিফার (রা) সেখানে অন্তিম শয্যায়। তাঁর পৌছার অল্পক্ষণ পরেই আবু যার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ তার জানাযার নামাযে ইমামতি করেন এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে তিনি মক্কা চলে যান এবং উমরা আদায় করে মদীনায় পৌঁছেন। বাকী জীবন মদীনায় চুপচাপ কাটিয়ে দেন।


হিজরী ৩২ সনে আবদুল্লাহর বয়স যখন ষাট বছরের ওপরে, হঠাৎ একদিন এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলতে লাগলাে, আল্লাহ আমাকে আপনার জানাযা থেকে বঞ্চিত না করুন। গতরাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, রাসূল (সা) একটি মিম্বরের ওপর আর আপনি তাঁর সামনে। তিনি আপনাকে বলছেন, “ইবন মাসউদ, আমার পরে তােমাকে ভীষণ কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এস, আমার কাছে চলে এস। এ স্বপ্ন সত্যে পরিণত হল। এর অল্প কিছুদিন পরেই তিনি রােগে আক্রান্ত হন এবং সেই রােগেই মারা যান।

মৃত্যুর আগে উসমানের (রা) সাথে কথোপকথন

হযরত উসমানের (রা) খিলাফতকাল পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। তিনি যখন অন্তিম রোগ শয্যায়, তখন উসমান (রা) একদিন তাকে দেখতে গেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ

- “আপনার অভিযোেগ কিসের বিরুদ্ধে?
- ‘আমার পাপের বিরুদ্ধে।' 
- “আপনার চাওয়ার কিছু আছে কি? 
- “আমার রবের রহমত বা করুণা।" 
- বহু বছর যাবত আপনার ভাতা নিচ্ছেন না, তাকি আবার দেয়ার নির্দেশ দেব" 
- 'আমার কোন প্রয়ােজন নেই। 
- 'আপনার মৃত্যুর পর আপনার কন্যাদের প্রয়ােজনে আসবে।”
- 'আপনি কি আমার কন্যাদের দারিদ্রের ব্যাপারে ভীত হচ্ছেন? আমি তাে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। কারণ আমি রাসূলকে (সা) বলতে শুনেছি: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা আল-ওয়াকিয়া পাঠ করবে, কখনও দারিদ্র তাকে স্পর্শ করবে না।'


দিনশেষে রাত্রি নেমে এলাে, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ তার রফীকে 'আলা’ শ্রেষ্ঠতম বন্ধুর সাথে মিলিত হলেন। খলীফা উসমান তাঁর জানাযার নামায পড়ান এবং হযরত উসমান ইবন মাজউনের (রা) পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।



**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
3 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • নামহীন
    নামহীন ১ মে, ২০২৩ এ ১:১৮ AM

    আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) কি রাসুল (সা)- এর খাদেম ছিল?

    • Mohammadia Foundation ☑️
      Mohammadia Foundation ☑️ ৩ মে, ২০২৩ এ ১২:৩৩ AM

      আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) ইবনে গাফেল ইবনে হাবিব (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম যুগের মর্যাদাবান সাহাবিদের একজন। তিনি বদর যুদ্ধসহ সব যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন। তিনি সে সময়ের বড় ফকিহ ও মুহাদ্দিস ছিলেন। তার সঙ্গে নবী (সা.)-এর সম্পর্ক ছিল খুবই দৃঢ়। অনেকে ভাবতেন তিনি নবী (সা.)-এর পরিবারের সদস্য। কারণ তিনি ও তার মা প্রায়ই মহানবী (সা)-এর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমরা মদিনায় এসে ইবনে মাসউদকে রাসুল (সা.)-এর পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতাম। কেননা রাসুল (সা.)-এর কাছে তার ও তার মায়ের অধিক পরিমাণে যাওয়া-আসা ছিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮০৬) তা ছাড়া তিনি সর্বাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা)-এর বিশেষ খাদেম ছিলেন। হাদিস ও ইতিহাসের কিতাবে তার উপাধি ‘সাহিবুল নালাইন ওয়াল বিসাদ ওয়াল মিতহারা’ অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাদুকা, তাকিয়া ও অজুর পাত্র বহনকারী। (বুখারি, হাদিস ৩৯৬১) নবীজির বিখ্যাত এই সেবক সাহাবি ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। জান্নাতুল বাকিতে তাকে কবর দেয়া হয়।

  • নামহীন
    নামহীন ৮ আগস্ট, ২০২৩ এ ১২:৪৬ PM

    মাশাল্লাহ

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url