হযরত আবু বকর অন্যের আশ্রয় ফিরিয়ে দিলেন







মানুষের আশ্রয় ফিরিয়ে দিয়ে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ

মুশরিকদের অত্যাচারে মুসলিমদের জীবন তখন অতিষ্ট। রাসুল (সাঃ) ইতিমধ্যেই মুসলিমদের জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগ অর্থাৎ হিজরাতের অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। ঠিক এই সময়ে তৎকালীন আরবের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও ধনীদের মধ্যে একজন হযরত আবু বকর (রাঃ)ও মুশরিকদের অত্যাচার সইতে না পেরে হিজরাতের সিদ্ধান্ত নিলেন।


রাত কেটে সকাল হচ্ছিল। ধীরে ধীরে চারদিকে অন্ধকার কেটে আলোকিত হতে লাগল। অন্যদিকে হযরত আবু বকর ও তাঁর আসবাবপত্র সব গুছিয়ে নিলেন। তারপর তা কাঁধে ফেলে রওয়ানা করলেন।
       
তিনি তাঁর ঈমান বাঁচানোর জন্যে মক্কা ছেড়ে হাবশার উদ্দেশে রওনা দিলেন। এ দূরের পথে তাঁর সাথী ছিল পূর্ণ ঈমানে ভরপুর অন্তর। চলতে চলতে তিনি বারকুল গমাদ নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছেন। এটি ছিল ইয়ামানের একটি অঞ্চল। সেখানে ইবনে দুগুনাহর সাথে তাঁর দেখা হয়। ইবনে দুগুনাহ ছিল সে সময়ের বিশিষ্ট নেতাদের একজন ।


সে তাঁকে বললঃ আবু বকর! তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আবু বকর (রাঃ) খুব নরম স্বরে বললেনঃ আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে বের করে দিয়েছে। আর তাই আমি জমিনে ঘুরাফিরা করব আর আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব।
       
তখন ইবনে দুগুনাহ হতাশার সাথে মাথা নেড়ে বললঃ আবু বকর! তোমার মতো লোক চলে যাওয়ার মতোও নয় তাড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়! নিশ্চয়ই তুমি গরিবদেরকে খাদ্য খেতে দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর, অন্যের বোঝা বহন কর, দুর্বলদের সহযোগিতা কর এবং সত্যের পথে সহযোগিতা কর। আমি তোমাকে আশ্রয় দিলাম, যাও তোমার নিজের ভূমিতে গিয়ে তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।


তার কথামতো হযরত আবু বকর (রাঃ) আবার মক্কায় ফিরে আসলেন।


আবু দুগুনা মক্কার বিশিষ্ট নেতাদের গিয়ে বললঃ আবু বকরের মতো লোক চলে যেতে পারে না, আর সে তাড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়। সে গরিবদেরকে খাদ্য খেতে দেয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে, অন্যের বোঝা বহন করে, দুর্বলদের সহযোগিতা করে এবং সত্যের পথে সহযোগিতা করে ।


তখন কোরাইশরা আবু দুগুনার কথা মেনে নিলেন।
তারা তাকে বললঃ আবু বকরকে বল, সে যেন তার ঘরে ইবাদত করে, সে সেখানে নামায আদায় করবে আর যত ইচ্ছে কোরআন পাঠ করবে। তবে এ ব্যাপারে আমাদেরকে কষ্ট দিবে না এবং এ কাজগুলো প্রকাশ্যে করবে না। কেননা আমরা আমাদের নারী ও সন্তানদের ব্যাপারে তার ফেতনার আশঙ্কা করছি। হযরত আবু বকর তাদের কথামতো নিজের ঘরে মহান প্রভুর ইবাদত করতে লাগলেন এবং ঘরের ভেতরে চুপিসারে নামায পড়তেন আর ঘরের বাইরে কোথাও কোরআন তেলাওয়াত করতেন না, কিন্তু তিনি বেশিদিন গোপনে ইবাদত করতে পারলেন না। বরং ঈমানের আলোতে চারদিক আলোকিত করতে চাইলেন। তিনি তাঁর ঘরের আঙিনায় একটি নামাযের জায়গা তৈরি করেন। সেখানে তিনি নামায আদায় করতেন ও কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তাঁর ইবাদতের দৃশ্য দেখার জন্যে মুশরিকদের মহিলা ও শিশুরা ভিড় করত। হযরত আবু বকর অধিক ক্রন্দনকারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াতের সময় তিনি কান্না ধরে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি কোরাইশদেরকে পুনরায় উদ্বিগ্ন করতে লাগল। তখন তারা এর সমাধানের জন্যে ইবনে দুগুনার কাছে লোক পাঠায়।

       

তারা বললঃ আমরা আবু বকরকে শুধু ঘরের ভেতরে ইবাদত করার শর্তে তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করেছিলাম, কিন্তু সে শর্ত ভঙ্গ করে নিজের আঙিনায় একটি নামাযের জায়গা বানিয়ে প্রকাশ্যে নামায ও কোরআন তেলাওয়াত করছে। আমরা আমাদের নারী ও সন্তানদের ব্যাপারে তার ফিতনার ভয় করছি। যদি তুমি পার তাকে নিয়ন্ত্রণ কর আর না হয় তার থেকে তোমার আশ্রয় ফিরিয়ে নাও ।


ইবনে দুগুনা হযরত আবু বকর (রাঃ) -এর কাছে এসে শান্তভাবে বসল। সে তাঁকে বললঃ তুমি এ ব্যপারে ভালোভাবে জান। যদি তুমি চাও তাহলে শর্তের ভেতরে অবস্থান কর আর না হয় আমার আশ্রয় ফিরিয়ে দাও। কেননা আমি শুনতে চাই না আরবরা বলবে যে, আমি এক লোককে আশ্রয় দিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেছি।


তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) দৃঢ় মনোবল নিয়ে বললেনঃ আমি তোমাকে তোমার আশ্রয় ফিরিয়ে দিলাম এবং আল্লাহর আশ্রয়ে থাকার ওপর সন্তুষ্ট হলাম*।

তথ্যসূত্রঃ
*   'আস সিরাতুন নববিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, ৯৩।






**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url