তাফসীরে ইবনে কাসীর - ২০ || সূরা বাকারা - ১০ || ভ্রান্ত পথের অনুসারী ও মুনাফিকদের ধরণ || মুনাফিকদের ধরণ ||





ভ্রান্ত পথের অনুসারী ও মুনাফিকদের ধরণ


اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اشۡتَرَوُا الضَّلٰلَۃَ بِالۡهُدٰی ۪ فَمَا رَبِحَتۡ تِّجَارَتُهُمۡ وَ مَا کَانُوۡا مُهۡتَدِیۡنَ ﴿۱۶
১৬। এরা তারাই যারা সু-পথের পরিবর্তে কু-পথকে ক্রয় করেছে, সুতরাং তাদের বাণিজ্য লাভজনক হয়নি এবং তারা সরল সঠিক পথে চলেনি।


ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ), ইবন মাসউদ (রাঃ) এবং আরও কয়েকজন সাহাবী হতে বর্ণিত আছে যে, তারা হিদায়াতকে ছেড়ে ওমরাহীতে গ্রহণ করেছিল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন : “ঈমানের পরিবর্তে কুফরীকে গ্রহণ করেছিল। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : তারা ঈমান আনার পরে কাফির হয়েছিল।' কাতাদাহ (রহঃ) বলেন : 'তারা হিদায়াতের চেয়ে গুমরাহীকেই অধিক পছন্দ করেছিল।' যেমন অন্যস্থানে ছামূদ সম্প্রদায় সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْتَهُمْ فَأَسْتَحَبُّوا الْعَمَىٰ عَلَى الْهُدَى
আর সামুদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি তাদেরকে পথ নির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎ পথের পরিবর্তে ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করেছিল। (সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৪১ : ১৭) ভাবার্থ এই যে, মুনাফিকরা হিদায়াত হতে সরে গিয়ে গুমরাহীর উপর এসে গেছে এবং হিদায়াতের পরিবর্তে গুমরাহীকেই গ্রহণ করেছে। তারা ঈমান এনে পুনরায় কাফির হয়েছে। হয়ত বা আসলেই ঈমান লাভের সৌভাগ্য হয়নি। যেমন কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছেঃ

ذَلِكَ بِأَهُمْ وَامَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطِيعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ

এটা এ জন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে; ফলে তাদের হৃদয় মোহর করে দেয়া হয়েছে। (সূরা মুনাফিকূন, ৬৩ : ৩) মুনাফিকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের লোক ছিল। আবার এমনও মুনাফিক ছিল যাদের ভাগ্যে ঈমান লাভই ঘটেনি। এ জন্যই আল্লাহ বলেন যে, এরা তারাই যারা সু-পথের পরিবর্তে কু- পথকে ক্রয় করেছে, সুতরাং তাদের বাণিজ্য লাভজনক হয়নি এবং তারা সরল সঠিক পথে চলেনি। সুতরাং এরা এই সওদায় কোন উপকারও লাভ করেনি এবং পথও প্রাপ্ত হয়নি, বরং হিদায়াতের বাগান হতে বের হয়ে কাঁটার জঙ্গলে পড়ে গেছে। (তাবারী ১/৩১৬) নিরাপত্তার প্রশস্ত মাঠ হতে বেরিয়ে ভীতিপ্রদ অন্ধকার ঘরে এবং সুন্নাতের পবিত্র বাগান হতে বের হয়ে বিদ'আতের শুষ্ক জঙ্গলে এসে পড়েছে। (ইব্‌ন আবী হাতিম ১/৬০)

 مَثَلُهُمۡ کَمَثَلِ الَّذِی اسۡتَوۡقَدَ نَارًا ۚ فَلَمَّاۤ اَضَآءَتۡ مَا حَوۡلَهٗ ذَهَبَ اللّٰهُ بِنُوۡرِهِمۡ وَ تَرَکَهُمۡ فِیۡ ظُلُمٰتٍ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ ﴿۱۷  صُمٌّۢ بُکۡمٌ عُمۡیٌ فَهُمۡ لَا یَرۡجِعُوۡنَ ﴿ۙ۱۸
১৭। এদের অবস্থা ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করল, অতঃপর যখন তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত স্থান আলোকিত হল, তখন আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদের অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, সুতরাং তারা কিছুই দেখতে পায়না।  ১৮। তারা বধির, মূক, অন্ধ। অতএব তারা প্রত্যাবৃত্ত হবেনা ।

মুনাফিকদের ধরণ

আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ 

وَ تِلْكَ الْاَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ١ۚ وَ مَا یَعْقِلُهَاۤ اِلَّا الْعٰلِمُوْنَ

মানুষের জন্য এ সব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকি, কিন্তু শুধু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই এটা বুঝে। (সূরা আনকাবূত, ২৯ : ৪৩) আয়াতটির ভাবার্থ এই যে, যে মুনাফিকরা সঠিক পথের পরিবর্তে ভ্রান্ত পথ এবং দৃষ্টির পরিবর্তে দৃষ্টিহীনতাকে ক্রয় করে থাকে, তাদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্ধকারে আগুন জ্বালিয়েছে, তার ফলে আশে পাশের জিনিস তার চোখে পড়েছে। মনের উদ্বিগ্নতা দূর হয়ে উপকার লাভের আশার সঞ্চার হয়েছে, এমন সময়ে হঠাৎ আগুন নিভে গেছে এবং চারিদিক ভীষণ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কাজেই সে রাস্তা দেখতে পাচ্ছেনা। এছাড়া লোকটি বধির, সে কারও কথা শুনতে পায়না; সে বোবা, তার কথা রাস্তার কেহ শুনতে পায়না এবং সেও রাস্তার কোন লোককে জিজ্ঞেস করতে পারেনা; সে অন্ধ, আলোতেও সে কাজ চালাতে পারেনা। এখন তাহলে সে পথ পাবে কি করে? মুনাফিকরা ঠিক তারই মত। সঠিক পথ ছেড়ে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে এবং ভাল ছেড়ে মন্দের কামনা করছে। এই উদাহরণে বুঝা যাচ্ছে যে, ঐসব লোক ঈমান কবূল করার পরে কুফরী করেছিল।
আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিয়েছেন, এর অর্থ এই যে, যে আলো তাদের জন্য উপকারী ছিল তা সরিয়ে নিয়েছেন এবং যেমনভাবে আগুন নিভে যাবার পর তা ধুঁয়া এবং অন্ধকার থেকে যায় তদ্রুপ তাদের কাছে ক্ষতিকর জিনিস যেমন সন্দেহ, কুফর এবং নিফাক রয়ে গেছে, সুতরাং তারা নিজেরাও পথ দেখতে পায়না, অন্যের ভাল কথাও শুনতে পায়না এবং কারও কাছে প্রশ্নও করতে পারেনা। এখন পুনরায় সঠিকপথে আসা অসম্ভব হয়ে গেছে। একই ধরণের বাক্য কুরআনের অন্য স্থানে বর্ণিত হয়েছে : (সূরা বাকারাহ, ২ : ৪৬) এ কারণেই তারা পিছন ফিরে আলোর সন্ধান পাচ্ছেনা, যে আলোতে তারা বিরাজ করছিল। তারাতো বিপথে পরিচালিত হয়ে তা চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে।

فإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَرُ وَلَيَكن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ

বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। (সূরা হাজ্জ, ২২ : ৪৬)





***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • নামহীন
    নামহীন ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ এ ২:৩০ PM

    Assalamualaikum, Alhamdulillah,good effort, may Allah reveal the correct path for the Jannatul Ferdous.

  • Mohammadia Foundation ☑️
    Mohammadia Foundation ☑️ ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ এ ৪:২৫ PM

    আমিন, ছুম্মা আমিন।।
    আমাদের ওয়েবসাইটে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আশাকরি সব সময় আপাকে হাথে পাবো।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url