তাফসীরে ইবনে কাসীর - ৪ || সুরা ফাতিহা-৪ || “আল্লাহ” শব্দের অর্থ || 'আর রাহমানির রাহীম' এর অর্থ ||






“আল্লাহ” শব্দের অর্থ

اَللهُ  বরকত বিশিষ্ট ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মহান প্রভুর একটি বিশিষ্ট নাম। বলা হয় যে, এটাই إِسْمِ اَعْظَم   কেননা সমুদয় উত্তম গুণের সাথে এটাই গুণান্বিত হয়ে থাকে। যেমন পবিত্র কুর’আনে ইরশাদ হচ্ছেঃ

هُوَ اللّٰهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ١ۚ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُ۝۲۲ هُوَ اللّٰهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَیْمِنُ الْعَزِیْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ١ؕ سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یُشْرِكُوْنَ۝۲۳ هُوَ اللّٰهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى١ؕ یُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ۚ وَهُوَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ

তিনিই মহান আল্লাহ, তিনি ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদৃশ্য এবং দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই মহান আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমাম্বিত; যারা তাঁর শরীক স্থির করে মহান আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান। তিনিই মহান আল্লাহ, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (৫৯ নং সূরাহ্ হাশর, আয়াত নং ২২-২৪)

এ আয়াতসমূহে 'আল্লাহ' ছাড়া অন্যান্য সবগুলিই গুণবাচক নাম এবং ওগুলি 'আল্লাহ' শব্দেরই বিশেষণ। সুতরাং মূল ও প্রকৃত নাম 'আল্লাহ'। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

وَلِلهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ مَا

আর আল্লাহর জন্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে। (সূরা আ'রাফ, ৭:১৮০)

قلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيَّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى

বল : তোমরা 'আল্লাহ' নামে আহ্বান কর অথবা 'রাহমান' নামে আহ্বান কর, তোমরা যে নামেই আহ্বান করনা কেন, সব সুন্দর নামই তো তাঁর! (সূরা ইসরাহ, ১৭:১১০)

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'আল্লাহ তা'আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। এক শতের একটা কম। যে ওগুলি গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ফাতহুল বারী ১১/২১৮, মুসলিম ৪/২০৬২) 'জামে'উত তিরমিযী ও সুনান ইব্‌ন মাজাহও নামগুলি এসেছে। (তিরমিযী ৯/৪৮০, ইব্‌ন মাজাহ ২/২১৬৯) ঐ দুই হাদীস গ্রন্থের বর্ণনায় শব্দের কিছু পার্থক্য আছে এবং সংখ্যায় কিছু কম-বেশি রয়েছে।


الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ (আর রাহমানির রাহীম ) এর অর্থ


الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ  শব্দ দু’টিকে رَحْمَتْ  থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থের দিক দিয়ে দু’টির মধ্যেই ‘মুবালাগাহ’ বা আধিক্য রয়েছে, তবে ‘রাহীমের’ চেয়ে ‘রাহমানের’ মধ্যে আধিক্য বেশি আছে। ‘আল্লামাহ্ ইবনু জারীর (রহঃ)-এর কথা অনুযায়ী জানা যায় যে, এতে প্রায় সবাই একমত। পূর্ববর্তী যুগের সালফি সালিহীন ‘ঈসা (আঃ)-এর সূত্রে বলেন যা ইতোপূবেই উল্লিখিত হয়েছে যে, রাহমানের অর্থ হলো দুনিয়া ও আখিরাতে দয়া প্রদর্শনকারী এবং রাহীমের অর্থ শুধু আখিরাতে রহমকারী।
কেউ কেউ বলেন যে, رَحْمَن  শব্দটি مُشْتَق  নয়। কারণ যদি তা এ রকমই হতো তাহলে مَرْحُوْم  -এর সাথে মিলে যেতো। অথচ কুর’আনুল কারীমের মধ্যে রয়েছেঃ 

وَ كَانَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَحِیْمًا 

আর তিনি মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু। (৩৩ নং সূরাহ্ আহযাব, আয়াত নং ৪৩)

ইবনুল ‘আরবী মুবাররাদের সূত্রে বলেছেন যে, رحمن  হচ্ছে ‘ইবরানী নাম, ‘আরবী নয়। আর আবূ ইসহাক আয-যুজাজ معاني القرآن  নামক গ্রন্থে আহমাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ)-এর উক্তি উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি বলেছেন الرحيم  ‘আরবী, আর الرحمن  ‘ইবরানী নাম। আর এই জন্য উভয়টিকে একত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু আবূ ইসহাক বলেন, এ কথাটি غير مرغوب   তথা অপছন্দনীয়।

ইমাম কুরতবী (রহঃ) এ শব্দটিকে مشتق  বলেছেন। তিনি দালীল হিসেবে জামি‘ তিরমিযী বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং তা সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর তা হলো ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ

أَنَا الرَّحْمَنُ خَلَقْتُ الرَّحِمَ وَشَقَقْتُ لَهَا اسْمًا مِنَ اسْمِى فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَهَا بَتَتُّهُ

আমিই আর-রাহমান, আমি রাহম সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকেই রাহীম নামের সৃষ্টি। অতএব, যে এর হিফাযত করে, আমি তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখি এবং যে ছিন্ন করে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। (জামি‘ তিরমিযী ৪/১৯০৭, সুনান আবূ দাউদ ২/১৬৯৪, মুসনাদ আহমাদ ২/৪৯৮, মুসতাদরাক হাকিম ৪/১৫৭, সুনান বায়হাকী ১২৯৯৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৩, হাদীস সহীহ) তিনি বলেন, এটা হলো الرحمن  শব্দটি مشتق  হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ। অতএব প্রকাশ্য হাদীসের বিরোধিতা ও অস্বীকার করার কোন উপায় বা অবকাশ নেই। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও বোকামীর কারণেই আরবগণ الرحمن  নামকে অস্বীকার করে।
কুরতবী (রহঃ) বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, এ শব্দ দু’টি ندمان  ও نديم  এর ন্যায় একই অর্থবোধক। আবূ ‘উবাইদ এমন কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ এটাও বলেছেন যে, فَعْلان  শব্দটি فعيل  এর মতো নয়। কেননা فعلان  শব্দটি অত্যাবশ্যকীয়ভাবে ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার আধিক্যতার প্রতি প্রমাণ করে। যেমন কারো উক্তি- رجل غضبان  তথা লোকটি খুবই রাগান্নিত। এটা তখনই বলা হয়, যখন সে পূর্ণ রাগান্বিত হয়। আর فعيل  এর ওযনটি কখনো কখনো কর্তা ও কর্ম উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়, যাতে আধিক্যতার প্রতি প্রমাণ থাকে না

আবূ ‘আলী ফারসী (রহঃ) বলেন যে, الرحمن মহান আল্লাহর সাথে নির্ধারিত রহমতের সকল প্রকারকে অন্তর্ভুক্তকারী একটি ব্যাপক অর্থবোধক নাম। আর الرحيم  শুধু মু’মিন তথা বিশ্বাসীদের সাথে নির্ধারিত নাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ كَانَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَحِیْمًا  ‘আর তিনি মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (৩৩ নং সূরাহ্ আহযাব, আয়াত নং ৪৩)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, هُمَا اِسْمَانِ رَقِيْقَانِ أَحَدُهُمَا أَرَقُّ مِنَ الْآخَرِ  ‘এই দু’টি নামই করুণা ও দয়া বিশিষ্ট। একের মধ্যে অন্যের তুলনায় দয়া ও করুণা বেশি আছে।’ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর এ বর্ণনায় أَرَقُّ  শব্দের জটিলতা নিরসনে খাত্তাবী ও অন্যান্যরা বলেছেন হয়তো أرق  দ্বারা أرفق  উদ্দেশ্য। যেমন হাদীসে রয়েছেঃ

إِنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِى عَلَى الرِّفْقِ مَا لاَ يُعْطِى عَلَى الْعُنْفِ.

নিশ্চয় মহান আল্লাহ দয়ালু, তিনি দয়া করাকে পছন্দ করেন। নিতি নম্রতা ও দয়ার কারণে এমন নি‘য়ামত দান করেন যা কঠোরতার কারণে দেন না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস- ৬৭৬৬, বাকী অংশ হলো, وَمَا لَا يُعْطِى عَلَى مَا سِوَاهُ।  মুসনাদ আহমাদ ১/১১২ পৃষ্ঠা, সুনান আবূ দাউদ ৪/৪৮০৭, সুনান বায়হাকী ১০/১৯৩, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ২/৬৭৯, হাদীস ৩৮, মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ ৮/১৮ পৃষ্ঠা। হাদীস সহীহ)
আর ইবনুল মুবারক বলেন, الرحمن  হলো, যার কাছে চাওয়া হলে তিনি দান করেন। আর الرحيم  হলো যার কাছে প্রার্থনা না করলে তিনি ক্রোধান্নিত হোন। আর এর স্বপক্ষে জামি‘ তিরমিযী ও ইবনু মাজাতে বর্ণিত হাদীস প্রমাণ যোগ্য, যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ مَنْ لَمْ يَسْألِ اللهَ يَغضَبْ عَلَيْهِ  অর্থাৎ যে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, মহান আল্লাহ তার প্রতি রাগান্নিত হোন। (জামি‘ তিরমিযী, হাদীস- ৫/৩৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২/৩৮২৮, হাদীস সহীহ) কোন একজন কবি বলেছেনঃ

لا تطلبن بني آدم حاجة … وسل الذي أبوابه لا تغلق
الله يغضب إن تركت سؤاله … وبني آدم حين يسأل يغضب

তুমি আদম সন্তানের কাছে প্রয়োজন পূরণের কামনা করো না, বরং তাঁর কাছে চাও, যার দরজা কখনো বন্ধ করা হয় না। মহান আল্লাহ ক্রোধান্নিত হোন যদি তুমি তাঁর কাছে চাওয়া বর্জন করো, আর আদম সন্তান রাগান্নিত হয় তার কাছে চাওয়া হয়।

ইবনু জারীর (রাঃ) আযরামী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, রাহমানের অর্থ হলো যিনি সমুদয় সৃষ্ট জীবের প্রতি করুণা বর্ষণকারী। আর রাহীমের অর্থ হলো যিনি মু’মিনদের ওপর দয়া বর্ষণকারী। (তাফসীর তাবারী ১/ ১০৩ হাদীস ১৪৬, হাদীস য‘ঈফ) যেমন কুর’আনুল হাকীমের নিম্নের দু’টি আয়াতে রয়েছেঃ 

তারপর তিনি ‘আরশে সমাসীন হোন। (২৫ নং সূরাহ্ ফুরকান, আয়াত নং ৫৯) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

 ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ١ۛۚ اَلرَّحْمٰنُ  اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى 

দয়াময় ‘আরশে সমাসীন। (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ৫)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর আর-রাহমান’ নামসহ ‘আরশে অবস্থান করতেন এবং তার সকল সৃষ্টিকে তাঁর দয়া ও রহমত ঘিরে রেখেছে। তিনি অন্যত্র আরো বলেনঃ 

وَ كَانَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَحِیْمًا

  আর তিনি মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু। (৩৩ নং সূরাহ্ আহযাব, আয়াত নং ৪৩)

সুতরাং জানা গেলো যে, رَحْمَن  -এর মধ্যে رَحِيْم -এর তুলনায় مُبَالَغَة  অনেক গুণ বেশি আছে। (তাফসীর কুরতুবী ১/১০৫) কিন্তু হাদীসের একটি দু‘আর মধ্যে رَحْمَنُ الدُّنْيَا وَالْأَخِرَةِ وَرَحِيْمَهُمَا  এভাবেও এসেছে। ‘রাহমান’ নামটি আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্ধারিত। তিনি ছাড়া আর কারো এ নাম হতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ রয়েছেঃ

قُلِ ادْعُوا اللّٰهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ١ؕ اَیًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى

বলো! তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহ্বান করো অথবা ‘রাহমান’ নামে আহ্বান করো, তোমরা যে নামেই আহ্বান করো না কেন, সব সুন্দর নামই তো তাঁর! (১৭ নং সূরাহ্ ইসরাহ, আয়াত নং ১১০) অন্য একটি আয়াতে আছেঃ

وَاسْـَٔلْ مَنْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُّسُلِنَاۤ اَجَعَلْنَا مِنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِ اٰلِهَةً یُّعْبَدُوْنَ

‘তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস করো, আমি কি দয়মায় মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন দেবতা স্থির করেছিলাম, যার ‘ইবাদত করা যায়? (৪৩ নং সূরাহ্ যুখরুফ, আয়াত নং ৪৫)
মুসাইলামাতুল কায্যাব যখন নাবুওয়াতের দাবী করে এবং নিজেকে ‘রাহমানুল ইয়ামামা’ নামে দাবী করে, আল্লাহ তা‘আলা তখন তাকে অত্যন্ত লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত করেন এবং চরম মিথ্যাবাদী নামে সে সারা দেশে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। আজও তাকে মুসাইলামা কায্যাব বলা হয় এবং প্রত্যেক মিথ্যা দাবীদারকে তার সাথে তুলনা করা হয়। আজ প্রত্যেক পল্লীবাসী ও শহরবাসী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত আবালবৃদ্ধ সবাই তাকে মিথ্যাবাদী বলে জানে।

কোন কোন বিদ্ব্যান মনে করেন যে, الرحمن  এর চেয়ে الرحيم  এর মধ্যেই অর্থের আধিক্যতা বেশি রয়েছে। কেননা এ শব্দের সাথে পূর্বের শব্দের তাকিদ করা হয়েছে। আর যার তাকিদ করা হয়, তা অপেক্ষা তাকিদই বেশি জোরদার হয়ে থাকে। এর উত্তর এই যে, এটাতো তাকিদই হয় না, বরং এটা একটি نَعْتٌ  তথা গুণবাচক বিশেষ্য। সুতরাং উপরোক্ত কোন বিষয়ই এর মধ্যে আবশ্যক করবে না। আর এরই ভিত্তিতে বলা হবে যে, ‘আল্লাহ’ নামটি অগ্রগামী করা হয়েছে যার পূর্বে এমন নাম তিনি ছাড়া আর কেউ রাখেনি। আর ‘রাহমান’ সিফত প্রথমে এনে উক্ত নাম অন্য কারো রাখাকে নিষেধ করছে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

قُلِ ادْعُوا اللّٰهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ١ؕ اَیًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى

‘বলো! তোমরা ‘মহান আল্লাহ’ নামে আহ্বান করো অথবা ‘রাহমান’ নামে আহ্বান করো, তোমরা যে নামেই আহ্বান করো না কেন, সব সুন্দর নামই তো তাঁর!’ (১৭ নং সূরাহ্ ইসরাহ, আয়াত নং ১১০)
মুসাইলামাতুল কায্যাব এ জঘন্যতম স্পর্ধা দেখালেও সে সমূলে ধ্বংস হয়েছিলো এবং তার ভ্রষ্ট সাথীদের ছাড়া এটা অন্যের ওপর চালু হয়নি। ‘রাহীম’ বিশেষণটির সাথে আল্লাহ তা‘আলা অন্যদেরকেও বিশেষিত করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِیْزٌ عَلَیْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیْصٌ عَلَیْكُمْ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ

তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার নিকট খুবই কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মু’মিনদের প্রতি করুণাসিক্ত, বড়ই দয়ালু।’ (৯ নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ১২৮)

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে رحيمٌ বলেছেন। এভাবেই তিনি স্বীয় কতোগুলো নাম দ্বারা অন্যদেরকে স্মরণ করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ

اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍۖۗ نَّبْتَلِیْهِ فَجَعَلْنٰهُ سَمِیْعًۢا بَصِیْرًا

আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুত্র’বিন্দু থেকে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য; এ জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। (৭৬ নং সূরাহ্ আদ্ দাহর, আয়াত নং ২)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে سَمِيْعٌ   ও بَصِيْرٌ  বলেছেন। মোট কথা এই যে, মহান আল্লাহর কতোগুলো নাম এমন রয়েছে যেগুলোর প্রয়োগ ও ব্যবহার অন্য অর্থে অন্যের ওপরও হতে পারে এবং কতোগুলো নাম আবার মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ওপর ব্যবহৃত হতেই পারে না। যেমন আল্লাহ, রাহমান, খালিক, রাযিক ইত্যাদি। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা প্রথম নাম নিয়েছেন ‘আল্লাহ’, তারপর এর বিশেষণ রূপে ‘রাহমান’ এনেছেন। কেননা, ‘রাহীমের’ তুলনায় এর বিশেষত্ব ও প্রসিদ্ধি অনেক গুণ বেশি। মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম তাঁর সবচেয়ে বিশিষ্ট নাম নিয়েছেন, কেননা নিয়ম রয়েছে সর্বপ্রথম সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন নাম নেয়া। তারপর তিনি তুলনামূলকভাবে স্বল্প মানের ও নিম্ন মানের এবং তারও পরে তদপেক্ষা কম টা নিয়েছেন।
atOptions = { 'key' : '7313a7b4f2e9aab29f5a3b2d3d2aebe4', 'format' : 'iframe', 'height' : 90, 'width' : 728, 'params' : {} }; document.write('');
রাহমান ও রাহীম শুধু আল্লাহ তা'আলারই নাম। ইমাম ইব্‌ন জারীর (রহঃ) এ কথাটি নকল করেছেন। কেহ কেহ বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করার পূর্বে কুরাইশ কাফিরেরা রাহমানের সঙ্গে পরিচিতিই ছিলনা।

قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيَا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى

এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু তাদের ধারণা খণ্ডন করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির বছরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে (রাঃ) বলেছিলেন : 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখ।' কাফির কুরাইশরা তখন বলেছিল আমরা রাহমান ও রাহীমকে চিনিনা । সহীহ বুখারীতে এ বর্ণনাটি রয়েছে।

উম্মে সালমার (রাঃ) হাদীসটি পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক আয়াতে থামতেন এবং এভাবেই একটা দল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমের উপর আয়াত করে তাকে আলাদাভাবে তিলাওয়াত করে থাকেন। আবার কেহ কেহ মিলিয়েও পড়েন ।





***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url