মা’আরেফুল কোরআন - ৩৮ || সূরা আল-বাকারাহ ১২২-১২৪নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||




بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১২২-১২৩

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتِیَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ وَ اَنِّیۡ فَضَّلۡتُکُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۲۲
وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا لَّا تَجۡزِیۡ نَفۡسٌ عَنۡ نَّفۡسٍ شَیۡئًا وَّ لَا یُقۡبَلُ مِنۡهَا عَدۡلٌ وَّ لَا تَنۡفَعُهَا شَفَاعَۃٌ وَّ لَا هُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۱۲۳


সূরা আল-বাকারাহ ১২২ ও ১২৩ নং আয়াতের অর্থ

(১২২) হে বনী-ইসরাঈল! আমার অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (১২৩) তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না।

সূরা আল-বাকারাহ ১২২ ও ১২৩ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
(পূর্ববর্তী আয়াত পর্যন্ত বনী ইসরাঈল সম্পর্কিত বিশেষ বিশেষ বিষয়ের বর্ণনা সমাপ্ত হয়েছিল। এ আয়াতে সেসব বিষয়বস্তুর প্রাথমিক ভূমিকা পুনর্বার বর্ণনা করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, পূর্বোল্লিখিত বিষয়গুলো ছিল এই ভূমিকারই পূর্ণ বিবরণ। পুনর্বার করার উদ্দেশ্য, আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে সাধারণ ও বিশেষ অনুগ্রহগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং ভীতি সঞ্চারের লক্ষ্যে কিয়ামতকে দৃষ্টির সামনে উপস্থিত করা। ভূমিকার বিশেষ বিষয়বস্তু বারবার উল্লেখের উদ্দেশ্য যেন তা অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায়। কেননা, মোটামুটি কথাটিই আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সাধারণ বাক-পদ্ধতিতেও এ নিয়মকেই উৎকৃষ্ট মনে করা হয়। দীর্ঘ বক্তব্য উপস্থাপন করার পূর্বে সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট শিরোনামে মোটামুটি কথাটি ব্যক্ত করা হয়, যাতে পরবর্তী পূর্ণ বিবরণ বোঝার পক্ষে এই শিরোনামটি যথেষ্ট সহায়ক হয়। উপসংহারে সারমর্ম হিসাবে সংক্ষিপ্ত শিরোনামটি পুনরুল্লেখ করা হয়। উদাহরণত যেমন বলা হয়, অহঙ্কার খুবই ক্ষতিকর অভ্যাস; এতে এক ক্ষতি এই, দ্বিতীয় ক্ষতি এই, তৃতীয় ক্ষতি এই। দশ-বিশটি ক্ষতি বর্ণনা করার পর উপসংহারে বলে দেওয়া হয়, মোটকথা, অহঙ্কার খুবই ক্ষতিকর অভ্যাস। এই নিয়ম অনুযায়ীই আয়াতে “ইয়া বনী ইসরাঈল"-এর পুনরুল্লেখ হয়েছে)।

হে ইয়াকুব (আ)-এর সন্তানবর্গ । তোমরা আমার ঐসব অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা আমি বিভিন্ন সময়ে তোমাদেরকে দান করেছি এবং (আরও স্মরণ কর যে,) আমি (অনেক মানুষের উপর অনেক বিষয়ে) তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তোমরা ঐ দিনকে (অর্থাৎ কিয়ামত দিবসকে) ভয় কর যেদিন কোন ব্যক্তি কারও পক্ষ থেকে কোন দাবি আদায় করতে পারবে না এবং কারও পক্ষ থেকে (পাওনার পরিবর্তে) কোন বিনিময় ও গ্রহণ করা হবে না কিংবা (ঈমান না থাকলে) কারও কোন সুপারিশও ফলপ্রদ হবে না এবং কেউ তাদের (বলপূর্বক) বাঁচাতে পারবে না।


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১২৪

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَ اِذِ ابۡتَلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ رَبُّهٗ بِکَلِمٰتٍ فَاَتَمَّهُنَّ ؕ قَالَ اِنِّیۡ جَاعِلُکَ لِلنَّاسِ اِمَامًا ؕ قَالَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ؕ قَالَ لَا یَنَالُ عَهۡدِی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۲۴

সূরা আল-বাকারাহ ১২৪ নং আয়াতের অর্থ

(১২৪) যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না।

সূরা আল-বাকারাহ ১২৪ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
যখন ইবরাহীমকে তাঁর পালনকর্তা (স্বীয় বিধি-বিধানের) কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন এবং তিনি তা পুরোপুরি পালন করলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা (তাকে) বললেন, আমি তোমাকে (এর প্রতিদানে নবুয়ত দিয়ে অথবা উম্মত বাড়িয়ে) মানব জাতির নেতা করব । তিনি নিবেদন করলেন, আমার বংশধরের মধ্য থেকেও কোন কোনজনকে (নবুয়ত দিন)। উত্তর হলো, (তোমার প্রার্থনা মঞ্জুর করা হলো; কিন্তু এর রীতিনীতি শুনে নাও) আমার (এই নবুয়তের) অঙ্গীকার আইন অমান্যকারীদের পর্যন্ত পৌঁছবে না। (সুতরাং এ ধরনের লোকদের জন্য ’না’-ই হলো পরিষ্কার জওয়াব। তবে অনুগতদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নবুয়তপ্রাপ্ত হবে)।

সূরা আল-বাকারাহ ১২৪ নং আয়াতের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার পয়গম্বর হযরত ইবরাহীম (আ)-এর বিভিন্ন পরীক্ষা, তাতে তাঁর সাফল্য, পুরস্কার ও প্রতিদানের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। হযরত খলীলুল্লাহ যখন স্নেহপরবশ হয়ে স্বীয় সন্তান-সন্ততির জন্যও এ পুরস্কারের প্রার্থনা জানালেন, তখন পুরস্কার লাভের জন্য একটি নিয়ম-নীতি বলে দেওয়া হলো। এতে হযরত খলীলুল্লাহর প্রার্থনাকে শর্তসাপেক্ষভাবে মঞ্জুর করে বলা হয়েছে যে, আপনার বংশধরগণও এই পুরস্কার পাবে, তবে তাদের মধ্যে যারা অবাধ্য ও জালিম হবে, তারা এ পুরস্কার পাবে না।

হযরত খলীলুল্লাহর পরীক্ষাসমূহ ও পরীক্ষার বিষয়বস্তু এখানে কয়েকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য।

প্রথমত, যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যেই সাধারণত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা সর্বজ্ঞ। কারও কোন অবস্থা অথবা গুণ-বৈশিষ্ট্যই তাঁর অজানা নয়। এমতাবস্থায় এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য কি ছিল ?

দ্বিতীয়ত, কি কি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ?

তৃতীয়ত, কি ধরনের সাফল্য হয়েছে ?

চতুর্থত, কি পুরস্কার দেওয়া হলো ?

পঞ্চমত, পুরস্কারের জন্য নির্ধারিত নিয়ম-পদ্ধতির কিছু ব্যাখ্যা ও বিবরণ। এই পাঁচটি প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর লক্ষ্য করুনঃ

প্রথমত, পরীক্ষার উদ্দেশ্য কি ছিল? কোরআনের একটি শব্দ ربه (তাঁর পালনকর্তা) এ প্রশ্নের সমাধান করে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, এ পরীক্ষার পরীক্ষক স্বয়ং আল্লাহ্, তা’আলা। আর তাঁর ’আসমায়ে হুসনার’ মধ্য থেকে এখানে ’রব’ (পালনকর্তা) নামটি ব্যবহার করে রবুবিয়্যাতের (পালন কর্তৃত্বের) দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর অর্থ কোন বস্তুকে ধীরে ধীরে পূর্ণত্বের স্তর পর্যন্ত পৌঁছানো ।
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর এই পরীক্ষা কোন অপরাধের সাজা হিসাবে কিংবা অজ্ঞাত যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ছিল না ; বরং এর উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষার মাধ্যমে স্বীয় বন্ধুর লালন করে তাঁকে পূর্ণত্বের স্তর পর্যন্ত পৌঁছানো। অতঃপর আয়াতে কর্মকে পূর্বে এবং কারককে পরে উল্লেখ করে ইবরাহীম (আ)-এর মহত্ত্বকে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, কি কি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে-এ সম্পর্কে কোরআনে শুধু كلمات (বাক্যসমূহ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে সাহাবী ও তাবেয়ীদের বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। কেউ খোদায়ী বিধানসমূহের মধ্য থেকে দশটি, কেউ ত্রিশটি এবং কেউ কমবেশি অন্য বিষয় উল্লেখ করেছেন। বাস্তব ক্ষেত্রে এতে কোন বিরোধ নেই, বরং সবগুলোই ছিল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহর পরীক্ষার বিষয়বস্তু। প্রখ্যাত তফসীরকার ইবনে জরীর ও ইবনে কাসীরের অভিমত তা-ই।

আল্লাহর কাছে শিক্ষা বিষয়ক সূক্ষ্মদর্শিতার চাইতে চারিত্রিক দৃঢ়তার মূল্য বেশি

পরীক্ষার এসব বিষয়বস্তু পাঠশালায় অধীত জ্ঞান-অভিজ্ঞতার যাচাই কিংবা তৎসম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান ছিল না, বরং তা ছিল চারিত্রিক মূল্যবোধ এবং কর্মক্ষেত্রে দৃঢ়তা যাচাই করা। এতে বোঝা যায় যে, আল্লাহর দরবারে যে বিষয়ে মূল্য বেশি, তা শিক্ষা বিষয়ক সূক্ষ্মদর্শিতা নয়, বরং কার্যগত ও চরিত্রগত শ্রেষ্ঠত্ব।

হযরত ইবরাহীমের (আ) উপর আল্লাহর পরীক্ষাসমূহ

এ ধরনের পরীক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই-

ইব্রাহীমকে (আ) আগুনে নিক্ষেপ

আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা ছিল হযরত ইবরাহীম (আ)-কে স্বীয় বন্ধুত্বের বিশেষ মূল্যবান পোশাক উপহার দেওয়া। তাই তাঁকে বিভিন্ন রকম কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। সমগ্র জাতি, এমনকি তাঁর আপন পরিবারের সবাই মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল। সবার বিশ্বাস ও রীতি-নীতির বিপরীত একটি সনাতন ধর্ম তাঁকে দেওয়া হয়। জাতিকে এ ধর্মের দিকে আহ্বান জানানোর গুরু দায়িত্ব তাঁর কাঁধে অর্পণ করা হয়। তিনি পয়গম্বরসুলভ দৃঢ়তা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নির্ভয়ে জাতিকে এক আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান। বিভিন্ন পন্থায় তিনি মূর্তি পূজার নিন্দা ও কুৎসা প্রচার করেন। প্রকৃতপক্ষে কার্যক্ষেত্রে তিনি মূর্তিসমূহের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। ফলে সমগ্র জাতি তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্যত হয়। বাদশাহ্ নমরূদ ও তার পারিষদবর্গ তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর খলীল প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য এসব বিপদাপদ সত্ত্বেও হাসিমুখে নিজেকে অগ্নিতে নিক্ষেপের জন্য পেশ করেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় বন্ধুকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে দেখে আগুনকে নির্দেশ প্রদান করলেনঃ

قُلْنَا يَانَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ

অর্থাৎ- আমি হুকুম দিয়ে দিলাম, হে অগ্নি, ইবরাহীমের উপর শীতল ও নিরাপত্তার কারণ হয়ে যাও।

নমরুদের অগ্নি সম্পর্কিত এ নির্দেশের মধ্যে ভাষা ছিল ব্যাপক। বস্তুত কোন বিশেষ স্থানের অগ্নিকে নির্দিষ্ট করে এ নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এ কারণে সমগ্র বিশ্বে যেখানেই অগ্নি ছিল, এ নির্দেশ আসা মাত্রই স্ব স্ব স্থানে সব ঠাণ্ডা হয়ে গেল। নমরূদের অগ্নি এর আওতায় পড়ে শীতল হয়ে গেল।
কোরআন بَرْدًا (শীতল) শব্দের সাথে وَسَلَامًا (নিরাপদ) শব্দটি যুক্ত করার কারণ এই যে, কোন বস্তু সীমাতিরিক্ত শীতল হয়ে গেলে তাও বরফের ন্যায় শীতল হয়ে কষ্টদায়ক, বরং মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। وَسَلَامًا বলা না হলে অগ্নি বরফের ন্যায় শীতল হয়ে কষ্টদায়ক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

জন্মভূমি ছেড়ে সিরিয়ায় হিজরত

এ পরীক্ষা সমাপ্ত হলে জন্মভূমি ত্যাগ করে সিরিয়ায় হিজরত করার পর দ্বিতীয় পরীক্ষা নেওয়া হয়। ইবরাহীম (আ) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় স্বগোত্র ও মাতৃভূমিকেও হাসিমুখে ত্যাগ করে পরিবার-পরিজনসহ সিরিয়ায় হিজরত করলেন।

انکس که ترا شناخت جاں چه کند
 فرزند و عیال وخانماں را چه کند 

অর্থ-যে ব্যক্তি তোমাকে চিনেছে সে তার জীবন, সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন দিয়ে কি করবে?
মাতৃভূমি ও স্বজাতি ত্যাগ করে সিরিয়ায় অবস্থান শুরু করতেই নির্দেশ এলো. বিবি হাজেরা রাযিয়াল্লাহু আনহা ও তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশু হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে সঙ্গে নিয়ে এখান থেকেও স্থানান্তরে গমন করুন।-(ইবনে কাসীর)

দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল ও হাজেরাকে শূন্য মরুভূমিতে প্রেরণ

জিবরাঈল (আ) আগমন করলেন এবং তাঁদের সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে কোন শস্য-শ্যামল বনানী এলেই হযরত খলীল বলতেন, এখানে অবস্থান করানো হোক। জিবরাঈল (আ) বলতেন, এখানে অবস্থানের নির্দেশ নেই-গন্তব্যস্থল সামনে রয়েছে। চলতে চলতে যখন শুষ্ক পাহাড় ও উত্তপ্ত বালুকাময় প্রান্তরে এসে গেল (যেখানে ভবিষ্যতে বায়তুল্লাহ্ নির্মাণ ও মক্কানগরী সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল), তখন সেখানেই তাঁদের থামিয়ে দেওয়া হলো। আল্লাহর বন্ধু স্বীয় পালনকর্তার মহব্বতে মত্ত হয়ে এই জনশূন্য তৃণলতাহীন প্রান্তরেই বসবাস আরম্ভ করলেন। কিন্তু পরীক্ষার এখানেই শেষ হলো না। অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ) নির্দেশ পেলেন, ’বিবি হাজেরা ও শিশুকে এখানেই রেখে সিরিয়ায় ফিরে যাও।’ আল্লাহর বন্ধু নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তা পালন করতে তৎপর হলেন এবং সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। ’আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক আমি যাচ্ছি’-বিবিকে এতটুকু কথা বলে যাওয়ার দেরিও তিনি সহ্য করতে পারলেন না। হযরত হাজেরা তাঁকে চলে যেতে দেখে কয়েকবার ডেকে অবশেষে কাতরকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ’আপনি এই জনমানবহীন প্রান্তরে আমাদের একা ফেলে রেখে কোথায় যাচ্ছেন?’ হযরত ইবরাহীম নির্বিকার রইলেন, কোন উত্তর দিলেন না। অবশ্য হাজেরাও ছিলেন খলীলুল্লারই সহধর্মিণী। ব্যাপার বুঝে ফেললেন। স্বামীকে ডেকে বললেন, ’আপনি কি আল্লাহর কোন নির্দেশ পেয়েছেন?’ হযরত ইবরাহীম (আ) বললেন, হ্যাঁ!’ খোদায়ী নির্দেশের কথা জানতে পেরে হযরত হাজেরা খুশি মনে বললেন, ‘যান। যিনি আপনাকে চলে যেতে বলেছেন, তিনি আমাদের ধ্বংস হতে দেবেন না।’
অতঃপর হযরত হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জন-মানবহীন প্রান্তরে কালাতিপাত করতে থাকেন। এক সময় দারুণ পিপাসা তাঁকে পানির খোঁজে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করল। তিনি শিশুকে উন্মুক্ত প্রান্তরে রেখে ’সাফা’ ও ’মারওয়া পাহাড়ে বারবার ওঠানামা করতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও পানির চিহ্নমাত্র দেখলেন না এবং এমন কোন মানুষ দৃষ্টিগোচর হলো না, যার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানতে পারেন। সাতবার ছুটোছুটি করার পর তিনি নিরাশ হয়ে শিশুর কাছে ফিরে এলেন। এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড় দু’টির মাঝখানে সাতবার দৌড়ানো কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য হজ্জের বিধি-বিধানে অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে। হযরত হাজেরা যখন দৌড়াদৌড়ি শেষ করে নিরাশ হয়ে শিশুর কাছে ফিরে এলেন, তখন আল্লাহর রহমত নাযিল হলো। জিবরাঈল (আ) এলেন এবং শুষ্ক মরুভূমিতে পানির একটি ঝর্ণাধারা বইয়ে দিলেন। বর্তমানে এই ঝর্ণাধারার নামই যম যম। পানির সন্ধান পেয়ে প্রথমে জন্তু-জানোয়ারেরা এলো। জন্তু-জানোয়ার দেখে মানুষ এসে সেখানে আস্তানা গাড়ল। মক্কায় জনপদের ভিত্তি রচিত হয়ে গেল। জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু আসবাবপত্রও সংগৃহীত হয়ে গেল ।

বালক ইসমাঈলকে কুরবানির নির্দেশ

হযরত ইসমাঈল (আ) নামে খ্যাত এই সদ্যোজাত শিশু লালিত-পালিত হয়ে কাজকর্মের উপযুক্ত হয়ে গেলেন। হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর ইঙ্গিতে মাঝে মাঝে এসে বিবি হাজেরা ও শিশুকে দেখে যেতেন। এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় বন্ধুর তৃতীয় পরীক্ষা নিতে চাইলেন। বালক ইসমাঈল অসহায় ও দীন-হীন অবস্থায় বড় হয়েছিলেন এবং পিতার স্নেহ-বাৎসল্য থেকেও বঞ্চিত ছিলেন। এমতাবস্থায় পিতা খোলাখুলি নির্দেশ পেলেনঃ ’এ ছেলেকে আপন হাতে জবাই কর।’ কুরআনে বলা হয়েছেঃ

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَابُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَاأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ

“বালক যখন পিতার কাজে কিছু সাহায্য করার যোগ্য হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম (আ) তাকে বললেনঃ হে বৎস, আমি স্বপ্নে তোমাকে জবাই করতে দেখেছি। এখন বল, তোমার কি অভিপ্রায়? পিতৃভক্ত বালক আরয করলেনঃ পিতা, আপনি যে আদেশ পেয়েছেন, তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ্ আমাকেও আপনি এ ব্যাপারে সুদৃঢ় পাবেন।”
এর পরবর্তী ঘটনা সবাই জ্ঞাত আছেন যে, হযরত খলীল (আ) পুত্রকে জবাই করার উদ্দেশ্যে মিনা প্রান্তরে নিয়ে যান। অতঃপর আল্লাহর আদেশ পালনে নিজের পক্ষ থেকে যা করণীয় ছিল, তা পুরোপুরিই সম্পন্ন করেন। কিন্তু প্রণিধানযোগ্য যে, এখানে পুত্রকে জবাই করাটা উদ্দেশ্য নয়; বরং পুত্রবৎসল পিতার পরীক্ষা নেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। স্বপ্নের ভাষা সম্পর্কে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, হযরত ইবরাহীম (আ) স্বপ্নে ‘জবাই করে দিয়েছেন’ দেখেন নি; বরং জবাই করছেন, অর্থাৎ জবাই করার কাজটি দেখেছেন। অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ) সেটাই বাস্তবে পরিণত করেছিলেন। প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে কাজটি দেখানো হয়েছে। এ কারণেই صَدّقَتَ ْالرُؤْيَا বলা হয়েছে যে, স্বপ্নে যা দেখেছিলেন, আপনি তা পূর্ণ করে দিয়েছেন। হযরত ইবরাহীম (আ) যখন এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তখন আল্লাহ্ তা’আলা বেহেশত থেকে এর পরিপূরক আয়াত নাযিল করে কুরবানী করার আদেশ দিলেন। এ রীতিটিই পরে ভবিষ্যতের জন্য একটি চিরন্তন রীতিতে পরিণতি লাভ করে।

এগুলো ছিল শক্ত ও বড় কঠিন পরীক্ষা, যার সম্মুখীন হযরত খলীলুল্লাহকে করা হলো। এর সাথে সাথেই আরও অনেকগুলো কাজ ও বিধি-বিধানের বাধ্যবাধকতাও তাঁর উপর আরোপ করা হলো। তন্মধ্যে দশটি কাজ ‘খাসায়েলে ফিতরত’ (প্রকৃতিসুলভ অনুষ্ঠান) নামে অভিহিত। এগুলো হলো শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত। ভবিষ্যত উম্মতের জন্যও এগুলো স্থায়ী বিধি-বিধানে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সা)-ও তাঁর উম্মতকে এসব বিধি-বিধান পালনের জোর তাকিদ দিয়েছেন।
ইবন কাসীর হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, সমস্ত ইসলাম ত্রিশটি অংশে সীমাবদ্ধ। তন্মধ্যে দশটি সূরা বারাআতে, দশটি সূরা আহযাবে এবং দশটি সূরা মু’মিনূনে বর্ণিত হয়েছে; হযরত ইবরাহীম (আ) এগুলো পূর্ণরূপে পালন করেছেন এবং সব পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হয়েছেন।


মুসলমানের ত্রিশটি গুণ

সূরা বারাআতে মু’মিনদের গুণাবলী বর্ণনা প্রসঙ্গে মুসলমানের দশটি বিশেষ লক্ষণ ও গুণ এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ

التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللَّهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ 

“তারা হলেন তওবাকারী, ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, রােযাদার, রুকু-সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী অসৎ কাজে বাধাদানকারী, আল্লাহর নির্ধারিত সীমার হেফাযতকারী-এহেন ঈমানদারদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।”

সূরা মু’মিনূনে উল্লিখিত দশটি গুণ


قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

“নিশ্চিতরূপেই ঐসব মুসলমান কৃতকার্য, যারা নামাযে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে সরে থাকে, যারা নিয়মিত যাকাত প্রদান করে, যারা স্বীয় লজ্জাস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ করে; কিন্তু আপন স্ত্রী ও যাদের উপর বিধিসম্মত অধিকার রয়েছে তাদের ব্যতীত। কারণ এ ব্যাপারে তাদের অভিযুক্ত করা হবে না। যারা এদের ছাড়া অন্যকে তালাশ করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। যারা স্বীয় আমানত ও অঙ্গীকারের প্রতি লক্ষ্য রাখে, যারা নিয়মানুবর্তিতার সাথে নামায পড়ে, এমন লোকেরাই উত্তরাধিকারী হবে। তারা হবে জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী। সেখানে তারা অনন্তকাল বাস করবে।” 

সূরা আহযাবে উল্লিখিত দশটি গুণ


إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا .

“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, আনুগত্যকারী পুরুষ ও আনুগত্যকারী নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদিনী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীলা নারী, বিনয় অবলম্বনকারী পুরুষ ও বিনয় অবলম্বকারিণী নারী, খয়রাতকারী পুরুষ ও খয়রাতকারিণী নারী, রোযাদার পূরুষ ও রোযাদার নারী, লজ্জাস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারিণী নারী, অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারিণী নারী- তাদের সবার জন্য আল্লাহ তা’আলা মাগফিরাত ও বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।"

কোরআনের মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের উপরোদ্ধৃত উক্তির দ্বারা বোঝা গেল যে, মুসলমানদের জন্য যেসব জ্ঞান এবং কর্মগত ও নৈতিক গুণ অর্জন করা দরকার, তার সবই এ তিনটি সূরার কয়েকটি আয়াতে সন্নিবেশিত হয়েছে। এগুলোই কোরআনোক্ত كلمات যেসব বিষয়ে হযরত খলীলুল্লাহর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ আয়াতের ইঙ্গিতও এসব বিষয়ের দিকেই।
এ পর্যন্ত আয়াত সম্পর্কিত পাঁচটি প্রশ্নের মধ্য থেকে দু’টির উত্তর সম্পন্ন হলো। 

তৃতীয় প্রশ্ন ছিল এ পরীক্ষায় হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সাফল্যের প্রকার ও শ্রেণী সম্পর্কে। এর উত্তর এই যে, স্বয়ং কোরআনই বিশেষ ভঙ্গিতে তাঁকে সাফল্যের স্বীকৃতি ও সনদ প্রদান করেছেঃ وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى আর ইবরাহীম পরীক্ষায় পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে অর্থাৎ প্রতিটি পরীক্ষার সম্পূর্ণ ও একশ’ ভাগ সাফল্যের ঘোষণা আল্লাহ্ দিয়েছেন।

চতুর্থ প্রশ্ন ছিল, এই পরীক্ষার পুরস্কার কি পেলেন। এরও বর্ণনা এই আয়াতেই রয়েছে বলা হয়েছেঃ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا পরীক্ষার পর আল্লাহ্ বলেন-আমি তোমাকে মানব সমাজের নেতৃত্ব দান করব।

এ আয়াত দ্বারা একদিকে বোঝা গেল যে, হযরত খলীল (আ)-কে সাফল্যের প্রতিদানে মানব সমাজের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে মানব সমাজের নেতা হওয়ার জন্য যে পরীক্ষা দরকার, তা জাগতিক পাঠশালা বা বিদ্যালয়ের পরীক্ষার অনুরূপ নয়। জাগতিক পাঠশালাসমূহের পরীক্ষায় কতিপয় বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান ও চুলচেরা বিশ্লেষণকেই সাফল্যের স্তর বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নেতৃত্ব লাভের পরীক্ষায় আয়াতে বর্ণিত ত্রিশটি নৈতিক ও কর্মগত গুণে পুরোপুরি গুণান্বিত হওয়া শর্ত। কোরআনের অন্য এক জায়গায় এ বিষয় এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ

যখন তারা শরীয়ত বিরুদ্ধ কাজে সংযমী হলো এবং আমার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাসী হলো, তখন আমি তাদেরকে নেতা করে দিলাম, যাতে আমার নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথ প্রদর্শন করে।"

এই আয়াতে صبر (সংযম) ও يقين (বিশ্বাস) শব্দদ্বয়ের মধ্যে পূর্বোক্ত ত্রিশটি গুণ সন্নিবেশিত করে দেওয়া হয়েছে। صبر হলো শিক্ষাগত ও বিশ্বাসগত পূর্ণতা আর يقين কর্মগত ও নৈতিক পূর্ণতা। 

পঞ্চম প্রশ্ন ছিল এই যে, পাপাচারী ও জালিমকে নেতৃত্ব লাভের সম্মান দেওয়া হবে না বলে ভবিষ্যত বংশধরদের নেতৃত্ব লাভের জন্য যে বিধান ব্যক্ত হয়েছে, তার অর্থ কি ?

এর ব্যাখ্যা এই যে, নেতৃত্ব একদিক দিয়ে আল্লাহ তা’আলার খেলাফত তথা প্রতিনিধি। আল্লাহর অবাধ্য ও বিদ্রোহীকে এ পদ দেয়া যায় না। এ কারণেই আল্লাহর অবাধ্য ও বিদ্রোহীকে স্বেচ্ছায় নেতা বা প্রতিনিধি নিযুক্ত না করা মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য।




***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 

Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url