মা’আরেফুল কোরআন - ৪১ || সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১২৯ || রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্য এবং পয়গম্বর প্রেরণের লক্ষ্য






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۱۲۹

সূরা আল-বাকারাহ ১২৯ নং আয়াতের অর্থ

(১২৯) হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা।

সূরা আল-বাকারাহ ১২৯ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
 হে আমাদের পালনকর্তা! (আরও প্রার্থনা এই যে, আমার বংশধরের মধ্য থেকে যে দলের জন্য দোয়া করছি) তাদের মধ্য থেকেই এমন একজন পয়গম্বর নিযুক্ত করুন—যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবেন, তাদেরকে (খোদায়ী) গ্রন্থের বিষয়বস্তু ও সুবুদ্ধি অর্জনের পদ্ধতি শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে (এ শিক্ষা ও তিলাওয়াত দ্বারা মূর্খজনোচিত চিন্তাধারা ও কাজকর্ম থেকে) পবিত্র করবেন, নিশ্চয়ই আপনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
শব্দার্থ বিশ্লেষণ
يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ - তিলাওয়াতের আসল অর্থ অনুসরণ করা। কোরআন ও হাদীসের পরিভাষায় এ শব্দটি কোরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাব পাঠ করার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, যে লোক এসব কালাম পাঠ করে, এর অনুসরণ করাও তার অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে। আসমানী গ্রন্থ ঠিক যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয় হুবহু তেমনিভাবে পাঠ করা জরুরী। নিজের পক্ষ থেকে তাতে কোন শব্দ অথবা স্বরচিহ্নটিও পরিবর্তন করার অনুমতি নেই। ইমাম রাগেব ইস্পাহানী ’মুফরাদাতুল কোরআন’ গ্রন্থে বলেন, ’আল্লাহর কালাম ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থ অথবা কালাম পাঠ করাকে সাধারণ পরিভাষায় তিলাওয়াত বলা যায় না।’

وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ -এখানে কিতাব বলে আল্লাহর কিতাব বোঝানো হয়েছে। ‘হেকমত’ শব্দটি আরবী অভিধানে একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথা— সত্যে উপনীত হওয়া, ন্যায় ও সুবিচার, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি। (কামূস)

ইমাম রাগেব ইস্পাহানী লেখেন, এ শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয় বিদ্যমান বস্তুসমূহের বিশুদ্ধ জ্ঞান এবং সৎকর্ম। শায়খুল হিন্দ (র)-এর অনুবাদে এর অনুবাদ করা হয়েছে ته كى باتں অর্থাৎ গূঢ়তত্ত্ব। এ অনুবাদে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। ‘হেকমত’ শব্দটি আরবী ভাষায় একাধিক অর্থে বলা হয়। বিশুদ্ধ জ্ঞান’ ’সৎকর্ম’, ’ন্যায়’, ‘সুবিচার’, ’সত্য কথা’ ইত্যাদি। (কামূস ও রাগেব)
এখন লক্ষ্য করা দরকার যে, আয়াতে হেকমতের কি অর্থ ? তফসীরকার সাহাবীগণ হুযূরে আকরাম (সা)-এর কাছ থেকে শিখে কোরআনের ব্যাখ্যা করতেন। এখানে ’হেকমত’ শব্দের অর্থে তাঁদের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হলেও সবগুলোর মর্মই এক। অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সা)-এর সুন্নাহ্। ইবনে কাসীর ও ইবনে জরীর কাতাদাহ্ থেকে এ ব্যাখ্যাই উদ্ধৃত করেছেন। হেকমতের অর্থ কেউ কোরআনের তফসীর, কেউ ধর্মে গভীর জ্ঞান অর্জন, কেউ শরীয়তের বিধি-বিধানের জ্ঞান, কেউ এমন বিধি-বিধানের জ্ঞান অর্জন বলেছেন, যা শুধু রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বর্ণনা থেকেই জানা যায়। নিঃসন্দেহে এ সব উক্তির সারমর্ম হলো রসূল (সা)-এর সুন্নাহ।

وَيُزَكِّيهِمْ - শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ পবিত্রতা। বাহ্যিক ও আত্মিক সর্বপ্রকার পবিত্রতার অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

উপরোক্ত ব্যাখ্যার দ্বারা আয়াতের মর্ম সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। হযরত ইবরাহীম (আ) ভবিষ্যত বংশধরদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন যে, আমার বংশধরের মধ্যে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন—যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের তিলাওয়াত করে শোনাবেন, কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন। দোয়ায় নিজের বংশধরের মধ্য থেকেই পয়গম্বর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর কারণ প্রথমত এই যে, এটা তাঁর সন্তানদের জন্য গৌরবের বিষয়। দ্বিতীয়ত, এতে তাদের কল্যাণও নিহিত রয়েছে। কারণ, স্বগোত্র থেকে পয়গম্বর হলে তাঁর চাল-চলন ও অভ্যাস-আচরণ সম্পর্কে তারা উত্তমরূপে অবগত থাকবে। ধোঁকাবাজি ও প্রবঞ্চনার আশংকা থাকবে না। হাদীসে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যুত্তরে ইবরাহীম (আ)-কে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয় যে, আপনার দোয়া কবুল হয়েছে এবং আকাঙ্ক্ষিত পয়গম্বরকে শেষ যমানায় প্রেরণ করা হবে।’ (ইবনে জরীর, ইবনে কাসীর)

রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর জন্মের বৈশিষ্ট্য এবং রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য

’মসনদে আহমদ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা) বলেন, ’আমি আল্লাহর কাছে তখনও পয়গম্বর ছিলাম যখন আদম (আ)-ও পয়দা হননি; বরং তাঁর সৃষ্টির জন্য উপাদান তৈরি হচ্ছিল মাত্র। আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছিঃ ‘আমি পিতা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দোয়া, ঈসা (আ)-এর সুসংবাদ এবং স্বীয় জননীর স্বপ্নের প্রতীক। ঈসা (আ)-এর সুসংবাদের অর্থ তাঁর এ উক্তি وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ (আমি এমন এক পয়গম্বরের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ)। তাঁর জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর পেট থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে। কোরআনে হুযূর (সা)-এর আবির্ভাবের আলোচনা প্রসঙ্গে দু’জায়গায় সূরা আলে ইমরানের ১৬৪তম আয়াতে এবং সূরা জুমু’আয় ইবরাহীমের দোয়ায় উল্লিখিত ভাষারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে  ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (আ) যে পয়গম্বরের জন্য দোয়া করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা)।

পয়গম্বর প্রেরণের লক্ষ্য

সূরা বাকারার আলোচ্য আয়াতে এবং সূরা আলে ইমরান ও সূরা জুমু’আর বিভিন্ন আয়াতে হুযূর (সা) সম্পর্কে একই বিষয়বস্তু অভিন্ন ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। এসব আয়াতে মহানবী (সা)-এর জগতে পদার্পণ ও তাঁর রিসালতের তিনটি লক্ষ্য বর্ণিত হয়েছে। প্রথমত, কোরআন তিলাওয়াত, দ্বিতীয়ত, আসমানী গ্রন্থ ও হেকমতের শিক্ষাদান এবং তৃতীয়ত, মানুষের চরিত্র শুদ্ধি।

প্রথম উদ্দেশ্য কোরআন তিলাওয়াত

এখানে সর্বপ্রথম প্রণিধানযোগ্য যে, তিলাওয়াতের সম্পর্ক শব্দের সাথে এবং শিক্ষাদানের সম্পর্ক অর্থের সাথে। তিলাওয়াত ও শিক্ষাদান পৃথক পৃথকভাবে বর্ণিত হওয়ার মর্মার্থ এই যে, কোরআনের অর্থসম্ভার যেমন উদ্দেশ্য, শব্দসম্ভারও তেমনি একটি লক্ষ্য। এসব শব্দের তিলাওয়াত ও হেফাযত একটি ফরয ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এখানে আরও একটি প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, যাঁরা মহানবী (সা)-এর প্রত্যক্ষ শিষ্য ও সম্বোধিত ব্যক্তি ছিলেন তাঁরা শুধু আরবী ভাষা সম্পর্কেই ওয়াকিফহাল ছিলেন না, বরং অলংকারপূর্ণ আরবী ভাষার একেকজন বাগ্মী এবং কবিও ছিলেন। তাঁদের সামনে কোরআন পাঠ করাই বাহ্যত তাঁদের শিক্ষাদানের জন্য যথেষ্ট ছিল— পৃথকভাবে অনুবাদ ও ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল না। এমতাবস্থায় কোরআন তিলাওয়াতকে পৃথক উদ্দেশ্য এবং গ্রন্থ শিক্ষাদানকে পৃথক উদ্দেশ্য সাব্যস্ত করার কি প্রয়োজন ছিল ? অথচ কার্যক্ষেত্রে উভয় উদ্দেশ্যই এক হয়ে যায়। চিন্তা করলে এ থেকে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উদ্ভব হয়। প্রথম এই যে, কোরআন অপরাপর গ্রন্থের মত নয়—যাতে শুধু অর্থসম্ভারের উপর আমল করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এবং শব্দসম্ভার থাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে; শব্দে সামান্য পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়ে গেলেও ক্ষতির কারণ মনে করা হয় না। অর্থ না বুঝে এসব গ্রন্থের শব্দ পাঠ করা একেবারেই নিরর্থক, কিন্তু কোরআন এমন নয়। কোরআনের অর্থসম্ভার যেমন উদ্দেশ্য, তেমনি শব্দসম্ভারও উদ্দেশ্য। কোরআনে শব্দের সাথে বিশেষ বিশেষ বিধি-বিধান সম্পৃক্ত রয়েছে। ফিকহশাস্ত্রের মূলনীতি সংক্রান্ত গ্রন্থসমূহে কোরআনের সংজ্ঞা এভাবে هو النظم والمعنى جميعا বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ শব্দসম্ভার ও অর্থসম্ভার উভয়ের সমন্বিত গ্রন্থের নামই কোরআন। এতে বোঝা যায় যে, কোরআনের অর্থসম্ভারকে অন্য শব্দ অথবা অন্য ভাষায় লিপিবদ্ধ করা হলে তাকে কোরআন বলা যাবে না, যদিও বিষয়বস্তু একেবারে নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত হয়। কোরআনের বিষয়বস্তুকে পরিবর্তিত শব্দের মাধ্যমে কেউ নামাযে পাঠ করলে তার নামায হবে না। এমনিভাবে কোরআন সম্পর্কিত অপরাপর বিধি-বিধানও এর প্রতি প্রযোজ্য হবে না। হাদীসে কোরআন তিলাওয়াতের যে সওয়াব বর্ণিত রয়েছে, তা পরিবর্তিত শব্দের কোরআন পাঠে অর্জিত হবে না। এ কারণেই ফিকহ্ শাস্ত্রবিদগণ কোরআনের মূল শব্দ বাদ দিয়ে শুধু অনুবাদ লিখতে ও মুদ্রিত করতে নিষেধ করেছেন। সাধারণ পরিভাষার এ জাতীয় অনুবাদ ’উর্দু কোরআন, বাংলা কোরআন অথবা ইংরেজি কোরআন’ বলে দেওয়া হয়। কারণ, ভাষান্তরিত কোরআন প্রকৃতপক্ষে কোরআন বলে কথিত হওয়ারই যোগ্য নয়।
মোটকথা, আয়াতে কোরআন তিলাওয়াতকে কোরআন শিক্ষাদান থেকে পৃথক করে একটি উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোরআনের অর্থসম্ভার যেমন উদ্দেশ্য, শব্দসম্ভারও তেমনি উদ্দেশ্য। কেননা, তিলাওয়াত করা হয় শব্দের অর্থের নয়। অতএব, অর্থ শিক্ষা দেওয়া যেমন পয়গম্বরের কর্তব্য, তেমনি শব্দের তিলাওয়াত এবং সংরক্ষণও তাঁর একটি স্বতন্ত্র কর্তব্য ও দায়িত্ব। তবে এতে সন্দেহ নেই যে, কোরআন অবতরণের আসল লক্ষ্য তাঁর প্রদর্শিত জীবন-ব্যবস্থার বাস্তবায়ন, তাঁর শিক্ষাকে বোঝানো। সুতরাং শুধু শব্দ উচ্চারণ করেই তুষ্ট হয়ে বসে থাকা কোরআনের বাস্তব রূপ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং তার অবমাননারই নামান্তর।
অর্থ না বুঝে কোরআনের শব্দ পাঠ করা নিরর্থক নয়- সওয়াবের কাজঃ কিন্তু এতদসঙ্গে একথা বলা কিছুতেই সঙ্গত নয় যে, অর্থ না বুঝে তোতা পাখির মত শব্দ পাঠ করা অর্থহীন। বিষয়টির প্রতি বিশেষ জোর দেওয়ার কারণ এই যে, আজকাল অনেকেই কোরআনকে অন্যান্য গ্রন্থের সাথে তুলনা করে মনে করে যে, অর্থ না বুঝে কোন গ্রন্থের শব্দাবলী পড়া ও পড়ানো বৃথা কালক্ষেপণ বৈ কিছুই নয়। কোরআন সম্পর্কে তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ, শব্দ ও অর্থ এই দুয়েরই সমন্বিত আসমানী গ্রন্থের নাম কোরআন। কোরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা এবং তার বিধি-বিধান পালন করা যেমন ফরয ও উচ্চস্তরের ইবাদত, তেমনিভাবে তার শব্দ তিলাওয়াত করাও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও সওয়াবের কাজ।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্য কোরআন শিক্ষাদান

রসূলুল্লাহ্ (সা) ও সাহাবায়ে কেরাম কোরআনের অর্থ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু উপরোক্ত কারণেই তাঁরা শুধু অর্থ বোঝা ও তা বাস্তবায়ন করাকেই যথেষ্ট মনে করেননি। বোঝা এবং আমল করার জন্য একবার পড়ে নেওয়াই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু তাঁরা সারা জীবন কোরআন তিলাওয়াতকে ’অন্ধের যষ্ঠি মনে করেছেন। কতক সাহাবী দৈনিক একবার কোরআন খতম করতেন, কেউ দু’দিনে এবং কেউ তিন দিনে কোরআন খমতে অভ্যস্ত ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে কোরআন খতম করার রীতি মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। কোরআনের সাত মনযিল এই সাপ্তাহিক তিলাওয়াত রীতিরই চিহ্ন। রসূলুল্লাহ্ (সা) ও সাহাবায়ে কেরামের এ কার্যধারাই প্রমাণ করে যে, কোরআনের অর্থ বোঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা যেমন ইবাদত, তেমনিভাবে শব্দ তিলাওয়াত করাও স্বতন্ত্র দৃষ্টিতে একটি উচ্চস্তরের ইবাদত এবং বরকত, সৌভাগ্য ও মুক্তির উপায়। এ কারণেই রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কর্তব্যসমূহের মধ্যে কোরআন তিলাওয়াতের একটি স্বতন্ত্র মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, যে মুসলমান আপাতত কোরআনের অর্থ বুঝে না, শব্দের সওয়াব থেকেও বঞ্চিত হওয়া তার পক্ষে উচিত নয়। বরং অর্থ বোঝার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরী, যাতে কোরআনের সত্যিকার নূর ও বরকত প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং কোরআন অবতরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। (মা’আযাল্লাহ্) কোরআনকে তন্ত্র-মন্ত্র মনে করে শুধু ঝাড়-ফুঁকে ব্যবহার করা উচিত নয় এবং আল্লামা ইকবালের ভাষায় সূরা ইয়াসীন সম্পর্কে শুধু এরূপ ধারণা করা সঙ্গত নয় যে, এ সূরা পাঠ করলে মরণোন্মুখ ব্যক্তির আত্মা সহজে বের হয়।
মোটকথা, আয়াতে রসূলের কর্তব্য বর্ণনা প্রসঙ্গে কোরআন তিলাওয়াতকে স্বতন্ত্র কর্তব্যের মর্যাদা দিয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, কোরআনের শব্দ তিলাওয়াত, শব্দের সংরক্ষণ এবং যে ভঙ্গিতে তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে ভঙ্গিতে তা পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ফরয। এমনিভাবে এ কর্তব্যটির সাথে গ্রন্থ শিক্ষাদানকে পৃথক কর্তব্য সাব্যস্ত করার ফল এই দাঁড়িয়েছে যে, কোরআন বোঝার জন্য শুধু আরবী ভাষা শিখে নেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং রসূল (সা)-এর শিক্ষা অনুযায়ী এর শিক্ষা লাভ করাও অপরিহার্য। সাধারণ শিক্ষাক্ষেত্রে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, কোন শাস্ত্রীয় গ্রন্থের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য গ্রন্থের ভাষা জানা বা সে ভাষায় পারদর্শী হওয়াই যথেষ্ট নয়—যে পর্যন্ত শাস্ত্রটি কোন সুদক্ষ ওস্তাদের কাছ থেকে অর্জন করা না হয়। উদাহরণত আজকাল হোমিও প্যাথিক ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসাশাস্ত্রের গ্রন্থাদি সাধারণত ইংরেজিতে লেখা। কিন্তু সবাই জানে যে, শুধু ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের গ্রন্থাদি পাঠ করেই কেউ ডাক্তার হতে পারে না। প্রকৌশল বিষয়ক গ্রন্থাদি পাঠ করে কেউ প্রকৌশলী হতে পারে না। বড় বড় শাস্ত্রের কথা বাদ দিয়ে সাধারণ দৈনন্দিন কর্ম-পদ্ধতিও শুধু পুস্তক পাঠ করে, ওস্তাদের কাছে না শিখে কেউ অর্জন করতে পারে না। আজকাল প্রতিটি শিল্প ও কারিগরি বিষয়ে শত শত পুস্তক লিখিত হয়েছে, চিত্রের সাহায্যে কাজ শেখার পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এসব দেখে কেউ কোনদিন দর্জি, বাবুর্চি অথবা কর্মকার হতে পেরেছে কি? যদি শাস্ত্র অর্জন ও শাস্ত্রের পুস্তক বোঝার জন্য ভাষা শিখে নেওয়াই যথেষ্ট হতো, তবে যে ব্যক্তি সব শাস্ত্রীয় গ্রন্থের ভাষা জানে, সে জগতে সব শাস্ত্র অর্জন করতে পারত। এখন প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখতে পারে যে, সাধারণ শাস্ত্র বোঝার জন্য যখন ভাষাজ্ঞান যথেষ্ট নয়, ওস্তাদের প্রয়োজন; তখন কোরআনের বিষয়বস্তু যাতে ধর্মবিদ্যা থেকে শুরু করে পদার্থবিদ্যা, দর্শন ইত্যাদি সবই রয়েছে— শুধু ভাষাজ্ঞান দ্বারাই কেমন করে তা অর্জিত হতে পারে ? তাই যদি হতো, তবে যে আরবী ভাষা শেখে, তাকেই কোরআন তত্ত্ববিশারদ মনে করা হতো। আজও আরব দেশসমূহে হাজার হাজার ইহুদী খৃস্টান আরবী ভাষায় সুপণ্ডিত ও সাহিত্যিক রয়েছেন। তাঁরাও বড় বড় তফসীরবিদ বলে গণ্য হতেন এবং নবুয়তের যুগে আবূ লাহাব ও আবূ জহলকে কোরআন বিশারদ মনে করা হতো ।
মোটকথা, কোরআন একদিকে রসূল (সা)-এর কর্তব্যকর্মের মধ্যে আয়াত তিলাওয়াতকে স্বতন্ত্র কর্তব্য সাব্যস্ত করে এবং অন্যদিকে গ্রন্থ শিক্ষাদানকে পৃথক কর্তব্য সাব্যস্ত করে বলে দিয়েছে যে, কোরআন বোঝার জন্য শুধু তিলাওয়াত শুনে নেওয়াই আরবী ভাষাবিদের পক্ষেও যথেষ্ট নয়; বরং রসূলের শিক্ষাদানের মাধ্যমেই কোরআনী শিক্ষা সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জিত হতে পারে। কোরআনকে রসূলের শিক্ষাদান থেকে পৃথক করে নিজে বোঝার চিন্তা করা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। কোরআনের বিষয়বস্তু শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন না থাকলে রসূল প্রেরণেরও প্রয়োজন ছিল না; আল্লাহর গ্রন্থ অন্য কোন উপায়েও মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভবপর ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী। তিনি জানেন, জগতের অন্যান্য শাস্ত্রের তুলনায় কোরআনের বিষয়বস্তু শেখানো ও বোঝানোর জন্য ওস্তাদের প্রয়োজন অধিক। এ ব্যাপারে সাধারণ ওস্তাদও যথেষ্ট নন; বরং এসব বিষয়বস্তুর ওস্তাদ এমন ব্যক্তিই হতে পারেন, যিনি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কথাবার্তা বলার গৌরবে গৌরবান্বিত। ইসলামের পরিভাষায় তাঁকেই বলা হয় নবী ও রসূল। এ কারণে রসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জগতে প্রেরণের উদ্দেশ্য কোরআনে এরূপ সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, তিনি কোরআনের অর্থ ও বিধি-বিধান সবিস্তারে বর্ণনা করবেন। বলা হয়েছেঃ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ অর্থাৎ আপনাকে প্রেরণের লক্ষ্য এই যে, আপনি মানুষের সামনে আল্লাহ্ কর্তৃক নাযিলকৃত আয়াতসমূহের উদ্দেশ্য বর্ণনা করবেন। তাঁর কর্তব্যসমূহের মধ্যে কোরআন শিক্ষাদানের সাথে সাথে হেকমত শিক্ষাদানও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমি পূর্বেই বলেছি যে, আরবী ভাষায় যদিও হেকমতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে কিন্তু এ আয়াতে এবং এর সমার্থক অন্যান্য আয়াতে সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ‘হেকমতের’ তফসীর করেছেন রসূলের সুন্নাহ্। এতে বোঝা গেল যে, কোরআনের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া যেমন রসূলুল্লাহ (সা)-এর দায়িত্ব, তেমনি সুন্নাহ নামে খ্যাত পয়গম্বরসুলভ প্রশিক্ষণের নিয়ম-পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়াও তাঁর অন্যতম কর্তব্য। এ কারণেই মহানবী (সা) বলেছেনঃ إِنَّمَا بَعَثْتُ مُعَلِّماً (আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হয়েছি)। অতএব, শিক্ষক হওয়াই যখন রসূলুল্লাহ (সা)-এর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য, তখন তাঁর উম্মতের পক্ষেও ছাত্র হওয়া অপরিহার্য। এ কারণে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলার উচিত তাঁর শিক্ষাসমূহের আগ্রহী ছাত্র হওয়া। কোরআন ও সুন্নাহর পরিপূর্ণ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহস ও সময়ের অভাব হলে যতটুকু দরকার, ততটুকু অর্জনেই উদ্যোগী হওয়া কর্তব্য।

তৃতীয় উদ্দেশ্য পবিত্রকরণ

মহানবী (সা)-এর তৃতীয় কর্তব্য হচ্ছে পবিত্রকরণ। এর অর্থ বাহ্যিক ও আত্মিক না-পাকী থেকে পবিত্র করা। বাহ্যিক না-পাকী সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানরাও ওয়াকিফহাল। আত্মিক না-পাকী হচ্ছে কুফর, শিরক, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উপর পুরোপুরি ভরসা করা, অহংকার, হিংসা, শত্রুতা, দুনিয়া প্রীতি ইত্যাদি। কোরআন ও সুন্নাহতে এসব বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। পবিত্রকরণকে রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পৃথক কর্তব্য সাব্যস্ত করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন শাস্ত্র পুঁথিগতভাবে শিক্ষা করলেই তার প্রয়োগ ও পূর্ণতা অর্জিত হয় না। প্রয়োগ ও পূর্ণতা অর্জন করতে হলে গুরুজনের শিক্ষাধীনে থেকে তাঁর অনুশীলনের অভ্যাসও গড়ে তুলতে হয়। সূফীবাদে কামেল পীরের দায়িত্বও তাই। তিনি কোরআন ও সুন্নাহ্ থেকে অর্জিত শিক্ষাকে কার্যক্ষেত্রে অনুশীলন করে অভ্যাসে পরিণত করার চেষ্টা করেন।

হেদায়েত ও সংশোধনের দু’টি ধারা

আল্লাহর গ্রন্থ ও রসূলঃ এ প্রসঙ্গে আরও দু’টি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। প্রথম এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টির আদিকাল থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত মানুষের হেদায়েত ও সংশোধনের জন্যে দু’টি ধারা অব্যাহত রেখেছেন। একটি খোদায়ী গ্রন্থসমূহের ধারা এবং অপরটি রসূলগণের ধারা। আল্লাহ্ তা’আলা শুধু গ্রন্থ নাযিল করাই যেমন যথেষ্ট মনে করেন নি, তেমনি শুধু রসূল প্রেরণ করেও ক্ষান্ত হননি। বরং সর্বদা উভয় ধারা অব্যাহত রেখেছেন। এতদুভয় ধারা সমভাবে প্রবর্তন করে আল্লাহ্ তা’আলা একটি বিরাট শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তা এই যে, মানুষের নির্ভুল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য শুধু গ্রন্থ কিংবা শুধু শিক্ষাটাই যথেষ্ট নয় বরং একদিকে খোদায়ী হেদায়েত ও খোদায়ী সংবিধানেরও প্রয়োজন, যাকে কোরআন বলা হয় এবং অপরদিকে একজন শিক্ষাগুরুরও প্রয়োজন যিনি স্বীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে খোদায়ী হেদায়েতে অভ্যস্ত করে তুলবেন। কারণ, মানুষই মানুষের প্রকৃত শিক্ষাগুরু হতে পারে। গ্রন্থ কখনও গুরু বা অভিভাবক হতে পারে না। তবে শিক্ষা-দীক্ষায় সহায়ক অবশ্যই হতে পারে।
ইসলামের সূচনা একটি গ্রন্থ ও একজন রসূলের মাধ্যমে হয়েছে। এ দু’য়ের সম্মিলিত শক্তিই জগতে একটি সুস্থ ও উচ্চস্তরের আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনিভাবে ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যও একদিকে পবিত্র শরীয়ত ও অন্যদিকে কৃতী পুরুষগণ রয়েছেন। কোরআনও নানা স্থানে এ সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছে। এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

-“হে মু’মিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।” অন্যত্র সত্যবাদীদের সংজ্ঞা ও গুণাবলী বর্ণনা করে বলেনঃ

أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

-“তারাই সত্যবাদী এবং তারাই পরহেযগার।"

সমগ্র কোরআনের সারমর্ম হলো সূরা ফাতিহা। আর সূরা ফাতিহার সারমর্ম হলো সিরাতে-মুস্তাকীমের হেদায়েত। এখানে সিরাতে মুস্তাকীমের সন্ধান দিতে গিয়ে কোরআনের পথ, রসূলের পথ অথবা সুন্নাহর পথ বলার পরিবর্তে কিছু আল্লাহ্-ভক্তের সন্ধান দেওয়া হয়েছে যে, তাদের কাছ থেকে সিরাতে মুস্তাকীমের সন্ধান জেনে নাও। বলা হয়েছেঃ

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

অর্থাৎ– “সিরাতে-মুস্তাকীম হলো তাদের পথ, যাদের প্রতি আল্লাহ্ নেয়ামত বর্ষিত হয়েছে। তাদের পথ নয়, যারা গযবে পতিত ও গোমরাহ।” 

অন্য এক জায়গায় নেয়ামত প্রাপ্তদের আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ

 فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ 

-এমনিভাবে রসূলুল্লাহ্ (সা)-ও পরবর্তীকালের জন্য কিছুসংখ্যক লোকের নাম নির্দিষ্ট করে তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিরমিযীর রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ

يَأَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّواكـتـاب الله وعترتي اهل بیتی 

হে মানব জাতি, আমি তোমাদের জন্য দু’টি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। এতদুভয়কে শক্তভাবে আঁকড়ে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার সন্তান ও পরিবার-পরিজন। সহীহ্ বুখারীতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ 

اقْتَدُوا بِالَّذِينَ مِنْ بَعْدِي أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ 

অর্থাৎ- আমার পরে তোমরা আবূ বকর ও উমরের অনুসরণ করবে। 
অন্য এক হাদীসে আছে-

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ 

অর্থাৎ আমার সুন্নত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অবলম্বন করা তোমাদের কর্তব্য।
মোটকথা, কোরআনের উপরোক্ত নির্দেশ ও রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর শিক্ষা থেকে এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মানুষের হেদায়েতের জন্য সর্বকালেই দু’টি বস্তু অপরিহার্য। (১) কোরআনের হেদায়েত এবং (২) তা হৃদয়ঙ্গম করার জন্য ও আমলের যোগ্যতা অর্জনের জন্য শরীয়ত-বিশেষজ্ঞ ও আল্লাহ্-ভক্তদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের এ রীতি শুধু ধর্মীয় শিক্ষার বেলাতেই প্রযোজ্য নয়; বরং যে কোন বিদ্যা ও শাস্ত্র নিখুঁতভাবে অর্জন করতে হলে এ রীতি অপরিহার্য। একদিকে শাস্ত্র সম্বন্ধীয় উৎকৃষ্ট গ্রন্থাদি থাকতে হবে এবং অন্যদিকে থাকতে হবে শাস্ত্রবিদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। প্রত্যেক শাস্ত্রের উন্নতি ও পূর্ণতার এ দু’টি অবলম্বন থেকে উপকার লাভের ক্ষেত্রে বহু মানুষ ভুল পন্থার আশ্রয় নেয়। ফলে উপকারের পরিবর্তে অপকার এবং মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গলই ঘটে বেশি। কেউ কেউ কোরআনের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে শুধু ওলামা ও মাশায়েখকেই সবকিছু মনে করে বসে। তারা শরীয়তের অনুসারী কিনা, তারও খোঁজ নেয় না। এ রোগটি আসলে ইহুদী ও খৃস্টানদের রোগ। কোরআন বলেঃ

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ
অর্থাৎ-“তারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে ওলামা ও মাশায়েখকে স্বীয় উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে।” এটা নিঃসন্দেহে শিরক ও কুফরের রাস্তা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এ রাস্তায় বের হয়েছে এবং হচ্ছে। পক্ষান্তরে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা অর্জনের জন্য কোন ওস্তাদ ও অভিভাবকের প্রয়োজনই মনে করে না। তারা বলেঃ আল্লাহর কিতাব কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এটাও আরেক পথভ্রষ্টতা। এর ফল হচ্ছে ধর্মচ্যুত হয়ে মানবীয় প্রবৃত্তির শিকারে পরিণত হওয়া। কেননা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য ব্যতিরেকে শাস্ত্র অর্জন মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ কাজ এরূপ ব্যক্তি অবশ্যই ভুল বোঝাবুঝির শিকারে পরিণত হয়। এ ভুল বোঝাবুঝি কোন কোন সময় তাকে ধর্মচ্যুতও করে দেয়।

এ কারণে উপরোক্ত দু’টি অবলম্বনকে যথাস্থানে বজায় রেখে তা থেকে উপকার লাভ করা দরকার। মনে করতে হবে যে, আসল নির্দেশ একমাত্র আল্লাহর। প্রকৃত আনুগত্য তাঁরই, আমল করা ও করানোর জন্য রসূল হচ্ছেন একটি উপায়। রসূলের আনুগত্য এদিক দিয়েই করা হয় যে, তা হুবহু আল্লাহর আনুগত্য। এছাড়া কোরআন ও হাদীস বোঝা ও আমল করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলোর সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের উক্তি ও কর্ম থেকে সাহায্য নেওয়াকে সৌভাগ্য ও মুক্তির কারণ মনে করা কর্তব্য। উল্লিখিত আয়াতে কিতাবের শিক্ষাদানকে রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত করায় আরও একটি বিষয় বোঝা যায়। তা হলো এই যে, কোরআনকে বোঝার জন্য যখন রসূলের শিক্ষাদান অপরিহার্য এবং এ ছাড়া যখন সঠিকভাবে কোরআনের উপর আমল করা অসম্ভব, তখন কোরআন ও কোরআনের যের-যবর যেমন কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত, তেমনি রসূলের শিক্ষাও সমষ্টিগতভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। নতুবা শুধু কোরআন সংরক্ষিত থাকলেই কোরআন অবতরণের আসল উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না। রসূলের শিক্ষা বলতে সুন্নাহ্ ও হাদীসকে বোঝায়। তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে হাদীস সংরক্ষণের ওয়াদা কোরআন সংরক্ষণের ওয়াদার মত জোরদার নয়। কোরআন সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

অর্থাৎ “আমিই কোরআন নাযিল করেছি এবং আমিই এর হেফাযত করব।
এ ওয়াদার ফলেই কোরআনের প্রতিটি যের ও যবর পর্যন্ত সম্পূর্ণ সংরক্ষিত রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। সুন্নাহর ভাষা যদিও এভাবে সংরক্ষিত নয়, কিন্তু সমষ্টিগতভাবে সুন্নাহ্ এবং হাদীসেরও সংরক্ষিত হওয়া উল্লিখিত আয়াতদৃষ্টে অপরিহার্য। বাস্তবে সুন্নাহ্ এবং হাদীসও সংরক্ষিত রয়েছে। যখনই কোন পক্ষ থেকে এতে কোন বাধা সৃষ্টি অথবা মিথ্যা রেওয়ায়েত সংমিশ্রিত করা হয়েছে, তখনই হাদীস বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে এসেছেন এবং দুধ ও পানিকে পৃথক করে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এ কর্মধারাও অব্যাহত থাকবে। রসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, আমার উম্মতে কিয়ামত পর্যন্ত সত্যপন্থী এমন একদল আলেম থাকবেন, যাঁরা কোরআন ও হাদীসকে বিশুদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত রাখবেন এবং সকল বাধা-বিপত্তির অবসান ঘটাবেন।

মোটকথা, কোরআন বাস্তবায়নের জন্য রসূলের শিক্ষা অপরিহার্য। কোরআনের বাস্তবায়ন কিয়ামত পর্যন্ত ফরয। কাজেই রসূলের শিক্ষাও কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকা অবশ্যম্ভাবী। অতএব, উল্লিখিত আয়াতে কিয়ামত পর্যন্ত রসূলের শিক্ষা সংরক্ষিত হওয়ারও ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত একে হাদীস বিশারদ ওলামা ও বিশুদ্ধ গ্রন্থাদির মাধ্যমে সংরক্ষিত রেখেছেন। সাম্প্রতিককালে কিছু লোক ইসলামী বিধি-বিধান থেকে গা বাঁচানোর উদ্দেশ্যে একটি অজুহাত আবিষ্কার করেছে যে, হাদীসের বর্তমান ভান্ডার সংরক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য নয়। উপরোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের ধর্মদ্রোহিতার স্বরূপই ফুটে উঠেছে। তাদের বোঝা উচিত যে, হাদীসের ভাণ্ডার থেকে আস্থা উঠে গেলে কোরআনের উপরও আস্থা রাখার উপায় থাকে না।

সংশোধনের নিমিত্ত বিশুদ্ধ শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, চারিত্রিক প্রশিক্ষণও আবশ্যক

পবিত্রকরণকে একটি স্বতন্ত্র কর্তব্য সাব্যস্ত করার মধ্যে ইঙ্গিত দান করা হয়েছে যে, শিক্ষা যতই বিশুদ্ধ হোক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুরুব্বীর অধীন কার্যত প্রশিক্ষণ লাভ না করা পর্যন্ত শুধু শিক্ষা দ্বারাই চরিত্র সংশোধিত হয় না। কারণ, শিক্ষার কাজ হলো প্রকৃতপক্ষে সরল ও নির্ভুল পথপ্রদর্শন। এ কথা সুস্পষ্ট যে, পথ জানা থাকাই গন্থব্যস্থলে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট নয়। এ জন্য সাহস করে পা বাড়াতে হবে এবং চলতেও হবে। সাহসী বুযুর্গদের সংসর্গ ও আনুগত্য ছাড়া সাহস অর্জিত হয় না। সাহস না করলে সবকিছু জানা ও বোঝার পরও অবস্থা দাঁড়ায় এরূপঃ

جانتاہوں ثواب طاعت و زهد
پھر طبیعت ادھر نہیں آتی

(আনুগত্য ও পরহেযগারীর সওয়াব জানি; কিন্তু কি করব, মন যে এ পথে আসে না।)
আমলের সাহস ও শক্তি গ্রন্থ পাঠে অর্জিত হয় না। এর একটিমাত্র পথ আল্লাহ্ ভক্তদের সংসর্গ এবং তাদের কাছ থেকে সাহসের প্রশিক্ষণ লাভ করা। একেই বলে তাযকিয়া তথা পবিত্রকরণ। কোরআন এ বিষয়টিকেই রিসালাতের স্বতন্ত্র কর্তব্য সাব্যস্ত করে ইসলামী শিক্ষার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। কারণ, শুধু শিক্ষা ও বাহ্যিক সভ্যতাকে প্রত্যেক জাতি ও প্রত্যেক ধর্মেই কোন না কোন আকারে সম্পূর্ণ অথবা অসম্পূর্ণ পন্থায় অত্যাবশ্যকীয় মনে করা হয়। প্রত্যেক ধর্ম ও সমাজে একে অন্যতম মানবিক প্রয়োজন হিসাবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে ইসলামের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য এই যে, সে নির্ভুল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা পেশ যা মানুষ ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে এবং চমৎকার জীবনব্যবস্থা উপস্থাপন করে। অন্যান্য জাতি ও ধর্মে এর নজীর খুঁজে পাওয়া যায় না। এর সাথে সাথে চরিত্র সংশোধন ও আত্মিক পবিত্রকরণ এমন একটি কাজ, যা অন্যান্য ধর্মে ও সম্প্রদায়ে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। তারা শিক্ষার ডিগ্রীকেই মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি মনে করে । এসব ডিগ্রীর ওজনের সাথে সাথে মানুষের ওজন বাড়ে ও কমে। ইসলাম, শিক্ষার সাথে পবিত্রকরণের বক্তব্য যোগ করে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ করে দেখিয়েছে।

যেসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সামনে শিক্ষা অর্জন করেছেন, শিক্ষার সাথে সাথে তাঁদের আত্মিক পরিশুদ্ধিও সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে তাঁর প্রশিক্ষণাধীনে সাহাবীগণের যে একটি দল তৈরি হয়েছিল, একদিকে তাঁদের জ্ঞান-বুদ্ধির গভীরতা ছিল বিস্ময়কর, বিশ্বের দর্শন তাঁদের সামনে হার মেনেছিল এবং অন্যদিকে তাঁদের আত্মিক পবিত্রতা, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক এবং আল্লাহর উপর ভরসাও ছিল অভাবনীয়। স্বয়ং কোরআন তাদের প্রশংসায় বলেঃ

وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا .

অর্থাৎ-“যারা পয়গম্বরের সঙ্গে রয়েছে, তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং পরস্পর সদয় । তুমি তাদের রুকূ-সিজদা করতে দেখবে। তারা আল্লাহর কৃপা ও সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে।
এ কারণেই তাঁরা যে দিকে পা বাড়াতেন, সাফল্য ও কৃতকার্যতা তাঁদের পদ চুম্বন করত এবং আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থন তাঁদের সাথে থাকত। তাঁদের বিস্ময়কর কীর্তিসমূহ আজও জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার মস্তিষ্ককে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। বলা বাহুল্য, এগুলো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণেরই ফল। বর্তমান পৃথিবীতে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পাঠ্যসূচী পরিবর্তনের চিন্তা সবাই করেন। কিন্তু শিক্ষার প্রাণ সংশোধনের দিকে মোটেই মনোযোগ দেওয়া হয় না। অর্থাৎ শিক্ষক ও গুরুর চারিত্রিক সংশোধন এবং সংস্কারক-সুলভ প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয় না। ফলে হাজারো চেষ্টা-যত্নের পরও এমন কৃতী পুরুষের সৃষ্টি হয় না, যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও বলিষ্ঠতা অন্যের উপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং অন্যকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে।

একথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষকেরা যে ধরনের জ্ঞান ও চরিত্রের অধিকারী হবেন, তাদের শিক্ষাধীন ছাত্ররাও সে ধরনের জ্ঞান ও চরিত্রের অধিকারী হতে পারবে। এ কারণে শিক্ষাকে কল্যাণকর ও উন্নত করতে হলে পাঠ্যসূচীর পরিবর্তন-পরিবর্ধনের চাইতে শিক্ষকদের শিক্ষাগত, কর্মগত ও চরিত্রগত অবস্থার দিকে বেশি করে নজর দেওয়া আবশ্যক।

এ পর্যন্ত নবুয়ত ও রিসালতের তিনটি উদ্দেশ্য বর্ণিত হলো। পরিশেষে সংক্ষেপে আরও জানা প্রয়োজন যে, রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উপর অর্পিত তিনটি কর্তব্য তিনি কতদূর বাস্তবায়ন করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর সাফল্য কতটুকু হয়েছে ? এর জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, তাঁর তিরোধানের সময় সমগ্র আরব উপত্যকার ঘরে ঘরে কোরআন তিলাওয়াত হতো। হাজার হাজার হাফেজ ছিলেন। শত শত লোক দৈনিক অথবা প্রতি তৃতীয় দিনে কোরআন খতম করতেন। কোরআন ও হিকমত শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল।

یتیمے که ناکرده قرآن درست * کتب خانه چند ملت بشست

সেই ব্যক্তি প্রকৃত অনাথ যে ঠিকমত কোরআন পাঠে সক্ষম নয়।

বিশ্বের সমগ্র দর্শন কোরআনের সামনে নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিল। তওরাত ও ইন্‌জীলের বিকৃত সংকলনসমূহ গল্প-কাহিনীতে পর্যবসিত হয়েছিল, কিন্তু কোরআনের নীতিমালাকে সম্মান ও শিষ্টাচারের মানদণ্ড বলে গণ্য করা হতো। অপরদিকে ’তাযকিয়া’ তথা পবিত্রকরণও চরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল। এককালের দুশ্চরিত্র ব্যক্তিরাও চরিত্র দর্শনের শ্রেষ্ঠ গুরুত্ব আসনে আসীন হয়েছিলেন। চরিত্রহীনতার রোগীরা শুধু রোগমুক্তই হয়নি। সফল চিকিৎসকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। যারা দস্যু ছিল তারা পথপ্রদর্শক হয়ে গেল। মূর্তিপূজারীরা মূর্তমান ত্যাগ ও সহানুভূতিশীল হয়ে গিয়েছিল। কঠোরতা ও যুদ্ধলিপ্সার স্থলে নম্রতা ও পারস্পরিক শান্তি বিরাজমান ছিল। এক সময় ডাকাতিই যাদের পেশা ছিল, তারাই মানুষের ধন-সম্পদের রক্ষকে পরিণত হয়েছিল।
মোটকথা, হযরত খলীলুল্লাহ্ (আ)-এর দোয়ার ফলে যে তিনটি কর্তব্য রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উপর অর্পিত হয়েছিল, তাতে তিনি স্বীয় জীবদ্দশায়ই পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর সহচরগণ এগুলোকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে তথা সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত করে দেন।

فصلى الله عليه وعلى اله واصحابه اجمعين وسلم تسليما كثيرا بعدد من صلى وصام وقعد وقام



*************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url