আয়েশা (রাঃ) -এর ঘরে হাদীয়া প্রেরণ || আয়েশার (রাঃ) জন্য নবী (সাঃ) এর দু'আ || কার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট?






আয়েশা (রাঃ) -এর ঘরে হাদীয়া প্রেরণ

ইবনু আবী খাইসামা বর্ণনা করেন- রমিসা বিনতে হারেস হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) -এর বিবিগণ উম্মু সালামা (রাঃ) -কে বললেন, আপনি রাসূল (সাঃ) -কে বলুন, মানুষেরা আয়েশা (রাঃ) -এর পালার সময় বেশি বেশি হাদীয়া পাঠায়। রাসূল (সাঃ) লোকদের যেন বলে দেন, সবার পালার সময় যেন হাদীয়া পাঠায়। কেননা, আয়েশা (রাঃ) যেমন কল্যাণ পছন্দ করেন আমরাও নিশ্চয় তেমন কল্যাণ পছন্দ করি । উম্মু সালামা যখন রাসূল (সাঃ) -এর নিকট এসে কথাগুলো বললেন, রাসূল (সাঃ) তখন মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল যে, রাসূল (সাঃ) কি বলেছেন? উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তারা সকলে উম্মে সালামা (রাঃ)-কে বলল, আবার যেয়ে বলো। উম্মে সালামা পুনরায় সেই কথাগুলো বললে রাসূল (সাঃ) তাকে বললেনঃ হে উম্মে সালামা আয়েশার ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিবে না। আল্লাহ আয়েশার লেপের নিচে ছাড়া তোমাদের কারো নিকটেই ওহি অবতীর্ণ করেননি।
   

আবু আমর ইবনু সিমাক বর্ণনা করেনঃ আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে স্বতন্ত্রের জন্য অন্যান্য স্ত্রীদের নিকট গর্ব করতাম। একমাত্র আমাকে কুমারী বিবাহ করেন, আমার ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে কুরআন অবতীর্ণ হয়নি । পবিত্র কুরআনে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করা হয়েছে ।


আয়েশার (রাঃ) জন্য নবী (সাঃ) এর দু'আ

ইমাম তাবরানী বাসার ইবনু হিব্বান (রহ) নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেন, আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) -কে প্রফুল্ল দেখলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) -আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দো’আ করুন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আয়েশার আগের ও পরের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ ক্ষমা করে দিন।

দু'আ শুনে আয়েশা (রাঃ) হেসে দিলেন।  এমন হাসলেন যে, বালিশ থেকে মাথা পড়ে গেল । তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ আমার দু'আ তোমাকে আনন্দিত করেছে? আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ কি বলেন, আপনার দু'আ আমাকে আনন্দিত করবে না? নবী (সাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ এ দু'আ আমি প্রত্যেক নামাযে আমি আমার উম্মতের জন্য করি ।


কার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট?

ইবনু আসাকীর (রহ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার ও রাসূল (সাঃ) -এর মাঝে কোনো বিষয়ে কথা কাটা-কাটি হয়। নবী (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) -কে বললেন, আমার ও তোমার মাঝে ফয়সালার জন্য কাকে ডাকবো। কার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট? তুমি কী উমরের ফয়সালা মানবে? আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ না, ওমর রূঢ় হৃদয়ের অধিকারী। নবী (সাঃ) বললেনঃ তোমার ও আমার মাঝে ফায়সালার জন্য তোমার বাবাকে পছন্দ কর? আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, রাসূল (সাঃ) লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন। আবু বকর (রাঃ) আসলে রাসূল (সাঃ) তাঁকে বললেন, দেখুন সে এগুলো ঘটিয়েছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ আল্লাহকে ভয়  করুন সত্য ব্যতীত বাড়িয়ে বলবেন না ।

এ কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) আমার নাক ভেঙ্গে দেয়ার জন্য হাত উঠালেন এবং বললেন, হে উম্মে রুমানের মেয়ে; বরং তুমি সত্য বল এবং তোমার বাবা সত্য বলুক। আর রাসূল (সাঃ) - এর ব্যাপারে এরূপ বলবে না। তবে তিনি আমার কথা কেড়ে নিলেন। মনে হলো তারা দুজন একপক্ষ হয়ে গেলেন। তখন রাসূল ( সাঃ) বললেনঃ (আবু বকর) তোমাকে এজন্য ডেকে আনিনি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্য হতে একটি খেজুরের ডাল নিয়ে আমাকে মারতে লাগলেন আর আমি তার কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাসূল (সাঃ) -এর শরীর ঘেষে দাঁড়ালাম। রাসূল (সাঃ) বলেন, আবু বকর!  তুমি কি জন্য বের হয়ে যাচ্ছ না নিশ্চয় আমি তোমাকে এজন্য ডাকিনি। যখন আবু বকর (রাঃ) বের হয়ে গেলেন তখন আমিও রাসূল (সাঃ) -এর নিকট হতে সরে যেতে লাগলাম । রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তাকে ডাক । আমি তাকে ডাকতে অস্বীকার করলাম । তখন রাসূল (সাঃ) মুচকি হেসে বললেনঃ (কিছুক্ষণ) আগেই তো (মার থেকে বাঁচার জন্য) আমার পিঠের সাথে লেগে ছিলে।

ইমাম মুসলিম, নাসায়ী এবং দারাকুতনী (রহ) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল আমাকে বলেনঃ তুমি কখন রাগান্বিত থাক আর কখন স্বাভাবিক থাক তা আমি জানি। আমি বললাম, আপনি কিভাবে জানেন। তিনি বলেন, যখন তুমি সন্তুষ্ট (স্বাভাবিক) থাক তখন বল: মুহাম্মদের প্রভুর কসম আর যখন আমার ওপর রাগান্বিত থাক তখন বল: ইব্রাহীমের প্রভুর কসম। আমি বললামঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। এর পর থেকে আপনার নাম আর ত্যাগ করবো না ।


আয়েশার (রাঃ) সাথে রাসূল (সাঃ)-এর দৌড় প্রতিযোগিতা

ইবনু আবী শায়বা, আবু দাউদ নাসায়ী প্রমুখ সহীহ সনদে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কোনো এক সফরে রাসূল (সাঃ) -এর সাথে ছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, আস আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি। এতে আমি তাঁর অগ্রগামী হই। এর পরবর্তীতে আবার দৌড় প্রতিযোগিতা দেই তখন আমি একটু মোটা হয়েছিলাম । এবার রাসূল (সাঃ) অগ্রগামী হয়ে বললেনঃ হে আয়েশা! এটা ঐ বারের প্রতিশোধ ।


নবী (সাঃ) আয়েশার (রাঃ) জন্য দাড়িয়ে খেলা দেখেছিলেন

ইমাম তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু আদীসহ অন্যান্যরাও আয়েশা হতে বর্ণনা করেন । তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বসেছিলেন এমন সময় শিশুদের আওয়াজ শুনা গেল । অন্য বর্ণনা মতে, নারী ও শিশুরা বের হলো রাসূল (সাঃ) উঠে দেখলেন হাবশী শিশুরা নৃত্য করছে ।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তারা মসজিদে বর্শা নিয়ে খেলছে আর শিশুরা চারদিকে ঘিরে রয়েছে । রাসূল (সাঃ) বললেন, আয়েশা আমার সাথে আস এবং দেখ। আর ইমাম নাসায়ী (রহ)-এর বর্ণনা মতে, হে হুমায়রা। তুমি কি তাদের খেলা দেখতে পছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, তখন আমি আমার থুতনি রাসূল (সাঃ)-এর কাধেঁ রাখলাম আর তিনি আমাকে আড়াল করে রাখলেন। আমি তার মাথা ও কাধের মাঝ দিয়ে খেলা দেখতে লাগলাম । আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলতে লাগলেন, হে আয়েশা! তোমার দেখা হয়েছে? তোমার দেখা হয়েছে? অন্য শব্দে বলা হয়েছে তোমার দেখা কী যথেষ্ট হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাড়াহুড়া করবেন না। রাসূল (সাঃ) দাঁড়িয়ে রইলেন, কিছুক্ষণ পর আবার বললেনঃ আয়েশা যথেষ্ট হয়েছে কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাড়াহুড়া করবেন না । তাদের খেলা দেখতে আমার ভালো লাগছে । 

বারকানী আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) আমার নিকট আসলেন। এসময় আমার নিকট দুটি বালিকা "বুয়াস" যুদ্ধের গান গাচ্ছিল। আমি তাদের দিকে মুখ করে বিছানায় শুয়েছিলাম। আর সেখানে আবু বকর (রাঃ) আসলেন এবং আমাকে ধমকাতে লাগলেন এবং গান গাওয়া দেখে বললেনঃ নবী (সাঃ)-এর সামনে শয়তানের বাঁশি বাজানো হচ্ছে? রাসূল (সাঃ) তার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আবু বকর! তাদেরকে গাইতে দাও । যখন তাদেরকে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন তখন তারা চলে গেল ।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি ঢাল ও বর্শা নিয়ে খেলছে। রাসূল (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে তার পেছনে নিয়ে দাঁড়ালেন। এক সময় রাসূল (সাঃ) ক্লান্তিবোধ করলেন এবং বললেন, হে আরফাদের মেয়ে! তোমার কী অবস্থা, যথেষ্ট হলো কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তবে যাও ।






****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url