জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর পরিচয়-৮



আল কুরআনে আল্লাহ পাকের পরিচয়


আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহ কেমন? আল্লাহ এই পৃথিবী কেন তৈরী করেছেন? আল্লাহ কিভাবে এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কিভাবে লালন পালন করছেন? আল্লাহ কোথায় থাকেন? আল্লাহর গুণাবলী কেমন? আল্লাহর ক্ষমতা বা শক্তি কেমন? 

এসব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র কুরআনে বিশদভাবে তাঁর পরিচয় তুলেছেন। কমপক্ষে ১৩১টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন।আমরা ধারাবাহিকভাবে সেসব আয়াতের অর্থ  তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো।এসব আয়াতে বিশ্বাসীদর জন্য রয়েছে নিদর্শন।


৭৫. আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। অবশ্যই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। 
৭৬. তাদের সামনে এবং পেছনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন। আর সবকিছু আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।
আল-বায়ান

75. Allah chooses from the angels messengers and from the people. Indeed, Allah is Hearing and Seeing. 
76. He knows what is [presently] before them and what will be after them. And to Allah will be returned [all] matters.
Sahih International

৭৫. আল্লাহ ফিরিশতাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেন রাসূল এবং মানুষের মধ্য থেকেও(১); নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।(২)

(১) পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাঁর নিজের পূর্ণতা ও মূর্তিদের দুর্বলতা বর্ণনা করলেন, আর এও বর্ণনা করলেন যে তিনিই একমাত্র মা’বুদ, এ আয়াতে তাঁর রাসূলদের অবস্থা বর্ণনা করছেন। তারা সমস্ত সৃষ্টি থেকে আলাদা প্রকৃতির। তাদের রয়েছে ভিন্ন বিশেষত্ব। [সা’দী]

(২) অর্থাৎ যিনি রাসূলদেরকে পছন্দ করে নিয়েছেন তিনি এমন নন যে, তাদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বেখবর। বরং তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রকাশ্য ও গোপন অবস্থা একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি জানেন কোথায় তাঁর রিসালাত রাখতে হবে আর কে এর জন্য অধিক উপযুক্ত। তিনি রাসূলদের পাঠান, ফলে তাদের কেউ কেউ এতে সাড়া দেয়, আর কেউ দেয় না। কিন্তু রাসূলদের দায়িত্ব এখানেই শেষ। তারপরই তারা আল্লাহর দরবারে ফিরে যাবে। সেখানেই তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিফল পাবে। [সা'দী]


৭৬. তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং সব বিষয়ই আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।(১)

(১) তারা যা করেছে এবং যা কল্যাণকর ছিল অথচ তারা করেনি এসবই আল্লাহ জানেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর আমরা লিখে রাখি যা তারা আগে পাঠায় ও যা তারা পিছনে রেখে যায়।” [সূরা ইয়াসীনঃ ১২]

তাফসীরে জাকারিয়া
=========================================================================


৮৪. বল, ‘তোমরা যদি জান তবে বল, ‘এ যমীন ও এতে যারা আছে তারা কার?’ 
৮৫. অচিরেই তারা বলবে, ‘আল্লাহর’। বল, ‘তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’
৮৬. বল, ‘কে সাত আসমানের রব এবং মহা আরশের রব’?
৮৭. তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?’
৮৮. বল, ‘তিনি কে যার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর ওপর কোন আশ্রয়দাতা নেই?’ যদি তোমরা জান।
৮৯. তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কীভাবে তোমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছ?’
৯০. বরং আমি তাদের কাছে সত্য পৌঁছিয়েছি, আর নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
৯১. আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!
৯২. তিনি গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী, তারা যা শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।
আল-বায়ান

84. Say, [O Muhammad], "To whom belongs the earth and whoever is in it, if you should know?" 
85. They will say, "To Allah." Say, "Then will you not remember?
86. Say, "Who is Lord of the seven heavens and Lord of the Great Throne?
87. They will say, "[They belong] to Allah." Say, "Then will you not fear Him?
88. Say, "In whose hand is the realm of all things - and He protects while none can protect against Him - if you should know?
89. They will say, "[All belongs] to Allah." Say, "Then how are you deluded?
90. Rather, We have brought them the truth, and indeed they are liars.
91. Allah has not taken any son, nor has there ever been with Him any deity. [If there had been], then each deity would have taken what it created, and some of them would have sought to overcome others. Exalted is Allah above what they describe [concerning Him].
92. [He is] Knower of the unseen and the witnessed, so high is He above what they associate [with Him].
Sahih International

৮৪. বলুন, যমীন এবং এতে যা কিছু আছে এগুলো(র মালিকানা) কার? যদি তোমরা জান (তবে বল)।

৮৫. অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহর। বলুন, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্ৰহণ করবে না?

৮৬. বলুন, সাত আসমান ও মহা-আরশের রব কে?

৮৭. অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?

৮৮. বলুন, কার হাতে সমস্ত বস্তুর কর্তৃত্ব? যিনি আশ্রয় প্রদান করেন অথচ তাঁর বিপক্ষে কেউ কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না(১), যদি তোমরা জান (তবে বল)।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা যাকে আযাব, মুসীবত ও দুঃখ-কষ্ট থেকে আশ্রয় দান করেন কারও সাধ্য নেই যে তার কোন অনিষ্ট করে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা’আলা যদি কাউকে বালা-মুসিবস, দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হতে দেন তবে কারও সাধ্য নেই যে, তার মোকাবেলায় কাউকে আশ্রয় দিয়ে তাঁর আযাব থেকে বাঁচিয়ে নেয়। দুনিয়ার দিক দিয়েও এ কথা সত্য যে, আল্লাহ যার উপকার করতে চান, তাকে কেউ বাধা দিতে পারে না এবং যাকে কষ্ট ও আযাব দিতে চান, তা থেকেও কেউ তাকে বাঁচাতে পারে না। আখিরাতের দিক দিয়েও এই বিষয়বস্তু নির্ভুল যে, যাকে তিনি আযাব দেবেন, তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না এবং যাকে জান্নাত ও সুখ দেবেন, তাকে কেউ ফেরাতে পারবে না। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ সুপারিশও করতে পারবে না। [দেখুন: সা'দী]

৮৯. অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। বলুন, তাহলে কোথা থেকে তোমরা জাদুগ্ৰস্থ হচ্ছে?

৯০. বরং আমরা তো তাদের কাছে হক নিয়ে এসেছি; আর নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী(১)

(১) অর্থাৎ আল্লাহর জন্য যে সঙ্গিনী ও সন্তান সাব্যস্ত করছে। এ ব্যাপারে তারা নির্লজ্জ মিথ্যা বলছে। অনুরূপভাবে তাঁর জন্য যে তারা শরীক সাব্যস্ত করছে তাতেও তারা মিথ্যাবাদী। [ফাতহুল কাদীর]

৯১. আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত।(১) তারা যে গুণে তাকে গুণান্বিত করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্ৰ-মহান!

(১) অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন শক্তির ও বিভিন্ন অংশের স্রষ্টা ও প্ৰভু যদি আলাদা আলাদা ইলাহ হতো তাহলে তাদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বজায় থাকতো না। বিশ্ব-জাহানের নিয়ম শৃংখলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একজন একক আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবাৰ্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। আর এ মতবিরোধ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ পর্যন্ত না পৌছে ছাড়তো না। অন্যত্র বলা হয়েছেঃ যদি পৃথিবী ও আকাশে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ থাকতো তাহলে এ উভয়ের ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতো। [সূরা আল-আম্বিয়ঃ ২২] আরও বলা হয়েছেঃ “যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো, যেমন লোকেরা বলে,তাহলে নিশ্চয়ই তারা আরশের মালিকের নৈকট্যলাভের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত থাকত।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৪২]

৯২. তিনি গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞাণী, সুতরাং তারা যা কিছু শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।

তাফসীরে জাকারিয়া
==================================================================================================================================


সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আরও বেশি মানুষের কাছে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছে দিতে শেয়ার ও কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url