মহৎ ও নেক কাজে বিনিয়োগ করুন

 মহৎ ও নেক কাজে লাভ জনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন



আসসালামু আ’লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু....

দেশ ও বিদেশে থাকা সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা, দুনিয়ার লাভের জন্য আমরা তো সম্ভব সবকিছুই করছি। আমাদের নিজেদের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর করতে, পরিবারের আপনজনদেরকে দুনিয়ায় ভাল রাখতে কত কিছুই না করছি। কিন্তু আমাদের সামনে রয়েছে অনন্ত এক পরকালের জীবন। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যাক্তি পরকালের জীবন সম্পর্কে ধারণা পেতে চায় সে যেন সাগরের কাছে গিয়ে একটি আঙ্গুল ডুবিয়ে দেয়, তার আঙ্গুলের মাথায় যে পরিমাণ পানি আসবে সেটাই হচ্ছে দুনিয়া। আর ঐ সাগর-মহাসাগর হচ্ছে পরকালের জীবন। সেই অনন্ত মহাকালের জন্য আসুন আমরা আমাদের উপার্জিত সম্পদ থেকে সামান্য কিছু হলেও পরকালের জন্য লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করি।

আমাদের সেই লাভজনক ব্যবসা ‍কি?

আমাদের সেই লাভজনক ব্যবসাটি হচ্ছে “কর্জে হাসানা”। “কর্জে হাসানা” এমন একটি আমল এমন একটি লাভ জনক ব্যবসা যে আমল বা ব্যবসার লাভ পৃথিবীর সমস্ত লাভের চেয়েও উত্তম। এমন কি দান সাদাকার চেয়েও উত্তম এবং বেশি নেকি লাভের আমল হচ্ছে “কর্জে হাসানা”। 

কর্জে হাসানা কি?

কর্জে হাসানা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াবের আশায় কাউকে কোনো ধরনের লাভ ছাড়া নিঃশর্ত ঋণ দেওয়া। অভাবগ্রস্ত লোকদের অর্থ ধার দিয়ে তাদের সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া এবং মানুষকে কষ্ট ও দুর্দশার সময়ে সাহায্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি মহান ফজিলতপূর্ণ কাজ। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময় তাঁর প্রিয় সাহাবিদের কর্জে হাসানার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তেমনি যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

কর্জে হাসানার ফজিলত  

কাউকে কোনো ধরনের বিনিময় ছাড়া নিঃশর্ত ঋণ দেওয়া মূলত আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার শামিল। অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রফুল্লভাবে এবং মুখে হাসি নিয়ে মানুষকে অর্থ ধার দেয় এবং ধার দেওয়ার পর গ্রহীতার প্রতি অনুগ্রহ করে, ক্ষতি করে না ও কষ্ট দেয় না এবং ঋণ পরিশোধের জন্য বিনা কারণে হয়রানি করে না, প্রকৃতপক্ষে সে যেন আল্লাহকে ঋণ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বহুগুণ বৃদ্ধি করে এর প্রতিদান দেবেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে কর্জ দেবে উত্তম কর্জ? অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন’ (সুরা বাকারা : ২৪৫)। এ আয়াতে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। তন্মধ্যে এক অর্থ হলো, তাঁর বান্দাদের ঋণ দেওয়া এবং তাদের অভাব দূর করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভূত করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার ত্রুটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্যে  নিয়োজিত থাকেন’ (মুসলিম : ৬৬০৮)।

কর্জে হাসানার সওয়াব 

বিভিন্ন হাদিসে নিঃশর্ত ঋণ দেওয়াকে সদকা বলে গণ্য করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঋণই সদকাস্বরূপ’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান : ৩২৮৫)। আরও বলেছেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে দুইবার কর্জ দেয়, সে ওই পরিমাণ সম্পদ একবার সদকা করে দেওয়ার সওয়াব পায়’ (ইবনে মাজা : ২৪৩০)। সাধারণত কোনো নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ তায়ালা কমপক্ষে দশগুণ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কর্জে হাসানার সওয়াব এর চেয়েও বেশি দিয়ে থাকেন। হজরত আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমি জান্নাতের একটি দরজার ওপর লেখা দেখলাম, সদকায় ১০ গুণ সওয়াব এবং কর্জে (ঋণে) ১৮ গুণ। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! কর্জ সদকার চেয়ে উত্তম কেন? তিনি বললেন, কারণ ভিক্ষুক তার কাছে (সম্পদ) থাকতেও চায়। আর কর্জদার প্রয়োজন ছাড়া কর্জ চায় না’ (ইবনে মাজা : ২৪৩১)।


প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা

সমাজ থেকে সুদকে নির্মূল করার জন্য শুধু ধর্মীয় শিক্ষা ও ওয়াজ নসীহতই যথেষ্ট নয়। সুদের বিকল্প ঋণ ব্যবস্থা কর্জে হাসানা” চালু করতে হবে। সুরা মুজ্জাম্মিলের ২০ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও আর আল্লাহকে দাও কর্জে হাসানা। তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য তোমরা যা কিছু ভালো আগে পাঠাবে, পরিবর্তে তোমরা তার চেয়ে আরও ভালো ও বড় পুরস্কার পাবে আল্লাহর কাছ থেকে। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, আল্লাহর কাছে। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

সুদের মারাত্মক কুফল সম্পর্কে আরও পড়ুন-

সুরা হাদিদের ১৮ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘দানশীল পুরুষ ও নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি আর তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।’

সুরা হাদিদের ১১ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি বহুগুণে একে তার জন্য বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।’ একই সুরার ১৮ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘দানশীল পুরুষ ও নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি আর তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।’

আর সুরা তাগাবুনের ১৭ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন, আর তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তো গুণগ্রাহী, সহিষ্ণু।’

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, সমাজ থেকে সুদকে নির্মূল করতে আমরা কর্জে হাসানা” প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছি। আপনিও আমাদের সাথে থাকুন এবং কর্জে হাসানা” প্রকল্পে বিনিয়োগ করুন।

আপনি দুইভাবে কর্জে হাসানা” প্রকল্পে বিনিযোগ করতে পারেন

১।    কর্জে হাসানা” প্রকল্পের জন্য স্থায়ী কর্জে হাসানা ফান্ড গঠনের লক্ষ্যে এখানে যে কেউ যে কোন পরিমাণের অর্থ দান করতে পারেন। আপনার এই টাকা দিয়ে (আল্লাহ চাইলে) অনন্তকাল ধরে মানুষকে কর্জে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। আপনি অনন্তকাল ধরে এর নেকি পাবেন।

২।    ইচ্ছে করলে আপনি কর্জে হাসানা ফান্ডে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ বা কর্জে হাসানা দিতে পারেন। তবে সেই ঋণ অবশ্যই কমপক্ষে এক বছর মেয়াদের জন্য হতে হবে। মেয়াদান্তে নির্দিষ্ট দিনে আপনার নামে বা আপনার মনোনিত ব্যক্তির নামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

*    কর্জে হাসানা ফান্ডে যারা বিনিয়োগ করবেন (উপরের দুই ভাবে) তাদের নাম ও টাকার পরিমান, ফান্ডের মোট স্থিতি সব বিষয়ে এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জানিয়ে দেওয়া হবে।


কর্জে হাসানা কারা পাবেন?

বাংলাদেশের যেকোন ব্যক্তি এই ফান্ড থেকে কর্জে হাসানা গ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।  তবে তাকে 

* অবশ্যই মুসলিম হতে হবে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী হতে হবে।

* কর্জে হাসানার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিকে অবশ্যই তার এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে (উনি নিয়মিত নামাজী এ বিষয়ে) এবং তার পরিবারের একজন সদস্যের কাছ থেকে (উনার অবর্তমানে ঋণ পরিশোধে রাজি এ মর্মে)  লিখিত প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে হবে।

* এলাকার একজন জনপ্রতিনিধির নাম, মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা লিখতে হবে।

* নির্দিষ্ট দিনে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবেন মর্মে অঙ্গীকার পত্র জমা দিতে হবে।

** প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ছোট ব্যবসা ইত্যাদির জন্য কর্জে হাসানা প্রদান করা হবে।

 

কর্জে হাসানা ফান্ডে বিনিয়োগ পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করুনঃ

ই-মেলঃ mohammadiafoundationbd@gmail.com

নগদ ও বিকাশঃ 01817522716

আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন। আমিন।।

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url