জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর পরিচয়-৩



আল কুরআনে আল্লাহ পাকের পরিচয়


আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহ কেমন? আল্লাহ এই পৃথিবী কেন তৈরী করেছেন? আল্লাহ কিভাবে এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কিভাবে লালন পালন করছেন? আল্লাহ কোথায় থাকেন? আল্লাহর গুণাবলী কেমন? আল্লাহর ক্ষমতা বা শক্তি কেমন? 

এসব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র কুরআনে বিশদভাবে তাঁর পরিচয় তুলেছেন। কমপক্ষে ১৩১টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন।আমরা ধারাবাহিকভাবে সেসব আয়াতের অর্থ  তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো।এসব আয়াতে বিশ্বাসীদর জন্য রয়েছে নিদর্শন।

৩. আর আসমানসমূহ ও যমীনে তিনিই আল্লাহ, তিনি জানেন তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য এবং জানেন যা তোমরা অর্জন কর। আল-বায়ান

3. And He is Allah, [the only deity] in the heavens and the earth. He knows your secret and what you make public, and He knows that which you earn. 
Sahih International

৩. আর আসমানসমূহ ও যমীনে তিনিই আল্লাহ(১), তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর তাও তিনি জানেন।(২)

(১) এ আয়াতের অনুবাদে কোন প্রকার ভুল বুঝার অবকাশ নেই। মহান আল্লাহ তার আরশের উপরই রয়েছেন। আসমান ও যমীনের সর্বত্রই তার দৃষ্টি, জ্ঞান ও ক্ষমতা রয়েছে। তিনি সর্বত্রই মা’বুদ। আয়াতের এক অর্থ এটাই। কোন কোন মুফাসসির অর্থ করেছেন, তিনিই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনের যত গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানেন। আবার কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এখানে আসমান বলে ঊর্ধ্বজগত বোঝানো হয়েছে। সেটা আরশও হতে পারে। সুতরাং আয়াতের অনুবাদ হবে, তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে তথা আরশের উপর রয়েছেন, সেখানে থাকলেও যমীনের যত গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়াদি রয়েছে সব কিছু জানেন। [তাবারী, বাগভী, কুরতুবী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]

(২) এ আয়াতে প্রথম দু’আয়াতে বর্ণিত বিষয়বস্তুর ফলাফল বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, আল্লাহ তা'আলাই এমন এক সত্তা, যিনি আসমান ও যমীনে ইবাদাত ও আনুগত্যের যোগ্য এবং তিনিই তোমাদের প্রতিটি প্রকাশ্য ও গোপন অবস্থা এবং প্রতিটি উক্তি ও কর্ম সম্পর্কে পুরোপুরি পরিজ্ঞাত। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আর কারও ইবাদাত করো না। তিনি যেহেতু তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবই জানেন সুতরাং তার নাফরমানী করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করো এবং এমন কাজ করবে, যা তোমাদেরকে তাঁর নৈকট্য প্রদান করবে, তাঁর রহমতের অধিকারী করবে। এমন কোন কাজ করো না, যাতে তার নৈকট্য থেকে দূরে সরে যাও। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া
========================


৭৩. আর তিনিই, আসমানসমূহ ও যমীন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ তখন হয়ে যাবে। তাঁর কথাই যথার্থ। আর তাঁর জন্যই রয়েছে সেদিনের রাজত্ব, যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তিনি গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, অধিক অবহিত। 
আল-বায়ান

73. And it is He who created the heavens and earth in truth. And the day He says, "Be," and it is, His word is the truth. And His is the dominion [on] the Day the Horn is blown. [He is] Knower of the unseen and the witnessed; and He is the Wise, the Acquainted. 
Sahih International

(৭৩) তিনি যথাবিধি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।[1] আর যেদিন[2] তিনি বলবেন, ‘হও’ সেদিন তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গায়[3] ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।

[1] অর্থাৎ, তিনি যথা উদ্দেশ্যে ও মহান লক্ষ্যে তা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, এগুলোকে অনর্থক-লাভহীন (খেল-তামাশার জন্য) সৃষ্টি করেননি। বরং এক বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল, সেই আল্লাহকে স্মরণ এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন।

[2] يَوْمَ তে জবর এসেছে وَاذْكُرُوا অথবা واتَّقُوا ঊহ্য ক্রিয়ার কারণে। অর্থাৎ, সেই দিনকে স্মরণ কর অথবা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন তাঁর كُنْ (হও) শব্দ দ্বারা তিনি যা চাইবেন, তা-ই হয়ে যাবে। এর দ্বারা যে কথাটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা হল এই যে, হিসাব-কিতাবের এই কঠিন মুহূর্তগুলোও অতি সত্বর পার হয়ে যাবে। তবে কার জন্যে? ঈমানদারদের জন্যে। অন্যদেরকে তো এ দিনটা হাজার বছর অথবা পঞ্চাশ হাজার বছরের মত ভারী মনে হবে।

[3] صُوْرٌ বলতে সেই শিঙ্গাকে বুঝানো হয়েছে, যার ব্যাপারে হাদীসে এসেছে যে, ইস্রাফীল ফিরিশতা (আঃ) সেটাকে মুখে নিয়ে মস্তক নত করে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে বলা হবে, তুমি তাতে ফুঁ দাও। (ইবনে কাসীর) আবূ দাউদ এবং তিরমিযীতে আছে যে, ‘‘সূর একটি বাঁশি, যাতে ফুঁ দেওয়া হবে। (হাদীস নং ৪৭৪২-৩২৪৪) কোন কোন উলামার মতে শিঙ্গা তিনবার ফুঁকা হবে। نَفْخَةُ الصَّعْق (যাতে সমস্ত মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাবে)। نَفْخَةُ الفَنَاء (যাতে সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে)। نَفْخَةُ الإِنْشَاء (যাতে সমস্ত মানুষ পুনর্জীবিত হয়ে যাবে)। আবার কোন কোন আলেম শেষোক্ত দু’টি ফুঁকের কথাই বলেছেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
===============================

৯৫. নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বেরকারী। তিনিই আল্লাহ, সুতরাং (সৎপথ থেকে) কোথায় তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? 
৯৬. (তিনি) প্রভাত উদ্ভাসক। তিনি বানিয়েছেন রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সময় নিরূপক। এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ।
৯৭. আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে। 
৯৮. আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এক নফস থেকে। অতঃপর রয়েছে আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, এমন কওমের জন্য যারা ভালভাবে বুঝে।
আল-বায়ান

95. Indeed, Allah is the cleaver of grain and date seeds. He brings the living out of the dead and brings the dead out of the living. That is Allah; so how are you deluded?
96. [He is] the cleaver of daybreak and has made the night for rest and the sun and moon for calculation. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing.
97. And it is He who placed for you the stars that you may be guided by them through the darknesses of the land and sea. We have detailed the signs for a people who know.
98. And it is He who produced you from one soul and [gave you] a place of dwelling and of storage. We have detailed the signs for a people who understand. 
Sahih International

৯৫. নিশ্চয় আল্লাহ শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তিনিই প্রাণহীন থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে প্রাণহীন বেরকারী।(১) তিনিই তো আল্লাহ্‌, কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?(২)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলাই মৃত বস্তু থেকে জীবিত বস্তু সৃষ্টি করেন। মৃত বস্তু যেমন, বীর্য ও ডিম- এগুলো থেকে মানুষ ও জন্তু-জানোয়ার সৃষ্টি হয়, এমনিভাবে তিনি জীবিত বস্তু থেকে মৃত বস্তু বের করে দেন- যেমন, বীর্য ও ডিম জীবিত বস্তু থেকে বের হয়। [জালালাইন; মুয়াসসার]

(২) এগুলো সব এক আল্লাহর কাজ। অতঃপর এ কথা জেনে-শুনে তোমরা কোন দিকে বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছ? তোমরা স্বহস্তে নির্মিত প্রতিমাকে বিপদ-বিদূরণকারী ও অভাব পূরণকারী উপাস্য বলতে শুরু করেছ। [মুয়াসসার]


৯৬. তিনি প্রভাত উদ্ভাসকৎ(১) আর তিনি রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরুপক করেছেন(২); এটা পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহ্‌র নির্ধারণ।(৩)

(১) فَالِقُ শব্দের অর্থ ফাঁককারী এবং إصباح শব্দের অর্থ এখানে প্রভাতকাল। (فَالِقُ الْإِصْبَاحِ) এর অর্থ প্রভাতের ফাঁককারী; অর্থাৎ গভীর অন্ধকারের চাদর ফাঁক করে প্রভাতের উন্মেষকারী। [জালালাইন] এটিও এমন একটি কাজ, যাতে জ্বিন, মানব ও সমগ্র সৃষ্ট জীবের শক্তিই ব্যর্থ। প্রতিটি চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এ কথা বুঝতে বাধ্য যে, রাত্রির অন্ধকারের পর প্রভাতরশ্মির উদ্ভাবক জ্বিন, মানব, ফিরিশতা অথবা অন্য কোন সৃষ্টজীব হতে পারে না, বরং এটি বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তা'আলারই কাজ। তিনি ধীরে ধীরে অন্ধকার চিরে আলোর উন্মেষ ঘটান। সে আলোতে মানুষ তাদের জীবিকার জন্যে বের হতে পারে। [সা’দী]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সূর্য ও চন্দ্রের উদয়-অস্ত এবং এদের গতিকে একটি বিশেষ হিসাবের অধীনে রেখেছেন। এর ফলে মানুষ বৎসর, মাস, দিন, ঘন্টা এমনকি মিনিট ও সেকেণ্ডের হিসাবও অতি সহজে করতে পারে। আল্লাহ্ তা'আলার অপার শক্তিই এসব উজ্জ্বল বিশাল গোলক ও এদের গতি-বিধিকে অটল ও অনড় নিয়মের অধীন করে দিয়েছে। হাজার হাজার বছরেও এদের গতি-বিধিতে এক মিনিট বা এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হয় না। এ উজ্জ্বল গোলকদ্বয় নিজ নিজ কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে বিচরণ করছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রমকারী হওয়া। আর প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাতার কাটে।” [সূরা ইয়াসীন: ৪০]

পরিতাপের বিষয়, প্রকৃতির এ অটল ও অপরিবর্তনীয় ব্যবস্থা থেকেই মানুষ প্রতারিত হয়েছে। তারা এগুলোকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ বরং উপাস্য ও উদ্দিষ্ট মনে করে বসেছে। যদি এ ব্যবস্থা মাঝে মাঝে অচল হয়ে যেত এবং কলকজা মেরামতের জন্য কয়েকদিন বা কয়েক ঘন্টার বিরতি দেখা দিত, তবে মানুষ বুঝতে পারত যে, এসব মেশিন আপনা আপনিই চলে না, বরং এগুলোর পরিচালক ও নির্মাতা আছে। আসমানী কিতাব, নবী ও রাসূলগণ এ সত্য উদঘাটন করার জন্যই প্রেরিত হন। কুরআনুল কারীমের এ বাক্য আরো ইঙ্গিত করেছে যে, বছর ও মাসের সৌর ও চান্দ্র উভয় প্রকার হিসাবই হতে পারে এবং উভয়টিই আল্লাহ্ তা'আলার নেয়ামত। এর মাধ্যমেই সময় ও কাল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে লেন-দেনের সময়ও ঠিক রাখা যায়। তাছাড়া কতটুকু সময় পার হয়েছে আর কতটুকু বাকী রয়েছে সেটা জানাও এ দুটোর কারণেই হয়ে থাকে। যদি এগুলো না থাকত, তবে এ সময় নির্ধারণের ব্যাপারটি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকত না। এর জন্য বিশেষ শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ত। যাতে দ্বীন ও দুনিয়ার অনেক স্বার্থ হানি ঘটত। [সা'দী]

(৩) অর্থাৎ এ বিস্ময়কর অটল ব্যবস্থা- যাতে কখনো এক মিনিট ও এক সেকেণ্ড এদিক-ওদিক হয় না- এটি একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই দুটি মহান গুণ অপরিসীম শক্তি ও অপার জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। [মানার] এজন্যেই বাক্যের শেষে আল্লাহর দুটি গুণ বাচক নাম পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী’ উল্লেখ করা হয়েছে। তার অপার শক্তির কারণে সমস্ত কিছু তার অনুগত বাধ্য হয়েছে। আর তার পরিপূর্ণ জ্ঞানের কারণে কোন গোপন বা প্রকাশ্য সবকিছু তার আয়ত্বাধীন রয়েছে। [সা'দী]


৯৭. আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামণ্ডল সৃষ্টিকরেছেন যেন তা দ্বারা তোমরা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও(১)। অবশ্যই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি।(২)

(১) অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র ছাড়া অন্যান্য নক্ষত্রও আল্লাহ্ তা'আলার অপরিসীম শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এগুলো সৃষ্টি করার পিছনে যে হাজারো রহস্য রয়েছে, তন্মধ্যে একটি এই যে, স্থল ও জলপথে ভ্রমণ করার সময় রাত্রির অন্ধকারে যখন দিক নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ এসব নক্ষত্রের সাহায্যে পথ ঠিক করে নিতে পারে। [মুয়াসসার] অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, আজ বৈজ্ঞানিক কলকজার যুগেও মানুষ নক্ষত্রপুঞ্জের পথ প্রদর্শনের প্রতি অমুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতেও মানুষকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, এসব নক্ষত্রও কোন একজন নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিচরণ করছে। এরা স্বীয় অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও কর্মে স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়। যারা শুধু এদের প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে এবং নির্মাতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, তারা অত্যন্ত সংকীর্ণমনা এবং আত্মপ্রবঞ্চিত।

(২) অর্থাৎ আমি শক্তির প্রমাণাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি বিজ্ঞজনদের জন্য। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যারা এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও আল্লাহকে চিনে না, তারা বেখবর ও অচেতন। কোন নিদর্শনই তাদের কাজে লাগে না। নবীদের বর্ণনাও তাদের কোন সন্দেহ দূর করতে পারে না। তাদের কাছে এসব বর্ণনা যত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবেই আসুক না কেন, তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। [সা’দী]


৯৮. আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রয়েছে দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান(১)। অবশ্যই আমরা অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।

(১) এ আয়াতে দুটি শব্দ বলা হয়েছে, مُسْتَقَرٌّ ও مُسْتَوْدَعٌ তন্মধ্যে مُسْتَقَرٌّ শব্দটি قرار থেকে উদ্ভুত। কোন বস্তুর অবস্থান স্থলকে مستقر বলা হয়। আর مُسْتَوْدَعٌ শব্দটি وديعت থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ কারো কাছে কোন বস্তু অস্থায়ীভাবে কয়েক দিন রেখে দেয়া। অতএব, مستودع ঐ জায়গাকে বলা হবে, যেখানে কোন বস্তু অস্থায়ীভাবে কয়েক দিন রাখা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাই সে পবিত্র সত্তা যিনি মানুষকে এক সত্তা থেকে অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তার জন্য একটি দীর্ঘকালীন এবং একটি স্বল্পকালীন অবস্থানস্থল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [সা'দী] কুরআনুল কারীমের ভাষা এরূপ হলেও এর ব্যাখ্যায় বহুবিধ সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই এ সম্পর্কে মুফাসসিরগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। কেউ বলেছেন, مُسْتَوْدَعٌ ও مُسْتَقَرٌّ যথাক্রমে মাতৃগর্ভ ও দুনিয়া। আবার কেউ বলেছেন, কবর ও আখেরাত। [ফাতহুল কাদীর]

আবার কেউ বলেছেন, মায়ের পেট হচ্ছে مُسْتَقَرٌّ আর পিতার পিঠ হচ্ছে مُسْتَوْدَعٌ [আইসারুত তাফসীর, মুয়াসসার] এছাড়া আরো বিভিন্ন উক্তি আছে এবং কুরআনের ভাষায় সবগুলোরই অবকাশ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেনঃ مُسْتَقَرٌّ হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। আর মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে আখেরাত পর্যন্ত সবগুলো স্তর, তা মাতৃগর্ভই হোক কিংবা পৃথিবীতে বসবাসের জায়গাই হোক কিংবা কবর বা বরযখই হোক-সবগুলোই হচ্ছে مُسْتَوْدَعٌ অর্থাৎ সাময়িক অবস্থানস্থল। [সা’দী] কুরআনুল কারীমের এক আয়াত দ্বারাও এ উক্তির অগ্রগণ্যতা বুঝা যায়। যেখানে বলা হয়েছে, (لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ) অর্থাৎ তোমরা সর্বদা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করতে থাকবে। [সূরা আল-ইনশিকাক: ১৯] এর সারমর্ম এই যে, আখেরাতের পূর্বে মানুষ সমগ্র জীবনে একজন মুসাফিরসদৃশ। বাহ্যিক স্থিরতা ও অবস্থিতির সময়ও প্রকৃতপক্ষে সে জীবন-সফরের বিভিন্ন মনযিল অতিক্রম করতে থাকে।

তাফসীরে জাকারিয়া
================================
================================


সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আরও বেশি মানুষের কাছে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছে দিতে শেয়ার ও কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url