জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর পরিচয়-১
আল কুরআনে আল্লাহ পাকের পরিচয়
আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহ কেমন? আল্লাহ এই পৃথিবী কেন
তৈরী করেছেন? আল্লাহ কিভাবে এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি
করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কিভাবে লালন পালন
করছেন? আল্লাহ কোথায় থাকেন? আল্লাহর গুণাবলী কেমন? আল্লাহর ক্ষমতা বা শক্তি
কেমন?
এসব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র কুরআনে বিশদভাবে তাঁর পরিচয় তুলেছেন। কমপক্ষে ১৩১টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন।আমরা ধারাবাহিকভাবে সেসব আয়াতের অর্থ ও তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো।এসব আয়াতে বিশ্বাসীদর জন্য রয়েছে নিদর্শন।
১১৬. আর তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান; বরং আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তাঁরই । সব তাঁরই অনুগত।
১১৭. তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।
আল-বায়ান
116. They say, "Allah has taken a son." Exalted is He! Rather, to Him belongs whatever is in the heavens and the earth. All are devoutly obedient to Him,
117. Originator of the heavens and the earth. When He decrees a matter, He only says to it, "Be," and it is.
Sahih International
১১৫. আর পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই; সুতরাং যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকই আল্লাহর দিক(১)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।(২)
(১) وَجْهُ اللَّهِ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর চেহারা। মুসলিমদের আকীদা বিশ্বাস হলো এই যে, আল্লাহর চেহারা রয়েছে। তবে তা সৃষ্টির কারও চেহারার মত নহে। কিন্তু এ আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো - সকল দিকই যেহেতু আল্লাহর সুতরাং মুসল্লী পূর্ব ও পশ্চিম যেদিকেই মুখ ফিরাক না কেন সেদিকেই আল্লাহর কিবলা রয়েছে। কেউ কেউ এ আয়াতটিকে আল্লাহ্ তা'আলার সিফাত মুখমণ্ডল বা চেহারা সাব্যস্ত করার জন্য দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। মূলতঃ এ আয়াতটিতে ‘ওয়াজহ’ শব্দটি দিক বা কেবলা বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ এ আয়াতটিকে সিফাতের আয়াতের মধ্যে গণ্য করাকে ভুল আখ্যায়িত করেছেন। [দেখুন - মাজমু ফাতাওয়াঃ ২/৪২৯, ৩/১৯৩, ৬/১৫-১৬]
কোন কোন মুফাসসির (فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ) আয়াতকে এই নফল সালাতেরই বিধান বলে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু স্মরণ রাখা দরকার যে, এই বিধান সে সমস্ত যানবাহনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যাতে সওয়ার হয়ে চলার সময় কেবলার দিকে মুখ করা কঠিন। পক্ষান্তরে যেসব যানবাহনে সওয়ার হলে কেবলার দিকে মুখ করা কঠিন নয়, যেমন রেলগাড়ী, সামুদ্রিক জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদিতে নফল সালাতেও কেবলার দিকেই মুখ করতে হবে। তবে সালাতরত অবস্থায় রেলগাড়ী অথবা জাহাজের দিক পরিবর্তন হয়ে গেলে এবং আরোহীর পক্ষে কেবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অবকাশ না থাকলে সে অবস্থায়ই সালাত পূর্ণ করবে। এমনিভাবে কেবলার দিক সম্পর্কে সালাত আদায়কারীর জানা না থাকলে, রাতের অন্ধকারে দিক নির্ণয় করা কঠিন হলে এবং বলে দেয়ার লোক না থাকলে সেখানেও সালাত আদায়কারী অনুমান করে যেদিকেই মুখ করবে, সেদিকই তার কেবল বলে গণ্য হবে। [তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন]
কেবলামূখী হওয়া মানে কি কা’বাকে সেজদা করা?
(২) এখানে কেবলামুখী হওয়ার সম্পূর্ণ স্বরূপ বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে যে, এর উদ্দেশ্য (নাউযুবিল্লাহ) বায়তুল্লাহ অথবা বায়তুল- মুকাদ্দাসের পূজা করা নয়। সমস্ত সৃষ্টিজগত তার কাছে অতি ছোট। এরপরও বিভিন্ন তাৎপর্যের কারণে বিশেষ স্থান অথবা দিককে কেবলা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আয়াতের শেষে মহান আল্লাহর দুটি গুরুত্বপূর্ণ গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে, তিনি وَاسِعٌ এ শব্দটির দুটি অর্থ রয়েছে। এক, প্রাচুর্যময়; অর্থাৎ তাঁর দান অপরিসীম। তিনি যাকে ইচ্ছা তার কর্মকাণ্ড দেখে বিনা হিসেবে দান করবেন। পূর্ব বা পশ্চিম তাঁর কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তিনি দেখতে চাইছেন যে, কে তার কথা শুনে আর কে শুনে না। দুই, وَاسِعٌ শব্দটির দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, সর্বব্যাপী। অর্থাৎ তিনি যেহেতু সবদিক ও সবস্থান সম্পর্কে পূর্ণ খবর রাখেন সুতরাং তাঁর জন্য কোন কাজটি করা হল সেটা তিনি ভাল করেই জানেন। সে অনুসারে তিনি তার বান্দাকে পুরস্কৃত করবেন। এ অর্থের সাথে পরে উল্লেখিত দ্বিতীয় গুণবাচক নাম عَلِيْمٌ শব্দটি বেশী উপযুক্ত।
আল্লাহ কি সন্তান গ্রহণ করেন?
১১৬. আর তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। তিনি (তা থেকে) অতি পবিত্র।(১) বরং আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। সবকিছু তারই একান্ত অনুগত।
(১) নাসারারা বলে থাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ এটা সম্পূর্ণ একটি অপবাদ। কুরআনের অন্যত্র এসেছে, তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। [সূরা মারইয়ামঃ ৯১-৯৩] এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেন, মানুষ আমার উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাদের এটা উচিত নয়। মানুষ আমাকে গালি দেয়, অথচ তাও তাদের জন্য উচিত নয়। মিথ্যারোপ করার অর্থ হলো, তারা বলে, আমি তাদের মৃত্যুর পর জীবিত করে পূর্বের ন্যায় করতে সক্ষম নই। আর গালি দেয়ার অর্থ হলো, তারা বলে যে, আমার পুত্র আছে। অথচ স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে আমি পবিত্র।” [বুখারীঃ ৪৪৮২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “কষ্টদায়ক কথা শুনার পর আল্লাহর চেয়ে বেশী ধৈর্যশীল আর কেউ নেই, মানুষ তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, তারপরও তিনি তাদেরকে নিরাপদে রাখেন ও রিযিক দেন।” [বুখারী: ৭৩৭৮, মুসলিম: ২৮০৪]
১১৭. তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের উদ্ভাবক। আর যখন তিনি কোন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।
তাফসীরে জাকারিয়া
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url