মারা গেলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ফারুক আব্দুল হক
ড. ফারুক আব্দুল হক
কে
এই ফারুক আব্দুল হক ?
রবার্ট ডিকসন ক্রেন, যিনি ১৯৮০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফারুক আব্দুল হক নাম ধারণ করেন। তিনি
ছিলেন বর্তমান যুগের একজন নামজাদা ইসলামী চিন্তাবিদ। তিনি একজন নামকরা রাজনীতিবিদ
ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উপদেষ্টা হিসাবেও দায়িত্ব
পালন করেন তিনি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ফারুক আবদুল হক (রবার্ট ডিকসন ক্রেন) ইন্তেকাল করেছেন। পারিবারিক সূত্রে জাানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর তিনি মারা গিয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৯২ বছর।
ড. ফারুক আব্দুল হক এর কর্ম জীবনঃ
ড. ফারুক যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ফারুক আবদুল হক নাম ধারণ করেন। তিনি ছিলেন ‘হার্ভার্ড সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপ-পরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ফারুক আবদুল হক বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক আইনি ব্যবস্থায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ‘হার্ভার্ড জার্নাল ফর ইন্টারন্যাশনাল ল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘হার্ভার্ড সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর প্রথম সভাপতি তিনি। ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ অ্যাডভাইজারি সেন্টারে তিনি প্রায় এক দশক ধরে কর্মরত ছিল।
১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক স্ট্র্যাটেজিক গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৩-৬৮ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাঁকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপ-পরিচালক নিযুক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮১ সালে তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন।
ড. ফারুক আব্দুল হক এর ইসলাম গ্রহণঃ
প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘ইসলামী মৌলবাদ’ ও ইসলাম বিষয়ক একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সময়ের অভাবে তিনি রবার্ট ক্রেনকে এ প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত করার দায়িত্ব দেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। ইসলাম সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন তাঁকে মুগ্ধ করে। এভাবে ইসলামের প্রতি তাঁর প্রাথমিক আকর্ষণ ও মুগ্ধতার শুরু।
১৯৮০ সাল থেকে সরকারের নির্দেশে তিনি বিভিন্ন ইসলামী সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম স্কলার ও ধর্মপ্রচারকদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে সুদানের প্রখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ড. হাসান তুরাবি অন্যতম। এছাড়াও ফরাসি দার্শনিক ও কমিউনিস্ট লেখক পরবর্তীতে মুসলিম চিন্তাবিদ ড. রোজার গারাউডিও ব্যক্তিত্ব ও গভীর পাণ্ডিত্বে তিনি প্রভাবিত হন। ড. ফারুক অর্ধশতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। ২০২০ সালে ড. ক্রেন বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকার মধ্যে ছিলেন।
প্রভাবশালী ইসলামী চিন্তাবিদের মৃত্যুতে শোক যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনরা শোক জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলার্সদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স-এর পক্ষ থেকে এ মহান ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক জানানো হয়।
====================
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url