শিক্ষনীয় - ৪ || কুরআনে বর্ণিত কাহিনী, বিকল্প কা’বা শরীফ নির্মাতা আব্রাহার হস্তী বাহিনীর উপর ক্ষুদ্র পাখি আবাবিলের আক্রমন






কুরআনের গল্প

আবরাহার হস্তী বাহিনীর উপর ক্ষুদ্র পাখি আবাবিলের আক্রমন

 

আবরাহার অবাস্তব স্বপ্ন

আবিসিনিয়া বাদশাহর পক্ষ থেকেইয়ামানে’ ‘আবরাহানামক একজন শাসনকর্তা (গভর্নর) ছিল। সে দেখলো, গোটা আরবের লোকেরা মক্কার কাবা শরীফে হজ্জ করতে যায়। বিষয়টি তার মোটেও পছন্দ হলো না। তার ইচ্ছা হলো, মক্কার পরিবর্তে সবাই আমাদের দেশে আসুক।


ইয়ামানের রাজধানীসানআয় আবরাহার কৃত্রিম কা’বা স্থাপন

লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে সে ভাবল, কাবাগৃহের অনুকরণে আমাদের এখানেই একটি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন গীর্জা নির্মাণ করবে। তাতে বিনোদন চিত্তাকর্ষণের সব ধরনের উপায়-উপকরণ থাকবে। তা হবে সর্বোচ্চ জাকজমকপূর্ণ। তাহলে মানুষ মক্কার সাদাসিধে সেই কাবা বর্জন করে মূল্যবান পাথরে সজ্জিত এই কাবার দিকে ছুটে আসবে। এতে মক্কার হজ্জ পর্বও বন্ধ হয়ে যাবে। সে উদ্দেশ্যে ইয়ামানের রাজধানীসানআ একটি কৃত্রিম কাবার ভিত্তি স্থাপন করে। সেখানে সে মন খুলে টাকা-পয়সা ব্যয় করে। কিন্তু এত কিছুর পরও মানুষ সে দিকে আকৃষ্ট হয়নি।


কৃত্রিম কা’বা গৃহের প্রতি আরবদের ঘৃণা প্রকাশ

আরবরা, বিশেষ করে কুরাইশ গোত্রের লোকেরা যখন আবরাহার কৃত্রিম কাবা সম্পর্কে জানতে পারল, চরম উত্তেজিত হয়ে উঠল। একজন তো ঘৃণাভরে উক্ত কাবায় গিয়ে মলত্যাগ করে নোংরা করে দিলেন। কারো কারো মতে, আরবের একজন লোক আগুন জ্বালিয়েছিল। এক সময় আগুনের একটি স্ফুলিঙ্গ বাতাসের সঙ্গে উড়ে গিয়ে পড়ল ভবনে।আবরাহাএতে ক্রুদ্ধ হয়ে কাবা শরীফকে ঘূলিসাৎ করার শপথ করে।


আবরাহা মক্কায় কা’বা গৃহ আক্রমন করে

শপথ অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক হাতি সংবলিত সৈন্যদল নিয়ে বাস্তবেই সে কাবা শরীফ ধ্বংস করার উদ্দেশ্য বের হয়। পথে আরবের যে গোত্র তার প্রতিরোধ করে, তাদের সাথে সে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তাদের কে পরাজিত করে। নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তখন কুরইশ গোত্রের নেতা এবং কাবা শরীফের মুতাওয়াল্লী। তিনি সংবাদ জানতে পেরে বললেন- ‘লোক সকল! তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা কর। কাবার মালিক- কাবাকে রক্ষা করবেন।আবরাহা পথ পরিস্কার দেখে বিশ্বাস করে নিল যে, এখন আর কাবা ধ্বংস করা কঠিন কাজ নয়। কারণ, সেদিক থেকে মোকাবেলা করার কেউ নেই।


আল্লাহ কা’বাকে রক্ষার জন্য অতি ক্ষুদ্র আবাবিল পাখির ঝাঁক পাঠালেন

আবরাহা যখন মক্কার নিকটবর্তীমুহাস্সারউপত্যকার নিকট পৌঁছল, তখন সমুদ্রের দিকে থেকে হলূদ আর সবুজ রঙ্গের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাখি (আল্লাহ পাক কুরআনে এদেরকে আবাবিল পাখি বলে উল্লেখ করেছেন) ঝাঁক আসতে দেখল। প্রতিটি পাখির ঠোঁটে পাঞ্জায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঙ্কর ছিল। পাখিগুলো সৈন্যদের উপর কঙ্করের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগল। আল্লাহর কঙ্করজাতীয় সেই পাথরগুলো বন্দুকের গুলির চেয়েও বেশি কাজ করল। যারই গায়ে লাগত, একদিক থেকে প্রবেশ করে অপর দিক থেকে বের হতো। শরীরে এক আশ্চর্য ধরণের বিষাক্ত উপাদান রেখে যেত। তাতে অনেক সৈন্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। আর যারা পলায়ন করে, তারা মহা কষ্ট ভোগ করে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

ঘটনায় বিশেষ গায়েবী ইঙ্গিত হল, আল্লাহ তা’আলা যেমন অলৌকিকভাবে তার ঘরের হেফাজত করেছেন, সে ঘরের সবচেয়ে পবিত্র মুতাওয়াল্লী এবং সবচেয়ে বড় পয়গম্বরের হেফাজতও তিনি ঠিক সেভাবেই করবেন। তাছাড়া তিনি খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মনায়কদেরকে কাবা এবং কাবার সত্য সেবকদের মূলোৎপাটন করার কখনো সুযোগ দেবেন না।

পবিত্র কুরআন এর ১০৫-তম সূরা ফীল এই ঘটনারই উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন- 

 

১. তুমি কি দেখনি তোমার রব হাতীওয়ালাদের সাথে কী করেছিলেন?

২. তিনি কি তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেননি?

৩. আর তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেছিলেন।

৪. তারা তাদের ওপর নিক্ষেপ করে পোড়ামাটির কঙ্কর।
৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে করলেন ভক্ষিত শস্যপাতার ন্যায়।




=======================


সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আরও বেশি মানুষের কাছে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছে দিতে শেয়ার ও কমেন্ট করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url