পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মায়ের কুলে বসে তিন দুধের শিশুর কথা বলার কাহিনী



হাদিসের গল্প

মায়ের কুলে বসে কথা বলা তিন শিশু


আবু হুরায়রা (রা.) তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (বনী ইসরাঈলের মধ্যে) তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই দোলনায় কথা বলেনি।


ঈসা ইবনে মারইয়াম () শিশু অবস্থায় মায়ের কুলে বসে কথা বলেছিলেন

মারইয়াম (আলাইহিসসালাম)-এর গর্ভে ঈসা (আলাইহিসসালাম) অলৌকিক ভাবে জন্মগ্রহণ করলে লোকজন তার ব্যাপারে সন্দিহান ল। তখন মারইয়াম (আলাইহিসসালাম)-এর ইঙ্গিতে ঈসা (আলাইহিসসালাম) তাঁর মাতার পক্ষ থেকে জবাব দিয়ে বললেন, "আমি আল্লাহ্ দাস। তিনি আমাকে কিতাব (ইনজীল) প্রদান করেছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন সালাত যাকাত আদায় করতে এবং আমার মায়ের অনুগত থাকতে। আল্লাহ আমাকে উদ্ধত হতভাগা করেননিআমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন জীবিত পুনরুত্থিত হব।" {মারিয়াম ১৯/২৯-৩৩}

 

জুরাইজকে নির্দোষ প্রমাণ করেছিল যে শিশু

জুরাইজ একজন আবেদ বান্দা ছিলেন। তিনি নিজের জন্য একটি ইবাদতগাহ তৈরী করলেন। তিনি সেখানে থাকা অবস্থায় একদিন তার মা সেখানে আসলেন। সময় তিনি সালাতে রত ছিলেন। তার মা বললেন, ‘হে জুরাইজ! তখন তিনি (মনে মনে) বলেন, ‘হে প্রভু! একদিকে আমার সালাত আর অন্যদিকে আমার মা জুরাইজ সালাতেই রত থাকলেন। তার মা চলে গেলেন। পরবর্তী দিন তার মা আসলেন এবারও তিনি সালাতে মগ্ন ছিলেন। তার মা তাকে ডাকলেন, ‘হে জুরাইজ’! তিনি (মনে মনে) বলেন, ‘হে প্রভু! একদিকে আমার সালাত আর অন্যদিকে আমার মা তিনি তার সালাতেই ব্যস্ত থাকলেন।


এভাবে তৃতীয় দিনেও জুরাইজ একই কাজ করলে তার মা বললেন, ‘হে আল্লাহ! একে তুমি যেনাকারী নারীর মুখ না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু দিও না। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ তার ইবাদতের কথা আলোচিত তে লাগল। এক ব্যভিচারী নারী ছিল। সে উল্লেযোগ্য রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ছিল। সে বলল, তোমরা যদি চাও, আমি তাকে (জুরাইজ) বিভ্রান্ত করতে পারি। সে তাকে ফুসলাতে লাগল, কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলেন না। অতঃপর সে তার ইবাদতগাহের কাছাকাছি এলাকায় এক রাখালের কাছে আসল। সে নিজের উপর তাকে অধিকার দিল এবং উভয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত ল। এতে সে গর্ভবতী ল। সে বাচ্চা প্রসব করে বলল, এটা জুরাইজের সন্তান। বনী ইসরাঈল (ক্ষিপ্ত হয়ে) তার কাছে এসে তাকে ইবাদতগাহ থেকে বের করে আনল, তার ইবাদতগাহ ধূলিসাৎ করে দিল এবং তাকে মারধর করতে লাগল। জুরাইজ বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, তুমি এই নষ্টা মহিলার সাথে যেনা করেছ। ফলে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তিনি বললেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে আসল।

জুরাইজ বললেন, আমাকে একটু সুযোগ দাও সালাত আদায় করে নেই। তিনি সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই শিশু! তোমার পিতা কে’? সে বলল, ‘আমার পিতা অমুক রাখাল


উপস্থিত লোকেরা তখন জুরাইজের নিকটে এসে তাকে চুম্বন করতে লাগল এবং তার শরীরে হাত বুলাতে লাগল। আর তারা বলল, এখন আমরা তোমার ইবাদতগাহটি সোনা দিয়ে তেরী করে দিচ্ছি। তিনি বললেন, দরকার নেই, বরং পূর্বের মত মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও। অতঃপর তারা তাই করল।

 

মায়ের সাথে তর্ক করেছিল যে শিশু

(এই শিশুটির পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি)

একটি শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় একটি লোক দ্রুতগামী উন্নত মানের একটি পশুতে সওয়ার হয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তার পোষাক-পরিচ্ছদ ছিল উন্নত।

শিশুটির মা বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে এই ব্যক্তির মত যোগ্য কর
শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে লোকটির দিকে এগিয়ে এসে তাকে দেখতে লাগল।
অতঃপর বলল, ‘হে আল্লাহ! আমাকে এই ব্যক্তির মত কর না’? অতঃপর ফিরে এসে পুনরায় মায়ের দুধ পান করতে লাগল। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি যেন এখনও দেখছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিশুটির দুধ পানের চিত্র তুলে ধরছেন এবং নিজের তর্জনী মুখে দিয়ে চুষছেন। তিনি বলেন, লোকেরা একটি বাঁদিকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। আর বলছিল, তুমি যেনা করেছ এবং চুরি করেছ। মেয়ে লোকটি বলছিল, ‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক শিশুটির মা বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সন্তানকে এই নষ্টা নারীর মত কর না শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল, অতঃপর বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এই নারীর মত কর

সময় মা শিশুটির মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। মা বলল, হায় দুর্ভাগা! একটি সুশ্রী লোক চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এরূপ যোগ্য করে দাও তুমি প্রত্যুত্তরে বললে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে এর মত কর না
আবার এই ক্রীতদাসীকে লোকেরা মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে, তুমি যেনা করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এরূপ করোনা। তুমি বললে ,”হে আল্লাহ্আমাকে এরূপ কর


শিশুটি এবার জবাব দিল, প্রথম ব্যক্তি ছিল স্বৈরাচারী যালেম। সেজন্যই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ব্যক্তির মত কর না? আর এই মহিলাটিকে তারা বলল, তুমি যেনা করেছ। প্রকৃতপক্ষে সে যেনা করেনি। তারা বলছিল, তুমি চুরি করেছ। আসলে সে চুরি করেনি। এজন্যই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ! আমাকে এই মেয়ে লোকটির মত কর


{
বুখারী হা/৩৪৩৬নবীদের কাহিনীঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮, হা/২৪৮২মাযালিমঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫; মুসলিম হা/২৫৫০সদ্ব্যবহার শিষ্টাচারঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-
}

 

★★সমাপ্ত★★

সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কাজকর্ম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে দয়াকরে Home Page এ ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url