জগৎ সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর পরিচয় - ১৩
আল কুরআনে আল্লাহ পাকের পরিচয়
৩১:২৫ وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ
لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰهُ ؕ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
﴿۲۵﴾
আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘কে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন?’
তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; কিন্তু তাদের অধিকাংশই
জানে না’। আল-বায়ান
যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশমন্ডলী ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে,
তারা অবশ্য অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। বল, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু তাদের অধিকাংশই
জানে না। তাইসিরুল
তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস
করঃ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবেঃ আল্লাহ! বলঃ
প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেনা। মুজিবুর রহমান
And if you asked
them, "Who created the heavens and earth?" they would surely say,
"Allah." Say, "[All] praise is [due] to Allah "; but most
of them do not know. Sahih International |
|
(২৫)
তুমি যদি ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন?’ তাহলে ওরা
নিশ্চয় বলবে, ‘আল্লাহ।’[১] বল, ‘সর্বপ্রশংসা
আল্লাহরই’; [২] কিন্তু ওদের
অধিকাংশই জানে না।
[১]
অর্থাৎ, তারা স্বীকার করে যে, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ; ঐ সকল বাতিল উপাস্য
নয়, যাদের তারা উপাসনা করে থাকে।
[২]
যেহেতু তাদের স্বীকারোক্তিতে তাদের উপর হুজ্জত কায়েম হয়ে গেছে। তাফসীরে
আহসানুল বায়ান |
৩১:২৬ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ
هُوَ الۡغَنِیُّ الۡحَمِیۡدُ ﴿ ۲۶﴾
আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা আল্লাহর; নিশ্চয় আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
প্রশংসিত। আল-বায়ান
আকাশমন্ডলী আর যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তিনি সকল
অভাব-মুক্ত, সকল প্রশংসার অধিকারী। তাইসিরুল
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে
যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
To Allah belongs
whatever is in the heavens and earth. Indeed, Allah is the Free of need, the
Praiseworthy. Sahih International |
|
(২৬) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা আল্লাহরই।[১] নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত,[২] প্রশংসার্হ। [৩] [১] অর্থাৎ, সে সবের সৃষ্টিকর্তাও তিনি, মালিকও তিনি এবং বিশ্ব-জগতের পরিচালকও তিনি। [২] সকল কিছু হতে অমুখাপেক্ষী। অর্থাৎ, সকল সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। [৩] তাঁর সকল প্রকার সৃষ্ট বস্তুতে। সুতরাং তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং যে আহ্কাম অবতীর্ণ করেছেন, তার উপর আকাশ ও পৃথিবীর সকল প্রশংসার অধিকারী একমাত্র তিনিই। তাফসীরে
আহসানুল বায়ান |
৩১:২৭ وَ لَوۡ اَنَّ مَا فِی الۡاَرۡضِ مِنۡ شَجَرَۃٍ اَقۡلَامٌ
وَّ الۡبَحۡرُ یَمُدُّهٗ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ سَبۡعَۃُ اَبۡحُرٍ مَّا نَفِدَتۡ کَلِمٰتُ
اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۷﴾
আর যমীনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে
কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ
মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
দুনিয়ার সব গাছ যদি কলম হয় আর সমুদ্র (কালি হয়) আর তার সাথে আরো সাত
সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর (প্রশংসার) কথা (লেখা) শেষ হবে না। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী,
মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী। তাইসিরুল
পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ
যদি কলম হয় এবং এই যে সমুদ্র, এর সাথে যদি আরও সাতটি সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয় তবুও
আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবেনা। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
And if whatever
trees upon the earth were pens and the sea [was ink], replenished thereafter
by seven [more] seas, the words of Allah would not be exhausted. Indeed,
Allah is Exalted in Might and Wise. Sahih International
|
|
২৭.
আর যমীনের সব গাছ যদি কলম হয় এবং সাগর, তার পরে আরও সাত সাগর কালি হিসেবে যুক্ত
হয়, তবুও আল্লাহর বাণী(১) নিঃশেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী হিকমতওয়ালা। (১) ‘আল্লাহর কালেমা বা কথা’ এর মানে কি? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছে। যদিও এর প্রতিটিই এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে। অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, আয়াতে বৰ্ণতি ‘আল্লাহর কালেমা বা কথা বলে মহান আল্লাহর জ্ঞানপূর্ণ ও প্রজ্ঞাময় বাক্যাবলীই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর বাণীর কোন শেষ নেই। [সা’দী; মুয়াসসার] এ কুরআন তার বাণীরই অংশ। অর্থ এই যে, এক সমুদ্রের সাথে আরো সাতটি সমুদ্রে সংযুক্ত হয়েছে বলে যদি ধরেও নেয়া হয়, তা সত্বেও এসবগুলির পানি দিয়ে আল্লাহর প্রজ্ঞাময় বাক্যসমূহ লিখে শেষ করা যাবে না। এখানে সাতের সংখ্যা উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে- সীমিত করে দেয়া উদ্দেশ্য নয়। যার প্রমাণ কুরআনের অন্য এক আয়াতে-যেখানে বলা হয়েছে -“আল্লাহর মহিমাসুচক বাণীসমূহ প্রকাশ করতে যদি সমুদ্রকে কালিতে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়, তবে সমুদ্র শূন্য হয়ে যাবে-কিন্তু সে বাণীসমূহ শেষ হবে না। আর শুধু এ সমুদ্র নয়, অনুরূপ আরো সমুদ্র অন্তর্ভুক্ত করলেও অবস্থা একই থাকবে।” [সূরা আল-কাহফ: ১০৯] মোটকথা: সমুদ্রসমুহের যতগুণ বা সংখ্যাই মেনে নেয়া হোক না কেন, এসবগুলোর পানি কালি হলেও আল্লাহর মহিমা প্রকাশক বাণীসমূহ লিখে শেষ করতে পারবে না। যুক্তি-বুদ্ধির দিক দিয়ে একথা সুস্পষ্ট যে সমুদ্র সাতটি কেন সাত হাজারও যদি হয়, তবুও তা সীমাবদ্ধ, শেষ অবশ্যই হবে-কিন্তু আল্লাহর বাক্যাবলী অসীম ও অনন্ত- কোন সসীম বস্তু অসীমকে কিরূপে আয়ত্ব করতে পারে? [দেখুন: ইবন কাসীর, কুরতুবী, সা'দী] কোন কোন মুফাসসিরের মতে ‘আল্লাহর কালেমা বা কথা’ বলে এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, তাঁর নেয়ামত (কৃপা ও দয়াসমূহ) যে একেবারে অসীম ও অফুরন্ত,- কোন ভাষার সাহায্যে তা প্রকাশ করা চলে না, তাই বুঝিয়েছেন। [কুরতুবী; মুয়াস্সার; ইবন কাসীর] মূলত: আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, তাঁর নেয়ামতসমূহ কোন কলম দিয়ে লিপিবদ্ধ করা চলে না, এখানে আল্লাহ এ তথ্যটুকুই সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। অধিকন্তু তিনি এরূপভাবে উদাহরণ পেশ করেছেন যে, ভূ-পৃষ্ঠে যত বৃক্ষ আছে, যদি সেগুলোর সব শাখা-প্ৰশাখা দিয়ে কলম তৈরী করা হয় এবং বিশ্বের সাগরসমূহের পানি কালিতে রূপান্তরিত করে দেয়া হয় এবং এসব কলম আল্লাহ্ তা'আলার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান—গরিমা এবং তাঁর ক্ষমতা ব্যবহারের বিবরণ লিখতে আরম্ভ করে, তবে সমুদ্রের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে; তবু তাঁর অফুরন্ত প্রজ্ঞা ও মহিমার বর্ণনা শেষ হবে না। কেবল একটি মাত্র সমুদ্র কেন— যদি অনুরূপ আরো সাত সমুদ্রেও অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়, তবুও সব সাগর শেষ হয়ে যাবে তথাপি আল্লাহর মহিমা প্রকাশক বাণীসমূহের পরিসমাপ্তি ঘটবে না। কোন কোন মুফাসসিরের মতে এর অর্থ, তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর শক্তির নিদর্শন। [কুরতুবী] অর্থাৎ পৃথিবীর গাছগুলো কেটে যতগুলো কলম তৈরী করা যেতে পারে এবং পৃথিবীর বর্তমান সাগরের পানির সাথে আরো তেমনি সাতটি সাগরের পানিকে কালিতে পরিণত করলে তা দিয়ে আল্লাহর শক্তি ও সৃষ্টির কথা লিখে শেষ করা তো দূরের কথা হয়তো পৃথিবীতে যেসব জিনিস আছে সেগুলোর তালিকা তৈরী করাই সম্ভবপর হবে না। শুধুমাত্র এ পৃথিবীতেই যেসব জিনিসের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলোই গণনা করা কঠিন, তার ওপর আবার এই অথৈ মহাবিশ্বের সৃষ্টির বিবরণ লেখার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। তাফসীরে
জাকারিয়া |
৩১:২৮ مَا خَلۡقُکُمۡ وَ لَا بَعۡثُکُمۡ اِلَّا کَنَفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ
ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ ﴿۲۸﴾
তোমাদের সৃষ্টি ও তোমাদের পুনরুত্থান কেবল একটি প্রাণের (সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের) মতই। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, দ্রষ্টা। আল-বায়ান তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একজন মানুষের (সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের) মতই। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। তাইসিরুল তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের অনুরূপ। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান
Your creation and your resurrection will not be but as that of a single soul. Indeed, Allah is Hearing and Seeing. Sahih International |
|
(২৮)
তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই মত।[১]
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
[১]
অর্থাৎ, তাঁর ক্ষমতা এত বিশাল যে, তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা বা কিয়ামতের দিন পুনর্জীবিত
করা একটি মাত্র আত্মা বা প্রাণীকে জীবিত করা বা সৃষ্টি করার মতই। কারণ তিনি যা চান,
তা كُن (হয়ে যাও) বলতেই
চোখের পলকে অস্তিত্ব লাভ করে।
তাফসীরে
আহসানুল বায়ান |
|| ★★সমাপ্ত★★ ||
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url