আল্লাহ খুশি হলে আর কি চাই!



মরুভূমির একমাত্র বাহন হচ্ছে উট। এক পথিক একটি উটের উপর তার খাবার ও পানীয় নিয়ে দীর্ঘ পথে সফরে বের হলেন। তপ্ত বালুকাময় মরুপথে যেতে যেতে এক সময় সেই পথিক ক্লান্ত হয়ে একটি ছায়াময় জায়গা খোঁজে পেয়ে বিশ্রাসের জন্য উটের পিঠ থেকে নেমে এল। অতপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ল। সে যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলো তখন দেখতে পেল পাশেই বেঁধে রাখা তার একমাত্র বাহন উটটি নেই। বিশাল মরুভূমির জনমানবহীন তেপান্তরে সে কোথাও তার উটটিকে দেখতে পেল না। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে কোথাও উটটি খোঁজে না পেয়ে সে খুব হতাশ হয়ে পড়লো। সে বুঝতে পারলো এই মরুভূমিতেই তাকে মরতে হবে। সে ক্ষুধা পিপাসা ও দৌড়াদৌড়িতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লো। মৃত্যু অবধারিত জেনেও ক্লান্ত হয়ে এক সময় সে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পরে ঘুম ভাঙ্গার পর সে দেখতে পেল তার হারানো উটটি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে!
এবার বলুন তো, নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর লোকটি কতটুকু খুশি হতে পারে? ঐ পথিক খুশির আতিশয্যে মহান প্রভূর শুকরিয়া আদায় করতে গিয়ে বলেছিল, হে আল্লাহ আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমার গোলাম আমি আপনার রব!
তাহলে বুঝতেই পারছেন, সেই পথিক কতটুকু খুশি হয়েছিল! এই পথিকের চেয়েও বেশি খুশি হন আমার সুমহান রব, যখন কোন বান্দা পাপ কাজ পরিত্যাগ করে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে। তওবা করলেই যদি আমার রব তার বান্দার প্রতি এত্তো খুশি হন, এত্তো খুশি হন, তাহলে আমার আর কিছুর প্রয়োজন আছে কি? আসুন দুই দিনের এই দুনিয়ার মোহ মায়া ত্যাগ করে, অভিশপ্ত শয়তান ও নফসের কুমন্ত্রনা থেকে বের হয়ে খালেস নিয়তে একবার তওবা করে মহান রবকে খুশি করার চেষ্টা করি। একবার, মাত্র একবার যদি আমাদের আল্লাহকে খুশি করতে পারি, ইন শা আল্লাহ ইহকাল ও পরকালে আমাদের কোন কিছুরই অভাব থাকবে না।
উপরে এতক্ষণ গল্পের ছলে যা বললাম, তা নিছক গল্প নয়। এটি একটি বিশুদ্ধ হাদিস। আসুন এবার আসল হাদিসটি জেনে নেই। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি খুশি হন যে ব্যক্তি মরুভূমিতে তার বাহন নিয়ে ভ্রমণ করেছে। তাতে তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে, অতঃপর সে পথিমধ্যে নিদ্রা গেছে। অতঃপর বাহনটি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। অতঃপর নিরুপায় হয়ে একটি গাছের ছায়ায় নিদ্রা গেছে। নিদ্রা থেকে জেগে উঠে দেখে তার বাহনটি উপস্থিত। তখন সে অতি খুশিতে বলে ফেলেছে ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার বন্দাহ, আর আমি আপনার রব’ (মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুমিন যখন গুনাহ করে তখন তার কলবে একটি কাল দাগ পড়ে যায়। যদি সে তাওবা ও ইসতিগফার করে, তবে কলব পরিষ্কার হয়ে যায়।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)।

ক্ষমা প্রাপ্তির আশা রাখুন

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বনি ইসরাইলদের মধ্যে এক ব্যক্তি ৯৯ জন লোককে হত্যা করে। অতঃপর তার মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। ফলে সে ক্ষমা পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না তা জানার জন্য একজন পাদ্রিকে জিজ্ঞেস করে, তার এ পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না? পাদ্রি বলে না, কোনো সুযোগ নেই। অতঃপর সে রাগ হয়ে তাকেও হত্যা করে। হত্যাকারী পুনরায় মানুষদের জিজ্ঞেস করে, তার মাফ পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না? এক ব্যক্তি বললেন হ্যাঁ, সুযোগ আছে। তুমি অমুক গ্রামে যাও, তাদের সাথে গিয়ে সঙ্গ দাও। সে ক্ষমা পাওয়ার প্রবল আশায় সেই গ্রামের দিকে রওনা হলো। অতঃপর তার হায়াত শেষ হয়ে যায়। ফলে তার রূহ নেয়ার জন্য দুইজন ফেরেশতা আসেন। একজন রহমতের ফেরেশতা, অপরজন আজাবের ফেরেশতা। উভয়ে তার রূহ নেয়ার জন্য বিতর্ক করতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে এ মর্মে ওহি পাঠালেন যে, তার রাস্তা পরিমাপ করো। বাড়ি থেকে ওই ব্যক্তির কাছে আসার রাস্তা বেশি কাছে, না-কি ক্ষমার দিকে যাওয়ার রাস্তা বেশি কাছে। অতঃপর দেখা গেল তার ক্ষমা প্রাপ্তির আশায় গমনের রাস্তা এক বিগত কাছে। অতঃপর রহমতের ফেরেশতা তার রূহ নিয়ে যাবেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং-২৩২৭)।

আল্লাহর সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখুন

হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বনি ইসরাইলের দুই ব্যক্তির মাঝে খুবই বন্ধুত্ব ছিল। একজন ছিল অধিক ইবাদতকারী, আর অন্যজন ছিল পাপি। একদা ইবাদতকারী বন্ধু তার পাপি বন্ধুকে বলল, হে বন্ধু! তুমি পাপাচার ছাড়ো। পাপি বন্ধু বলল, তুমি আমাকে আমার অবস্থায় ছেড়ে দাও। আমার প্রভু অতি মেহেরবান ও দয়ালু, তিনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। একদিন আবেদ বন্ধু পাপি বন্ধুকে মারাত্মক গুনাহ করতে দেখে বলল, তুমি পাপাচার বর্জন করো। পাপি বন্ধু বলল, আমাকে আমার পথে ছেড়ে দাও, আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। তোমাকে কী আমার ওপর প্রহরী নিয়োগ করা হয়েছে? তখন আবেদ বন্ধু রেগে গিয়ে বলেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তোমাকে আদৌ ক্ষমা করবেন না এবং তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে একজন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা তাদের রূহ কবজ করে আল্লাহর দরবারে হাজির করেন। আল্লাহ তায়ালা তখন পাপিকে বলেন, ‘আমি দয়া করে তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব’, আর আবেদকে বলেন, ‘আমি আমার বান্দার প্রতি যে দয়া করলাম তুমি কি তা দূর করার সামর্থ্য রাখো। আবেদ বললো, না; হে প্রভু! আল্লাহ তায়ালা বললেন, একে জাহান্নামে নিয়ে চলো’ (মুসনাদ আহমদ, মিশকাত হাদিস নং-২৩৪৭)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর ব্যাপারে ভালো ধারণা তথা তিনি তার প্রতি দয়া করবেন অথবা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এ ধারণা পোষণ করা ছাড়া মৃত্যুবরণ না করে’ (মুসলিম হাদিস নং-২৮৭৭)।

বান্দাকে ক্ষমা করার বিষয়ে আল্লাহর শপথ

আল্লাহ তায়ালা বড়ই ক্ষমাশীলঃ হজরত আবু সাঈদ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘শয়তান আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করে বলেছে, হে প্রভু! আপনার সম্মানের শপথ করে বলছি, আপনার বান্দার দেহে রূহ থাকা পর্যন্ত আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব। আল্লাহ তায়ালা শয়তানের জবাবে বলেন, ‘আমার ইজ্জত, উচ্চ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ করে বলছি, আমিও তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব, যখনই আমার কাছে ক্ষমা চায় (আহমদ, মিশকাত হাদিস নং-২৩৪৪)। মহানবী সা: আরো বলেন, ওই জাতের শপথ, যার হাতে আমার জীবন। যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে ধ্বংস করে এমন জাতি আনয়ন করতেন, যারা গুনাহ করে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত। অতঃপর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন’ (মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং-২৩২৮)। মহানবী সা: আরো বলেছেন, ‘আল্লাহর রয়েছে ১০০ ভাগ দয়া-মায়া। তন্মধ্যে এক ভাগ মানব, দানব, পশু, পাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদির মধ্যে বিতরণ করেছেন। এক ভাগ দয়া-মায়া পেয়ে তারা তাদের সন্তানকে এত স্নেহ মহব্বত করে। আর ৯৯ ভাগ দয়া-মায়া আল্লাহ তায়ালা নিজের কাছে রেখেছেন, বিচার দিবসে তার বান্দাকে দয়া করার জন্য’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং-২৩৬৫)।

 

****************************************

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url